তথ্য শেয়ার সহ বিভিন্ন কাজ এখন ইন্টারনেট দুনিয়ায় দেখা যায়। তবে বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষ ঝুঁকেছে কনটেন্ট রাইটিং এর দিকে।
ব্লগিং বলতে আমরা সবাই কনটেন্ট রাইটিংই বুঝি। তো চাইলে ব্লগিং করেও আপনি আয় করতে পারেন। তবে এতে আপনার সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে ধৈর্য। ধৈর্য না থাকলে আপনি ব্লগিং করতে পারবেন না।
ব্লগিং কী?
Weblog শব্দটি শুনেছেন হয়তো। আর ব্লগিং হচ্ছে এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ব্লগিং শুনে বোঝা যায় যে এটি একটি ইংরেজী শব্দ। এর বাংলা অর্থ খুঁজতে গেলে ডিকশনারী ঘাঁটলে দেখা যায়,
এর অর্থ দাঁড়ায় ইন্টারনেটে সংরক্ষিত দিনলিপি বা ইন্টারনেটে ব্যাক্তিগত দিনলিপি । যদিও আয় করার সময় এটা কখনোই ব্যাক্তিগত হয় না। হয় পাবলিক ৷
আবার অনেক ডিকশনারীতে এর অর্থ ভার্চুয়াল ডায়েরী ৷ এই Weblog শব্দটি মার্কিন নাগরিক Jome Burger( জোম বার্জার) সর্বপ্রথম উচ্চারণ করেন ১৯৯৭ সালে।
এরপর ১৯৯৯ সালে Peeter Melhomge এটাকে মজার ছলে ছোটোখাটো করে Blog উচ্চারন করেন। এবং মানুষর মুখে এটাই ছড়িয়ে যায়। এভাবেই ব্লগ শব্দের উদ্ভাবন ৷
ব্লগার কারা?
উইকিপিডিয়া ঘাঁটলে অনেক তথ্য সামনে আসবে। তবে মূলত যারা লেখালেখি করে ব্লগিং করে, অর্থাৎ লিখে নিজের ব্লগিং সাইটে আপলোড করেন, তারাই ব্লগার।
তারা নিয়মিতভাবে এক একটি ঘটনা নিয়ে সকল ধরনের আপডপট দিয়ে থাকেন। যেমন ধরুন বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে। এখন তারা নিয়মিতভাবে এর আপডপট দিতে থাকবেন।
ব্লগিং আর ওয়েবসাইট কী এক?
না! অনেকে ব্লগিং আর ওয়েবসাইটিং কে এক মনে করেন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এদের মধ্যে একটি পার্থক্য আছে। সেটা হলো কোনে ব্যাক্তি যদি ব্লগিং করেন, তাহলে সে নিয়মিতভাবে অর্থাৎ নতুন কোনো তথ্য পাওয়ার সাথ সাথে তা আপলোড করে দেন।
আর যাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে, তারা অনিয়মিতভাবে কোনো কিঢ়ু আপলোড করেন। এর থেকে বোঝা যায়, ব্লগিং করাটাই বেস্ট। কারন, এতে নিয়মিত আপডেট পেলে পাঠক সাড় দেয়।
ব্লগিং কীভাবে শুরু করব?
ধরুন, আপনার ধারনা আছে এই টাইপের বিষয়গুলো, অথবা এই যেমন সাম্প্রতিক কোন বিষয়সমূহ নতুন করে সহজ ভাবে জানানো, কিংবা নিজের চিন্তাধারা, মতামত, বুদ্ধি - বিবেক, অভিব্যক্তি ও চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হলো ব্লগিং।
এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো বিষয়কে নিজের মতো করে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। বর্তমানে ব্লগিং এর চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বাড়ছে, যা বলার মতো নয়।
এর কিছু কারন আছপ অবশ্য। ব্লগিং এর চাহিদা বপড়ে যাওয়ার ফলে এর থেকে আয় ও করা যাচ্ছে প্রচুর! এর কারনগুলো মূলত
১. ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা
২, বিভিন্ন স্পনসরসিপ
৩. অ্যাফিলিয়েশন ও অ্যাডভারটাইসমেন্ট থেকে ইনকাম সোর্স সৃষ্টি
এসবের ফলে সারা বিশ্বে এমনকি বাংলাদেশেও ব্লগিং এর চাহিদা ক্রমশই বেড়েই চলেছে।
আপনি চাইলে বাংলা বা ইংরেজী দুটোতেই ব্লগিং করতে পারেন।
আপনি যদি ব্লগিং শুরু করতে চান তাহলে প্রাথমিকভাবে অবশ্যই আপনার নিচের জিনিসগুলো প্রয়োজন হবে।
১. একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস ( মোবাইল ফোন, ল্যাপটক বা কম্পিউটার) । যেকোনো কিছু ইউজ করতে পারবেন।
২. আবশ্যিক ইলেকট্রিক সংযোগ। অর্থাৎ, নেটওয়ার্ক কানেকশন থাকতে হবে।
৩. আপনি বাংলাতে লিখলে প্রয়োজন হবে অভ্র বা বিজয় কীবোর্ড । এগুলো দিয়েই আপনি যেহেতু টাইপিং করবেন।
৪. ব্লগিং করার জন্য একটি অ্যাকাউন্ট।
৫. আপনার টাইপিং এর হাত ভালো থাকতে হবে। যেমন ধরুন মিনিটে ২৫/৩০ টি ওয়ার্ড লিখতে পারলে ভালো। এবং শুধু ভালো নয়, অনেক ভালো ৷
৬. আর হ্যাঁ, একটি ইমেইল অ্যাকাউন্ট তো থাকতেই হবে।
৭. আর থাকতে হবে সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞান।
কীভাবে হবে ব্লগিং থেকে আয়?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ব্লগিং করলাম। এর থেকে আমি টাকা পাব কীভাবে? বা আয় হবে কীভাবে? কে দেবে পেমেন্ট? এগুলো জানতে নিচের লেখাটুকু পড়ুন।
প্রথমে একটি ব্লগ সাইট তৈরি করতে হবে। শুরুতে প্রথম কাজটি হলো একটি নাম বাছাই করা। নামটির কিছু গুন থাকতে হবে।
১. ব্রান্ডেবল
২. উচ্চারনে সহজ
৩. শ্রুতিমধুর
৪. সবার মনে থাকবে
এমন একটি নাম নির্বাচন করতে হবে। এটাকে মূলত বলে ডোমেইন নাম। এতে করে আপনার ব্লগ সাইটটি অনেক দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং তত বেশি সাড়া পাবেন। এবং পাঠক তত বৃদ্ধি পাবে। পাঠক বৃদ্ধি পেলেতো আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
ডোমেইন নাম নির্বাচন করার পরের কাজটিকে কারো কারো ঝামেলার মনে হতে পারে। কিন্তু এটি আদতে কেনে ঝামেলার কাজ নয়।
আপনাকে এরপর একটি ভালো মানের হোস্টিং সার্ভিস ক্রয় করতে হবে। ক্রয় শব্দটি শুনে কেউ কেউ চমকে উঠতে পারেন। তবে কেনো টেনশনের বিষয় নেই। এতে বেশি টাকা খরচা হয়না। আর হলেও আপনার ব্লগিং সাইট জনপ্রিয় হবার পর,
এর টাকা ১ মাসে চাইলেও উসুল করে নিতে পারবেন। তবে এসব ভাবলে ব্লগিল করা যাবেনা। যাই হোক - হোস্টিং সার্ভিস ক্রয় করার আগে অবশ্যই ডোমেইন নাম নির্বাচন করার পর একটি ভালো মানের হোস্টিং সার্ভিস ক্রয় করতে হবে। হোস্টিং সার্ভিস ক্রয় করার আগে অবশ্যই তাদের দুইটি জিনিস সম্পর্কে জেনে নেবেন।
১. কাস্টমার রিভিউ এবং
২. কেনার পরবর্তী সাপোর্ট সার্ভিস কেমন
এই দুইটি উত্তর জেনে তারপর কিনবেন। কারন, নইলে পরে ক্ষতি হওয়ার খানিকটা আশঙ্কা থাকে। যদিও এখন আর এই ধরনের সমস্যা হয়না৷
ডোমেইন ও হোস্টিং নিলেন। এবার তৃতীয় কাজটি করতে হবে। হোস্টিং নেওয়ার পর এখন ব্লগটি ডিজাইন করতে হবে। ব্লগ ডিজাইন অবশ্য কঠিন কিছু না।
আগেই বলেছি, এতে কাজ করলে ধৈর্যের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে প্রথমে হোস্টিং সিপ্যানেলে একটি জিনিস ইন্সটল করতে হবে। অর্থাৎ, ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করে নিতে হবে। তারপর ইনস্টল করতে হবে একটি থিম।
এবার সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাস্টমাইজ করে পছন্দমতো ডিজাইন করতে হবে। কিভাবে থিম কাস্টমাইজ করবেন সে বিষয়ে ইউটিউবে অনেক ধরনের টিউটোরিয়াল ভিডিও পাবেন। এবল সেগুলো দেখে আপনি নিজেই ব্লগটি ডিজাইন করতে পারবেন।
এগুলো সব ইউটিউবে ক্লিয়ারলি দেয়া আছে। ইউটিউব দেখে চাইলে সহজেই সবটা শিখে নিতে পারবেন। আর আপনি যদি নিজে না করতে পারেন,
তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। যে কোন ওয়েব ডিজাইনার কে দিয়ে আপনার ব্লগ সাইটি ডিজাইন করে নিতে পারেন।
এছাড়া ওয়েব ডেভপলপার দিয়েও কাজটি করাতে পারেন। অবশ্য এতে খানিকটা টাকা করচা হতে পারে। এর থেকে নিজে করাই ভালো।
ব্লগটি ডিজাইন করার পর আপনি যেকোনে একটি নির্দিষ্ট বিষয় এর উপর কন্টেন্ট লিখবেন৷ এবংনতা সেকানে পাবলিশ করবেন। অবশ্য এটা খুব সহজ।
তবে, আপনার কাছে যদি কঠিন মনে হয়, ইউটিউব দেখেও শিখে নিতে পারেন। তো সেগুলো আপনার ব্লগে পাবলিশ করতে হবে। কন্টেন্ট লিখার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেন।
১। কনটেন্ট যেন তথ্যবহুল হয় এবং
২। সার্বিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে
ব্লগে কন্টেন্ট পাবলিশ করার পর সেগুলো বিভিন্ন সোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে হবে। অনেক সোশাল মিডিয়ায় সেগুলো শেয়ার করতে পারবেন। এজন্য আগে থেকেই সেই ব্লগের নামে সকল পপুলার সোসাল মিডিয়া সাইট যেমন-
১.Facebook,
২.Twitter,
৩. Instagram,
৪. Pinterest,
৫ Quora ইত্যাদি
গুলোতে বিজনেস পেজ ও অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। অন্তত অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। Quora (কোরা) তে তাড়াতাড়ি সাড়া পাওয়া যায়।
উপরের ৪ টি ধাপ সম্পন্ন করার পর আপনি নিয়মিতভাবে আপডেট দিতে থাকবেন। এবং একটা পর্যায়ে আপনার ব্লগে অধিক সংখ্যাক ভিজিটর বা পাঠক আসা শুরু হবে।
সেই সময়টা ১ মাসও হতে পারে ২ মাসও হতে পারে. ভালো লিখতে পারলে ১০ দিনও হতে পারে। তখন আপনি গুগল অথবা অন্যান্য কোম্পানি থেকে অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করবেন।
এটাও ইউটিউব দেখে শিখে নেয়া যায়। তারপর সেটা আপনার ব্লগ সাইটের সাথে কানেক্ট করবেন। সেখান থেকে নিদির্ষ্ট পরিমাণ রিভিনিউএ প্রতি মাসে আয় করতে পারবেন। অর্থাৎ, বুঝলেন এটা সহজ!
পাশাপাশি, যখন এটি আরও পপুলার হবে তখন অনেক কোম্পানি নিজে থেকেই আপনার ব্লগ সাইটে স্পনসর করার জন্য যোগাযোগ করবে।
উদাহরনস্বরুপ বলা যায় বাংলাদেশের প্রথম ব্লগ সাইটের কথা৷ আমি বলছি সামহোয়্যারইনব্লগ এর কথা।
তো বুঝতেই পারছেন ব্লগিং মোটেও কঠিন কিছু না। একটু চেষ্টা করলেই সবটা পারফপক।টলি করতে পারবেন।
তো এ পর্যন্তই। সবটুকু ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। জে আইটি আর্নিং প্রোগ্রাম এর সাথে থাকবেন।
ফি আমানিল্লাহ
You must be logged in to post a comment.