মিরাজ ঢাকা শহরের একটি সনাম ধন্য কলেজ থকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে এ বছর।হ্যাঁ অটো পাস।যদিও সে অটোপাস করে খুব একটা খুশি নয় কারন তার সেই বন্ধুদের রেসাল্ট তার মতই বা তার চেয়েও ভালো যারা পরিক্ষায় পাস করার কথা ছিলো না
যাহোক মিরাজ গত বছর মার্চ থেকে বাসায় এসেছে।তার বাড়ি গ্রামে। তার বাবা একজন মধ্যবিত্ত কৃষক।মানুষের জমিতে কৃষি করে। তার এক বড়ভাই আছে যিনি তার বাবার সাথে পরিবারের হাল ধরেছে। মিরাজের মা গৃহিনি। তার একটি ছোট বোন ও আছে সে এবার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। মিরাজ তার বাসার মেঝ সন্তান এবং কনিষ্ঠ ছেলে। তার বাসার সবাই তাকে নিয়ে অনেক সপ্ন দেখে।
মিরাজ তার এবং তার পরিবারের সপ্ন পুরনের অনেক কাছেই ছিলো। এইতো আজ থেকে একমাস আগেও সে অনেক পড়লেখা করতো। তার কারন তার পরিবারের সপ্ন সে একদিন বড় অফিসার হবে। তার বাবা মা ভাই সবাই তাকে তেমন কোনো কাজ করতে দেয় না। শুধু পড়তে বলে। সেও খুব পড়তে পছন্দ করতো।
তার সপ্ন সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবে।তার জন্য প্রস্তুত ও হয়েছিল সে।কিন্তু পরিক্ষা পিছিয়ে গেলো। তখন থকেই সে কিছুটা হতাশায় ভুগতে শুরু করে। এদিকে করোনা ভাইরাসের জন্য তাদের পরিবারের আয়রোজগার কমতে থাকে। তার বাবা ও ভাই দুজন দিনরাত খাটে তারপরো সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
যে ছেলেটা ছিলো তার পরিবারের সপ্ন সে দিন দিন পরিবারের বোঝায় পরিনত হতে থাকে। সে ভাবে না আর বসে থাকলে চলবে না কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু ওই যে ছোট ছেলে আদরে বড় হয়েছে খেতের কাজ তো সে শিখেনি তাহলে কি ভাবে করবে
তারপরও সে ভাবে যত কষ্টই হোক সে কাজ করবে কিন্তু তার বাবা ভাই তাকে সে কাজ করতে দিচ্ছে না। এদিকে আবার বাসায় তারা গল্প করে সংসার এর বেহাল দশা নিয়ে। মিরাজ কে শহরে পড়াতে গিয়ে তাদের সঞ্চিত অর্থ সব খরচ হয়ে গেসে। এগুলো শুনে মিরাজের হতাশা বাড়ে। সে কাউকেই কিছু বলতে পারে না আবার সইতেও পারেনা। সে ভাবে তাহলে এখন টিউশনি করাবে উদ্দেশ্য পরিবারের পাশে দারানো।
কিন্তু কথায় করাবে টিউশনি শহরে তো এখন থাকা সম্ভব না। শহরে করোনা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে।আর শহরে থাকার খরচ ও অনেক বেশি। এদিকে বাসার অবস্থা ভালো না।কি করবে সে কেমন করে পরিবারের পাশে দারাবে। সারাজীবন তো অনেক নিয়েছে এবার কিছু দেয়া তো উচিৎ। কিন্তু সে পারছে কই!তার খুব খারাপ লাগে।
সে দিন দিন হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। এভাবে তার আর পড়ায় মন বসে না।সে একটু একটু করে তার লক্ষ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। সে এখন এলোমেলো এক জীবনযাপন করছে। আর দিন দিন হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। সে এখন আর রাতে ঘুমাতে পারে না।এ কয়দিনে তার চোখের পানি শুকিয়ে এসেছে।
সে ভাবে এ জীবন এর আর কোনো ভুমিকা নেই। তার জন্যই হয়তো তার পরিবারের আজ এতো কষ্ট হচ্ছে।সে এখন আর সবার সাথে মিশতে পারে না। কেমন যেন খিটখিটে মেজাজের হয়ে গেছে। কারো সাথে এখন আর হেশে হেশে কথাও বলতে পারে না সে।মিরাজ একদিন ভাবলো না এ জীবন আর রেখে পরিবারের কষ্ট সে বারাবে না। সে নিজেকে শেষ করে দিবে। ভাবতে ভাবতে সে রেললাইনের দিকে হাটা শুরু করে। এমন সময় রাস্তার পাশের একটি দোকানে সে দেখতে পায় তার পাশের এলাকার রহিম চাচা কে সে ভিক্ষা করতো।
অনেকদিন মিরাজ দেখেনি তাকে।সে চিনতে পারেনি প্রথমে। কারন তার পরনে এখন আর ছেরা কাপড় নেই। রয়েসে একটি দামি ফতুয়া আর খুব সুন্দর উন্নত মানের একটি লুংগি। মিরাজ এর আগে তাকে এভাবে কখনো দেখেনি। মিরাজ জখন আগে স্কুলে পড়তো তখন তার টফিনের টাকা থেকে তাকে দান করতো দেখা হলেই। কিন্তু খুব একটা কথা হতো না তার সাথে তবে মিরাজের নাম টা সে জানতো আর খুব ভালোভাবেই চিনতো তাকে।
রহিম চাচা পায়ের উপর পা দিয়ে দোকান এ বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে। সে মিরাজ কে ডাক দেয় উচ্চস্বরে" বাবা মিরাজ" বলে।মিরাজ প্রথমে ভাবলো যাবে না। তারপর কি ভেবে গেলো। গিয়ে সালাম দিয়ে বলে কেমন আছেন।
রহিম চাচা বলে "অনেক ভালো বাবা"। তখন রহিম চাচা গর্ব করে বলতে থাকেন" আমার এখন আর ভিক্ষা করতে লাগে নারে বাবা।
রফিক বিসিএস পেয়েছে। রফিক রহিম চাচার ছেলে। মিরাজ জানতো না যে তার ছেলে আছে।তখন রহিম চাচা মিরাজের কিছু জিজ্ঞেস করারা আগেই বলতে থাকে " আমার ছেলে রফিক কত কষ্ট করে পরিয়েছি ওকে। ও অনেক কষ্ট করছে জানো অনেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়েছে।
অনেক সময় টাকার অভাবে বই কিনতে পারতো না আমি অনেক কষ্ট করেছি তখন ওর মা ও কাজ করতো মানুষের বাসায়। কিন্তু ওকে কাজ করতে দেইনি শুধু আজকের দিনটা দেখবো বলে। তারপর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুজোগ পায় তখন থেকে ও নিজের খরচ নিজেই চালাতো আমাদের ও কিছু পাঠাতো মাঝে মাঝে।
পড়ালেখা করে এখন মেজিস্ট্রেট হয়েছে। আমাকে অনেকবার শহরে ওর সাথে যেতে বলেছে আমি জাবো না বলে আমার আর ওর মার জন্য সুন্দর একটা বাড়ি বানিয়েছে। আমরা ওখানে থাকি। রফিক প্রতি সপ্তাহে আশে দেখা করতে। একদিন আমাদের বাসায় এসো"।
এতক্ষণ মিরাজ স্তব্ধ হয়ে তার কথা শুনছিলো। আর ভাবছিলো তার পরিবারের অবস্থা তো এখনো সে তুলনায় অনেক ভালো আছে।তাদের এখনো না খেয়ে থাকতে হয়না। তার মা কে এখোনো মানুষের বাসায় কাজ করতে হয়না। তার বই কিনতে কোনো অসুবিধা হয় না।
তাছারা তার পরিবার তো তাকে কাজ করতে বলেনি তাহলে কেনো সে এত হতাশ হচ্ছে? নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাহায্য করবে। এসব ভাবতে ভাবতে সে হটাত হুশ ফিরে পায় রহিম চাচা তাকে বলছে আসবে তো বাবা? সে বলে অবশ্যই আসবো। তখন সে বাড়ির দিকে উল্টো হাটা শুরু করে আর ভাবে মায়ের জন্য সুন্দর একটা বাড়ি বানাতে হবে। পরিবারের সপ্ন পুরন করতে হবে ভাবতে ভাবতে সে বাসায় চলে আসে। এসে আবার সে বই খুলে পড়া শুরু করে।
বাস্তবতা বড়ই কঠিন।
You must be logged in to post a comment.