মানুষের জীবনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জয় পরাজয় ঘটে থাকে।এর জন্য অনেকের মন খারাপ হয়ে যায়।আসলে মানুষের মন খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল।আজকে আমি ইসলামের আলোকে মন ভালো করার সবচেয়ে সহজ ১০টি উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।সবাই একটু সময় নিয়ে ধৈর্যের সাথে আর্টিকেলটি পড়ুন।
তাহলে এবার শুরু করা যাক।
১. নিজের অতীতকে নিয়ে চিন্তা বাদ দিনঃ-
সব মানুষের জীবনে সাধারণত অতীত বলে একটা আপেক্ষিক বিষয় থাকে।এটা কারো ভালো হয়,আবার খারাপও হয়।পৃথিবীতে অনেক মানুষ এমন আছে,যারা সবসময় তার অতীত জীবন নিয়ে দুচিন্তা ও আফসোস করে থাকে।
আসলে এসব নিজের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর।আমরা সবাই জানি যে,অতীত কারো জীবনে কখনো ফিরে আসে না।এজন্য আপনি অতীতের কথা বাদ দিয়ে বর্তমান সময়ের চিন্তা করবেন।
জীবনে পরিশ্রম আর সততার সাথে বাঁচার চেষ্টা করবেন।অতীত জীবনের থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতেের জন্য নিজের মধ্যে সফলতার আলো জ্বালাবেন।
২.নিয়মিত নামাজ আদায় করুনঃ-
নামাজ মুমিন বান্দার জন্য চোখের শীতলতা।একজন মুসলমান নর নারীর উপর নামাজ আদায় করা ফরজ।নামাজের মধ্যে আপনি জীবনের আলাদা শান্তি খুঁজে পাবেন।যদি কখনো আপনার মন খারাপ হয় কিংবা থাকে,তবে দেরি না করে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে নিবেন।এতে করে আল্লাহ মনের মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি ও শান্তি দান করবেন।
আবার নামাজ আপনাকে যাবতীয় অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।নামাজ মানুষের মনকে দ্রুত পরিবর্তন করে দেয়।এই যেমন একটা খারাপ মনকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যায়।
৩. নিজের পরিবারের সাথে একটু সময় কাটানঃ-
মন ভালো করতে পরিবার আপনাকে অনেক সাহায্য করে থাকে।কেননা পৃথিবীতে আপনাকে তারাই সবচেয়ে বেশি ভালোবেসে থাকে।পরিবার বলতে আপনার মা বাবা,স্ত্রী সন্তান,ভাই বোন ইত্যাদিকে বুঝিয়ে থাকে। এদের মাঝে মাঝে একটু সময় দিন।নিজের মনের দুঃখের কথা তাদের সাথে নির্ভয়ে বলার চেষ্টা করুন।নিজের পরিবারের সাথে একটু আন্তরিক হোন।
আবার তাদের সাথে দুনিয়াবি খেলাধুলা করুন।এতে করে আপনার মন খুব খুশি হবে এবং মন খারাপের ব্যাথাটা আস্তে আস্তে কমে যাবে। আপনি চাকরি করেন আর ব্যবসা বানিজ্য করেন,সেটা বড় কথা নয়।
সবার চেয়ে নিজের আপনজনকে বেশি প্রাধান্য দিবেন।কেননা নিজের বিপদে তারাই আগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে।
৪. সময় সুযোগ বুঝে একটু বিনোদন করুনঃ-
বিনোদন মানুষের জীবনে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।মন খারাপ থাকলে একটু বিনোদন করে নিতে পারেন।এতে করে আপনার মন খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।তবে এই বিনোদন যেন ইসলামের আলোকে হয়ে থাকে।
আপনি যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন,তবে ইসলামিক ওয়াজ গজল শুনতে পারেন। এতে করে আপনার মনের উপর খুব ভালো প্রভাব পড়তে পারে।এজন্য মোবাইলে কিংবা পিসিতে ইউটিউব থেকে ভালো মানের ওয়াজ গজল নামিয়ে শুনতে পারেন।
এছাড়া এর পাশাপাশি ইসলামিক শর্ট রিমাইন্ডার শুনতে পারেন এবং নিজের জ্ঞান বাড়ানোর জন্য ইসলামিক পিডিএফ কিংবা কাগজের বই পড়তে পারেন।এগুলো আপনার মন ভালো করতে একটা সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
৫. বাইরের দুনিয়াতে একটু বের হোনঃ-
সবসময় নিজেকে ঘরে বন্দী না রেখে বাইরের আলো বাতাসে ঘুরতে বের হোন।মন ভালো করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বাইরের দুনিয়াতে বের হতে হবে। কেননা ঘরে নিজেকে একলা রাখার অভ্যাস করলে,একসময় আপনি মানসিক ও শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।বাইরে বের হয়ে সবার সাথে মন খুলে কথা বলুন।
নিজের মনের থেকে একটু হাসি বের করার চেষ্টা করুন।সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে কোথাও ঘুরতে বের হোন।তাদের সাথে হাসি খুশি সময় কাটান।এতে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।
৬.নিজের মধ্যে গুনাহ ছাড়ার অভ্যাস করুনঃ-
গুনাহ মানুষের জীবনের জন্য এক ভয়াবহ ভাইরাসের মতো।এটা মানুষকে শান্তির জগত থেকে বের করে দেয়।শুধু তাই নয়,গুনাহ একসময় মানুষকে জাহান্নাম প্রর্যন্ত নিয়ে যায়।গুনাহ করলে মনের মধ্যে এক ধরনের অস্তিরতা ও অশান্তি কাজ করে
যা আপনার মনকে একসময় দুর্বিষহ করে ফেলে।গুনাহ আপনাকে অবশ্যই শারিরীক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে।এজন্য মন ভালো করতে চাইলে আজ থেকেই গুনাহের কাজ ছেড়ে দিন।গুনাহ ছাড়তে প্রথম একটু কষ্ট হবে।
৭. সময় করে কুরআন পড়ুনঃ-
মন ভালো করার সবচেয়ে বড় ওষুধ হলো কুরআন শরীফ।কেননা আল্লাহ তায়ালা এই কুরআনের মধ্যে মুমিন বান্দাদের জন্য শান্তির ও সফলতার প্রতীক রেখে দিয়েছেন।এজন্য কুরআন তেলাওয়াত করুন,যদি না পারেন,তবে কোনো হাফেজের কাছ থেকে সময় মতো করে শিখতে পারেন।এতে আপনার সবদিক দিয়ে লাভ হবে।
এছাড়া আপনি চাইলে ইন্টারনেটে অর্থাৎ ইউটিউবে অডিও কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পারেন।এতে আপনার খারাপ মন আল্লাহর কুদরতে ভালো হয়ে যাবে এবং হেদায়েতের পথে চলা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।আবার মাঝে মাঝে আল্লাহর জিকির করতে পারেন।এতেও মন ভালো হয়ে যাবে।
৮. বন্ধুদের খোঁজ খবর নিনঃ-
প্রত্যেক মানুষের জীবনে কম বেশি বন্ধ থেকে থাকে।তবে বন্ধু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকবেন।মন খারাপ থাকলে নিজের বন্ধুদের একটু খোঁজ খবর নিবেন।সবচেয়ে ভালো হয় যে,আপনি তাদের সাথে বাইরে কোথাও ঘুরতে বের হোন।এতে আপনি খুব স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন।জীবনে ভালো বন্ধু থাকলে মন খারাপের সময় কাজে আসে।
এই যেমন- সে আপনার মন ভালো করার উপায় খুঁজবে,আপনাকে ভালো পরামর্শ দিবে,এমনকি বাইরের দুনিয়াতে বের হতে নির্দেশ দিবে।কেননা ভালো বন্ধু সবসময় আপনার হাসি খুশি মুখ দেখতে চাইবে।
৯. পরিমাণ মতো ঘুম পাড়ার অভ্যাস করুনঃ-
ঘুম মানুষের জীবনে প্রয়োজনীয় একটা বিষয়।এটা মানুষের স্বাস্থ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।এজন্য বেশি রাত না জেগে নিয়মিত পরিমান মতো ঘুম পাড়ার চেষ্টা করুন। বাংলাদেশে অনেক মানুষ আছে,যারা রাত জেগে অনলাইন গেম খেলে কিংবা ফেসবুকে চ্যাটিং করে থাকে।এতে তারা শারিরীক ও মানসিক ভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আপনি যদি ঠিকমতো ঘুম না পাড়েন,তবে এটা আপনার মনের উপর গিয়ে প্রভাব ফেলবে।যার কারণে আপনার মন আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যাবে।এমনকি আপনার মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে,সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলবেন।
১০. নিয়মিত শরীর চর্চা করবেনঃ-
মানুষের স্বাস্থ্য অনেক দামী সম্পদ।একে ভালো রাখতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।কেননা শরীর চর্চা করলে আপনি শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভালো থাকবেন।আবার আপনার মন সবসময় প্রফুল্লচিত্তে থাকবে।এজন্য মন ভালো করতে চাইলে প্রতিদিন শরীর চর্চা করবেন।
এই যেমন- সকাল বেলা রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলেন,আবার দৌড়াদৌড়ি করলেন কিংবা বিভিন্ন রকম পুশ আপ ব্যায়াম করলেন।ব্যায়াম করলে আপনার শরীরের রক্ত পেশি সচল থাকে।যার কারণে আপনি জীবনে হাসি খুশি থাকতে পারবেন।মন ভালো করার বিশেষ একটা পদ্ধতি।নিয়মিত পানি পান করবেন।এতে শরীর সুস্থ থাকবে।আবার আপনার মনও ভালো হয়ে যাবে।
You must be logged in to post a comment.