বর্তমান সময়ে কম্পিউটার এর গুরুত্ত ও প্রয়োজনীয়তা

সৃষ্টির উষালগ্ন থেকেই মানুষ আপন উদ্ভাবনী ক্ষমতাবলে নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে পৃথিবীকে ক্রমেই কাছে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের উচ্চ প্রযুক্তিসংবলিত যে আবিষ্কারটি বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে, সবাইকে বিস্ময়াভিভূত করেছে, তা হলো কম্পিউটার। কম্পিউটার এমনই একটি যন্ত্র, যা মানুষের কর্মময় জীবনে অনুগত ভৃত্যের মতো হুকুম তামিল করে। বর্তমান যুগ হলো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যুগ।

আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার কম্পিউটার। 'কম্পিউটার 'শব্দটি ইংরেজি ভাষা থেকে বাংলায় এসেছে। এর অর্থ যন্ত্রগণক। তথ্য ও উপাত্তের বিশ্লেষণ ও তুলনা করা এবং সিদ্ধান্ত দেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে এ যন্ত্রের। কাজের গতি, বিশুদ্ধতা ও নির্ভরশীলতার দিক থেকে কম্পিউটারের ক্ষমতা মানুষের  থেকে বেশি ও উন্নত।

আধুনিক বিশ্ব, সভ্যতা ও জীবনের মানোন্নয়নের পেছনে রয়েছে কম্পিউটারের অবদান। কম্পিউটার একটি ইংরেজি শব্দ।কম্পিউটার যোগ বিয়োগ গুন ভাগ ইত্যাদি সব রকমের অংক করতে পারদর্শী। কিন্তু এর কাজ শুধু গণনার কাজেই সীমাবদ্ধ নয় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ তুলনা করা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিস্ময়কর ক্ষমতা রয়েছে এ যন্ত্রের।

এমন একটি যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত কাজ খুব দ্রুত করতে পারে।  কম্পিউটার (computer) শব্দটি গ্রিক “কম্পিউট” (compute)শব্দ থেকে এসেছে। compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না।

কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব। বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার আসে ১৯৬৪ সালে।

কাজের গতি বিশুদ্ধতা ও নির্ভরশীলতার দিক থেকে কম্পিউটারের ক্ষমতা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি ও উন্নত তাই বিশ শতকের শেষের দিক থেকে কম্পিউটার অফিস-আদালতসহ প্রায় সর্বত্র বিশেষভাবে স্থান করে নিয়েছে। কম্পিউটার একটি অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি হলেও এর উদ্ভব ও বিকাশের পেছনে কয়েক শতক ধরে মানুষের সাধনা ও প্রচেষ্টার ইতিহাস রয়েছে। আধুনিক কম্পিউটারের জনক চার্লস ব্যাবেজ অংশে বিভক্ত আধুনিক কম্পিউটারের গঠনকৌশল আবিষ্কারের কৃতিত্ব তার। 

১৯৫২ সালে আমেরিকান বিজ্ঞানী জন নির্মাণের পরিকল্পনা মতে ইলেকট্রনিক অটোমেটিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কৃত হয়। ১৯৫৭ সাল থেকে হাজার ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত কম্পিউটার তৈরির কাজ ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে কিন্তু এর ইতিহাস আরও পুরনো।

যোগ বিয়োগ করতে সক্ষম যন্ত্র গণক প্রথম তৈরি করেন গণিতবিদ প্যাসকেল ১৬৪২ সালে।১৮২০ সালে মেমোরি সংরক্ষণ পদ্ধতি সংবলিত ক্যালকুলেটর আবিস্কারে সক্ষম হন চার্লস জেভিয়ার থমাস।১৮২২ সালে চার্লস ব্যাবেজ একটি স্বয়ংক্রিয় ক্যালকুলেটিং মেশিনের অবকাঠামো আবিষ্কার করেন।

৩ টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কম্পিউটার নিজের কাজ গুলোকে সম্পন্ন করে থাকে। ইউসার এর দ্বারা ইনপুট করা ডাটা গুলো প্রসেস করে সেগুলোর সমাধান আমাদের আউটপুট হিসেবে দিয়ে দেয় কম্পিউটার। ... এবং, ইনপুট ডাটা প্রসেস হয়ে আউটপুট পাওয়ার জন্য আমাদের কাছে থাকে, মনিটর (monitor), প্রিন্টার, স্পিকার, প্রজেক্টর ইত্যাদি।

কিন্তু এ কাঠামোকে বাস্তবে রুপান্তরিত না করতে পেরে ১৮৩৩ সালে নতুনভাবে চিন্তা করা শুরু করেন। ১৮৩৪- ১৮৩৫ সালে তিনি সর্বপ্রথম অটোমেটিক মেকানিক্যাল ডিজিটাল কম্পিউটার মডেল তৈরি করেন।এরই পথে ধরে ১৯৩৯ সালে বাইনারি গণিতভিত্তিক ইলেকট্রনিক ডিজিটাল ABC  কম্পানি তৈরি হয়। ১৯৪৪ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও আইবিএম কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয় ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার। এভাবেই তেরী হয় আধুনিক বিজ্ঞানের বিষ্ময়কর কম্পিউটার।

ডিজিটাল কম্পিউটার বা আকার, আয়তন ও কার্যকারিতা অনুসারে কম্পিউটার চার প্রকার।

যথা:-

সুপার কম্পিউটার

মেইনফ্রেম কম্পিউটার

মিনি কম্পিউটার

মাইক্রো কম্পিউটার

মাইক্রো কম্পিউটার আবার ৫ প্রকার । যথা:-

ডেক্সটপ কম্পিউটার

ল্যাপটপ কম্পিউটার

পামটপ কম্পিউটার

নোটবুক কম্পিউটার

পকেট কম্পিউটার

কম্পিউটার এখন তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক অবাক করা ভূমিকায় অভিনয় করছে। আধুনিক তথ্য যোগাযোগের জগতে ই-মেইল, ফ্যাক্স, ফোন, ইন্টারনেট প্রভৃতির প্রাণবায়ু হয়ে বিরাজ করছে কম্পিউটার। বিশ্বের আন্তর্জাতিক তথ্য প্রবাহের যুগে, অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রকে কম্পিউটার অভাবিত প্রসারণ ঘটিয়ে বিপুল বিস্ময়ে কাজ করে যাচ্ছে। সাথে সাথে মানুষ স্ফীত করে তুলছে তার জ্ঞানভাণ্ডারকে।

মানুষ তার অসীম আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে এখন এককভাবে নির্ভর করছে কম্পিউটারের ওপর এবং যথার্থভাবেই সে সাফল্য কুড়িয়ে নিচ্ছে। কম্পিউটার মানুষের দৈনন্দিন তথ্য আদান প্রদানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কম্পিউটারের একচ্ছত্র আধিপত্য এতটাই ব্যাপক ও দৃঢ়তার আস্থায় অধিষ্ঠিত যে, মানুষের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সে জড়িত হচ্ছে। হয়ে উঠেছে মানবসভ্যতার সিঁড়িতে সিঁড়িতে বিছানো লাল গালিচা বা কার্পেট। হয়ে উঠেছে মানুষের এক পরম সুহৃদ।

কম্পিউটারের এ ভূমিকাকে দ্বিমত পোষণ করতে বোধ হয় এখনকার জগতে আর কেউ নেই।কম্পিউটার আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে যেমন বিবেচিত হচ্ছে তেমনি এর ব্যাপক ব্যবহারে বিপুল সংখ্যক বেকারত্বের আশঙ্কাও আমাদের শঙ্কিত করে তুলছে। এজন্যে কম্পিউটারের পরিকল্পিত, ভারসাম্যমূলক ব্যবহার ও দেশে কম্পিউটার প্রযুক্তির উন্নয়ন, দরকার।

তা না হলে একুশ শতকের চলার গতির সঙ্গে আমরা যেমন তাল মিলিয়ে চলতে পারব না, তেমনি অতিরিক্ত গতি নিতে গিয়ে তাল হারিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ব সংকটের আবর্তে। এক্ষেত্রে পরিণামদর্শী পদক্ষেপই হবে আমাদের অগ্রযাত্রার রক্ষাকবচ।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles