আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন।
কম্পিউটার এখন অধিকাংশ মানুষের কাজ এবং অবসর সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ডিভাইসটি ব্যবহারের যেমন সুবিধা আছে তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। কম্পিউটার থেকে বের হওয়া ক্ষতিকর নীল আলো আমাদের চোখের জন্য মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
বন্ধুরা,আজকের ব্লগটি বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন কম্পিউটারে কাজ করতে অভ্যস্ত তাদের জন্য। দীর্ঘদিন এই কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে আমাদের চোখ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।কম্পিউটার বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে আমরা যে ধরনের আলো দেখি তার ভিতর কিছু বিশেষ আলো থাকে যা আমাদের চোখের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। যার মধ্যে নীল আলো,রেডিসন সিপ অন্যতম। তাই দীর্ঘ সময় কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে কাজ করে গেলে আমাদের চোখে নানাবিধ সমস্যা হয়ে থাকে।
নিয়মিত কম্পিউটার ব্যবহার কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোমের মতো সমস্যা হতে পারে। মাথাব্যথা, চোখের ব্যথা, পানি বা শুষ্ক চোখ, মনোযোগ হারানো চোখের চাপের সাথে সম্পর্কিত। কিছুক্ষণ পর যখন এই সমস্যাগুলো ঠিক হয়ে যায় তখন আমরা আবার কম্পিউটারে কাজ শুরু করে দেই। তখন চোখের বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি চোখ থেকে অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার মতো মারাত্মক সমস্যাও হতে পারে।
কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম হল চোখের সমস্যা যা আপনি ল্যাপটপে যখন দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মিত কাজ করেন তখন হয়। কম্পিউটার অক্ষরের ফোকাসের অসমতার কারণে এটি হয়ে থাকে। এর ফলস্বরূপ, মাথাব্যথা ছাড়াও,চোখ ব্যথা,চোখ জ্বলা এবং ক্লান্ত চোখ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা,ঘাড় এবং কাঁধে ব্যথা ইত্যাদি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
এর জন্য চোখে কী কী সমস্যা হতে পারে তা নীচে আলোচনা করা হল-
রেটিনার ক্ষতি:
অন্ধকারে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, পিসি বা টিভি ব্যবহার করার সময় এর নীল আলো সরাসরি চোখে পড়ে। এতে রেটিনার কার্যক্ষমতা কমে যায়। যদি এটি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে তবে আপনার দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি রয়েছে।
দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া:
যখন আপনি কম্পিউটারের স্ক্রিনে কিছু দেখেন, তখন চোখের পেশী এবং স্নায়ুর উপর অনেক চাপ পড়ে। ফলে চোখ খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া চোখের পেশিতে চাপ পড়ে। তারপর চোখে ব্যথা হয় এবং ধীরে ধীরে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়।
শুকনো চোখ:
আপনি যদি দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকেন,তখন যদি আপনার চোখ চুলকায়, যাকে 'শুষ্ক চোখ' বলা হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে ঠান্ডা ঘরে বসে কম্পিউটারে কাজ করলে চোখে পানি এবং মাথাব্যথা হতে পারে।
ত্বকের ক্ষতি:
ইউটিউবে ভিডিও দেখা বা সেলফোনের স্ক্রিনে দীর্ঘ সময় চোখ ব্যস্ত রাখা শুধু চোখ নয় ত্বকেরও ক্ষতি করে। যদি সেলফোনের নীল আলো দীর্ঘ সময় ধরে ত্বকে পড়ে, তাহলে লালভাব দেখা দিতে পারে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি:
এই যন্ত্রগুলির নীল আলোর কারণে, মেলাটোনিন সহ অন্যান্য হরমোনের নিঃসরণ বন্ধ হতে শুরু করে। এর ফলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের অভাব দেখা দেয়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে স্তন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার।
প্রতিরোধে করণীয়:
কম্পিউটারের পর্দায় ক্ষতিকর আলো থেকে আপনার চোখ যেভাবে রক্ষা করবেন। তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
* কখনই কম্পিউটারে ধুলো, ময়লা পড়তে দেবেন না। ধুলো ময়লা পড়লে তাড়াতাড়ি তা পরিষ্কার করুন। ধুলো-ময়লার কারনে চোখের উপর চাপ পড়ে। দীর্ঘদিন ধুলো জমে থাকা পর্দার ব্যবহার 'দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যাথার'কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা দিনে অন্তত একবার কম্পিউটারের স্ক্রিন পরিষ্কার করার পরামর্শ দেন।
* কম্পিউটারে কাজ করার সময় আমরা চোখের পলক ফেলি না। কম্পিউটারে কাজ করার সময় নিয়মিত বিরতিতে পলক ফেললে চোখের শুষ্কতা দূর করে। চোখ বেশি চুলকালে বা বেশি শুষ্ক হলে ডেস্কটপের পরিবর্তে ল্যাপটপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
* চোখে ক্লান্তি আসলে চোখ নাড়ানো ছাড়াও পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নিন, কিছুক্ষণের জন্য বাইরে কোনো বস্তুর দিকে তাকান এবং আবার কাজ শুরু করুন।
* ঘরের ভেতরের যেকোনো উজ্জ্বল আলো বা কম্পিউটারে সরাসরি সূর্যের আলো পড়লে চোখের ব্যথা হতে পারে। কম্পিউটার এমনভাবে স্থাপন করা উচিত যাতে কম্পিউটারটি ঘরের জানালার পাশে না থাকে।
* কম্পিউটার স্ক্রিনে পড়া এবং লেখার জন্য ছোট ছোট ফ্রন্ট ব্যবহার করবেন না। চোখের সমস্যা সৃষ্টিকারী ফ্রন্টগুলি বাদ দিয়ে চোখের জন্য একটি আরামদায়ক ফ্রন্ট বেছে নিন।
* বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেন যে, যারা কম্পিউটারে কাজ করেন তারা বছরে অন্তত একবার তাদের চোখ পরীক্ষা করান। চোখের পরীক্ষা পুরো শরীরের পরীক্ষার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। চোখের পরীক্ষার মাধ্যমে স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, টিউমারের মতো সমস্যা নির্ণয় করা যায়। চোখ পরীক্ষার সময় আপনি কতক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহার করেন সেই বিষয়ে ডাক্তারকে জানান।
* কম্পিউটারে কাজ করার সময় অন্য দিকে তাকালে চোখের সাধারণ রঙ বদলে যায়। এই সময়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ থেকে বিরতি নিন এবং আপনার চোখ স্বাভাবিক হলে আবার কাজ শুরু করুন।
* কাজের মাঝখানে চোখের জন্য কিছু মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিন। এই সময়ে আপনার দৃষ্টি রুম বা অন্য কোন দিকে রাখুন। এটি চোখের পেশীগুলিকে কিছুক্ষণের জন্য বিরতি দেবে।
* দুই হাতের তালু দিয়ে চোখ কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং চোখের পেশী শিথিল করুন। একে চোখের ব্যায়াম বলে। কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের চোখ ভালো রাখার এটি একটি ভালো উপায়।
* কম্পিউটারে কাজ করা চেয়ার হাইড্রোলিক হলে ভালো হয়, যাতে কাজের সময় কম্পিউটার মনিটরের চেয়ে চোখের উচ্চতা বেশি থাকে। মনিটর কাত হয়ে থাকলে অক্ষর পরিবর্তন হতে পারে, যা চোখের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
* বছরে অন্তত একবার সবারই চোখ পরীক্ষা করা উচিত। যদি কোনো শিশুর জন্মগত চোখের সমস্যা থাকে, তাহলে ডাক্তারের অবশ্যই পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
* চোখ ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। টাটকা শাকসবজি, হলুদ ফল যেমন: গাজর, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি খাওয়া উচিত। পাকা আম চোখের জন্য ভীষণ উপকারী।
* চোখের সুরক্ষায় ভিটামিন এ, সি, ই, বি কমপ্লেক্স এবং জিংক গ্রহণ করা যেতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও নেওয়া যেতে পারে।
কম্পিউটারের নীল আলো থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য এখানে কিছু ব্যায়াম দেওয়া হল:
কম্পিউটারের নীল আলো থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য নিচে কিছু ব্যায়াম দেওয়া হল -
> ৩০ মিনিট কম্পিউটারে কাজ করার পরে, একটু পিছনে তাকান। সম্ভব হলে জানালা দিয়ে ঘরের বাইরে তাকান। এইভাবে চোখের বিভিন্ন ফোকাসিং পেশীগুলো ব্যায়াম করে, যা চোখের জন্য খুব উপকারী।
> চোখ উপরে, নিচে এবং ডান থেকে বাম দিকে ঘোরান।
> হাত দিয়ে ঘাড় এবং পিঠে আলতো করে ম্যাসাজ করুন।
বন্ধুরা, আজ এ পর্যন্ত। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
You must be logged in to post a comment.