কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার

ড্রেস, সাজসজ্জা সবকিছু লক্ষ্য রেখে চোখের মণির রংটাও যে হতে হবে একটু ভিন্ন। হোক সেটা কোন প্রোগ্রাম বা হোক সেটা একটু ঘুরাঘুরি চোখের ভিন্নতা সবাই চায়।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

তাই তো সেই ভিন্নতা নিয়ে আসতে ব্যবহার করা হয় নানান রংয়ের কন্টাক্ট লেন্স। বর্তমানে এটি সাজগোজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কেউ চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহার করেন কন্টাক্ট লেন্স; কেউ আবার চোখের সমস্যায় ব্যবহার করেন। কন্টাক্ট লেন্স ব্রাইডাল সাজে যেন অন্যরকম এক গর্জিয়াস লুক নিয়ে আসে৷ 

কন্টাক্ট লেন্স সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা নিয়ে ব্যবহার করা উত্তম। হার্ড, সফট, সেমি সফট এবং ডিসপোজেবল এই কন্টাক্ট লেন্সগুলোই ব্যবহৃত হয়।

হার্ড লেন্সঃ এটি এক ধরনের স্বচ্ছ প্লাস্টিক। এই লেন্সের ভেতর দিয়ে অক্সিজেন আসতে পারে না। সে জন্য চার ঘণ্টা পরপর খুলে লেন্স সল্যুশনে ভিজিয়ে রেখে পরে আবার পরতে হয়। 

সফট লেন্সঃ এটিও মূলত প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ। তবে এর জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বেশ নরম হয়।

তাই বেশ আরামদায়ক। লেন্সটি হার্ড লেন্সের তুলনায় আকারেও বড়। তাই সহজে খুলে পড়ে যায় না। তবে খুব নরম হওয়ায় সহজে ছিঁড়ে বা ভেঙে যেতে পারে।

এই লেন্স খোলার পরপর সল্যুশনে ডুবিয়ে রাখতে হয়।

সেমি সফট লেন্সঃ অনেকের কাছে এটি আরজিপি লেন্স হিসেবে পরিচিত। এই লেন্স অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম। তাই কর্নিয়ার সুস্থতায় কোনো অসুবিধা হয় না।

ডিসপোজেবল লেন্সঃ বর্তমানে এই লেন্স বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। তার প্রধান কারণ বাকি লেন্সের তুলনায় সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে এই লেন্স একটু বেশি দিন ব্যবহার করা যায়। এটিও এক ধরনের সফট লেন্স।

আমরা অনেকেই জানিনা কন্টাক্ট লেন্স মূলত কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। তাইতো বিভিন্ন সময় নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের সঠিক নিয়মঃ

১। প্রথমেই মনে রাখতে হবে কন্টাক্ট লেন্স চোখের সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যবহার করা হয়। তবে এটি সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত নয়। তাই চক্ষু বিশেষজ্ঞের নিয়মিত পরামর্শ ছাড়া কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা উচিত নয়।

২। চোখে লেন্স লাগানো বা খোলার আগে হাত ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। 

৩। যাদের হাতের নখ লম্বা তাদের এদিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে যেন, নখের আঁচড় লেগে লেন্স ছিঁড়ে না যায়।

৪। অনেকেই ডান ও বাম দিকের লেন্সে গুলিয়ে ফেলেন। খেয়াল রাখতে হবে যেন গুলিয়ে না ফেলেন।

৫। অনেক সময় ভুলবশত লেন্স পরা অবস্থায় চোখ চুলকিয়ে ফেলে অনেকে। এতে করে লেন্সে ঘষা লেগে লেন্স ছিঁড়ে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তাই চোখ ঘষা বা রগড়ানো যাবে না।

৬। ৮-১০ঘন্টার বেশি লেন্স চোখে রাখা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে লেন্সের ধরনের সাথে যে সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকে সেটা মেনে চলবেন।

৭।লেন্স পরা অবস্থায় ঘুমানো যাবে না।

৮। লেন্স খোলার পর একটি লেন্সের কৌটায় সল্যুশনে ডুবিয়ে রাখুন। সল্যুশনটি প্রতিদিন পরিবর্তন করতে হবে। পাত্রটিও পানি দিয়ে প্রতিদিন পরিষ্কার করে নিন। তবে কোনোভাবেই পানি দিয়ে লেন্স ধোঁয়া যাবে না।

৯। সফট কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি।

যে কোন কিছুর উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও বিধ্যমান। শখ বা প্রয়োজন, যেটাই হোক না কেন সঠিক ব্যবহারের অভাবে কন্টাক্ট লেন্সে নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

১। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়া, চোখ চুলকানো, পিচুটি পড়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।

২। জায়ান্ট প্যাপিলারি কনজেক্টিভাইটিস হতে পারে লেন্সের ফিটিংসে সমস্যা থাকলে। এতে চোখে অস্বস্তি লাগে। 

৩। চোখের উপরের লেয়ার ছড়ে যেতে পারে নানা কারণে।

৪। আলোর দিকে তাকাতেই অসুবিধা হতে পারে প্রথম দিকে।

৫। অনেক সময় কর্নিয়াল আলসার হয়ে যায়। এর ফলে জীবাণু থেকে চোখের মণিতে সংক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে ওষুধে কাজ না হলে অস্ত্রোপচারও করতে হতে পারে।

৬। কনট্যাক্ট লেন্সের চাপে চোখে স্থায়ী এসটিগমেটিজম বা দৃষ্টি স্বল্পতা হতে পারে।

৭। কনট্যাক্ট লেন্সের ব্যবহারে চোখে কর্নিয়ার অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যেতে পারে, সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে, চোখ শুষ্ক ও খসখসে এবং লাল হতে পারে।

৮। অধিক সময় ব্যবহারের কারণে চোখের মণি গরম হয়ে যেতে পারে।

৯। সফট কন্টাক্ট লেন্স ভেদ করে ধোঁয়া বা ফুলের রেণু চোখে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

১০।রান্নার সময় আগুনের তাপে আবার আবহাওয়া তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে কন্টাক্ট লেন্স গলে যেতে পারে, এতে চিরতর অন্ধত্ব হতে পারে।

১১। হাতের মাধ্যমে চোখে জীবাণু প্রবেশের মাধ্যমে ইনফেকশনের সম্ভবনা থাকে।

১২। দীর্ঘ সময় কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে চোখে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

১৩। অনেক সময় চোখে কনট্যাক্ট লেন্স থাকা অবস্থায় চোখে প্রসাধনী ব্যবহারে চোখে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

১৪। কন্টাক্ট লেন্স ভালো রাখার জন্য নানা ধরনের সল্যুশন পাওয়া যায়। কিছু সল্যুশন জীবাণু মুক্তকরণ, কিছু আবার চোখকে ভিজিয়ে রাখার জন্য।

তাই প্রয়োজনভেদে সঠিক ব্যবহার না জানার জন্য কন্টাক্ট লেন্স চোখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

সর্বোপরি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করলেই যে চোখের ক্ষতি হয় তা নয়, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ব্যবহার বিধি মেনে চললে চোখকে ক্ষতিমুক্ত রাখা যায়।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ

Column Writer