কম্পিউটার বারবার রিস্টার্ট নিচ্ছে, সমাধান কি?

ধরুন আপনি খুব আগ্রহ নিয়ে কম্পিউটারে মুভি দেখছেন, হুট হাট বারবার কম্পিউটার অফ হয়ে যাচ্ছে, আবার অন হচ্ছে, বিরক্ত হয়ে যাবেন, তাই না? 

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

আবার ধরুন, একটা কাজের ডেডলাইন কাল। এখন কাজ করতে বসলেই বারবার কম্পিউটার অন অফ হচ্ছে, মনে চাইবে না যে কম্পিউটার ভেঙ্গে ফেলি?

আপনি হয়তো অসীম ধৈর্যের অধিকারী হয়ে বারবার রিবুট মারছেন। কিন্তু তাতে কি আসলেই কাজ হচ্ছে?বা এতে কি কম্পিউটারের কোনো সমস্যা বাড়ছে? আপনার মনে এই ধরনের প্রশ্ন এসে থাকলে এই ব্লগ আপনার জন্য। 

প্রথমেই আপনাকে দেখতে হবে সমস্যাটা কেনো হচ্ছে? সফটওয়্যার ঘটিত কোনো সমস্যা হয়ে থাকলে আপনি নিজেই সেটা রিকভার করতে পারবেন। এই টাইপের কমন সমস্যা হতে পারে উইন্ডোজ সেটিংস চেঞ্জ, কোনো ড্রাইভার আপডেট বা কোনো ম্যালওয়্যার এ্যাটাক। এগুলো সমাধানের জন্য আপনার কোনো বিশেষজ্ঞ এর সহায়তার প্রয়োজন নেই। 

কিন্তু আরেক প্রকার সমস্যা হতে পারে, যেটার জন্য আপনার এক্সপার্ট এর দরকার হবে। সেটা হচ্ছে, পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিটে বিঘ্ন ঘটা। এটা হলে আপনার কাচা হাতে কিছু না করাই ভালো হবে। কিছু অর্থ ও সময় খরচ করে বিশেষজ্ঞ এর দ্বারস্থ হলেই তা কম্পিউটারের জন্য ভালো। 

সাধারণ সমস্যাগুলোর সমাধানঃ

কারিগরি ত্রুটিঃ 

অনেক সময় দেখা যায় এ আপনি কোনো একটা স্পেসিফিক সফটওয়্যারে ঢুকতে গেলে আপনার কম্পিউটার রিস্টার্ট নিচ্ছে। এমন সমস্যা যদি বেশ কয়েকবার হয় তাহলে বুঝতে হবে ওই সফটয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ বাগ আছে। এই সমস্যা সমাধানে আপনি সফটওয়্যার টাকে আপডেট করুন। সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। 

তবে এরপর ও ঠিক না হলে আপনি ওই সফটওয়্যার ডেভেলপারের কাছে একটা রিপোর্ট পাঠিয়ে রাখতে পারেন, তারা সল্যুশন দিয়ে দিবে। 

ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারঃ 

হতে  পারে কোনোভাবে আপনার ডিভাইসে ভাইরাস ঢুকে গেছে, যেটার কারণে ডিভাইস অফ হচ্ছে বারবার। এক্ষেত্রে একটা ভাইরাস স্ক্যান আপনাকে হেল্প করতে পারে। যদি আপনার ডিভাইসে আগেই এ্যান্টিভাইরাস থেকে থাকে তাহলে সেটা দিয়ে ডিভাইস টা ফুল স্ক্যান করুন, কুইক স্ক্যান না।  কুইক স্ক্যান করালে অনেক ফাইল ই বাদ থেকে যাইয় স্ক্যান থেকে। যদি আপনার পিসি তে উইন্ডোজ ১০ ইন্সটল করা থাকে, তাহলে আপনার আর বাইরের কোনো এ্যান্টিভাইরাস দরকার নেই। আপনার পিসিতে বিল্ট-ইন একটা শক্তিশালী এ্যান্টিভাইরাস পোগ্রাম আছে, সেটা দিয়ে ফুল স্ক্যান করুন। 

এজন্য আপনি নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ 

১। সার্চ বক্সে লিখুন, " windows security" , ক্লিক করুন। 

২। " virus and threat protection" এ ক্লিক করুন

৩। "scan option" এ ক্লিক করে "full scan" সিলেক্ট করুন,  "scan now" চাপুন। 

৪। স্ক্যান কমপ্লিট হয়ে গেলে নিচে "উইন্ডোজ ডিফেন্ডার অফলাইন স্ক্যান" এ ক্লিক করে স্ক্যান কমপ্লিট করুন। 

এরপর ডিভাইস প্রদত্ত নির্দেশনা ফলো করুন, এভাবেই আপনি ভাইরাস ডিটেক্ট করে সেটাকে দূর করে দিতে পারবেন।

এমনিতেও সপ্তাহে অন্তত ২ বার ফুল স্ক্যান করুন, আপডেটেড থাকুন। 

ডিভাইসের তাপমাত্রাঃ 

আপনার পিসির তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও পিসি বারবার অফ হয়ে যেতে পারে। 

এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী হচ্ছে CPU আর GPU । আপনি এটা খুজে বের করার জন্য CPU monitoring program আর GPU monitor আপনার ডিভাইসে ইন্সটল করে রাখতে পারেন। এতে করে আপনি দেখতে পেরবেন যে পিসির তাপমাত্রা কি বেশি হয়ে যাচ্ছে নাকি সেফ জোনেই আছে। 

যদি  আপনি খুজে পান যে সমস্যা আপনার সি পি ইউ তেই, তাহলে আপনার উচিত হবে চেক করা যে সিপিইউ তে এয়ারফ্লো ঠিকমত হচ্ছে কিনা। অনেক সমইয় সিপিইউ তে ময়লা, ধুলা বালি জমে এর এয়ারফ্লো নষ্ট করে, তাই এর ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। 

আপনি চাইলে গ্রাফিক্স কার্ড ও খুলে রাখতে পারেন, এগুলো ভারি কাজ করে বিধায় এসব বাতাস বেশি টানে, ফলে ময়লা জমে যেতে পারে। এছাড়া আপনি সিপিইউ বা গ্রাফিক্স কার্ড রিলেটেড ড্রাইভার গুলো চেক করতে পারেন যে ওগুলো আপডেটেড আছে কিনা, না থাকলে আপডেট করে নিন। 

প্রত্যেকবার কোনো চেঞ্জ আনার সাথে সাথে পিসি অন করে চেক করে নিবেন যে চেঞ্জ এ কাজ হয়েছে কিনা। 

প্রসেসরের পাওয়ার ব্যবহার কমিয়ে ফেলুন 

আপনার ডিভাইসের প্রসেসর ডিভাইসের পাওয়ার বেশি ব্যবহার করলেও অনেক সময় এই অফ/অন সমস্যা হতে পারে। যদিও এটা খুব বেশি ম্যাটার করে না, কিন্তু আপনার কপাল খারাপ হলে প্রসেসরের ব্যাটারী ব্যবহার কমিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ প্রসেসর কতটুকু পাওয়ার ব্যবহার করবে সেটা ঠিক করে দেওয়া। 

এটা করার জন্য আপনি নিচের স্টেপ গুলো ফলো করতে পারেন। 

১। উইন্ডোজ কি + R প্রেস করে তাতে লিখুন powercfg.cpl, তারপর এন্টার চাপুন।

২। আপনি যেই পাওয়ার অপশন ব্যবহার করছেন, তার পাশে "চেঞ্জ প্লান সেটিংস" ক্লিক করুন। 

৩। তারপর " চেঞ্জ এডভান্সড পাওয়ার সেটিংস" এ ক্লিক করুন। 

৪। তারপর " প্রসেসর পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট" এর পাশে প্লাস আইকনে ক্লিক করুন। "মিনিমাম পাওয়ার স্টেট" এর প্লাস আইকনে ক্লিক করুন। "অন ব্যাটারী" এর পাশের নাম্বার চেঞ্জ করে ৫% করে রাখুন। "ওকে" চাপুন। 

যদি সমস্যা থেকে থাকে তাহলে পুরো প্রসেসটা "প্লাগড ইন" অপশনের জন্য আবার রিপিট করুন। 

এই প্রসেসটা বুঝাচ্ছে যে চলমান অবস্থায় ডিভাইসের প্রসেসর ৫% পাওয়ার ব্যবহার করবে। এটাই মিনিমাম বেসিক স্ট্যান্ডার্ড। 

যদি এই প্রসেসে কোনো সল্যুশন না আসে তাহলে পার্সেন্টেজ বদলে আগের মত করে ফেলুন। 

অপারেটিং সফটওয়্যার আপডেট করুনঃ 

অনেক সময় এমন হতে পারে যে দীর্ঘ সময় উইন্ডোজ, ম্যাক বা অন্য অপারেটিং সিস্টেম, আপডেট না করার কারণে ডিভাইসে সমস্যা হচ্ছে। তো এই ক্ষেত্রে আপনি চেক করুন যে আপডেট দরকার আছে কিনা। 

এটা দেখার জন্য আপনি ডিভাইস সেটিংস এ গিয়ে আপডেট এন্ড সিকিউরিটি অপশনে যান। এরপর উইন্ডোজ আপডেট অপশনে গিয়ে "চেক ফর আপডেট" অপশনে ক্লিক করুন। কোনো আপডেট থাকলে সেটা ইন্সটল করুন, এ্যাডিশনাল ফিচারসহ। আশা করা যায় সমস্যা এখান থেকে হলে ঠিক হয়ে যাবে। 

এছাড়া এমনিতেও ডিভাইসের ভালো পারফরম্যান্সের জন্য রেগুলার উইন্ডোজ আপডেটেড রাখুন।

 ড্রাইভার আপডেট করুনঃ

 অনেক সময় দেখা যায় আপনি কোনো নতুন হার্ডওয়্যার পিসি তে যুক্ত করলেন। এখন আপনার ডিভাইসে থাকা ড্রাইভার গুলো আপডেটেড না থাকায় নতুন পার্ট এর সাথে খাপ খাওয়াতে পারছে না। তাই হয়তো ডিভাইস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনি ড্রাইভার আপডেট দিয়ে দেখতে পারেন। এজন্য

১। উইন্ডোজ সার্চ বারে লিখুন "Device manager" , ক্লিক করুন। 

২। প্রথমেই আপনার কম্পিউটারের নাম দেখতে পাবেন । রাইট ক্লিক করুন। "স্ক্যান ফর হার্ডওয়্যার চেঞ্জ" এ ক্লিক করুন। 

৩। এখন একে একে সব গুলো ডিভাইস চেক করে দেখতে হবে যে কোন ডিভাইসের ড্রাইভার আপডেট প্রয়োজন। এজন্য ডিভাইসের নামের উপর রাইট-ক্লিক করে " আপডেট ড্রাইভার" এ ক্লিক করে " সার্চ অটোমেটিক্যালি ফর ড্রাইভার" এ ক্লিক করে রান করতে হবে। একে একে সব গুলো করতে থাকলে উইন্ডোজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুঝে ফেলবে কোন আপডেট দরকার বা কোনটায় সমস্যা আছে, নিজে থেকেই সলভ করে ফেলবে সমস্যগুলো। 

এভাবে আপনি ড্রাইভার আপডেট করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। 

স্বয়ংক্রিয় রিস্টার্ট অফ করে দিনঃ 

আপনার ডিভাইসটি যদি খুব বেশি পুরোনো না হয়ে থাকে, তাহলে ডিভাইসে স্বয়ংক্রিয় রিস্টার্ট অন করা আছে আগে থেকেই। এটা থাকার কারণ হলো যদি ডিভাইস মনিটর বা অন্য কোথাও কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে এটা ডিভাইস সুরক্ষিত রাখতে অটো রিস্টার্ট দিয়ে দিবে। এতে করে রিস্ক কমে যাচ্ছে। কিন্তু এটার একটা খারাপ দিক হচ্ছে আপনি জানতে পারছেন না কেনো সমস্যাটা হচ্ছে। এতে আপনি এটার রিপেয়ারের সুযোগ কম পাচ্ছেন। তাই এই সার্ভিস অফ রাখলে আপনি শুরুতে প্রবলেম সম্বলিত একটি মেসেজ পেয়ে সব জেনে  তারপর সমাধান করতে পারবেন। 

এই সার্ভিস অফ করার জন্য আপনাকে নিচের কাজগুলো করতে হবে। 

১। Windows key+ R একসাথে প্রেস করুন, প্রদর্শিত ফাকা বক্সে লিখুন sysdm.cpl, "ওকে" প্রেস করুন। 

২। পরের ট্যাবে উপরের দিকে "এ্যাডভান্সড" এ ক্লিক করুন। পরে 'স্টার্ট-আপ এন্ড রিকভারির" মধ্যে সেটিংস এ ক্লিক করুন। 

৩। "Autimatically restart" লেখার পাশে চেক আইকনে আনচেক করুন। "ওকে" ক্লিক করে প্রসেস সেভ করুন। 

এবার আপনি কি কারণে আপনার ডিভাইস রিস্টার্ট নিচ্ছে সেটা জানতে পারবেন। জেনে পরবর্তী স্টেপ নিতে পারবেন। 

পাওয়ার সাপ্লাই এ সমস্যাঃ

যদি উপরের কোনোটাই আপনার ডিভাইসের সমস্যা না হয়, তাহলে সম্ভাবনা আছে ডিভাইসের পাওয়ার সাপ্লাই লাইনে সমস্যা হওয়ার। এক্ষেত্রে আপনার কোনো অভিজ্ঞ লোকের সহায়তা নিয়ে ডিভাইস চেক করানো ভালো। 

ডিভাইসে অন্য কোনো সমস্যা হলেও আগে সফটওয়্যার এর দিক চেক করে তারপর হার্ডওয়্যার এর দিক চেক করা উচিৎ। আর এইসব চেকিং এ নিজে কনফিডেন্ট না থাকলে এক্সপার্টের সহায়তা নেওয়াই মঙ্গলজনক। 

আশা করি আর্টিকেলটা ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে সেটাই লেখকের স্বার্থকতা। ধন্যবাদ। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ