প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ মোবাইল ও কম্পিউটারের ওপর ঝুকে পড়ছে। বিশেষ করে করোনাকালীন এই সময় স্কুল,কলেজ বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা ফেসবুক,পাবজি ও ফ্রি-ফায়ার নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকে।
এছাড়া অনলাইন ক্লাস,অফিসের কাজ,আত্নীয়স্বজনদের সাথে কথা বলা ইত্যাদির জন্য আমাদের মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়। দীর্ঘক্ষণ মোবাইল-কম্পিউটারের স্কিনে চোখ রাখার ফলে অনেকেই চোখের নানা রকম সমস্যায় পড়ছেন।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে তাদের প্রায় ৮৮ শতাংশ ব্যবহারকারীদের নানা রকম সমস্যা বা উপসর্গ দেখা দেয়।
উপসর্গ গুলো হলোঃ
মাথা ব্যাথা,চোখ ব্যাথা,চোখে ঝাপসা দেখা,চোখে জ্বালাপোড়া,চোখে ক্লান্তিবোধ করা,একটি বস্তু দুটি দেখা,ঘাড়ে ও কাধে ব্যাথা।
উপসর্গের কারনঃ
বিশেষজ্ঞদের মতে কম্পিউটার,ল্যাপটপ,মোবাইল থেকে বের হওয়া নীল রশ্মির কারনে চোখে শুস্কতা দেখা দেয়।এই রশ্নি চোখের রেটিনার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যার ফল স্বরুপ নানা রকম উপসর্গ দেখা দেয়।
আসুন জেনে নেই যেভাবে চোখের যত্ন নেবেন
- একটানা কম্পিউটার ও মোবাইল ব্যবহার করবেন না। ১ ঘন্টা কাজ করার পর কিছুক্ষণ হাটাহাটি করুন। অথবা জানালার বাইরে সবুজ দৃশ্য দেখুন।
- ঘরের আলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে কম্পিউটার বা মোবাইলের ব্রাইটনেস রাখুন। খেয়াল রাখবেন কম্পিউটার বা মোবাইলের আলো যেনো অতিরিক্ত বেশি না হয়।
- বিশেষজ্ঞদের মতে অন্ধকারে কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করলে এর নীল আলো সরাসরি চোখের ওপর পড়তে থাকে যা রেটিনার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই অন্ধকারে কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার বর্জন করুন।
- সারাদিনে ১০ থেকে ১৫ বার চোখে পানির ঝাপটা দিন। এতে চোখ ঠান্ডা থাকবে,চোখ আদ্র হবে ও রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।
- কম্পিউটারের স্ক্রিন চোখ থেকে ২৫ থেকে ২৬ ইঞ্চি এবং মোবাইল ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি দূরে রেখে ব্যবহার করুন।
- কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিন নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। ময়লা ও দাগযুক্ত স্ক্রিন দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারনে 'ক্রনিক হেডেক' হতে পারে।তাই স্ক্রিন পরিষ্কার রাখাটা জরুরি।
- যারা নিয়মিত দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করেন তাদের প্রতিবছর অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করা উচিত।
- স্ক্রিনে পড়ার জন্য ছোট ফ্রন্ট ব্যবহার করা উচিত নয়। চোখের জন্য আরামদায়ক ফ্রন্ট নির্বাচন করুন।
- আমরা অনেকেই গেমিং করার সময় বা গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় একটানা স্ক্রিনে তাকিয়ে থকি। চোখের পলক ফেলতেই ভুলে যাই। যা মোটেই ঠিক নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে নিয়মিত বিরতিতে চোখের পলক ফেললে চোখে ময়েশ্চার তৈরি হয়। যা চোখকে শুস্কতার হাত থেকে রক্ষা করে।
- এরপর যেটা প্রয়োজন সেটা হলো নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। এতে শুধু চোখই সুস্থ থাকবে না শরীরও সুস্থ থাকবে।
- চোখের সুস্থতায় টাটকা শাকসবজি খান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট,ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি। যা চোখের কর্নিয়া ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া গাজর,বাদাম ও কমলালেবু খান। এগুলো আপনার চোখের সুস্থতায় ভূমিকা রাখবে।
চোখের ব্যায়াম
হ্যা ঠিকই পড়েছেন। শারীরিক সুস্থতায় যেমন বিভিন্ন ব্যায়াম আছে,তেমনি চোখের সুস্থতায়ও কিছু চোখের ব্যায়াম আছে। যে ব্যায়ামগুলো চোখ ভালো রাখে। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখে আসি কিছু চোখের ব্যায়াম।
- চোখের একটি ব্যায়াম হলো ২০-২০-২০। এই ব্যায়ামটার নামটা যেমন মজাদার তেমনি ব্যায়ামটিও বেশ মজাদার। কারন এর জন্য মাত্র ২০ সেকেন্ড সময় ব্যায় করতে হবে। যেভাবে ব্যায়ামটি করবেনঃ প্রতি ২০ মিনিট পরপর ২০ মিটার দূরের কোনো বস্তুর উপর ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকবেন। কি বেশ মজার না? এই ব্যায়াম চোখে ঝাপসা দেখা অনেকটাই দূর করবে।
- সোজা হয়ে বসে আপনার বুড়ো আঙ্গুল টা চোখের সামনে নিয়ে আসুন। আঙ্গুলের দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন। এরপর আঙুল বরাবর ১০ মিটার দূরের কোনো বস্তুর উপর দৃষ্টি স্থাপন করুন। এভাবে ২,৩ বার করুন। এই ব্যায়াম চোখ নমনীয় করে।
- সোজা হয়ে সমান্তরাল সামনের দিকে তাকান। এরপর মাথা না নড়িয়ে শুধু চোখ উপরের কোনো বস্তুতে দৃষ্টি স্থাপন করুন। এভবে ৮-১০ সেকেন্ড রাখুন। একইভবে নিচে,ডানে ও বামে তাকিয়ে এই ব্যায়াম করুন।
- ১৫-২০ মিটার দূরত্বে তাকিয়ে অনুভূমিক ৪ এর মতো করে চোখ ঘোরান। ৫,৬ বার করে ঘোরান।
- ঘরের আলো নিভিয়ে একদম অন্ধকারে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকুন। এতে করে আপনার চোখে আরামবোধ করবেন। দিনের বেলা হলে দরজা জানালা বন্ধ করে দুই হাতের তালু দিয়ে চোখ ঢেকে ব্যায়ামটি করতে পারেন।
- কাজের ফাঁকে ফাঁকে দারিয়ে হাত,কাধ নড়াচড়া বা অঙ্গসঞ্চালন করলে কাধ,ঘাড় এর ব্যাথার উপসর্গগুলো থেকে মুক্ত থাকা যায়। পাশাপাশি স্বল্প বিরতির জন্য চোখও চাপমুক্ত হয়।
- চোখ ঘড়ির কাঁটার মতো কয়েকবার ঘোরান। এরপর আবার বিপরীত দিকে ঘোরান। চোখ উপর-নিচেও ঘোরাতে পারেন। এভাবে কয়েকবার করুন।
- ঘুমানোর আগে কম্পিউটার,মোবাইল ব্যবহারের অভ্যাস ত্যাগ করুন। ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে মোবাইল,কম্পিউটার ব্যবহার বাদ দিতে হবে।
- চশমা পড়ে কাজ করলে অ্যান্টিগ্লেয়ার লেন্স ব্যবহার করলে ভালো হয়। এটি নীল রশ্নি দূর করতে সক্ষম। যার কারনে আলো সরাসরি চোখের উপরে না পরে কেটে যায় এবং ছেড়ে যায়।
উপরের পদ্ধতিগুলোর অনুসরণ ও ব্যায়ামগুলো সঠিক নিয়মে করলে কিছুদিন পর এর সুফল বুজতে পারবেন।
You must be logged in to post a comment.