সঠিকভাবে পড়াশোনা করার ৮টি বৈজ্ঞানিক উপায়।

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আশা করি ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে সঠিকভাবে পড়াশোনা করার বৈজ্ঞানিক কিছু উপায় বলবো।

আমাদের বন্ধু মহলে এমন কিছু বন্ধু আছে যারা প্রচুর পড়াশোনা করার পরও কাঙ্খিত ফলাফল অর্জনে সমর্থ্য হয় না আবার, এমন অনেকে আছে যে কিনা সে অনেক পড়ুয়া বন্ধুটির মত অত না পরা সত্বেও বেশ ভালো একটা রেজাল্ট করে বসে।

সেই স্বল্প পড়ুয়া ভালো রেজাল্ট ধারী বন্ধুটির চমকপ্রদ ফলাফলের রহস্য জানতে কৌতূহল হয় আমাদের সবারই। রহস্যটা খুব সাধারণ।

সারাদিন মনোযোগ ছাড়া পড়ার চাইতে তিন ঘন্টা মনোযোগ সহকারে পড়া শ্রেয়। কিন্তু, মনোযোগ টাকে বেঁধে রাখার উপায় কি।

চলো তবে জেনে নেওয়া যাক পড়াশোনা করার সময় মনোযোগ ধরে রাখার এবং যেকোনো কিছু ভালোভাবে শেখার ৮ টি দারুন কৌশল সম্পর্কে।

১. মনে রাখার সুবিধার্থে নিমোনিক হোক ভরসা:

আমাদের অনেকের কাছে শৈশবে একপ্রকার আতঙ্ক ছিল সরল নামের বৃহদাকার অংক গুলো। নাম সরল হলেও এটাকে শেষ পর্যন্ত মেলাতে গিয়ে রীতিমতো ঘাম বেরিয়ে যেত আমাদের অনেকের।

এরপরে স্কুলে শেখানো হলো সেই যুগান্তকারী মনে রাখার অস্ত্র 'BODMAS'যেটা কিনা সরলের জটিলতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিল। এটি হলো নিমোনিক এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

নিমোনিক এর আরো একটা বেশ পরিচিত উদাহরণ দিতে গেলে বলতে হবে সেই পরিমাপের একক মনে রাখার জন্য একদম ছোট্ট বেলায় শেখা চিরো পরিচিত বাক্য-কিলায়ে হাকায়ছ ডাকাত মারিলে দেশে শান্তি মিলিবে।

SMART ও একটি চমৎকার নিমোনিকের উদাহরণ। চলো দেখে নেই এই শব্দের অক্ষর গুলো আসলে কি কি নির্দেশ করে।

          S=Specific

          M=Measurable

          A=Attainable

          R=Realistic

          T=Time Bound

এরকম মজার মজার নিমোনিক তৈরি করে সহজেই মনে রাখা সম্ভব হবে ইংরেজির আতঙ্ক vocabulary ও পদার্থবিদ্যা বা গণিতের যেকোনো কঠিন আর হিজিবিজি সূত্র কিংবা রসায়নের নিরস তিতকুটে তত্ত্ব বা বিক্রিয়া।

২. পড়ার সময় মোবাইলকে না বল:

এখনকার এই প্রজন্ম মোবাইল ছাড়া একটা মুহূর্ত কল্পনাও করতে ভয় পায়। কিন্তু পড়াশোনার সময় এই মোবাইল হল সবচেয়ে বড় মনোযোগ বিনষ্টকারী। টাই পড়ার সময় মোবাইলটাকে না বলতে হবে।

যদিও মোবাইল থেকে দূরে থাকা চারটি খানি কথা নয়। আজ তিনটা ছোট্ট হ্যাক শিখিয়ে দিতে চাই যেগুলো তোমাকে পড়ার সময় মোবাইল থেকে দূরে রাখবে।

1. পড়তে বস বিকেলবেলায় কিংবা এমন একটা সময় যে সময়টায় মানুষ সাধারণত অনলাইনে থাকে না।

2. মোবাইলটাকে রাখো হাতের নাগালের বাইরে। অর্থাৎ এমন একটা জায়গায় যাতে করে হাত বাড়ালে না পাওয়া যায়। জায়গা থেকে উঠে গিয়ে আনতে হবে এমন জায়গায় রেখো তবে পড়তে বসো।

3. পড়ার ফাঁকে বিরতিটাকে বিচক্ষণতার সাথে কাজে লাগাও। আমরা পড়ার ফাঁকে বিরতি নিলে সাধারণত সবার আগে সেই মোবাইলটাকে হাতে নেই। এই জিনিসটা করা যাবে না।

এই ট্রিট তিনটাকে কাজে লাগিয়ে পড়ার সময় দূরে থাকো মোবাইল থেকে।

৩. স্মৃতিশক্তি স্পেসড রিপিটেশন টেকনিক ব্যবহার কর

পড়া- পড়া -পড়া নাকি পড়া - ঘুম - পড়া

একটানা পড়ে যাওয়ার চাইতে মাঝখানে বিরতি নিয়ে পড়লে সেই পড়া স্মৃতিতে অধিকতর স্থায়ী হয়। পড়ার মাঝখানে বিরতি নিয়ে পুনরায় পড়ার যে প্রক্রিয়া, এর নামই স্পেসড রিপিটেশন সিস্টেম।

পড়া ভুলে যাওয়ার যুগের আঁশ করতে কাজে লাগানো যেতেই পারে। আর বিরতিতে তাই ঘুমের ব্যাপারটা ভুলে গেলে চলবে না।

৪. পড়ার জন্য একটা জায়গা নির্ধারণ করে ফেলো

পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখতে কোথায় পড়া হচ্ছে সেই জায়গাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেটা হতে পারে তোমার বাসার একটা কোলাহল হিন নির্জন আর পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখা তোমার পড়ার টেবিল টা কিংবা জানালার পাশে রাখা বিছানায়।

জায়গাটা এমন হতে হবে যেখানে তুমি যেতে অভ্যস্ত যাতে করে সেখানে যাওয়া মাত্রই মনোযোগ চলে আসে ‌ টাই পড়ার জন্য চমৎকার একটা জায়গা নির্ধারণ করে ফেলো আগেই।

৫. নিজে শিখে অন্যকে শেখাও

                 If you can't explain it simply,

                                 you don't understand it well enough.

                                                              --Albert Einstein

অর্থাৎ কেউ কিছু শেখার পর পর সেটা যদি অন্যকে শেখাতে ব্যর্থ হয় তাহলে সেই শেখাই ঘাটতি রয়েছে। তাই এখন থেকে নিজে নতুন যাই শেখো না কেন সেটা অন্যকে শেখানোর চেষ্টা করবে।

তাহলে সে শেখা অধিকতর স্থায়ী হবে।

৬. পর্যাপ্ত পানি পান এর অভ্যাস করতে হবে

সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে পানির অপর নাম জীবন আর বেশি বেশি পানি খেতে হবে। এই দুটি হলো খুব সাধারণ আর পরিচিত এক উপদেশ।

মনোযোগ স্থির রাখতে এই পানির ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবার পড়তে বসার আগে এক গ্লাস পানি পান করে বসা গেলে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অনেকখানি বেড়ে যায়।

৭. মার্কার পেন ও হাইলাইটার ব্যবহারে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হবে দুর্দান্ত

পড়তে গিয়ে যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও বাক্যবা তথ্য চোখে পড়বে সবসময় সেটাকে হাইলাইটার বা অন্য রঙের গালি দিয়ে চিহ্নিত করে রাখলে রিভিশনের সময় কাজে দেবে।

নতুন কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযুক্ত করতে হলে স্টিকি নোটে লিখে বই কিংবা নোটে যুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে।

তথ্যের পরিমাণ বেশি হলে প্রয়োজনে অন্য রঙের কলম দিয়ে বইতে বা নোটে লিখি ও রাখা যেতে পারে। এই হাইলাইট এর পয়েন্টস আর অন্য গালিতে লেখাগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো রিভিসনের সময় চোখে পড়বে সবার আগে এবং এতে করে পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে রিভিশন দেওয়া সহজ হবে।

৮. শেখার বাস্তবিক প্রয়োগে বাড়বে দক্ষতা

যখন যায় শেখো না কেন সেটাকে বাস্তবে ব্যবহারিক প্রয়োগ করার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে জ্ঞান আর দক্ষতা দুটোই বাড়বে। কোন নতুন বই পড়লে বা মুভি দেখলে চেষ্টা করবে সেগুলো রিভিউ লিখতে।

সেগুলো থেকে নিজেকে বুঝলে বা শিখলে সেটা সবাইকে বোঝানোর ক্ষমতা থাকতে হবে। কোন সফটওয়্যার স্কেল শিখলে সেটা কি কাজে লাগাতে হবে ব্যবহারিক ভাবে এবং শিখতে হবে কি করে শিখতে হয় আর কি করে নিজের শেখা জিনিস অন্যকে শেখাতে হয়।

আমার আজকের আর্টিকেলটি এই পর্যন্তই ছিল। আশা করি আমার আর্টিকেলটি করে আপনারা উপকৃত হবেন। ভালো থাকবেন। খোদা হাফেজ।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles