আমার জীবনের শেয়ার মার্কেট বিষয়ক অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লেখা যাতে প্রতিফলিত হয়েছে আমার জীবনের লাভ এবং লস এর কাহিনী। কিভাবে আমি শেয়ার ব্যবসা শুরু করলাম এবং কিভাবে তা শুরু করা উচিত ছিল তা নিয়েই আজ আমার বক্তব্য।
শেয়ার ব্যবসা যখন শুরু করি তখন আমার বয়স সবে আঠারো বছর। সেই ২০০৮ সালের কথা। সবেমাত্র ন্যাশনাল আইডি কার্ড পেয়েছি। আমার একজন বন্ধুকে প্রাইমারি শেয়ার ব্যবসা মানে বিভিন্ন কোম্পানির আইপিও অ্যাপ্লিকেশন দেখে শেয়ার ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হই আমি ।
বাবাকে শেয়ার ব্যবসা করার কথাটি জানালাম। বাবাকে ম্যানেজ করতে পারলাম কিন্তু ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে তার পড়ালেখার ক্ষতি হতে পারে,চিন্তা করে মা শেয়ার ব্যবসা করতে দিতে রাজি হচ্ছিল না। আমিও নাছোড়বান্দা। পরে মাকেও ম্যানেজ করতে পারলাম।
বন্ধুর রেফারেন্সে একটি ব্রোকার হাউজের একাউন্ট খুলি ন্যাশনাল আইডি কার্ড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দিয়ে। সবে অনার্সে পড়ি। বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রাইমারি শেয়ার ব্যবসা শুরু করলাম। তখন আইপিওর এপ্লিকেশন করা বর্তমানের মত ছিল না।
সকালবেলা ফরম ফিলাপ করে নির্দিষ্ট ব্যাংকের নিচে আইপিও অ্যাপ্লিকেশন করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো যা ছিল অনেক কষ্টকর।
এক বছর ধরে প্রতিনিয়ত আইপিও অ্যাপ্লিকেশন করার পর আমি তিনটি আইপিও পেয়ে যাই এবং সেই সব কোম্পানির আইপিও থেকে প্রাপ্ত শেয়ার বিক্রি করেন বেশ কিছু টাকা লাভ করি। তরুণ বয়স, তাই আমি বেশ প্রফুল্ল ছিলাম।
মনে হচ্ছিল শেয়ার ব্যবসা করে জীবনে কিছু করা সম্ভব। তখন লোভ ধরল সেকেন্ডারি শেয়ার ব্যবসা করার জন্য।আইপিও প্রতিনিয়ত এপ্লাই করতে থাকলাম,সাথে সাথে বেশ সময় দিতাম সেকেন্ডারি শেয়ার ব্যবসা শিক্ষার জন্য।
শেয়ার ব্যবসা করতে আসা বেশিরভাগ মানুষই শেয়ার ক্রয় করে এবং কোন এক প্রকার এনালাইসিস ছাড়াই অর্থ বিনিয়োগ করে। শেয়ার বিষয়ক সংক্রান্ত অভিজ্ঞ শুধু একজনকে পেলাম। তার সাথে আলোচনা করে।
এবং ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন আর্টিকেলস পড়ে শেয়ার মার্কেট বিষয়ক ফান্ডামেন্টাল, টেকনিক্যাল এবং সেন্টিমেন্টাল এনালাইসিস বিষয়ক বিষয়ে অবগত হলাম।
এভাবে দুই মাস চলার পর প্রথম সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার করলাম। আমি খুবই উত্তেজিত এবং খুশি ছিলাম। পরবর্তী দুটি বছর শেয়ার মার্কেট খুবই ঊর্ধ্বগামী ছিল এবং আমার প্রচুর লাভ হচ্ছিল।
প্রথমেই প্রচুর লাভ করার ফলে আমি লোভী হয়ে পড়লাম। আমার কাছে মনে হল আমি শেয়ার মার্কেট কে খুব ভালোভাবে রপ্ত করতে পেরেছি এবং আমার শিক্ষা সার্থক।
২০১০ সালে শেয়ার মার্কেটে প্রচুর ধ্বস নামার শুরু করলো এবং আমি আমার আমি আমার লাভের ৫০% টাকা লস করলাম। ফলে খুবই কনফিডেন্স হীনতায় ভুগতে থাকলাম।
আসলে শেয়ার মার্কেট যখন বৃদ্ধি পায় তখন মনে হয় মার্কেট কখনও নিচে নামে না আর যখন নামতে থাকে তখন মনে হয় মার্কেট আর কখনোই উপরে উঠবে না।
অনেকটা আলো-আঁধারের মরীচিকার মত। আলো দেখলে পোকারা যেমন তার কাছে আসে, শেয়ার মার্কেট বাড়তে দেখলেও বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনা শুরু করে বেশি দামে তারা মনে করে শেয়ার মার্কেট আরো বাড়বে।
আর শেয়ার মার্কেট যখন কমতে শুরু করে তখন বিনিয়োগকারীরা মনে করে মার্কেট শুধু কমতেই থাকবে। তাই হাতে থাকা ভালো কোম্পানির শেয়ারগুলো তারা কম দামে বিক্রি করে দেয়।
২০১৮ সালেও আমি শেয়ার মার্কেটে অনেক লস করি। তখন যে বিষয়টি আমার সামনে সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠে তা হল শুধুমাত্র এনালাইসিস এর মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব নয়।
এর সাথে যেসব বিষয় রয়েছে তা হলো দেশের এবং বৈদেশিক ব্যবসার অবস্থা,মন্দা, বিভিন্ন দেশের যুদ্ধ, নির্বাচন, মহামারী রোগ যা শেয়ার মার্কেট থেকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
শেয়ার মার্কেট থেকে লাভ এর অন্যতম প্রধান উপায় হল মানি ম্যানেজমেন্ট। আপনি যে অর্থ শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করবেন, তার অর্ধেক দিয়ে শেয়ার কিনবেন।
এবং অর্ধেক হাতে রাখবেন। ফলে বিপদের সময় আপনি তা ব্যবহার করতে পারবেন এবং সহজে লস এর সম্মুখীন হবেন না।
আরেকটা কথা অবশ্যই ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনবেন। ভালো কোম্পানির শেয়ার যৌক্তিক দামে কিনলে তা কমে গেলেও আবার বৃদ্ধি পাবে, কারন কোম্পানি ভাল লভাংশ প্রদান করে।
You must be logged in to post a comment.