মুখ ফুটে ভালোবাসি বলতে লজ্জা লাগা মানুষটার সঙ্গে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকার নামই হয়তো প্রেম। তাদের সংসার দিব্যি চলে যেতো। ভালোবাসি বলে বলে কান ঝালা পালা করতে হতোনা,আবদার পূরণ করা লাগতোনা, আসলে তাদের কোনো আবদার ছিলো না।
একসাথে এক মুঠো পান্তা ভাত খেয়ে দুইজনই সুখি ছিলো। রাগ হলে তাদের বেশি ভয় লাগতো যদি তিনি আজ না খেয়ে থাকে। একসাথে খাবে বলে কত অপেক্ষার প্রহর কাটিয়েছে। প্রিয় মানুষটার জন্য এমনকি খাবার মাঠে পর্যন্ত নিয়ে গেছে তার ক্ষুধা লাগবে বলে।
প্রিয় মানুষটা বাজার থেকে তাদের জন্য একটু মিষ্টি মাখা সন্দেশ আনলে তারা বেজায় খুশি। একটু মুখে নিয়ে খেয়ে আবার তার জন্য রেখে দিতো। তারা একে অপরকে ভালোবাসি না বলেও সারাজীবন একসাথে কাটিয়ে গেছে।
তাদের দরকার পড়তোনা ভালো খাবার,দামি গহনা,সাজসজ্জা জিনিসপাতি,ঘুরাঘুরি এসবের কিছু তাদের প্রয়োজন হতোনা। তারা প্রিয় মানু্ষের ঘরটাকেই মেনে নিতো পৃথিবীর ছোট স্বর্গ। তাদের মাঝে বিচ্ছেদ আসতোনা কারণ তারা জানতোনা বিচ্ছেদ কি।
একজন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কাজে চলে যেতো আর একজন চুলা ধরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। ব্যস্ত হতো বাড়ির কাজ গুছানোতে। তাদের ঘনঘন বাপের বাড়ি যাওয়া লাগতোনা। একসাথে পাশে ঘুমিয়ে তারা দিনের পর দিন কাটিয়ে গেছে। বৃদ্ধ বয়সে কেউ কাউকে ছেড়ে যায়নি।
বরং আরো আগলে ধরেছে। তারা আমাদের মত এতো রোমান্টিকতা কি বুঝতোনা, তাদের ভিতর মনমালিন্য হলে তবুও তাদের কোনো অভিযোগ ছিলোনা। তাদের চাহিদা ছিলোনা,এক কাপড়ে তারা বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতো।
তারা পরপুরুষের সামনে যেতোনা, পরপুরুষ দেখলেই মাথায় ঘুমটা দিয়ে শরিরের কাপড় ঠিকঠাক করে নিজেকে রক্ষা করতো প্রিয় মানুষটার জন্য। এটা ছিলো অতীতের ভালোবাসার জোড়াশক্তি। তারা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ না করেও তাদের ভালোবাসা বন্ধন সারাজীবন রয়ে গেছে সমান পরিমাণে।
আর আমাদের ভালোবাসি বলে বলে কান ঝালাপালা করেও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের তৃপ্তি মিটেনা। আমাদের সাজসজ্জা, ঘুরাঘুরি, রোমান্টিকতা করেও মন জয় করতে পারা যায়না প্রিয় মানুষটার প্রতি। নিজেদের ভিতর মনোমালিন্য সৃষ্টি হলেই বিচ্ছেদ খুঁজি।
যতটা পারি প্রিয় মানুষটার প্রতি অত্যাচার করতেও দিধাবোধ করিনা। সকল চাহিদা পূরণ করেও এখন সংসারে মন বসাতে পারছেনা।এখন চাহিদার পরিমাণ বাড়ছে কিন্ত ভালোবাসার পরিমাণ কমে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
বড় বড় ফ্লাট,সাজসজ্জাতে ভরা বাড়িতে থেকেও মনের তৃপ্তি মিটছেনা। পরপুরুষকে দেখে আগের মত ঘুমটা দেইনা, নিজেকে সংযত করতে পারেনা। স্বামীর জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করতে এখনকার সমাজের মানুষের রীতিমত কষ্ট হচ্ছে।
রাগ,অভিমান হলেই বাপের বাড়ি চলে যাওয়া। হাজার অভিযোগ করা বাপের বাড়িতে নিজের মানুষটার সম্পর্কে।
ভালোবাসা গুলো দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। বিচ্ছেদ গুলো বাড়ছে, তবুও আমাদের হুশ ফিরছেনা ভালোবাসা আসলে কি!! একটা সম্পর্কের মানে বুঝা বড় দায় এখন। কারণ চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে ভালোবাসা বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
আমার যুগের সাথে সব হারাচ্ছি।যত প্রযুক্তি এগোচ্ছে আমাদের সম্পর্কের দুরত্ব তত বাড়ছে। এতো রোমান্টিকতা,এতো গল্প,কাহিনী, সাহিত্যের ভালোবাসা জেনে আমাদের ভিতর বিন্দু পরিমাণও ভালোবাসা জন্মাচ্ছেনা।
আসলে ভালোবাসা মন,আত্তা দিয়ে হয়ে থাকে। একসাথে থাকার মধ্যে ও অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়।।চাদিহা যত কম ভালোবাসা তত বেশি। প্রিয় মানুষের জন্য মন, আত্তা এক করলে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করা লাগেনা।
আমি একটা কথাটাই বলবো আগের সময়ে প্রিয় মানুষের জন্য বাজার থেকে একটা মিষ্টি সন্দেশ আনাতে যে ভালোবাসা ছিলো এখনকার সময়ে হাজার হাজার টাকার চকলেট,আইসক্রিম, নানান রকম খাবার নিয়ে আসার ভিতরে সেই ভালোবাসার তৃপ্তি শতকরা ১০ শতাংশ ও নাই।
You must be logged in to post a comment.