করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চাকরির বাজারের পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে পাল্টে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা না হওয়ার কারণে কর্মী ছাঁটাই করছে আবার অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাটাই না করলেও নতুন নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা অবস্থার মুখে পড়েছেন বেকার জনগোষ্ঠী। সদ্য পাশ করা কর্মহীন গ্র্যাজুয়েটদের সাথে সাথে, করোনার কারণে চাকরি হারিয়ে নতুন করে বেকার হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এমন পরিস্থিতিতে মহামারী পরবর্তী সময়ে নিজের এমন কিছু গুণ থাকলে পরবর্তীতে চাকুরী পেতে সহায়তা করবে সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে লেখাটিতে।
১. নিজের আকর্ষণীয় প্রোফাইল তৈরি করুন:
অনেক সময় ধরে চাকুরির বাজার থেকে দূরে থাকার ফলে কিভাবে চাকুরি খুঁজবেন, কোথায় খোঁজ করবে এটি নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। ফলে এ অবস্থা থেকে সহজে চাকুরি পেতে বা চাকুরির সন্ধান পেতে প্রথমেই নিজের একটি আকর্ষণীয় অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করুন। যাতে করে একদিকে আপনার জন্য যেমন চাকরির আবেদন করা সহজ হবে ঠিক তেমনি অন্যদিকে নিয়োগকর্তারাও আপনাকে সহজে খুঁজে পাবে।
তবে নিজের প্রোফাইল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন, আপনার দক্ষতার জায়গাগুলো যেনো প্রোফাইলে হাইলাইট হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনার অভিজ্ঞতা গুলো ক্রমান্বয়ে তুলে ধরতে হবে। জীবন বৃত্তান্ত লেখার সময় আপনার দক্ষতাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী নিজের প্রোফাইল আলাদা আলাদা ভাবে তৈরি করুন। এটি একটু সময় সাপেক্ষ হলেও এতে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কোন দক্ষ ব্যাক্তিকে দিয়ে আপনার বায়োডাটা টি পড়িয়ে নিতে পারেন।
কোন ভুল থাকলে সেগুলো সংশোধন করুন। নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে ডাক না পেলে ফোন অথবা ইমেইল করে খোঁজ নিতে পারেন। এতে ওই কোম্পানির জন্য আপনাকে ইগনোর করা বা পাত্তা না দেয়াটা একটু কঠিন হয়ে পড়বে।
২. চাকুরি কোথায় খুঁজবেন?
চাকুরির বিজ্ঞাপন বিভিন্ন প্রত্রিকায় প্রকাশ করে আবার বিভিন্ন জব সাইটে চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়া থাকে। এছড়া অনেক কোম্পানি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিজেদের ওয়েবসাইট বা পোর্টালে দিয়ে থাকে। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
কোন নির্দিষ্ট একটি কোম্পানিতে চাকরি করতে চাইলে খবর নিন যে সেখানে নিয়োগ হচ্ছে কিনা।
আপনি যদি কোন একটি নির্দিষ্ট পদে চাকরি করতে চান তাহলে নিজে উদ্যোগী হন, ওই পদে যারা কাজ করছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চেষ্টা করুন যে তারা কিভাবে সেটি পেয়েছেন।
প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলো এক্ষেত্রে কাজে দিতে পারে। যেমন ধরুন লিংকডইন, ফেসবুক গ্রুপ, শিল্প কিংবা কমিউনিটি সংস্থা ইত্যাদি। এসব জায়গায় বিভিন্ন চাকরির খোঁজ যেমন থাকে ঠিক তেমনি কিভাবে আপনি সেটি অর্জন করবেন তার নির্দেশনাও থাকে।
৩. আপনি কেনো অন্যদের থেকে যোগ্য অর্থ্যাৎ, নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরুন:
করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেকটাই বেশি। এক্ষেত্রে অন্যদের থেকে নিজেকে কিভাবে আলাদা প্রমাণ করবেন? এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পরিচয় অনেকটাই কাজে আসতে পারে।
বন্ধু, পরিবারের সদস্যরা কিংবা অন্যান্য পরিচিতরা-যেই হোক না কেন তাদেরও পরিচিত আরো অনেক মানুষ থাকে। যাদের মধ্যে কেউ হয়তো নিয়োগকর্তা হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদেরকে আপনার চাকরির খোঁজ সম্পর্কে বলে রাখতে পারেন।
কারণ, পরিচিত থাকলেই যে চাকরি হবে সেটা হয়তো না, কিন্তু অনেক নিয়োগকর্তাই রয়েছেন যারা পরিচিতদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী। এছাড়া পরিচিত থাকলে আপনি হয়তো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসার আগে থেকেই জানতে পারবেন যে কোথায় চাকরির সুযোগ রয়েছে আর কোথায় নেই।
৪. যে পদের জন্য আবেদন করছেন সে বিষয়ে জানুন:
চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নিয়োগকর্তা এবং দায়িত্ব সম্পর্কে জানা। যেমন, চাকুরি হলে আপনার কাজ কি হবে? কিভাবে নিজের দায়িত্ব দ্বারা প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করতে পারবেন সে সম্পর্কে আগে থেকে জানার চেষ্টা করা।
এর জন্য ইন্টারনেট, গুগল, ইউটিউব সহ পরিচিত জনের সহায়তা নিতে পারেন। কারণ, যেহেতু আগের তুলনায় এখন প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, তাই অন্যদের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে হলে অনেক বেশি দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে।
৫. কোন কাজকে ছোট মনে না করে শুরু করতে হবে এবং ধৈর্য্য ধরতে হবে :
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চাকরি লাভের ক্ষেত্রে একটি বড় বিষয় হচ্ছে ধৈর্য্য ধরতে হবে। সব কিছু একদিনে বা চাইলেই হয়ে যাবে না সেটি মাথায় রাখতে হবে। প্রথমেই বড় জায়গা পাবেন এমন ধারণা না করে যে পদেই চাকুরি শুরু করেন না কেনো সততা ও নিষ্ঠার সাথে ধৈর্য্য সহকারে কাজ শুরু করুন।
দেখবেন ধীরেধীরে আপনি কাঙ্খিত লক্ষ্যে যেতে পারবেন। ফলে কোন কাজকে ছোট মনে না করে শুরু করুন। এতে করে যেমন অভিজ্ঞতা বাড়বে তেমনি বেকারত্ব ঘোচবে।
৬. আইটি বা প্রযুক্তি সম্পর্কিত দক্ষতা অর্জন করতে হবেঃ
বর্তমান এই প্রতিযোগিতা মুলক চাকরির বাজারে একজন চাকরি-প্রার্থীকে অন্য প্রার্থীদের থেকে এগিয়ে থাকতে হলে তাকে অবশ্যই মাল্টি-টাস্কিং হতে হবে। আগে যেমন যে পদের জন্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে শুধু সেই পদের দায়িত্ব এবং যোগ্যতা থাকলেই তাকে নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে তা বদলে গেছে। এখন সংশ্লিষ্ট পদের যোগ্যতা ছাড়াও আইটি বা প্রযুক্তি সম্পর্কিত দক্ষতা থাকাটা খুব জরুরি।
আগে টেকনিক্যাল নলেজ না থাকলেও হতো কিন্তু সমসাময়িক সময়ে আইটি দক্ষতা চাকুরিসহ সব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখেছি এখন অনেকেই বাসায় বসে অফিস করতে হচ্ছে। ফলে, আগে টেকনিক্যাল নলেজ(জ্ঞান) না থাকলেও হতো, কিন্তু এখন সেটা বাধ্যতামূলক। আইটি-সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। কেননা, এখন স্বশরীরের তুলনায় মিটিং বা ক্লায়েন্টের সাথে ডিজিটালি সব কিছু করতে হচ্ছে। ফলে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের পাশাপাশি গুগল বা সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবহার জানতে হবে।
৭. ডাইনামিক কিছু করার চেষ্টা করুন:
যাদের চাকরি চলে গেছে তাদের নতুন চাকরি পেতে সমস্যাই হবে। তবে এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত নতুন দক্ষতা বাড়ানোর সাথে সাথে নিজে নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। নতুন কোন প্রতিষ্ঠান বা সেক্টরে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে যেকোন কাজের মানসিকতা থাকতে হবে।
লেখাঃ আসিফ হাসান রাজু
You must be logged in to post a comment.