খাবার খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। তাইতো ভোজন রসিক ভাই বোনদের জন্য আমি নিয়ে এসেছি মজাদার এবং সুস্বাদু কিছু রেসিপি। এই রেসিপি গুলো তৈরী করতে আপনি কম খরচে আপনার ঘরোয়া উপাদান গুলোকে কাজে লাগাতে পারবেন। রেসিপি গুলো তৈরী করতে পারবেন যে মাধ্যমেঃ-
ভাপা ইলিশের মালাই কারী রেসিপি -
ভাপা ইলিশের মালাই কারী তৈরী করতে আপনাদের যে উপকরণ দরকার হবেঃ
উপকরণঃ-
(১)মাঝারি সাইজের ইলিশ মাছ ১টি/২ টি। (২) নারিকেলের দুধ ১/২ কাপ (৩) গোলমরিচের গুঁড়ো ১ চা চামচ। (৩) আদা বাটা ১/২ চা চামচ। (৪) পেঁয়াজ কুঁচি ২ টেবিল চামচ।(৪) লংকা গুড়ো ১ চা চামচ। (৫) দারুচিনি গুড়ি ১/২ চা চামচ। (৬)চিনি ১ চা চামচ। (৭) হলুদ গুড়ো ১ চা চামচ।(৮) লবন স্বাদ মতো ও পানি পরিমাণ মতো নিবেন।
তৈরীর প্রণালীঃ
প্রথমে আপনি ইলিশ মাছগুলোকে মাঝারি সাইজ করে কাটবেন। এরপর মাছটা ধুয়ে মাছের গায়ে সামান্য হলুদ ও লবণ মাখিয়ে রাখুন। এরপর একটি কড়াইয়ে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে মাছগুলো কে হালকা আঁচে ভেজে ফেলুন।
মাছ ভাজা হয়ে গেলে ভাজা মাছগুলো আলাদা একটি পাএে রাখুন। এরপর গোলমরিচ, দারুচিনি নিয়ে কড়াইয়ে হালকা আঁচে ভেজে ফেলুন এবং ভাজা শেষে এগুলো গুড়ো করে ফেলুন। গুড়ো গুলোকে একটি কাগজে ভালো ভাবে মুড়িয়ে রাখুন।
এইবার একটি কড়াইয়ে পরিমাণ মতো তেল ঢেলে দিন -তেল গরম হয়ে গেলে তাতে পেঁয়াজ কুঁচি ঢেলে দিয়ে নাড়াতে থাকুন চুলার আচঁটা কমিয়ে দিবেন। পেঁয়াজ গুলো ভাজতে থাকুন পেঁয়াজ গুলো ভাজতে ভাজতে যখন বাদামী বর্ণের হয়ে যাবে তখন হলুদ গুড়ো, লংকা গুড়ো, ও আদাবাটা ঢেলে দিয়ে ভালো ভাবে নাড়িয়ে হালকা পানি দিয়ে কষাতে লাগুন।
কষানোর সময় চুলার আচঁটা বাড়িয়ে দিবেন। কষানো শেষে নারকেলের দুধ ঢেলে দিয়ে এবং সামান্য পানি দিয়ে আরও ১-২ বার কষিয়ে নিন। কষানো শেষে এবার পরিমাণ মতো পানি ঢেলে দিন এবং ভেজে রাখা মাছগুলো দিয়ে দিন।এরপর ঢাকনা চাপা দিয়ে রাখুন ১৫-২০ মিনিট। চুলার আচঁটা এবার কমিয়ে দিন। ১৫-২০ মিনিট পড়ে ঢাকনা তুলে ফেলুন। এবার আপনার গুঁড়ো করে রাখা মসলাগুলো দিয়ে দিন এবং ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।
এইবার একটি পাএে ঢেলে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করুন দুপুরে গরম গরম ভাতের সাথে মজাদার ভাপা ইলিশের মালাই কারী।
পান্তা ভাতের ফুলকো রেসিপিঃ
পান্তা ভাতের ফুলকো বানাতে আপনাদের যে সকল উপকরণ গুলো প্রয়োজন হবেঃ
উপকরণঃ
(১) পান্তা ভাত ২ কাপ। (২) কাঁচা মরিচ কুঁচি ১চা চামচ। (৩) পেঁয়াজ কুঁচি ২ টেবিল চামচ। (৪) দারুচিনি গুড়ি ১/২ চা চামচ। (৫) জিরা গুড়ো ১/২ চা চামচ। (৬) ধনেপাতা কুচি ১/২ চা চামচ। (৭) ১টি ডিমের সাদা অংশের ১ চামচ। (৮) চিনি ১/২ চা চামচ।(৯)কনফ্লাওয়ার ২টেবিল চামচ।(১০) লবন স্বাদ মতো।
তৈরীর প্রণালীঃ
আপনাকে প্রথমে পান্তা ভাত গুলো একটি পাএে নিয়ে ভালো ভাবে চটকাতে হবে। যেন ভাত গুলো একদম মিহি হয়ে যায় কোন দানা না থাকে। ভাতগুলো অবশ্যই পানি ছেঁকে নিয়ে চটকাবেন।
ভাত চটকানো হয়ে গেলে একে একে সমস্ত উপকরণ কনফ্লাওয়ার, পেঁয়াজ কুঁচি, কাঁচা মরিচ কুঁচি, জিরা গুড়ো, দারুচিনি গুড়ি, ধনেপাতা কুচি, ডিমের সাদা অংশ, চিনি এবং লবন স্বাদ মতো দিয়ে একসাথে মাখাতে থাকুন। মাখানো হয়ে গেলে রো আকৃতির মতো বানিয়ে ফেলুন। বানানো হয়ে গেলে কড়াইয়ে তেল ঢেলে দিয়ে ভালো ভাবে গরম করুন।
তেল গরম হয়ে গেলে আস্তে আস্তে এক একটা করে রো দিয়ে ভালো ভাবে নাড়িয়ে চাড়িয়ে গরম তেলে ভাজতে থাকুন। গু
ভাজা শেষে একটি পাএে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করুন সন্ধ্যা বেলার নাস্তায় গরম গরম পান্তা ভাতের ফুলকো।
ডিম পটোলের দোলমা ভাজি রেসিপিঃ
ডিম পটোলের দোলমা ভাজিতে আপনাদের যে সকল উপকরণ গুলো প্রয়োজন হবেঃ
উপকরণঃ
(১) ডিম ২ টা (২) পটোল ১৫-২০ টি, (৩) পেঁয়াজ কুঁচি ১চা চামচ (৪) কাঁচা মরিচ কুঁচি ১ চা চামচ (৫) হলুদ গুড়ো ১/২ চা চামচ, (৬) লবন স্বাদ মতো, (৭) তেল পরিমাণ মতো।
তৈরীর প্রণালীঃ
প্রথমে পটোল গুলো গোল সাইজ এর মতো কুঁচি করে কাটবেন। কাটা শেষে ধুয়ে ফেলুন এবং আলাদা পাএে রাখুন। এবার একটি কড়াইয়ে পরিমাণ মতো তেল ঢেলে দিয়ে ভালো ভাবে গরম করুন। তেল গরম হয়ে গেলে আস্তে আস্তে পেঁয়াজ কুঁচি, মরিচ কুঁচি, হলুদ গুড়ো দিয়ে ভালো ভাবে নাড়াচাড়া করুন এবং বাদামী বর্ণের হয়ে গেলে তাতে ডিম দুটো ফাটিয়ে দিয়ে দিয়ে ভালো ভাবে নাড়াচাড়া করতে থাকুন এবং চুলার আচঁটি কমিয়ে নাড়াচাড়া করুন। খেয়াল রাখবেন যেন পুড়ে না যায় এবার কুঁচি করে রাখা পটোলগুলো ঢেলে দিয়ে ভালো ভাবে নাড়াচাড়া করতে থাকুন এবং ঢাাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। ঢেকে দেওয়ার ৫ মিনিট পর পর ঢাকনা তুলে নাড়িয়ে চারিয়ে দিবেন। এভাবে ১৫-২০ মিনিট ধরে ভাজতে থাকুন এবং পরিশেষে নামিয়ে ফেলুন।
এইবার সুন্দর একটি পাএে ঢেলে পরিবেশন করুন আজকের দুপুরের খাবারে মজাদার ডিম পটোলের দোলমা ভাজি।
ডাল আলুর দোপিয়াজি রেসিপিঃ
ডাল আলুর দোপিয়াজি তৈরী করার জন্য আপনার যে উপকরণ গুলো প্রয়োজন হবেঃ
উপকরণঃ
(১) মসুর ডাল ১ কাপ, (২) মুগের ডাল ১ কাপ, (৩) আলু ৫-৬ টি, (৪) পেঁয়াজ কুঁচি ১ টেবিল চামচ, (৫) মরিচ কুঁচি ১ চা চামচ, (৬) গোলমরিচগুঁড়া ১চা চামচ, (৭) জিরাগুঁড়া ১ চা চামচ, (৭) দারুচিনি গুড়ি ১ চা চামচ, (৮) লংকা গুড়ো ১ চা চামচ, (৯) হলুদ গুড়ো ১চা চামচ (১০) চিনি ১ চা চামচ, (১১) লবন স্বাদ মতো।
তৈরীর প্রণালীঃ
আপনি প্রথমে একটি কড়াইয়ে মসুর ডাল ও মুগের গুলো হালকা আঁচে ভেজে নিবেন। তেল ছাড়া ভাজবেন। ভাজা হয়ে গেলে আলাদা একটি পাএে ঢেলে রাখুন। আলুগুলো লম্বা আকৃতির করে কাটবেন এবং সামান্য হলুদ ও লবণ মিশিয়ে গরম তেলে আলু গুলো ভেজে ফেলুন। ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে রাখুন।
এবার একটি কড়াইয়ে পরিমাণ মতো তেল দিন। তেল গরম হয়ে গেলে পিঁয়াজ কুঁচি, মরিচ কুঁচি, এবং হলুদ গুড়ো দিয়ে ভালো ভাবে ভাজতে থাকুন এবং বাদামী বর্ণের হয়ে গেলে সামান্য পানি দিয়ে গোলমরিচগুঁড়া, জিরাগুঁড়া, দারুচিনি গুড়ি, এবং লংকা গুড়ো ঢেলে দিয়ে ভালো ভাবে নাড়াচাড়া করতে থাকুন।
এভাবে ৩-৪ বার উপাদানগুলো ভালো ভাবে কষিয়ে নিবেন।কষানো শেষে ভেজে রাখা ডাল গুলো ঢেলে দিয়ে নাড়াতে থাকুন এরপর সামান্য পানি ঢেলে দিন এবং ভেজে রাখা আলু গুলো দিয়ে দিন এরপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন এবং চুলার আচঁটা কমিয়ে দিন। মাঝে মধ্যে একটু নাড়া চাড়া করুন। এভাবে ১০-১২ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর নামিয়ে ফেলুন।
এইবার একটি পাএে ঢেলে ফেলুন। অনেক সময় আমাদের ব্যস্ততার জন্য সবসময় বাজারে যাওয়া হয়ে ওঠে না। আর সচারাচর এই উপাদান গুলো আমাদের ঘরেই থাকে। আর তখন আমরা আমাদের এই ঘরে থাকা উপাদান গুলো কাজে লাগিয়ে মজাদার এই ডাল আলুর দোপিয়াজি রিসিপি টি তৈরী করে উপভোগ করতে পারি।
কুচোচিংড়ির নাগেটস রেসিপিঃ
কুচোচিংড়ির নাগেটস তৈরী করতে আপনাদের যে উপকরণ গুলো প্রয়োজন হবেঃ-
উপকরণঃ
(১)কুচোচিংড়ি ২ কাপ, (২) পেঁয়াজ কুঁচি ২ টেবিল চামচ, (৩) কাঁচা মরিচ কুঁচি ১ চা চামচ, (৪) লংকা গুড়ো ২ চা চামচ, (৫) পোলাও চালের গুঁড়ো ১ কাপ, (৬)জিরা গুড়ো ১/২ চা চামচ, (৬) ধনেগুঁড়া ১/২ চা চামচ, (৭) কনফ্লাওয়ার ১ কাপ, (৮) চিনি ১ চা চামচ (৯) লবন স্বাদ মতো।
তৈরীর প্রণালীঃ
আপনি প্রথমে কুচোচিংড়ি গুলোকে ধুয়ে হালকা আঁচে ভেজে ফেলুন। এরপর ভাজা চিংড়ি গুলোকে ব্লাইন্ডারে ব্লাইন্ড করে নিন, এখন একটি পাএে ব্লাইন্ড করা চিংড়ি মাছ এরপর একে একে সকল উপকরণ পেঁয়াজ কুঁচি, কাঁচা মরিচ কুঁচি, লংকা গুড়ো, পোলাও চালের গুঁড়ো, জিরা গুড়ো, ধনে গুড়ো, কনফ্লাওয়ার, চিনি ও পরিমাণ মতো লবন মিশিয়ে উপকরণ গুলো মাখিয়ে ফেলুন।
এরপর গোল আকৃতির মতো করে রো বানিয়ে ফেলুন। এখন কড়াইয়ে পরিমাণ মতো তেল ঢেলে দিয়ে গরম করতে থাকুন। তেলটা ভালো ভাবে গরম হয়ে গেলে এক একটা করে রো তেলের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে নাড়িয়ে চারিয়ে ভেজে ফেলুন।
এইবার একটি পাএে সুন্দর করে সাজিয়ে বিকেলে অবসর সময়ে বাড়ির সবার সাথে গল্প করতে করতে উপভোগ করুন গরম গরম কুচোচিংড়ির নাগেটস।
মিষ্টি আমড়ার কোর্মার রেসিপিঃ
মিষ্টি আমড়ার কোর্মা তৈরি করতে আপনাদের যে সকল উপকরণ গুলো প্রয়োজন হবেঃ-
উপকরণঃ
(১) আমড়া লাগবে ১০-১৫ টি( আমড়া গুলো মিষ্টি হতে হবে, (২) সরিষার তেল ১ কাপ, (৩) পাঁচফোড়ন, (৪) জিরাগুঁড়া ১/২ চা চামচ, (৫) ধনেগুঁড়া ১/২ চা চামচ, (৬) দারুচিনি গুড়ি ১/২ চা চামচ, (৭) তেজপাতা ৩-৪ টা, (৮) চিনি ১ টেবিল চামচ, (৯) কাঁচা মরিচ ৭-৮ টা, (১০)গোলমরিচের গুড়ি ১/২ চা চামচ, (১১) লবণ প্রয়োজন মতো।
তৈরীর প্রণালীঃ
আপনি প্রথমে আমড়া গুলোর খোসা ছাড়িয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে হালকা সিদ্ধ করবেন। সিদ্ধ হয়ে গেলে একটি পাএে আমড়া গুলো ঢেলে রাখুন।এখন সিদ্ধ করা আমড়া গুলোকে ছুরি দিয়ে ভালো মতো কেঁচে দিন।যেন আমড়ার মধ্যে মসলা গুলো প্রবেশ করতে পারে।
আমড়া গুলো কেঁচা হয়ে গেলে একটি কড়াইয়ে পরিমাণ মতো সরিষার তেল নিয়ে গরম করতে থাকুন। খেয়াল রাখবেন তেলটা যেন ভালো ভাবে গরম হয়। তেল গরম হয়ে গেলে তেজপাতা, পাঁচফোড়ন এবং কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাজতে থাকুন।
ভাজা হয়ে গেলে জিরা গুড়ো, ধনে গুড়ো, দারুচিনি গুঁড়ো, গোলমরিচগুঁড়া, চিনি এবং পরিমাণ মতো লবন নাড়াচাড়া করতে থাকুন।এখন সামান্য পানি দিয়ে ৫ মিনিট মসলা টাকে কষিয়ে নিন। কষানো হয়ে গেলে সামান্য পানি দিয়ে কেচেঁ রাখা আমড়া গুলো ঢেলে দিয়ে ঢেকে দিন।
১০-১২ মিনিট হালকা আঁচে এভাবে রাখবেন। আর একটা জিনিস লক্ষ্য রাখবেন আমড়া কেঁচার সময় যেন আমড়াটা আস্ত থাকে। ১০-১২ মিনিট হয়ে গেলে এবার নামিয়ে ফেলুন।
এবার সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করুন রাতে গরম গরম খিচুড়ির সাথে। খিচুড়ির সাথে আচার কথাটি শুনলে এমনিতেই জিহবায় জল চলে আসে। তাই দেরি না করে উপভোগ করুন মজার এই রেসিপি টি।
পরিশেষে আপনাদের উদ্দেশ্য বলতে চাই বাসায় বসে সবাই মজাদার এই রেসিপি গুলো তৈরী করবেন এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাবার গুলো উপভোগ করবেন। যদি আমার রেসিপি গুলো আপনাদের পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে আমাকে অবশ্যই জানাবেন।
ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন।
You must be logged in to post a comment.