ওয়েব হোস্টিং মূলত একটি অনলাইন পরিষেবা যা আপনাকে ইন্টারনেটে নিজের ওয়েবসাইট বা ব্লগ পাবলিশ করাতে কাজ করে। ডোমেইন কথাটির পর পরই ঠিক হোস্টিং কথাটি চলে আসে যখন আপনি একটি ওয়েবসাইট খোলার পরিকল্পনা করেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি ডোমেইন সমন্ধে না জেনে থাকেন তা হলে পড়ে আসুন- ডোমেইন কি? কিভাবে কাজ করে!!
আপনার পড়া শেষ হয়ে থাকলে বা আপনি আগে থেকেই জেনে থাকলে এখন আমরা এগোতে পারি। তবে তার আগে আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই যে আজকে আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলব তা হলো-
- ওয়েব হোস্টিং কি?
- ওয়েব হোস্টিং কিভাবে কাজ করে?
চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।
ওয়েব হোস্টিং কি?
ওয়েব হোস্টিং মূলত আপনার ওয়েব সাইটের কন্টেন্ট রাখার জায়গাটুকু। আপনি একটি ডোমেইন কিনলেই কিন্তু আপনার কাজ শেষ না। কেননা লেখাগুলো কোথায় রাখবেন তার জন্যও একটা জায়গা তো দরকার তাই না? আর এই জায়গাটি হচ্ছে ওয়েব হোস্টিং বা হোস্টিং স্পেস। আপনার ওয়েবসাইটের ডাটা সংরক্ষণ ও ওয়েবসাইটের ভালো কার্যকলাপ এর ক্ষেত্রে হোস্টিং স্পেস একটি বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
ওয়েব হোস্টিং মূলত আপনাকে স্পেস দেয়ার পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় এর সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমন আপনার ওয়েবসাইটকে ম্যালিসিয়াস অ্যাটাক থেকে রক্ষা কিংবা আপনার কন্টেন্ট এক খান থেকে অন্য খানে স্থানান্তর বিষয়গুলো।
হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি?
সাধারণত হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানিগুলো একেক ক্লায়েন্ট এর জন্য একেক প্রকার হোস্টিং দিয়ে থাকে। আর এটা মূলত হয়ে থাকে তাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে। ধরুন আপনি একটি ছোট্ট ব্লগ বানাতে চান যেখানে নিজের শখের বিষয় নিয়ে লিখবেন। অপরদিকে আপনার বন্ধুর প্রয়োজন কোম্পানির জন্য হোস্টিং। এক্ষেত্রে আপনাদের দু জনেরই তো একই হোস্টিং দরকার নেই, তাই না? আর তাই হোস্টিং প্রোভাইডাররা এটা মাথায় রেখেই হোস্টিং সার্ভিসকে কয়েকভাবে ভাগ করে থাকে। জনপ্রিয় কয়েকটি হোস্টিং অপশনগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- শেয়ারড হোস্টিং(Shared Hosting)
- ভিপিএস হোস্টিং(VPS hosting)
- ক্লাউড হোস্টিং (Cloud hosting)
- ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং(WordPress hosting)
- ডেডিকেটেড হোস্টিং( Dedicated hosting)
ডোমেইন নেম এবং ওয়েব হোস্টিং এর মাঝে পার্থক্য কি?
প্রায় সবাই ডোমেইন ও হোস্টিং এর বিষয়টিকে একই ভেবে গুলিয়ে ফেলে। কিন্তু আসলেই কি তাই? মোটেও না।
আমরা যদি একবার এদের সংজ্ঞার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পারব যে ডোমেইন নেম হচ্ছে ব্লগ এর বা ওয়েবসাইটের এড্রেস বা ঠিকানা। অপরদিকে হোস্টিং হচ্ছে ওয়েব কন্টেন্ট, ইমেজগুলো রাখার যথাযথ স্থান।
একটি উদাহরণ দিয়ে পুরো বিষয়টাকে খুব সহজেই বোঝানো যেতে পারে। ধরুন আপনি একটি বাড়ি করবেন। এর জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু জোগাড় করলেন। এখন বাড়িটা কোথায় বানাবেন সেটা যখন ঠিক করে ফেললেন ঠিক তখনই আপনি ডোমেইন এর বিষয়টা পরিষ্কার করে ফেললেন। অর্থাৎ ডোমেইন হচ্ছে ঠিকানা যার মাধ্যমে মানুষ আপনার বাড়ির খোজ পাবে।
এবার আসা যাক বাড়ির জায়গাটা যখন ঠিক করলেন তখন তো অবশ্যই আপনার থাকার জন্য একটা ঘর প্রয়োজন, তাই না? হ্যাঁ, এই ঘরটাকেই মূলত হোস্টিং স্পেস এর সাথে তুলনা করা হয়। আর ইন্টারনেটে ঠিক যখন কেউ আপনার ডোমেইন লিখে সার্চ করে তখন আপনার সার্ভার থেকে তথ্য সেখানে ট্রান্সফার হয়ে যায়।
ওয়েব হোস্টিং কিভাবে কাজ করে?
আপনার ওয়েবসাইট মূলত বিভিন্ন জিনিস এর একটি সংগ্রহ। অর্থাৎ যা কিছু লেখেন বা যে ইমেজই যুক্ত করেন না কেন সে সব কিছুই একটি জায়গায় জমা হয়। আর এসব ফাইল আপনার যেখানে রাখতে হবে তা হলো আপনার কোম্পানি বা ওয়েবসাইট এর সার্ভার কম্পিউটার।
এই সার্ভারে আপনি আপনার ওয়েবসাইট এর জন্য সব কিছু জমা করে রাখতে পারেন এবং ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য যদি অন্য কিছুও লাগে তবে তাও এখানে রাখতে পারবেন। এক কথায় ওয়েব হোস্টিং আপনার সেই ঘর এর মতো। আর আপনার চাহিদা অনুযায়ী আপনাকে এই হোস্টিং স্পেস কিনতে হবে যা আমরা একটু পরেই আলোচনা করব।
ওয়েব হোস্টিং মূলত আপনার ওয়েবসাইট এর ফাইল্গুলো জমা রাখার স্থান যা আমরা আগেই বলেছি। একটি কোম্পানির কাছ থেকে আপনি যখন ওয়েব হোস্টিং নিবেন বা হোস্টিং স্পেস কিনবেন তখন আপনার ওয়েবসাইট এর সেই ফাইল্গুলো এখানে অর্থাৎ হোস্টিং স্পেসে জমা হবে। প্রশ্ন করতে পারেন এই ফাইল তো আপনি বলেছিলেন আমার সার্ভার কম্পিউটারে জমা হবে তা হলে মানুষ দেখবে কিভাবে তাই না?
হ্যাঁ, সবার কাছে এই প্রশ্নটি একটু আবছা রয়েই যায়। আসলে এখানে আপনি হোস্টিং স্পেস কেনার আগেই ডোমেইন কিনে নিবেন। অর্থাৎ হোস্টিং স্পেস কেনার পূর্বশর্ত হচ্ছে আপনার ডোমেইন থাকতে হবে। আর তা না থাকলে এই হোস্টিং কোনো কাজেরই নয়। তা শুধু আপনার কম্পিউটারের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে। আপনি যখন একটি হোস্টিং কিনতে যাবেন তখন একটি ডোমেইন কিনে নিবেন যাতে করে আপনি আপনার ওয়েব সাইটটি ইন্টারনেটে দৃশ্যমান করে তুলতে পারেন।
ধরা যাক আপনি একটি ডোমেইন কিনেছেন এবং হোস্টিংও পার্চেস করেছেন। এরপরের কাজটি তাহলে কি হবে? এরপর এর কাজটি হলো আপনার ডোমেইন এর সাথে আপনার হোস্টিংকে সংযুক্ত করা।
একবার যখন আপনি ডোমেইনটি আপনার হোস্টিং এর সাথে সংযুক্ত করলেন। তখনই আপনার ওয়েবসাইটটি ইন্টারনেটে প্রদর্শিত হওয়ার শুরু হলো। অর্থাৎ এখন যেই আপনার ওয়েবসাইট এর ডোমেইন নেম লিখে সার্চ করবে সেই আপনার ওয়েবসাইটকে খুঁজে পাবে। ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটি কিছুটা এমনভাবে সংঘটিত হয়।
ধরুন কেউ আপনার ডোমেইন নেম লিখে তার ব্রাউজারের সার্চ বারে লিখল। এই লেখার পর ডি এন এস সিস্টেম সেই ডোমেইন নেমের সাথে সম্পর্কযুক্ত রেজিস্টারড ডোমেইনটি খোঁজা শুরু করবে। আর আপনার যেহেতু রেজিস্টারড ডোমেইন রয়েছে তাই সার্চকারীর সামনে আপনার ওয়েবসাইটটি প্রদর্শিত হবে। এখানেই মূল কাজটি সম্পাদিত হয়। সার্চকরার সাথেই সাথেই লোকটি যে আপনার ওয়েবসাইট দেখতে পায় তা মূলত আপনার সার্ভার এর সাথে তার আইপি যুক্ত হওয়ার কারণেই। অর্থাৎ সে যখন আপনার ডোমেইন সার্চ করবে তখন তার সাথে আপনার সার্ভারযুক্ত হবে। আর ফলশ্রুতিতে আপনার ওয়েবসাইট তার সামনে প্রদর্শিত হবে। আশা করি বিষয়টি আপনার বোধগম্য হয়েছে।
হোস্টিং স্পেস কিনতে কেন আপনার ভাবতে হবে?
হোস্টিং স্পেস কিনতে হলে আপনাকে ভাবতে হবে একারণেই যে আপনি যে হোস্টিং স্পেস কিনছেন তা আপনার পুরোপুরি প্রয়োজন পড়বে কিনা সে বিষয়টি খুঁজে বের করা। এখন একটি বড় কোম্পানি ও একটি রেসিপি ব্লগ এর জন্য কিন্তু একই পরিমাণ হোস্টিং এর দরকার নেই। একটি কোম্পানির জন্য অনেক হোস্টিং দরকার পরলেও ব্লগ এর জন্য তা খুবই কম। আর তাই এই বিষয়টিও খেয়াল রাখবেন।
ডোমেইন ও হোস্টিং সমন্ধে না জেনেই আপনার ওয়েবসাইট শুরু করা উচিত নয়। এটি আপনাকে এক ভুলের দিকে অগ্রসর করবে। আর তাই একটি সাফল্যের অধ্যায় শুরু করতে আপনাকে একটি ঘাটিয়ে দেখতে হবে কোন জিনিসটা কি রকম। আশা করি উপরোক্ত আলোচনা আপনার কাজে আসবে। এ সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে কমেন্টে জানাবেন ধন্যবাদ।
You must be logged in to post a comment.