কম্পিউটার শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে। এর অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কম্পিউটার এর আভিধানিক অর্থ ইলেকট্রনিক যন্ত্র গণক হলেও কম্পিউটার শুধু গণনার কাজ করছে না এর ব্যবহার এখন ব্যাপক ও বিস্তৃত । বর্তমানে কম্পিউটার বলতে বোঝায় , ইলেকট্রনিক নির্ভর এমন একটি তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় বিভিন্ন তথ্য ও নির্দেশ গ্রহণ করে এবং সে তথ্য সংরক্ষন করে অতি দ্রুত জটিল সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে যার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কম্পিউটারের মধ্যে রয়েছে তিনটি প্রধান যন্ত্রমগজ- ১. সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট ২. ইনপুট এবং ৩. আউটপুট। প্রসেসিং ইউনিট এর থাকে যে সকল সমস্যা নিয়ে কাজ করা হবে তার সমস্ত তথ্য । ইনপুট হচ্ছে যা তথ্য সংবলিত নির্দেশ গ্রহণ করে। আউটপুট হচ্ছে যা গণনা সম্পর্কিত ফলাফল প্রকাশ করা।
কম্পিউটারের আবিষ্কার :
বর্তমান যুগে কম্পিউটার খুবই বিখ্যাত এবং চিরপরিচিত একটি যন্ত্র এবং চিরপরিচিত একটি যন্ত্র। কম্পিউটার হঠাৎ করে আবিষ্কৃত হয়নি। এর পেছনে রয়েছে বহুকালের বহুজনের অবদান। যোগ বিয়োগ করতে সক্ষম এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন ক্লেইলি টাস্কের,১৬৪২সালে। গুন ভাগ করতে পারে এই ধরনের যন্ত্র 1571 খ্রিস্টাব্দে তৈরি করেন গন ফ্রাইড। কিন্তু ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ চার্লস ব্যাবেজই হলেন আধুনিক কম্পিউটারের জনক। ব্যাবেজ এই যন্ত্র তৈরি করতে গিয়ে প্রথমে ডিফারেন্স ইঞ্জিন এবং অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামে দুটি কম্পিউটার তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তখনও সূক্ষ্ম ও নানা যন্ত্রাংশ তৈরি না হওয়ার তিনি আধুনিক কম্পিউটারের পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে সক্ষম হননি।
তবে আজ আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করছি তাতে ব্যাবেজের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হয়। তার কম্পিউটারের গঠনতন্ত্রের পাঁচটি অংশ রয়েছে-১. স্টোর, ২ মিল, ৩. কন্ট্রোল, ৪. ইনপুট, ৫. আউটপুট। হার্বাট ইউনিভার্সিটি এবং আইবিএম কোম্পানি যৌথভাবে ১৯৪৪ সালে প্রথম ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল কম্পিউটার তৈরি করে । অবশ্য প্রথম পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার ইয়ানিক তৈরি হয় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে।
পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই কম্পিউটারের ওজন ছিল 30 টন , আয়তন ছিল বিশাল। লম্বা ও 20 ফুট চওড়া ঘরের সবগুলো দেয়ালজুড়ে ছিল এই যন্ত্রপাতি। আর বর্তমানে এর আকার নেমে এসেছে চ্যাপ্টা একটি বইয়ের মত যার নাম ল্যাপটপ। এ আয়তন ও কমানোর প্রয়াস চলছে।
কম্পিউটারের গঠন কাঠামো :
একটি কম্পিউটারের অনেক যন্ত্রাংশ থাকলেও এর গঠনরীতির প্রধান দুটি রূপ পরিলক্ষিত হয়। কি হলো সফটওয়্যার আর অন্যটি হার্ডওয়ার। কম্পিউটার সেসব তথ্য নিয়ে কাজ করে তাকে বলে ডেটা বা উপাত্ত। যে ক্রমবিন্যাস পদ্ধতিতে কাজ করে তার নাম প্রোগ্রাম । কম্পিউটারকে তথ্য নির্দেশনা প্রদানের জন্য যে বিশেষ ভাষা ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ।
এই সব কিছুকে একত্রে বলা হয় কম্পিউটার সফটওয়্যার। পক্ষান্তরে হার্ডওয়ার এর মধ্যে পরে তথ্য সংরক্ষণের স্মৃতি অভ্যন্তরীণ কাজের জন্য ব্যবহৃত তাত্ত্বিক দিক তথ্য সংগ্রহের জন্য ইনপুট অংশে ফলাফল প্রদর্শনের জন্য আউটপুট অংশ এবং সকল ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ। এইসব যান্ত্রিক সরঞ্জামের কাজ হল প্রোগ্রামের সাহায্যে কম্পিউটারকে কর্মক্ষম করে তোলা।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আধুনিকতম সংযোজন। সমগ্র বিশ্ব সভ্যতা কে কম্পিউটারের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। আধুনিক সমাজ জীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে কম্পিউটারের স্পর্শ পড়েনি। আধুনিক বিশ্ব সভ্যতার একটি অনিবার্য অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে কম্পিউটার নিজের স্থান করে নিয়েছে ।
শিল্প ক্ষেত্রে, গবেষণা ক্ষেত্রে, শিল্পক্ষেত্রে, কিছু চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষেত্রে কম্পিউটার অনন্য অবদান রাখছে। বলা চলে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই কম্পিউটার ব্যবহার অপরিহার্য।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ :
কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটারকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা-
ক. এনালগ কম্পিউটার : এসব কম্পিউটারে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ক্রমপরিবর্তনশীল সংখ্যাকে ভৌতিক পরিমাণে রূপান্তরিত করা হয়। নির্দিষ্ট কোন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত কাছে এটি ব্যবহৃত হয়।
খ. ডিজিটাল কম্পিউটার : যেসব কম্পিউটারে সংখ্যা ব্যবহৃত হয় , তাদের বলা হয় ডিজিটাল কম্পিউটার । বৈজ্ঞানিক কাজ ছাড়াও এসব কম্পিউটার বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক অর্থাৎ সর্ব ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ।
গ. হাইব্রিড কম্পিউটার : এসব কম্পিউটারে ডিজিটাল স্টোরেজঃ এবং সুইচ থাকে কিন্তু গণনার কাজ চলে এনালগের মত । যথা-
১. সুপার কম্পিউটার
২. মেইনফ্রেম কম্পিউটার
৩. মিনি কম্পিউটার
৪. মাইক্রো কম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটার
বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন কর্তৃক ১৯৬৪ সালে IBM 1620 সিরিজের একটি কম্পিউটার আনার মাধ্যমে বাংলাদেশে কম্পিউটারের যুগের সূচনা হয়। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে কম্পিউটার শিক্ষা ব্যবহার এবং সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি অফিসে ব্যাংকে এবং ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার এর প্রচলন ঘটেছে।
কম্পিউটার খুব কম সময়ে এবং নির্ভুলভাব অনেক কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে দেয় বলে অফিস-আদালতে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায়, শিল্প কারখানা এবং অফিস-আদালতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে দেখা দিচ্ছে বেকারত্ব সমস্যা। এমন পরিস্থিতিতে, বেকার জনশক্তিকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশের কর্মবাজারে প্রেরণ করা হচ্ছে। ফলে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। অনেকেই ঘরে বসে অনায়াসেই আয় বৃদ্ধি করতে পারছে।
কম্পিউটারের ব্যাপক প্রসারের ফলে আধুনিক বিশ্বে কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় । দূর নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ-বিগ্রহ অস্ত্র নির্মাণ বিশেষত পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা নিরীক্ষা আকাশ দখলের প্রতিযোগিতা প্রবৃত্তির পেছনে কাজ করছে কম্পিউটার। এছাড়া কম্পিউটারের মাধ্যমে সৃষ্ট ইন্টারনেটে কুরুচিপূর্ণ বিনোদনের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে যেজন্য তরুণ সমাজ হচ্ছে নীতিভ্রষ্ট।
দীর্ঘসময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কোমলমতি শিশু কিশোররা আজ মুক্ত বাতাসে ঘোরাফেরা না করে ঘন্টার পর ঘন্টা কম্পিউটারের সামনে বসে গেম খেলে ও নিষিদ্ধ দৃশ্য দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছে। ইন্টারনেট আমাদের দেশের সৃষ্টি করেছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।
বিরূপ প্রতিক্রিয়া সত্য কম্পিউটার মানব শক্তির এক বিস্ময়কর বিকল্প আধুনিক সভ্যতার এক অপরিহার্য অঙ্গ। আগামী প্রজন্ম আরও দ্রুততার সঙ্গে অনেক বেশি কাজ করতে সক্ষম হবে এবং অধিক নির্ভরশীল হবে কম্পিউটারের উপর। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কম্পিউটারের অধিপত্য ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং আমাদের উচিত হবে কম্পিউটারের অধিক তর প্রশিক্ষণ নিয়ে উন্নত দেশ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা।
তবে অতিরিক্ত যন্ত্র নির্ভরতা আমাদের জন্য যন্ত্র দানবে পরিণত না করে আমরা যেন মানবতা বিবর্জিত এবং অপরিণামদর্শী না হয়ে পড়ে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে।
You must be logged in to post a comment.