আচ্ছা কেমন ছিল সেই দিনগুলি যখন কম্পিউটার ছিল না আপনি কি কখনো কল্পনা করেছেন। হয়তো করেননি কিন্তু আসলে এটা ভাবার বিষয়। কতইনা কঠিন ছিল সেই সময়কার জীবন-যাপন তাই না। কোন কিছুর হিসাব নিকাশ করার জন্য কত সময় লাগতো কত মানুষের প্রয়োজন হতো। হাতে গুনে সবকিছু কি সঠিকভাবে সম্ভব হতো!
কত প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে রাখা হতো কাগজে কোনভাবে যদি সেই কাগজ হারিয়ে যেত তাহলে সব তথ্যগুলোই হারিয়ে যেত। আর সম্ভব হতোনা ফিরেপাওয়ার তখন নতুন করে আবার সবকিছু সংগ্রহ করতে হতো। কতটা কষ্ট সাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এগুলো তাই না। আদৌ কি মানুষের পক্ষে সবকিছু এতদিন ধরে মনে রাখাও সম্ভব! শুভ তখন আর থাকতো না কারণ মুখের কথা পরিবর্তিত হয়। কিছু জিনিস মনে থাকে না বা কোন কিছু অন্যরকম ভাবে বলা হয়ে থাকে পাল্টে যায়।
এই যে ধরুন আমরা ছোটবেলা থেকে যে গল্প কাহিনী গুলো শুনে বড় হয়েছি।সে কাহিনী গুলো কি প্রথমে প্রথমে যেমন ছিল এখনো কি তেমনি আছে? নেই! কারণ লোকমুখে একের পর এক কাহিনী গল্প কথা সবকিছু পাল্টে যায়। আসল ঘটনাটি তার ভেতর চাপা পড়ে যায়। পরিবর্তন হয়ে নতুন কিছুর একটা সৃষ্টি হয়। ঠিক এরকমই সবকিছু।
আগের কার মানুষ এর কঠিন জীবন যাপনের সাথে বর্তমানে আমাদের জীবন যাপনের কতটুকুই বা মিল আছে। ১ পার্সেন্ট ও নাই। দিন পাল্টেছে। মানুষ দিনের পর দিন পরিশ্রম করে নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার করেছে। সেগুলো মানুষের জীবন যাপনকে করে তুলেছে সহজ। আজকের এই আধুনিক বিশ্বে আমরা বেঁচে আছি কত আরামে। সহজ আয়েশে কেটে যাচ্ছে দিন।
এসব কিছুই হয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে। ঠিক যেদিন প্রথম মানুষ কম্পিউটার আবিষ্কার করতে পেরেছে সেদিন থেকেই নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। শুরু হয়েছে এক নতুন জীবন ও জীবনের পথ চলা। নতুন পৃথিবী সেজে উঠেছিল মানুষের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাজে। বর্তমানে আমাদের সব কাজকর্মের সারাক্ষণ সঙ্গী হিসেবে কম্পিউটার আছে।
চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক কম্পিউটার সম্পর্কে। কম্পিউটার কি? এটি কিভাবে কাজ করে? গুরুত্ব কি? কম্পিউটার না থাকলে আমাদের কি হতো! কম্পিউটারের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে।কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার হল গণনাকারী যন্ত্র।কম্পিউটার শব্দটি গ্রিক শব্দ কম্পিউট থেকে এসেছে।কম্পিউটার হল এমন একটি যন্ত্র যা খুব দ্রুত গাণিতিক গণনা কাজ করার জন্য কম্পিউটারকে নির্দেশ দেয়া হয় কম্পিউটার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে দেয়।
চার্লস ব্যাবেজ সর্বপ্রথম আঠারশো তেত্রিশ সালে কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা দেন। তার নকশা অনুযায়ী কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছিল তাই চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়। আবার জন ভন নিউম্যানকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়। বাংলাদেশের প্রথম ১৯৬৪ সালে কম্পিউটার আনা হয়।পৃথিবীর প্রথম
কম্পিউটারের নাম হচ্ছে Electronic Numerical Integrator and Computer.
কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে?
কম্পিউটারকে প্রোগ্রামিং করা হলে এটি খুব দ্রুত ডাটা নথিভূক্ত ও প্রসেস করে আউটপুট করে। কম্পিউটারের কাজ করার জন্য।বিভিন্ন উপাদান রয়েছে এই উপাদানগুলো সাহায্যে কম্পিউটার কাজ করে থাকে।
হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার , লাইভওয়াৱ, ফার্মওয়্যার এই চারটি উপাদান নিয়ে কম্পিউটার গঠিত।কম্পিউটারের ভিতরে বাইরে যে যন্ত্র গুলো আছে সেগুলো কে হার্ডওয়্যার বলে। মাদারবোর্ড ,হার্ডডিস্ক, কিবোর্ড, মাউস এগুলো সবই হার্ডওয়ার।
আর সফটওয়্যার হলো প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম বা নির্দেশনা দিয়ে হার্ডওয়ারের মাধ্যমে কাজ গুলো সঠিক ভাবে করিয়ে নেয়াৱ সিস্টেম। বিভিন্ন রকম কাজ করার জন্য বিভিন্ন রকম সফটওয়্যার আছে এক একটি সফটওয়্যার আলাদা আলাদা কাজ করতে পারে।
লেখার জন্য টাইপ করার জন্য আলাদা সফটওয়্যার থাকে, ছবি আঁকার জন্য সফটওয়্যার আছে, হিসেব করার জন্য সফটওয়্যার আছে, বিভিন্ন এডিট করার জন্য সফটওয়্যার আছে ইত্যাদি অনেক সফটওয়্যার আছে। লাইভওয়ার বলতে মূলত কম্পিউটার অপারেটর দের বোঝায়।ROM কে সহজে ফার্মওয়্যার হিসেবে বলা যায়।
উইন্ডোজ হলো একটি সফটওয়্যার।কম্পিউটারের প্রকারভেদ রয়েছে। কার্যগত দিক দিয়ে বললে কম্পিউটার তিন প্রকার।এনালগ কম্পিউটার ডিজিটাল কম্পিউটার ও হাইব্রিড কম্পিউটার । ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম পরিমাণটা পাওয়া যায় না। কম্পিউটার প্রথমদিকে ব্যবহৃত হতো কিন্তু এখন আর তেমন ব্যবহৃত হয় না। ডিজিটাল কম্পিউটার বাইনারি সংখ্যা দ্বারা মাধ্যমে পরিচালিত হয়।। 0 এবং 1 এই দুইটি সংখ্যা কোডিং করে কম্পিউটার নির্দেশনা পায় এবং কাজ করে।
অন্যদিকে হাইব্রিড কম্পিউটারে এনালগ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করা যায়। কম্পিউটারের উদাহরণ দিতে হলে বলতে হবে রোবটের কথা। কারণ রোবট কে এনালগ ও ডিজিটাল দুইভাবে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে এবং সে কোডিং করে সেগুলো বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে। আকৃতিগত দিক দিয়ে কম্পিউটার কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
ক্ষুদ্র কম্পিউটার ও বৃহৎ কম্পিউটার।আমরা বাসাবাড়ি অফিস-আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাধারণত ক্ষুদ্র কম্পিউটারে ব্যবহার করে থাকি। এসব কম্পিউটারে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট হিসেবে মাইক্রো প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। ছোট হওয়ার কারণে এটি তো অনেক সুবিধা রয়েছে যেখানে সেখানে বহন করে নিয়ে যাওয়া যায় কোনো সমস্যা হয় না।
বৃহৎ কম্পিউটার গুলো সাধারণত ব্যবহার করা হয় না আরিবা অফিস-আদালতে। বৃহৎ কম্পিউটার সুপার কম্পিউটার গুলো ব্যবহার করা হয় খুব জটিল কোনো গাণিতিক গণনার কাজে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কোন খনির সন্ধান এসব করতে। কারণ এসব কম্পিউটার খুবই শক্তিশালী এবং এদের কাজের গতি ও অনেক বেশি দ্রুত।
কম্পিউটার প্রধানত ইনপুট ইউনিট এর সাহায্যে ডাটা গ্রহণ করে এরপর সেন্ট্রাল ইউনিট ডাটা প্রসেসিং করে এবং আউটপুট ইউনিট এর মাধ্যমে আউট করে।আমাদের জীবনে কম্পিউটারের গুরুত্ব: আসলে আমাদের জীবনে কম্পিউটার যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ অপরিহার্য তা বলে শেষ করা যাবেনা।কম্পিউটার ছাড়া আমরা কি পারতাম!
কম্পিউটার ছাড়া আমাদের জীবন অচল। শিক্ষাক্ষেত্রে, অফিস-আদালত ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুর সব কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস কম্পিউটারের সংগ্রহ করতে পারছি আমরা। সেগুলো যুগের পর যুগ সেরকম থেকে যাচ্ছে কোন পরিবর্তন হচ্ছে না হবে না কম্পিউটারে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করে আমরা সারা বিশ্বের সাথে কম্পিউটারের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারি।
কম্পিউটার এক নিমিষেই যেকোন জটিল ও কঠিন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে, যে হিসেব মানুষের গণনা করতে সময় লাগে যুগের পর যুগ কিন্তু কম্পিউটারে লাগে কয়েক ন্যানো সেকেন্ড মাত্র আজকে যদি কম্পিউটার না আবিষ্কৃত হতো আমাদের জীবন কিন্তু এত আরামের হতো না।
সর্বোপরি, কম্পিউটার আমাদের যে উপকার করে তা বলে শেষ করা যাবেনা। কম্পিউটারের উন্নয়ন কিন্তু বর্তমানেও থেমে নেই। এখনো গবেষণা চলছে এবং যতদিন যাবে কম্পিউটার আরো উন্নত হবে। আর আমাদের জীবনযাত্রা কে আরো আধুনিক করে তুলবে।
ধন্যবাদ।
You must be logged in to post a comment.