আমাদের বর্তমান দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। প্রযুক্তির অশেষ অবদানে কম্পিউটার ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের অধিকাংশ কাজ এখন কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে করতে হচ্ছে। প্রতিটি মানুষই কোন না কোন ভাবে কম্পিউটারের কাজের উপর নির্ভরশীল। কম্পিউটার সাধারনত আমাদের নির্ভুল কাজ প্রদান করে থাকে।
বর্তমান অনলাইন যুগ হওয়ায় এই সময় বেশি ভাগ কাজই কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি চাকরি ক্ষেত্রে, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এখন কম্পিউটার ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে বেশিভাগ কাজ কর্ম পরিচালনা করছে।
আমাদের বর্তমান সময় কম্পিউটার ব্যবহার না জানলে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি চাকরি ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের চাকরি না হওয়ার কারন হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের চাকরি পর্যায়ে নিজেকে তৈরী করার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার সম্পর্কে জানান বিশেষ জরুরী। আর আমাদের বর্তমান সময় আমরা বেশি ভাগই কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি।
অনেকেই আছে যারা বাসায় কম্পিউটারের ব্যবহার করে থকে। আর কম্পিউটার ব্যবহার করা কালিন আমাদের কম্পিউটার নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। একটি উল্ল্যেখযোগ্য সমস্যা হল আমাদের ব্যবহৃত কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়া। কম্পিউটার স্লো বা হ্যাং হয়ে গেলে আমাদেরকে নানা জটিল সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের সেই কম্পিউটারকে ঠিক করতে না পারলে সেটিকে মেরামতের জন্য সার্ভিসিং এর দোকানে নিয়ে যেতে হয়।
চলুন আজকে আমরা জেনে নিবো কিভাবে কম্পিউটারের স্লো বা হ্যাং হয়ে যাওয়া দূর করে কম্পিউটারের গতি বাড়াবো। বিভিন্ন কারনে কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়, চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশেষ কিছু কারন।
কম্পিউটার স্লো বা হ্যাং হয়ে যাওয়ার কারন:
* কম্পিউটারে র্যামের তুলনায় সফটওয়্যার বেশি থাকলে।
* টেম্পোয়ারি ফাইল বা অটো জেনারেট ফাইল নিয়মিত পরিস্কার না করলে।
* কম্পিউটার ফাইলের মধ্যে ভাইরাস থাকলে।
* একই ধরনের একাধিক সফটওয়্যার থাকলে। যেমন: একাধিক ব্রাউজার, একাধিক এন্টিভাইরাস ইত্যাদি।
* হার্ডডিক্স আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হলে।
* সি ড্রাইভে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা না থাকলে।
* কম্পিউটার ড্রাইভ ইনন্সল অনিয়ম হলে।
* একইসাথে একাধিক কাজ করলে।
* সাধারন মানের কম্পিউটারে বড় বড় ফাইল ও গেম খেললে কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যায়।
* কম্পিউটার পুরাতন হলে।
* প্রসেসর মাদারবোর্ডের সমস্যা থাকলে, ইত্যাদি ।
এসব সমস্যার কারনে আমাদের কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যায়। আমরা আমাদের কম্পিউটারে কাজ করা কালিন অবস্থায় এই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। যা আমাদেরকে খুবই বিরক্তকর সমস্যায় ফেলে দেয়।
কিভাবে আপনার কম্পিউটারে স্লো বা হ্যাং হয়ে যাওয়া সমস্যা সমাধান করবেন।
প্রথমে আপনার যেটি করণীয় থাকে সেটি হলো, আপনার কম্পিউটারের সমস্যা খুঁজে বের করুন। সেই সমস্যা নিয়ে পদক্ষেপ নিন। না বুঝে কিছু করতে যাবেন না এতে আরও সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
১. র্যামের সমস্যা সমাধান: র্যাম কম হওয়া কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার প্রধান কারন। যদি আপনার কম্পিউটারে র্যাম কম হয়, তাহলে কম্পিউটার থেকে অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আনইস্টল করে ফেলুন। শুধুমাত্র আপনার যেটি বিশেষ দরকার সেটিই রাখুন। এছাড়াও বেশ কিছু সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করতে অধিক র্যামের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে সেসব ভারী সফটওয়্যার বাদ দিয়ে তার অলটারনেটিভ বিকল্প সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।
যেমন: ফটোশপের পরিবর্তে পোর্টবল ফটোশপ, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা এক্সেলের পরিবর্তে যেকোন ব্রাউজারে গিয়ে গুগল ডক্স ব্যবহর করুন। আর যদি আপনা বাজেট থাকে তাহলে আপনার কম্পিউটারে ভালো মানের একটি র্যাম কিনে নিতে পারেন। তবে কম্পিউটার লাগানোর জন্য অবশ্যই আলাদা স্লট থাকতে হবে।
২. একই ধরনের সফটওয়্যার পরিহার করুন: আমরা অনেকেই কম্পিউটারে একই কাজ করতে একাধিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকি। যা কম্পিউটারে ধীরগতি হওয়া অন্যতম কারন। যেমন: ব্রাউজিং এর ক্ষেত্রে ক্রোম+ মজিলা + অপেরা একত্রে ব্যবহার না করা, যেকোন একটি ব্যবহার করুন।
৩. এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা: কম্পিউটার ধীর গতির জন্য এন্টিভাইরাসও বিশেষভাবে দায়ী। বিশ্বাস না হলে এখনই টাক্স ম্যানেজার ( ctrl+shift+delete) বাটুন চেপে দেখে আসতে পারেন। কিন্তু এন্টিভাইরস তো কম্পিউটার থেকে বাদ দেওয়া যায় না। বাদ দিলে কম্পিউটারটি ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে। আরও ভাইরাস আক্রান্ত হলে কম্পিউটার আরও ধীরগতির হয়ে যায়।
তাই যেমন তেমন বা একাধিক এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন না। টাকা দিয়ে কিনে এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন এতে আপনা কম্পিউটারকে ভালো রাখতে পারে।
৪. ফাইল ম্যানেজার বা মেমোরি চেক করুন: কম্পিউটারে তথ্য সংরক্ষণ বা হার্ডডিক্স ব্যবহৃত হয়, যা SSD এর তুলনায় খুবই ধীরগতিতে কাজ করে। তাই কম্পিউটান দ্রুত করতে হার্ডডিক্সে যেনো অপ্রয়োজনীয় ফাইল না থাকে। এক্ষেত্রে কোন পুরাতন মুভি বা ছবি কোন বড় ফাইল সংরক্ষনের জন্য আলদা পোর্টাবল ডিক্স ব্যবহার করুন। এতে হার্ডডিক্সের উপর চাপ কম হবে, কম্পিউটার ভালো থাকবে।
৫. টেম্পোয়ারি বা অটো জেনারেট ফাইল: দীর্ঘদিন কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে এটি স্লো বা হ্যাং হয়ে যায় টেম্পোয়ারি ফাইলের কারনে। এই টেম্পোয়ারি ফাইল প্রতিনিয়ত ডিলিট করলে কম্পিউটার স্লো বা হ্যাং হওয়া সমস্যা দূর হয়। টেম্পোয়ারি ফাইল দূর করার নিয়ম- উইন্ডোজের পাশের সার্চ অপশনে গিয়ে Run লিখে এন্টার চাপুন।
তারপর আরেকটি সার্চবার এলে সেখানে Temp লিখে এন্টার চাপুন। যেই ফাইল গুলো আসবে সেগুলো সব ডিলিট করুন। তারপর আবার %Temp% লিখে এন্টার চাপুন এবং সব ফাইল ডিলিট করুন যদি ডিলিট না হয় তাহলে স্কিপ করুন। এভাবে আবার, Prefetch লিখে এন্টার চাপুন ও ডিলিট করুন। তারপর আবার একবার Tree লিখে এন্টার চাপুন। এতে কম্পিউটার রিফ্রেশ হবে ভালো এবং আগের থেকে কম্পিউটার গতি বৃদ্ধি হবে।
৬. হার্ডডিক্স ডিফ্রেগমেন্ট করতে হবে: কম্পিউটার হার্ডডিক্স হচ্ছে ডাটা সংরক্ষন ও পরিবহন প্রধান হার্ডওয়্যার। এটিকে নিয়মিত অপটিমাইজ ও এনালাইজ করতে হবে। তা না হলে কম্পিউটার ও হার্ডডিক্সের গতি কমে যাবে। তাই ডিফ্রেগমেন্ট করার নিয়ম- কম্পিউটার সার্চ অপশনে Disk Defragment লিখে এন্টার চাপুন। তারপর যথাক্রমে প্রতিটি ড্রাইভের জন্য Optimized করতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন হয়ে যাবে। এটি কম্পিউটারের হার্ডডিক্সের গতিটি বাড়িয়ে দেয়। সপ্তাহে একবার হলেও এটি করুন।
৭. ডিক্স ক্লিনাআপ: কম্পিউটারে সাধারনত ডিক্স ক্লিনাআপ করলে গতি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ডিক্স ক্লিনআপ করার নিয়ম- কম্পিউটার সার্চ অপশনে যেয়ে Disk Cleanup লিখে সার্চ করুন পেয়ে যাবেন। এবং সবগুলো ড্রাইভ ক্লিনআপ করুন।
আর কম্পিউটার মাঝে মাঝে চালিয়ে রিস্টার্ট করুন। আর উপরের কাজ গুলো করলে আপনার কম্পিউটারের গতি বৃদ্ধি পাবে স্লো বা হ্যাং হওয়া দূর হবে।
You must be logged in to post a comment.