টাইপ রাইটার কি?

টাইপ রাইটার হলো এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যমে বোতাম টিপে কাগজে লেখা যায়। এই যন্ত্রে বর্ণ, সংখ্যা, দাড়ি ও কমা চিহৃ ইত্যাদি বিন্যাস করা একটি কি-বোর্ড থাকে। সরু সরু লোহার অগ্রভাগে চিহৃগুলো বসানো থাকে। লেখার জন্য এতে বেলনাকার সমান্তরাল একটি বস্তুর সঙ্গে কাগজ এঁটে দিতে হয়।

সমান্তরাল বস্তুটির সামনে কালিমাখা কাপড়ের ফিতা আলগাভাবে বসানো থাকে। প্রয়োজনীয় অক্ষরে চাপ দিলে অক্ষরটি ফিতার উপর গিয়ে আঘাত করে এবং এর ছাপ কাগজে মুদ্রিত হয়। টাইপ রাইটারে লেখার জন্য ২ হাতের ১০ আঙ্গুলই ব্যবহার করতে হয়।

১৮৭০ সালে ক্রিস্টোফার ল্যাথাম শোলস প্রথম টাইপ রাইটার আবিষ্কার করেন। প্রথম উদ্ভাবিত টাইপ রাইটারে বিদ্যুতের ব্যবহার ছিলোনা। পরবর্তীতে বৈদ্যুতিক টাইপ রাইটার আবিষ্কৃত হয়। 

১৮৮০ সাল অবধি এর ব্যবহার অফিসে তেমন জনপ্রিয় ছিল না তবে ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। দ্রুত ও নির্ভুল লেখার সুফলতার কারণে পেশাদার লেখকদের নিকট এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য টাইপ রাইটার নির্মাতারা ধীরে ধীরে এই টাইপ রাইটারে ব্যবহৃত কিউ, ওয়েরটি কি-বোর্ডের লেআউট সিস্টেমকে গ্রহণ করেন।

এইভাবে এটি ১৯ শতকের সবচেয়ে নামকরা উদ্ভাবন হিসেবে পরিচিত লাভ করে। প্রথমে টাইপ রাইটার প্রধানত দৃষ্টিশক্তিহীন ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়। সারা বিশ্বের আজকের কম্পিউটারের কি-বোর্ডের নকশা টাইপ রাইটা থেকেআ নেওয়া।

তাই টাইপ রাইটার হচ্ছে কম্পিউটার চালানোর প্রথম ধাপ। আগে টাইপ রাইটার এক ভাষায় মাত্র লেখা যেতো, এখন একাধিক ভাষায় লেখার উপযোগী টাইপ রাইটারও চালু হয়েছে। বাংলা টাইপ রাইটার নির্মাণ করেন মুনীর চৌধুরী।

'সেই দিন কি আর আছে? দিন বদলাইছে না' বিজ্ঞাপনের এই কথার সাথে সুর মিলিয়ে দিন বদলের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে পারে যে কোন পেশাও। কম্পিউটারের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে টাইপ রাইটার। আধুনিকতার ছোঁয়ায় একুশ শতকে এসে কর্মজীবী কিংবা কর্মমুখী মানুষ কাজ কর্মে অনেকটা কম্পিউটার নির্ভর হয়ে পড়েছে।

এই যুগে আর টিকে থাকতে পারছে না টাইপ রাইটার মেশিন। বৈদ্যুতিক কি-বোর্ডের মাধ্যমে মনিটরের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে লেখা। কোনো ভুল সহজেই ঠিক করা যায় এর মাধ্যমে। কোনো কাটাকাটির ঝামেলা নেই। স্পষ্ট সুন্দর লেখার জন্য কেউ টাইপ রাইটারের কাছে যেতে চায় না। সরকারি অফিসে কিছু টাইপ রাইটার খুঁজে পাওয়া গেলেও বেসরকারী অফিসে তা খুঁজে পাওয়া  ভার।

দশ আঙ্গুলের কাজের ধরন পরিবর্তন না হলেও যন্ত্র পরিবর্তনের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে পেশা, বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তি।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles