আসসালামু আলাইকুম, জে-আইটি আর্নিং প্রোগ্রাম এ আপনাকে স্বাগতম। আশা করি ভালো আছেন। আজকে আমি কী নিয়ে আলোচনা করবো তা হয়তো টাইটেল দেখেই কিছুটা বুঝতে পেরেছেন। বন্ধুরা আজকে আমি আলোচনা করবো পাসওয়ার্ড নিয়ে।
কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি আজকের টপিক।
একটা জিনিস আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, পরিবারের সবাই বাড়ির বাইরে বেড়াতে গেলে সাধারণত আমরা বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে যাই।
কিন্তু কেন?
বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, তাই না।
এখন একটু চিন্তা করো, তালা জিনিসটা আসলে কী? যে কেউ যেকোনো চাবি দিয়ে তোমার বাড়ির তালাটি খুলতে পারে না। কারণ পৃথিবীর প্রত্যেকটি তালার জন্য ভিন্ন ভিন্ন চাবি রয়েছে। এক তালার চাবি দিয়ে অন্য একটি তালা খোলা যায় না। এভাবে আমরা তালা দিয়ে আমাদের বাড়িসহ অন্যান্য জিনিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।
এখন অবশ্য নম্বর দেওয়া এক ধরনের তালা দেখা যায়, যেখানে নম্বর মিলিয়ে তালাটি খুলতে হয়। এক্ষেত্রে নম্বরটি চাবির কাজ করে।
কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তির এ যুগে আরো অনেক কিছুর নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হয়। নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছ কীসের কথা বলছি।
ঠিক ধরেছ, আমরা আমাদের তথ্য ও উপাত্তের নিরাপত্তার কথা বলছি। আইসিটির এ যুগে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, উপাত্ত ও সফটওয়্যার নিরাপত্তায় এক ধরনের তালা দিতে হয়। এ তালার নাম পাসওয়ার্ড।
তোমরা অনেকে নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে পাসওয়ার্ড তৈরি ও ব্যবহার করে ফেলেছ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সবখানে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এর প্রসার যত বাড়ছে নিরাপত্তার প্রশ্নটি তত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আমাদের ব্যক্তিগত সকল তথ্য যেমন ব্যাংক একাউন্ট, আয়করের হিসাব, চাকরির বিভিন্ন তথ্য ইত্যাদি ছাড়াও নানা তথ্য-উপাত্ত এখন ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় আসছে।
এছাড়াও আমাদের আইসিটি যন্ত্রপাতি যেমন- কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কিংবা মোবাইল ফোনগুলো এখন সফটওয়্যার দ্বারা পরিচালিত হয়। আমরা যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করি তখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্রের সাথে যোগযোগ করতে পারি। তেমনি অন্য যে কেউ আমাদের যন্ত্রের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। এর মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্যও অন্যের কাছে চলে যেতে পারে কিংবা কেউ আমাদের যন্ত্রের সফটওয়্যারের ক্ষতি করতে পারে।
এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন। এসব তথ্য এবং আমাদের যন্ত্রের সফটওয়্যারগিলো রক্ষা করতে পাসওয়ার্ডের কোনো বিকল্প নেই।
পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকলে যে কেউ ইচ্ছা করলেই আমাদের তথ্য নিতে পারবে না বা ক্ষতি করতে পারবে না। তবে এখানে একটি কথা অবশ্যই জেনে রাখতে হবে যদি কেউ বুদ্ধি খাটিয়ে আমরা যে পাসওয়ার্ড দিয়েছিলাম তা ধরে ফেলতে পারে তাহলে সে আমাদের সকল তথ্য নিয়ে নিতে পারবে। তথ্য নষ্ট করতে চাইলে নষ্ট করতে পারবে। অনেকটা ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়ে তালা খুলে ফেলার মতো।
তাই পাসওয়ার্ড তৈরি করতে আমাদের অনেক দক্ষ হতে হবে। অন্য কেউ ধারণা করতে পারে এমন সহজ পাসওয়ার্ড যেমন তৈরি করা যাবে না আবার নিজেই ভুলে যেতে পারি এমন পাসওয়ার্ড তৈরি করা যাবে না।
বেশিরভাগ মানুষ 123456 বা 654321 বা abcdef এ ধরনের পাসওয়ার্ড তৈরি করে। ফলে পাসওয়ার্ড জেনে যাওয়া বা ধরে ফেলা সহজ হয়। যদিও অনেকে ইউ পাসওয়ার্ড তৈরি করাকে ঝামেলার কাজ মনে করে। তথ্য-উপাত্তের দিকটি বিবেচনায় নিলে ইউনিক পাসওয়ার্ড তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।সার্ভার, কম্পিউটার বা যেকোনো আইসিটি যন্ত্রে রক্ষিত তথ্য ও উপাত্তের নিরাপত্তা বিধানের সাথে সাথে গোপনীয়তা বজায় রাখার কাজটিও পাসওয়ার্ড করে থাকে। তোমার পাসওয়ার্ড যদি ইউনিক না হয় তবে:
১. দুর্বল পাসওয়ার্ডের কারণে ভাইরাস সহজেই আক্রমণ করতে পারে।
২. হ্যাকারদের সহজেই হ্যাক করার সুযোগ করে দিতে পারে। এতে তোমার ব্যাংকে রাখা টাকা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্যের হাতে চলে যেতে পারে।
৩. তোমার সহজ পাসওয়ার্ডের কারণে আইসিটি যন্ত্রে রক্ষিত তথ্য নষ্ট করার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
তো কীভাবে মৌলিক পাসওয়ার্ড তৈরি করা যায়?
এটি একটি সৃজনশীল কাজ। তোমার সৃজনশীলতাই তোমার তথ্য বা সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চললে কাজটি করতে আমাদের অনেক সুবিধা হবে। ইউনিক পাসওয়ার্ড তৈরির সময় আমাদের লক্ষ রাখতে হবে:
নিজের বা পরিবারের কারো নাম বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য সরাসরি ব্যবহার না করা। যদিও পাসওয়ার্ডটি
মনে রাখার ক্ষেত্রে এটি আমাদের সাহায্য করে থাকে;
সংখ্যা, চিহ্ন ও শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছোট হাতের অক্ষর ও বড় হাতের অক্ষর মিশিয়ে দিলে ভালো হয়। এতে পাসওয়ার্ডটি সম্পর্কে অন্যের ধারণা করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে;
পাসওয়ার্ডটি যেন অবশ্যই একটু বড় আকারের হয়; পাসওয়ার্ড মনে রাখার জন্য আইসিটি যন্ত্র বা ডায়রি বা অন্য কোথাও পাসওয়ার্ড বা এর অংশবিশেষ লিখে না রাখা;
পাসওয়ার্ড মনে রাখার জন্য নিজের পছন্দের একটি সংকেত ব্যবহার করা। এটি হতে পারে প্রিয় কবিতা, গল্প, লেখক, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বা কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা।
এ কাজগুলোর সাথে যদি সৃজনশীলতা যোগ হয় তবে পাসওয়ার্ডটি হয়ে উঠতে পারে Unique পাসওয়ার্ড।
আমাদের পাসওয়ার্ডগুলো হতে পারে এমন
MoriTeChaHina_AmiSunDarVhubanE (মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে)
4Score&7yrsAGO (চার স্কোর এবং সাত বছর আগে),
তবে পাসওয়ার্ড অবশ্যই মনে রাখার মত হওয়া উচিত।
নিত্যনতুন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করাও একটি জরুরি কাজ। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের তথ্য ও সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে সক্ষম হব।
এতোক্ষণ সাথে থেকে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ
You must be logged in to post a comment.