টাকা,ডলার নাকি রুপিয়া? আজ বরং অন্য আরেক ধরনের বিনিময় মূল্য এর গল্প হোক।
বিটকয়েন!
ভার্চুয়াল একটি অর্থমূল্য,যার দৃশ্যমান কোনো চরিত্র বা অবয়ব তো নেই ই, এমনকি এর মালিকানায় নেই কোনো দেশ বা ব্যাংকও! তারমানে একধরনের ভার্চুয়াল বা ক্রিপ্টোকারেন্সি এই বিটকয়েন।
ডিজিটাল জগতে আজকাল বিটকয়েন নামটি বেশ ভালোই পরিচিত একটি শব্দ। আমরা যেমন হাতে হাতে টাকা বা ডলার দিয়ে বিনিময় মূল্য পরিশোধ করি,বিটকয়েন এর কাজও তেমনই। পার্থক্য হলো এটি ধরা যায়না ছোঁয়া যায়না! এক একাউন্ট থেকে অন্য আরেকজনের একাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে যায় সহজেই।
বিশ্বের বেশ কিছু উন্নত দেশ আছে যেখানে বর্তমানে বিটকয়েনকে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে নেয়া হয়েছে। বিকাশ,নগদ,ভিসা কার্ড দিয়ে যেভাবে আমরা বিল পরিশোধ করছি বিটকয়েন দিয়েও সেভাবেই পরিশোধ করা যাচ্ছে ঐসব দেশে। শুধু ডলার বা টাকার মূল্যমানের চেয়ে বিটকয়েনের ভ্যালু অনেক অনেক বেশি এই ই যা তফাৎ।
বিটকয়েনের আবিষ্কার ও জনপ্রিয়তাঃ
২০০৮ সালের দিকে সাতোশী নাকামোতো নামক এক ব্যাক্তি অথবা সংগঠন (শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি) বিটকয়েন এর জোর প্রচারনা চালাতে থাকেন। তবে সেই সময়ও বিটকয়েনের জনপ্রিয়তা বা চাহিদা এখনকার মত ছিলোনা একেবারেই।
হঠাৎ করেই ২০১২ সালের পর থেকে বিটকয়েনের দাম অস্বাভাবিক গতিতে বাড়তে থাকে! বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেই দেশের সরকার নির্ধারিত মূদ্রামান অনুযায়ী বিটকয়েনের দামেরও হেরফের রয়েছে। যেমন প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়াতে ১ বিটকয়েন সমান 2,589,322.66 রুপী! বাংলাদেশে ১ বিটকয়েন সমান 3,000,997.87 টাকা!
এই মূল্যমান যে সবসময় একই রকম থাকে তা নয়, আপডাউন হতে থাকে অনেকটা শেয়ার বাজারের মতোই।
১ বিট কয়েন এর পরিমান টাকায়, রূপি বা ডলারে যেহেতু অনেক বেশি অর্থমূল্য চলে আসে তাই এটির আবার ভাগ ভাগ করে কেনা যায়! যদি বিটকয়েনের মূল্য বৃদ্ধি পায় তাহলে ভবিষ্যতে বিটকয়েনের ক্ষুদ্র একটি অংশ একটি টয়োটা গাড়ি কেনার মতো ভ্যালুয়েবল হয়ে যেতে পারে! ১টি বিটকয়েন ১০০ মিলিয়ন ভাগে ভাগ করা যাবে, যাকে ‘সাতোশি’ বলা হয়।
বিটকয়েন বাংলাদেশে কেনো নিষিদ্ধ?
আসুন ইকোনমিস্টদের ভাষায় বিষয়টা ব্যাখা করা যাকঃ
একটা মজার তথ্য হলো, সারা বিশ্বে বিটকয়েন এর মোট পরিমান কিন্তু নির্দিষ্ট! যার পরিমান ২১ মিলিয়ন বা ২ কোটি ১০ লাখ বিটকয়েন। মোট পরিমান এর থেকে কমবেও না বাড়বেও না কখনোই।
তাই দিন দিন বিটকয়েনের ভ্যালুও বাড়ছে। এদিকে ১৯৭৩ সালের পর থেকে দেশে যেহেতু গোল্ড এমাউন্টের ভিত্তিতে টাকা ছাপানোর রীতি বাতিল করা হয়েছে তাই টাকার যোগান দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে এর ভ্যালু বিটকয়েনের তুলনায় প্রচন্ড হারে কমে যাচ্ছে!
এভাবে চলতে থাকলে বিটকয়েন এর পাওয়ার বাড়তে থাকবে দেশীয় টাকার মান বা ভ্যালু কমে যাবে ফলস্বরূপ জিডিপি সহ উন্নয়নের ধারাগুলো দেখানো কঠিন হয়ে যাবে এবং দেশের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখায় বাধাগ্রস্ত হতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারের পক্ষে।টাকা বা ডলার দিয়ে দেশের জিডিপি, উন্নয়ন এর বিভিন্ন খাত এর প্রবাহমান ধারা, ঋণের পরিমান যত সহজে দেখানো যায় সেই কাজের দফারফা হয়ে যাবে বিটকয়েন এর কল্যানে!
বিটকয়েনের যেহেতু কোনো নিয়ন্ত্রক নেই, ব্যাপকহারে লেনদেন হলে দেশে অবৈধ কাজকারবার বেড়ে গিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।
বিটকয়েন নিষিদ্ধকরণ এর অন্যতম প্রধান কারন এটি।
যেহেতু বিটকয়েনে লেনদেনে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পড়ে না এবং এর লেনদেনের গতিবিধি অনুসরণ করা যায় না, তাই মাদক ও অর্থ পাচারকারীরা এর ব্যবহারে বেশি আগ্রহী হয়।
অর্থ পাচার হয়ে যেতে পারে খুবই সহজে যা দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ রকমের আশঙ্কার সৃষ্টি করবে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ অপরাপর কিছু উন্নত দেশে এই অর্থপাচার রোধ করতেই বিটকয়েনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। তারা যথাসম্ভব চাইছে সব বিটকয়েন একাউন্টের একটা তালিকাবদ্ধ পরিসরে আনতে যাতে নজরদারি করা সহজ হয়। তবে বাস্তবে আদৌও কি তা সম্ভব??
বিটকয়েন লেনদেনকে অনেকটা জুয়া খেলার মতো মনে হয় আমার কাছে। জুয়া খেলতে তো ক্যাশ টাকা লাগে। এখানে সেটাও লাগে না! এটা বাড়তে থাকলে একটি দেশ তথা বিশ্বব্যাপী চলমান আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে এই বিটকয়েন!
You must be logged in to post a comment.