কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার সম্পর্কে আধুনিক গবেষণা

ইন্টারনেট কম্পিউটারের ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার আগে ইন্টারনেটের পরিচিতি তুলে ধরা আবশ্যক। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের লোকদের সাথে পরিচিত হওয়া যায়। নিজের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করা যায়। অমুসলিম কোন ছেলে বা মেয়ে সম্পর্কে জেনে নিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে গল্প করা যায় ।বলা দরকার এ রকম কাজের চেয়ে জায়নামাজে বসে আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা অধিক উত্তম।

মনে রাখতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্য জাতির অনুকরণ করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। এর অনিবার্য পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম। ভেবে দেখার বিষয় হচ্ছে আমাদেরকে কি অন্য জাতির লোকদের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে।

ইসলামে এ রকম বিপথগামিতা সমর্থন করেনা। বরং এসব কিছু নিন্দা করে। কম্পিউটারের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে এ যুগের ছেলে মেয়েরা নিজেদের শরীর স্বাস্থ্য নষ্ট করছে।                               

কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম।

রিজুয়ান নামের এক কিশোর কম্পিউটারের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতো। পানাহারের কথা ভূলে যেতে।মা চিৎকার চেঁচামেচি করেও তাকে খাবার টেবিলে বসাতে পারত না। সব কিছুই  বাড়াবাড়ি ক্ষতিকর। কম্পিউটার অধিক ব্যবহারের পরিণতিতে রেজওয়ানের মাথা ব্যথা শুরু করে ।ডাক্তার পরীক্ষা করে জানালো কম্পিউটার অধিক ব্যবহারের কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে তার মাথা ব্যথার সমস্যা দেখা দিয়েছে।

লাখ লাখ মানুষ বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকে বলে তারা চোখের অসুখে ভোগে। ডাক্তাররা এ রোগের নাম দিয়েছেন কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম। চোখের সমস্যার দ্রুত বিস্তার লাভ করছে।আশির দশকের শুরুতে এ রোগের উদ্ভব। আধুনিক প্রযুক্তির পরিবর্তনের কারণে রোগীর মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে বর্তমানে চল্লিশ লাখ লোক কম্পিউটার ব্যবহার জনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আশির দশকে সংখ্যা ছিল 15 লাখ।

যারা প্রতিদিন চার ঘণ্টার বেশি সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকে তারা চোখের অসুখে আক্রান্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। চশমা প্রস্তুতকারক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ধুল এনড লোমারের  কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমানে বিশ্বে কম্পিউটারের কারণে চোখের রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় 60 লাখ।

রিপিয়েটেটিব স্ট্রেস ইনজুরি

চোখের উপর কম্পিউটারের কারণে যে চাপ সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় রিপিয়েটেটিব স্টেজ ইনজুরি। কম্পিউটার স্ক্রিনের পিকমেল  সেই কোনট্রাসট এর অধিকারী নয় যা মুদ্রিত লেখায় পাওয়া যায় ।এ কারণে কম্পিউটার স্ক্রিনে কোন জিনিস পাস করার জন্য চোখের অধিকতর চাপ সৃষ্টির প্রয়োজন  দেখা দেয়।এ কারণে চোখের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় কারণ এ সময় স্বাভাবিকভাবে মানুষ প্রতি মিনিটে চোখের পলক কম ফেলে।

খবরের কাগজ পড়ার সময় চোখের পলক  বেশি পড়ে।কিন্তু কম্পিউটার ব্যবহারের সময় এর  পলক কম পড়ে।ফলে চোখ শুকিয়ে যায় ।ঘন ঘন চোখের পলকে চোখ ভেজা থাকে। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে কম্পিউটারের সামনে বসে চোখের পলক ফেলা স্বাভাবিক করতে হবে ।জোরে নিঃশ্বাস নিতে হবে এবং মাঝে মাঝে চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে এতে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক হবে ।মাঝে মাঝে তাকাতে হবে এর ফলে চোখ শুকিয়ে যাবে না।

যদি কারো চোখ পূর্ব হতে অসুখ থেকে থাকে তবে কম্পিউটার ব্যবহারে সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে ।বিশেষত যারা কাছের জিনিস ভালো দেখতে পায় না তারা অধিক সমস্যার সম্মুখীন হয় বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের এ সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে ।আলোর স্বল্পতা এবং মনিটর ভালো না থাকলেও চোখের উপর চাপ পড়ে । চোখের অসুখ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বর্তমানে বাজারে বিশেষ রকমের চশমা বিক্রি হচ্ছে তবে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে খেয়ে চশমা ব্যবহার করতে হবে।                                        

ইন্টারনেট এর অধিক ব্যবহার সামাজিক জীবন প্রবাহিত হয়:-।

ইন্টারনেটের অধিক ব্যবহারের কারণে মানুষের সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।মানুষ হয়ে যাচ্ছে নিঃসঙ্গ একা ।ব্রিটিশ ম্যাগাজিন কম্পিউটার সাইন্সের মতে ,ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকল পরিবারে এর ব্যবহার অপরিহার্য মনে করা হচ্ছে।

কম্পিউটার ভাইরাস থেকে সাবধানতা।

ভাইরাস শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। উচ্চশক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রনিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সব ভাইরাস শনাক্ত করা যায়। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে যে ,এই ভাইরাস কম্পিউটারে সংক্রমিত হয় ।মানবদেহে এসব ভাইরাস সৃষ্টি করে । সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে মানুষের পাশাপাশি এসব ভাইরাস কম্পিউটার কে আক্রমণ করছে । সেন্টার ফর টেকনোলজি স্টাডিজের চেয়ারম্যান বলেন, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে ,মানুষের দেহে সংক্রমিত ভাইরাস এবং কম্পিউটারের সংক্রমিত ভাইরাস হতে পারে ।

যেসব ভাইরাস মানবদেহের জন্য সৃষ্ট ।যেসব ভাইরাস কম্পিউটারের জন্য সৃষ্ট তা সঠিকভাবে বলা যাবে না যেসব ভাইরাস মানুষের ক্ষতি করে কিনা।তবে এটা নিশ্চিত যে ,ভাইরাস আক্রান্ত মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়। কিছু ভাইরাস মানুষের স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয় এবং মানসিক ডাক্তারের মতে, এসব ভাইরাস সৃষ্টির কারণ হতে পারে ইনফারেট ভাইরাস কম্পিউটার একটি ফ্রিকুয়েন্সি থেকে তৈরি হয় ।

সেন্টার ফর টেকনোলজি স্টাডিস এর বিশেষজ্ঞদের মতে,কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে থাকে ।ঔষধ কোম্পানি এন্টিভাইরাস তৈরীর চেষ্টা করছে যাতে কম্পিউটার ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

মানবদেহে কম্পিউটারের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

আধুনিক জীবনে কম্পিউটার এর গুরুত্ব উপকারিতার কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এর ব্যবহারের ক্ষতি রয়েছে ।অধিক কম্পিউটার ব্যবহারের কারণে টার্মিনাল সিকনেস রোগ দেখা দিতে পারে ।

এ রোগের সিমটম হচ্ছে মাথার সামনের অংশে ব্যথা হবে । চোখ লাল হবে এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে এসব উপসর্গের ফলে চোখের উপর চাপ সৃষ্টি হবে এছাড়া ঘন্টার পর ঘন্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকলে কোমর ব্যথা,গিরায় গিরায় ব্যথা দেখা দিবে এবং মস্তিষ্ক প্রভাবিত হবে।

উত্তম মনিটর ক্রয় করতে হবে।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ দের মতে ,চশমা ক্রয় এর পরিবর্তে উত্তম মনিটর ক্রয় করা দরকার। যে মনিটরে ফ্লিকার রেট কম হবে ।কারণ ক্রিকেট বা কম্পন বেশি হলে তাড়াতাড়ি চোখের ক্লান্তি আসবে ।

তবে চশমা ব্যবহার অনেকের জন্য উপকারী ।কাজের ধারা পরিবর্তন করে চোখে অসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

চোখ পরীক্ষা করাবেন।

অনেকে এ কথা জানেনা যে ,চোখের একাধিক অসুখের জন্য কম্পিউটার দায়ী।কম্পিউটার স্ক্রিনের প্রতি তাকিয়ে যদি মাথা ব্যাথা অনুভূত হয় তবে অবিলম্বে চক্ষু বিশেষজ্ঞ দিয়ে চোখ পরীক্ষা করবেন।

মনে রাখবেন চোখ মানবদেহের অত্যন্ত স্পর্শকাতর অঙ্গ ।দেহে তার শতকরা 80 ভাগ কাজ দেখে হয়। নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করাবেন ।মনে রাখবেন চোখ আপনার অমূল্য সম্পদ।           

কম্পিউটারের জন্য কেমন মনিটর উত্তম।

যারা কম্পিউটারের স্কিন এর প্রতি তাকিয়ে চোখে ব্যথা অনুভূত করেন ।তাদের উচিত উত্তম মনিটর ক্রয় করা। 17 ইঞ্চি মনিটর সব বয়সের লোকদের জন্য উপযোগী। এতে মনিটরে রিফ্রেশ রেট প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে সাতবার থর থর করে ।

এমন স্কিন আপনাকে সতেজ রাখবে।

চোখ ভালো রাখার পরামর্শ

চোখ ভালো রাখার জন্য বারবার চোখের পলক ফেলুন ।চোখ শুকিয়ে যাচ্ছে মনে হলে চোখে পানির ঝাপটা দিন ।চেষ্টা করবেন যেন স্ক্রিনের উপর বাল টিউব বা জানালার আলোছায়া না পরে ।মনিটরকে চোখের 4 থেকে 9 ইঞ্চি ব্যবধানে রাখবেন। 

যেন প্রয়োজনে একটু পিছিয়ে গিয়ে দূরে থেকেও পড়তে অসুবিধা না হয়।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles