প্লাজিয়ারিজম (plagiarism) কি? এটি কীভাবে কাজ করে জানেন তো?

প্লাজিয়ারিজম (plagiarism) সম্পর্কে জানেন তো?

 প্লাজিয়ারিজম কী?

কোনো আর্টিকেল বা কনটেন্টের কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ অংশই প্রকৃত লেখকের ক্রেডিট ছাড়া নিজের নামে চালিয়ে দেয়া একটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডই হচ্ছে প্লাজিয়ারিজম। সাধারণত, অনুমতি এবং ক্রেডিট ছাড়া কারো লেখা বা লেখার কিছু অংশ কপি করা রীতিমতো চুরির মধ্যে পরে। প্লাজিয়ারিজম জনপ্রিয় একটি নকল করার মেথড হিসেবে পরিচিত।

এতে একজন সত্যিকারের লেখককে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ একজন লেখক তার নিজস্ব জ্ঞান দিয়ে একটি লেখা তৈরি করে যা তার অমূল্য সম্পদের মধ্যে পড়ে। এটি একটি অসৎ কাজ এবং জারনালিস্ট ইথিকস।

 তবে অনেকে ইচ্ছে করে প্লাজিয়ারিজম করলেও অনেকে “প্লাজিয়ারিজম কী” এর সঠিক অর্থই জানেনা অর্থাৎ তারা দুর্ঘটনাবশত এ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে প্লাজিয়ারিজমের অর্থ বোঝার গুরুত্ব অনেক।

 প্লাজিয়ারিজমের অর্থ বোঝাকেন গুরুত্বপূর্ণ?

 কনটেন্ট বা আর্টিকেল লেখকদের প্লাজিয়ারাইজ করার অনেক কারন থাকতে পারে। প্রায় অনেক সময় অনেক লেখকদের প্লাজিয়ারিজম নিয়ে সম্পূর্ণ ধারণা থাকেনা। তাই জন্য, যখন তাদের কোনো কনটেন্ট লেখার যথেষ্ট সময় থাকেনা তখন তারা অন্যের লেখা কপি করে কাজ চালিয়ে নেই, এমনকি ক্রেডিট ছাড়া।

তারা ভাবে, অন্যের পাবলিশ করা একটি ভালো মানের লিখার অংশ কপি করলে তার লিখা জনপ্রিয়তা পাবে। মূলত এটি লেখালেখি করার ভুল এবং বিপজ্জনক একটি রাস্তা। প্রকৃতপক্ষে, প্লাজিয়ারিজম নিয়ে সঠিক ধারণা তাদের নেই।

প্লাজিয়ারিজম কেন করা হয়?

 কনটেন্ট বা আর্টিকেল লিখায় প্লাজিয়ারিজম করার অনেক কারন থাকতে পারে। মাঝেমধ্যে, অনেকে প্লাজিয়ারিজম করে তাদের লিখা শেষ করে কিন্তু প্লাজিয়ারিজম এর বেসিক ব্যাখ্যা নিয়ে তারা সতর্ক না। এমনকি তারা জানেনা, প্লাজিয়ারিজম কী! এক্ষেত্রে, প্লাজিয়ারিজম এর বেসিক ধারণা থাকার প্রয়োজনীয়তা অনেক।

 আবার অনেকেই  খুব তাড়াতাড়ি অনেকগুলো কনটেন্ট লিখার চেষ্টা করে ফলে সময়ের অভাবে তারা রিসার্চ করতে পারেনা। ফলস্বরুপ, তারা প্লাজিয়ারিজমের পথ বেছে নেয়। আবার, অনেক কনটেন্ট লেখক সঠিকভাবে রিসার্চ করতে পারেনা। তাই, তাদের লিখার মান খারাপ হয় আর সেজন্যই  তারা প্লাজিয়ারাইজ করে।

আবার কেউ কেউ, অনেক জনপ্রিয় লেখা প্লাজিয়ারাইজ করে নিজের নামে চালিয়ে দেয় জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য বা লিখাটি ভালো দামে বিক্রয় করার জন্য। যদিওবা এখন অনেক প্লাজিয়ারিজম চেকার বের হয়েছে।

প্লাজিয়ারিজমের খারাপ দিকগুলো কী?

 লেখালেখির ক্যারিয়ারে প্লাজিয়ারিজম অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এমনকি একটি কোম্পানির ক্ষেত্রে প্লাজিয়ারিজ করার জন্য চরম হতাশ হতে পারে এবং অনেক টাকা খড়চ হতে পারে। যেহেতু, প্লাজিয়ারিজম এর মাধ্যমে অন্যের নিজস্ব সম্পদ চুরি করা হয় সেহেতু এটি একটি অবৈধ পন্থা।

 বর্তমান ব্লগ রাইটিং এর ডিজিটাল পৃথিবীতে, প্লাজিয়ারিজম চেক করার জন্য অনেক টুলস রয়েছে। নিমিষেই আপনার লিখাটি প্লাজিয়ারাজিম চেকার দিয়ে চেক করে ডূপ্লিকেট বা কপি করা অংশটি বের করা যাবে। আর এর জন্য আপনাকে অনেক দুর্বিপাকে পড়তে হতে পারে। যে লেখক এর থেকে আপনি লিখা কপি করেছেন তিনি আপনাকে জরিমানা ধরতে পারবে এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে।

আর আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকলে গুগল এর এলগোরিদম আপডেটের মাধ্যমে সহজেই আপনার কপি করা অংশটি বের করে ফেলতে পারবে এবং তারা যদি ধরতে পারে আপনি সত্যিই একজনের লেখকের লেখা ক্রেডিট ছাড়া চুরি করে দিয়েছেন তবে তারা আপনার ওয়েবসাইটকে ব্যান করে দিতে পারবে।

কনটেন্টে এ প্লাজিয়ারিজম চেকিং কেন এবং কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ?

প্লাজিয়ারিজম বর্জন করার জন্য প্রত্যেক কনটেন্ট লেখকদের জন্য প্লাজিয়ারিজম চেকিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের লেখা প্রকাশ কিংবা কোথাও সাবমিট করার আগে অবশ্যই প্লাজিয়ারিজম চেকিং এর মাধ্যমে কপি কিংবা ডুপ্লিকেট অংশটি দেখা দরকার।

অনেক লেখকরাই প্লাজিয়ারিজম চেকার ব্যবহার করতে দ্বিধা বোধ করে। কারন তারা মনে করে তাদের লেখার ১০০% অংশই ইউনিক এবং এটা প্রমাণ করার কোনো দরকার নেই। আমরা সবাই মানুষ এবং ভুলবশত ভুল করা আমাদের জন্য একটি স্বাভাবিক ব্যপার। তাই এক্ষেত্রে প্লাজিয়ারিজম চেকিং এর প্রয়োজনীয়তা অনেক।

 প্লাজিয়ারিজম চেকিং এর মাধ্যমে আপনার নিজ ইউনিক লিখা থেকেও অনেক সময় ডূপ্লিকেট অংশ বের হবে – যা আপনি সহজেই ক্যাচ করতে পারবেন এবং  একটু পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি সেটা ইউনিক করে তুলতে পারবেন। 

প্লাজিয়ারিজম চেকার এর অন্যতম গোল হচ্ছে লেখকরা যাতে তাদের লেখার ডুপ্লিকেট অংশটি সহজেই বের করে তা পরিবর্তন করতে পারে।

বেস্ট প্লাজিয়ারিজম চেকার কীভাবে খুঁজে পাবেন?

কিছু ফ্রী হাই লেভেল এর প্লাজিয়ারিজম চেকার!

1.     ‘’Dupli Checker. This is one of the most effective free plagiarism detection tools on the Internet.’’

2.     “Copyleaks.’’

3.     “PaperRater.’’

4.     “Plagiarisma.’’

5.     “Plagiarism Checker.’’

6.     “Plagium.’’

7.     “PlagScan.’’

8.     “PlagTracker.’’

প্লাজিয়ারিজম বর্জন করা কেন প্রয়োজন?

প্লাজিয়ারিজম বর্জন করার মাধ্যমে আপনি আপনার লেখাকে ১০০% ইউনিক করে তুলতে পারবেন ফলে আপনার লেখা জনপ্রিয়তা যেমন পাবে তেমনি বিক্রি করতে চাইলে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন।

প্লাজিয়ারিজম যেহেতু একটি ঝুঁকিপূর্ণ পন্থা, ফলে প্লাজিয়ারিজম বর্জন করার মাধ্যমে আপনি সহজেই চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন।

যেহেতু বর্তমানে প্লাজিয়ারিজম চেকার ব্যবহার করে সহজেই লেখার ডুপ্লিকেট বা কপি  করা অংশটি বের করা যায়, সেক্ষেত্রে আপনার প্লাজিয়ারিজমযুক্ত লেখাটি প্রকাশ করলে যে কেউ সহজেই আপনার লেখার ডুপ্লিকেট অংশ বের করে ফেলতে পারবে এবং আপনাকে অনেক দুর্বিপাকে পড়তে হতে পারে।

 প্লাজিয়ারিজম এড়িয়ে চলা যায় কীভাবে?

 প্লাজিয়ারিজম এড়িয়ে চলার কিছু টিপস-

১। লেখা কোথাও পাবলিশ কিংবা সাবমিটের ক্ষেত্রে প্রথমেই শুরু করে দেওয়া। নয়তোবা পরে দেখা যাবে ডেডলাইন কাছাকাছি চলে আসবে, রিসার্চ করার সময় থাকবেনা। ফলস্বরুপ, অন্যের লেখা কপি করতে হবে।

 ২।যত দ্রুত লেখা শুরু করা যাবে, ততই রিসার্চ করার সময় পাওয়া যাবে। যত বেশি রিসার্চ, তত বেশি ইনফরমেশন। আর যত বেশি ইনফরমেশন, লেখা ততই ইনফরমেটিভ হবে। আর ইনফরমেটিভ লেখার ডিমান্ড অনেক।

 ৩। মাঝেমধ্যে লেখায় অনেক কপি কিছুই দিতে হয়। যেমন কারো আইডিয়া, মতামত, থিওরি, ফ্যাক্টস, গ্রাফ, তারিখ বা কোনো উক্তি বা এমন ধরণের কিছু । সেক্ষেত্রে ক্রেডিটসহ কপি করা।

 ৪। লেখার শেষে অবশ্যই রিভিও এবং এডিট আবশ্যিক রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে প্লাজিয়ারিজম চেকিং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সহজেই এডিট করার জায়গাটা বের করে দেবে।

 ৫। লেখক মানেই লেখা, লেখায় নতুনত্ব আনা। সেক্ষেত্রে অন্য কোনো লেখা পছন্দ হলে সেটা কপি না করে বরং সেই লেখাটাঢ় নতুন রুপ দেওয়া, লেখাটার গঠন বদলে দেওয়া।

 ৬। রিসার্চে অন্য কারো আইডিয়া পছন্দ হলে সেটা পুরোপুরি কপি করবেন? নাহ! বরং ওই আইডিয়ার সাথে আপনার নিজস্ব আইডিয়া বের করবেন। বলা তো যায়না, কপি করা আইডিয়াটা থেকে আপনার আইডিয়াটা বেশি প্রাধান্য পেত।

 ৭। প্লাজিয়ারিজম নিয়ে সতর্ক থাকা এবং প্লাজিয়ারিজম চেকার ব্যবহার করা।

 পরিশেষে, প্লাজিয়ারিজম আপনার কাজে অনেক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এটা বর্জন করায় শ্রেয়।

প্লাজিয়ারিজম এর ক্ষেত্রে সময় এবং পরিশ্রম কোনোটাই বেশি লাগেনা, তাই অনেকে এই পথ বেছে নেয়। কিন্তু সবচেয়ে অসতর্কতা হচ্ছে প্লাজিয়ারিসম নিয়ে সঠিক জ্ঞান বা ধারণা না থাকা। এটা আপনার লেখা কিংবা কাজ এবং আপনাকে অযোগ্য এবং অসৎ করে তুলবে। এটির মাধ্যমে আপনি কোনো আশানুরূপ ফলাফল পাবেন না।

 বরং প্লাজিয়ারিজমের মাধ্যমে আপনি আপনার সৃষ্টিশীলতা হারাবেন। আর যখন এটি চলে যাবে, ফিরে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। কারণ এটি স্বাস্থ্য বা সম্পদ নয়।

 তাই নিজের মেধা, জ্ঞান ব্যবহার করে নিজের সেরাটা দেখানোর চেষ্টা করবেন। নিজের লেখাকে ইউনিক এবং যোগ্য করে তুলুন, সৃষ্টিশীল হওয়ার চেষ্টা করুন এবং নিজের আইডিয়াকে সর্বোত্তম বানানোর চেষ্টা করুন।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles