বলা হয়ে থাকে ব্যর্থতা সফলতার চাবিকাঠি। আমরা যদি গভীরভাবে দৃষ্টি দেই, তাহলে দেখব বেশির ভাগ সফল ব্যক্তিরা ব্যর্থতার করুণ স্বাদ গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা ঠিকই সফলতা পেয়েছেন। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে তারা জেনেছিলেন, কোন জিনিস তাদের ব্যর্থতার পেছনে দায়ী।
ব্যর্থতার কারণ না জানতে পারা ব্যর্থতাকে দীর্ঘায়ীতই করে। এজন্য সফল হওয়ার পূর্বশর্ত ব্যর্থতার পেছনের কারণ গুলোকে চিহ্নিত করা।
আজ আমি আলোচনা করতে চলেছি এমনই ৫ টি কারণ সম্পর্কে, যা সাধারণত বেশীর ভাগ মানুষই করে থাকে।
পুরো আর্টিকেলটি মনযোগ দিয়ে পড়বেন। আশা করি লিখাটি আপনার সফলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে।
১. ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকা
এই প্রবনতা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তুলনামূলক বেশি লক্ষ্য করা যায়। যাকে ইংরেজি পরিভাষায় বলে Fatalistic Attitude.
এ শ্রেণির মানুষদের সবকিছু ভবিষ্যতের উপর ছেড়ে দিয়ে দায়িত্ব থেকে দূরে থাকেন। তাদের মতে, ভাগ্যে আমার যা আছে সেটা পরিবর্তন করার ক্ষমতা আমার নেই। অতএব, যা হওয়ার তাই হবে।
এই মতাদর্শ ইসলামি দৃষ্টিকোন থেকে এক দিক দিয়ে ঠিক আছে। কিন্তু পুরোপুরি ঠিক নেই। একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। "এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ কে বলল হে আল্লাহর রসূল!
আমি উট বেঁধে আল্লাহর উপর নির্ভর করব, নাকি উট ছেড়ে দিয়ে?’ উত্তরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং তুমি উট বেঁধে আল্লাহর উপর ভরসা কর।
এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, কাজ না করে নয়, বরং কাজ করে ভাগ্যের উপর নির্ভর করতে হবে। আপনি যদি আদর্শ মুসলিমদের দিকে লক্ষ্য করেন তারাও কিন্তু ভাগ্যের উপর নির্ভর করে কিন্তু তারা প্রচুর পরিমাণ পরিশ্রম করে।
২. কাজের প্রতি ফোকাস না থাকা
অনেকে বলেই সময় মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু আমি মনে সময় নয় বরং ফোকাসের মূল্য অনেক বেশি। অর্থাৎ তার সময়ের মূল্য আছে যার ফোকাস আছে।
যে ব্যক্তি বিচ্ছিন্ন মনোভাবের, সে ঘন্টার পর ঘন্টা ফেসবুক, ইউটিউব, নাটক, সিনেমা দেখে নষ্ট করে, যার সাথে তার লক্ষ্যের কোন সংযোগ নেই।
এই ধরনের ডিসট্রাকশন আমাদের স্টামিনা কমিয়ে দেয়। মনোযোগকে দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অন্যদিকে, বিচ্ছিন্ন মনোভাবের ব্যক্তিদের একটি কমন বিষয় যা সফলতাকে বাধাগ্রস্ত করে তাহলো, কোন একটি কাজ শুরু করে সামান্য প্রতিবন্ধকতা পেলেই ছেড়ে দেয়।
আবার খুব দ্রুত সফলতার আনন্দ পেতে চায় যা সফলতার একদম বিপরীত।
৩. হীনমন্যতা
ব্যর্থতার পেছনে আরেকটি কারণ হীনমন্যতা। যাকে ইংরেজি পরিভাষায় বলে Poor self-steem। অর্থাৎ নিজের প্রতি সম্মান ও বিশ্বাস না থাকা।
আপনি যে সফলতা পেতে চান এবং আপনি তার যোগ্য, এই কথা সর্বপ্রথম আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে।
লোকে কি বলবে, ব্যর্থতার অপমান আমি নিতে পারব কিনা?! এই ধরণের শঙ্কা ঝেড়ে ফেলতে হবে। মনে রাখবেন, আপনি ততক্ষণ ব্যর্থ নন যতক্ষণ না আপনি হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। অর্থাৎ, মানুষ তখনই প্রকৃত অর্থে ব্যর্থ হয় যখন সে হাল ছেড়ে দেয়।
৪. শৃঙ্খলার অভাব
শৃংখলার গুণ এমন নয় যে জন্ম থেকে লাভ করা যায় তবে অনেক অনুশীলন এবং ধৈর্যের মাধ্যমে শৃঙ্খলিত করতে হয়। সকল প্রকার বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্ত হয়ে,
নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনে শৃঙ্খলার বিকল্প নেই। শৃংখলার সবচাইতে বড় উপকারিতা হচ্ছে সকল প্রকার বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্ত হয়ে কোন একটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করা। যা সফলতার পূর্ব শর্ত।
শৃঙ্খলা শুধু সফলতাই নিয়ে আসে না বরং তা মানুষিকভাবে দৃঢ় করে। অন্যদিকে শৃঙ্খলার অভাব মানুষিক শক্তি দূর্বল করে দেয়। আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে হলেও শৃঙ্খলার বিকল্প নেই।
৫. লক্ষ্য নির্ধারণ না করা
জীবনে ব্যর্থ হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করলে দেখতে পাবেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে কারণ দায়ী সেটা হচ্ছে, লক্ষ্য নির্ধারণ না থাকা। লক্ষ্যহীন ব্যক্তি ওই নাবিকের মত, যে জানেনা সে কোথায় যাবে।
সফলতা হচ্ছে সাধনা। ধারাবাহিকভাবে কাজ করার ফল। প্রতিকূল স্রোতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এ জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে কখনই আপনি কঠিন সময়ের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারবেন না।
সময়ের পর সময় চলে যাবে কিন্তু আপনি কোন কূল খুজে পাবেন না। কি করতে হবে সেটাই নির্ধারণ করতে পারবেন। অন্যরা আপনাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করবে।
কিন্তু আপনার কিছুই করার থাকবে না, কারণ আপনি কি করতে চাচ্ছেন বা কি করা উচিত সেটাও আপনি জানেন না।
এজন্য ব্যর্থতার গ্লানি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেই লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে চলুন।
শেষ কথা
মানুষ কখনো ব্যর্থ হয় না। হয় সে সফলতা অর্জন করে নয়তো সে অভিজ্ঞতা অর্জন করে। আপনি প্রকৃতপক্ষে তখনই ব্যর্থ হবেন যখন আপনি হাল ছেড়ে দেবেন।
আমি ব্যার্থতাকে মেনে নিতে পারি কিন্তু আমি চেষ্টা না করাকে মেনে নিতে পারি না।
-মাইকেল জর্ডান
জীবনে অনেকেই ব্যার্থতার সময় হাল ছেড়ে দেয় অথচ তারা জানে না তারা সফলতার কত কাছাকাছি ছিল।
You must be logged in to post a comment.