পরিবারে বিভিন্ন কারণে অশান্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে।এ কারণগুলো শুরু থেকেই যদি এড়িয়ে চলা যায়,তাহলে একটি সুখী ও আনন্দময় পরিবার গড়ে তোলা সম্ভব এবং সেই সুখ ও আনন্দকে ধরে রাখা সম্ভব।সাধারণত যেসব কারণে পরিবারে অশান্তি দেখা দিয়ে থাকে,সেগুলো আমি আজ আমার আর্টিকেলে তুলে ধরব।
১. শুশুর-শাশুড়ী ও পুত্রবধূর মাঝে সুসম্পর্ক না থাকাঃ-
সাধারণত শুশুর শাশুড়ী নিজের ছেলের উপর অধিকার খাটাতে চায় এবং তাকে নিজেদের অধীনে রাখতে চায়।এমনকি নিজের ছেলের থেকে যেরকম আনুগত্য ও খেদমত পেতে চায়,ঠিক সেরকম পুত্রবধূর থেকেও তা পেতে চায়।যার কারণে তারা তাদের পুত্রবধূর সাথে খুব বাদীসুলভ ও খারাপ ব্যবহার করে থাকে।
অনেক সময় তারা নিজেদের পুত্রবধূর থেকে জোরজবরদস্তি করে আনুগত্য ও খেদমত পেতে চায়।এতে করে পুত্রবধু নিজের মনের থেকে মানসিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার স্বাধীন চেতনা আঘাতগ্রস্ত হয়ে থাকে।একসময় পুত্রবধু তাদের থেকে আলাদা হয়ে যেতে চায়।
২. যৌথ পরিবার থাকাঃ-
অনেকসময় একান্নভুক্ত পরিবার থাকার কারণে সংসারের শান্তি বিনষ্ট হয়ে থাকে।আর বিশেষ ভাবে যদি স্ত্রীর পৃথক ঘরের ব্যবস্থা না করা হয়,তবে সংসারে প্রায় সময় ঝগড়াঝাটি লেগে থাকে।কেননা যৌথ পরিবার থাকার কারণে স্ত্রী তার স্বাধীন মতো সংসার করতে পারে না।এই যেমন- তার স্বামীর অর্থ সম্পদকে সুষ্ঠু ভাবে সংরক্ষণ করতে পারে না।
আবার স্বাধীন ভাবে তার স্বামীর সাথে বিনোদন করতে পারে না।এমনকি যৌথ পরিবার ও একান্নভুক্ত সংসার থাকার কারণে পুত্রবধূর সাথে তাদের শুশুর শাশুড়ী,ননদ,দেবর ইত্যাদি এদের সাথে ঠিকমতো বনিবনা হয় না।এতে করে সংসারে কখনো শান্তি বিরাজ করে না।
৩. আয়-ব্যয়ের মাঝে ভারসাম্য না থাকাঃ-
প্রত্যেক মানুষের উচিত তার আয় অনুযায়ী ব্যয় করা।অনেকেই প্রায় তাদের সংসারে নিজের আবেগের বশবর্তী হয়ে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি করে ফেলে।এভাবে চলতে চলতে তারা একসময় ঋনী হয়ে পড়ে এবং তাদের সংসারে অশান্তি বিরাজ করে।তাদের এই ঋন করার কারণে সবার কাছে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়।যার ফলে স্বামী স্ত্রীকে মানসিক ভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।
কুরআনে একদিকে কৃপনতা করতে নিষেধ করা হয়েছে,আবার অন্যদিকে বেশি হাত খোলা হতে নিষেধও করেছেন।এছাড়া নিজেদের ভবিষ্যতেের জন্য টাকা পয়সা জমানোর কথা কুরআন হাদীসে বলা হয়েছে।অনেক জায়গায় দেখা যায়,নিজেদের সবার সামনে বড় দেখানোর জন্য টাকা পয়সা বেশি পরিমাণে খরচ করে থাকে।
৪. স্ত্রীকে সংসার চালানো শিখিয়ে না দেওয়াঃ-
গাড়ি চালাতে হলে আগে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়,তারপর রাস্তা ঘাটে গাড়ি চালাতে হয়।ঠিক সেরকম পরিবারে স্ত্রী একজন নতুন মানুষ।তাকে সংসারের যাবতীয় বিষয় ভাল করে বুঝিয়ে দিয়ে তার হাতে সংসারের সমস্ত দায়ভার দিতে হবে।এমনকি তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে,যেন সে সবসময় আয় বুঝে ব্যয় করে।
এতে করে সংসারের অবস্থা দিন দিন ভালো হবে।আবার স্ত্রীকে সবসময় ধনবান পরিবারের সাথে মিশতে না দিয়ে গরীব পরিবারের মহিলাদের সাথে মিশতে দিতে হবে।এতে করে তার মধ্যে অহংকার কমে যাবে এবং সংসারে সে আয় ব্যয় বুঝে খরচ করবে।এতে সংসারে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা হবে না।
এর পাশাপাশি স্বামীর উচিত,সে যেন তার স্ত্রীকে সংসার চালানোর কাজে সহযোগিতা করে থাকে।
৫. স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সন্দেহ থাকাঃ-
স্বামী স্ত্রী একে অপরের চরিত্রের ব্যাপারে সন্দেহ করে ফেললে এর থেকে সংসারে চরম অশান্তি দেখা দিতে পারে।এছাড়া দলীল প্রমাণ ব্যতীত কারও ব্যাপারে সন্দেহ করা এবং কুধারণা করা একদম অন্যায় ও চরম পাপ।অতএব,দলীল প্রমাণ ছাড়া সন্দেহ করা নিজের মনের থেকে একদম ঝেড়ে ফেলতে হবে।
যদি কোনো কারণে নিজের মনের মধ্যে সন্দেহ জেগে উঠে,তবে তার উচিত সে যেন বিষয়টি নিজের স্ত্রীকে বুঝিয়ে বলে এবং আল্লাহর কাছে এর থেকে বেঁচে থাকার জন্য দোয়া করে। এতে করে নিজের মনের মধ্যে সন্দেহ,রাগ ক্ষোভ ইত্যাদি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
৬.একাধিক বিয়ে করাঃ-
ইসলামে বিভিন্ন প্রয়োজনের ভিত্তিতে একাধিক বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে।তবে এর জন্য শর্ত হলো পুরুষ তার সকল স্ত্রীর মধ্যে ইনসাফ ও সমতা বজায় রাখবে।তাছাড়া স্বামী আরো বিয়ে করুক,ঘরে আরো স্ত্রী আনুক,এটা সাধারণত স্ত্রী মেনে নিতে পারে না।যার কারণে পরিবারে অশান্তি লেগে যায় এবং নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে স্বামীর উচিত,যদি একান্ত কারণে তাকে বিয়ে করতে হয়,তবে বুঝতে হবে,যে কারণে তার স্ত্রী একাধিক বিয়ে মেনে পারছেন না অর্থাৎ তার আদর সোহাগ কমে যাওয়া,তার সন্তানের অবহেলিত হওয়া ইত্যাদি ব্যাপার গুলোর আশঙ্কা স্ত্রীর মনের মধ্যে থেকে একদম দূর করে দিতে হবে।এর জন্য স্বামী তার সকল স্ত্রীর মধ্যে ইনসাফ ও সমতা বজায় রাখবে।
৭. তালাক নিয়ে নানাবিধ কুসংস্কারঃ-
বর্তমান সমাজে তালাক নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা রকম কুসংস্কার রয়েছে।অনেক জায়গায় এই তালাক নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি ও বিশৃঙ্খলা করে থাকে।সংসারে একটু মনোমালিন্য ও ঝগড়াঝাটি লাগলে অনেক বোকা স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে থাকে।এতে করে স্ত্রী তার থেকে চলে যেতে চায়।
কেননা কোনো স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে তালাক শব্দটা শুনতে চায় না।আবার তালাক দেওয়ার পরে অনেকের হুশ ফিরে আসলে,এর জন্য অনেক আফসোস করে থাকে।কিন্তু তালাক দেওয়ার পরে স্ত্রী তার জন্য আর জায়েজ থাকে না।এতে করে সে নানাভাবে পারিবারিক অশান্তিতে পড়ে যায়।মনে রাখতে হবে,কখনো বিশেষ প্রয়োজনে ও নিতান্ত জরুরি ঠেকা ব্যতীত তালাক দেওয়া স্ত্রীর জন্য জুলুম ও চরম অন্যায়।
৮.অত্যাধিক পরিমাণে মহর ধার্য করাঃ-
অনেক সময় স্বামী স্ত্রীর মাঝে মিল ও সুসম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও স্বামী তার স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে পারে না,শুধুমাত্র তার ঘাড়ের উপর অত্যাধিক পরিমাণের মহর নির্ধারণ করার কারণে। আবার অনেক সময় এই বড় অংকের মহর থাকার কারণে স্ত্রী তার স্বামীকে যথাযথভাবে তোয়াক্কা করে না,এমনকি তার স্বামীকে নিজের অধীনে রেখে দিতে চায়।
কেননা সে ভেবে থাকে,তার স্বামী কখনো মহর শোধ করতে পারবে না,এর জন্য তাকেও কিছু করতে পারবে না।যার কারণে সংসারে একসময় অশান্তির কালো ছায়া নেমে পড়ে।
৯. যৌতুক প্রথাঃ-
বর্তমান আমাদের সমাজে যৌতুক প্রথা একটা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে।এর জন্য অনেক পরিবারে বিরাট অশান্তি বিরাজ করছে।এছাড়া এই যৌতুকের কারণে বাংলাদেশের বহু নারীকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়,এমনকি অনেক নারীকে এর জন্য নিজেদের জীবন দিতে হয়েছে। যৌতুক ইসলামের দৃষ্টিতে একদম হারাম এবং সামাজিক অপরাধ।
এটা একটা সমাজের বর্তমান করোনা ভাইরাসের মতো সংক্রামক ব্যাধি।যৌতুকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।যে যৌতুক নিবে তার জন্য আইনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।একটা কথা সবসময় আমাদের মনে রাখতে হবে,যৌতুক আদান প্রদান করা চরম অন্যায় ও পাপকাজ।
১০. নিজের সন্তানদের দ্বীনদার না হওয়াঃ-
সন্তান যদি পিতা মাতার অবাধ্য হয়,তবে সংসারে বিরাট অশান্তির কালো মেঘ নেমে আসে।আবার সন্তান যদি দ্বীনদার না হয়,তবে মা বাবার একসময় চরম কষ্ট ভোগ করতে হয়। বর্তমান সমাজে যুবকরা একতম অধঃপতনের দিকে চলে গেছে।তারা এখন সমাজে নানা রকম অপরাধ করে বেড়াচ্ছে।এদের জন্য মুলত তাদের পরিবার দায়ী।
এমনকি ছেলেদের মধ্যে কুরআন হাদিসের জ্ঞান না থাকার জন্য তারা মা বাবাকে শেষ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে।আবার পরিবারে সন্তানের জন্য মা বাবা তাদের ঠিকমতো সময় দেয় না।যার ফলে তারা আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।এতে করে সংসারে চরম অশান্তি লেগে যায়।
You must be logged in to post a comment.