আমরা আমাদের সিম কার্ড দিয়ে কতই কিছু না করি। যেমন ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স থেকে শুরু করে সবকিছু। অথচ এত পার্সোনাল ডাটা থাকা সত্বেও এর নিরাপত্তা ব্যাপারে কোনো উদ্বেগ নেই কারোর। আপনি যদি আপনার তথ্যগুলো সুরক্ষিত রাখতে চান তাহলে পড়তে থাকুন।
বন্ধুর সাথে যোগাযোগ থেকে শুরু করে সবখানেই সম্পর্ক এর কথা বলতে গেলেই যেটা মাথায় আসে সেটা হলো সিমকার্ড। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন আপনার সিম কার্ডের তথ্য দিয়ে কত কিছুই না হচ্ছে- ব্যাংক ব্যালেন্স, বিকাশ, রকেট,পেটিএম, নগদ ইত্যাদি। এসব কিছু করতে গেলেই আপনার ফোন নম্বর টি ব্যবহার করা হয় মুল আইডেন্টিফাই হিসেবে।
এছাড়াও ফেসবুক, জিমেইল অ্যাকাউন্ট, টুইটার অ্যাকাউন্ট,অন্যন্য সোসাল মিডিয়া থেকে শুরু করে থার্ডপার্টি ওয়েবসাইট এর নতুন সদস্য হওয়ার জন্য আপনাকে মুল আইডেন্টিফাই হিসেবে ব্যবহার করা হয় মুলত আপনার সিম। আর সেই সিম রেজিস্ট্রেশন করা হয় আপনার ভোটার আইডি কার্ডের মাধ্যমে, যেখানে থাকে আপনার সবগুলো ব্যক্তিগত তথ্য।
তাহলে বুঝতেই পারছেন এটা কতটা দরকারি। যদিও বা এগুলো নিয়ে বর্তমান সময়ে কেউই মাথা ঘামায় না। আর এই কারণেই প্রতিবছর প্রায় হাজার হাজার টাকা হ্যাকারদের কবলে পরে ছিনতাই এর শিকার হচ্ছে আপনাদের মত অনেক মানুষ।হতে পারে তাদের তালিকায় আপনিও রয়েছেন অথবা এখনো শিকার হন নি।
তাই সবার আগে এটি থেকে সাবধান হওয়া জরুরি। নচেৎ আপনারই তথ্য দিয়ে অন্য ক্রিমিনাল টিম যেঅন্য কোম্পানির কাছে তথ্য বিক্রি করে দিতে পারে। কথাটা শুনে বিশ্বাস হতে চায় না !
তাহলে একটা ছোট্ট কাহিনী বলি
মনে করেন আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে গেছে । এখন অন্য দেশের কোনো একটা লোক যার উদ্দেশ্য খারাপ কাজ করা । কিন্তু সে যদি এখন খারাপ কাজ করে তাহলে তাকে ধরা অনেকটা ইজি কারণ সে নিজের তথ্য দিয়ে কাজ করতে গিয়েছিলেন। এবার ধরেন , আপনার চুরি হয়ে যাওয়া তথ্য অন্য কোম্পানির কাছ থেকে ঐ লোকটা কিনে নিলো বেশ ভালো পরিমাণ পেমেন্ট করে।
তারপর সে আপনার পরিচয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে কোনো খারাপ কাজ করলেও তাকে ধরা কিন্তু প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ সে নকল পরিচয় ধরেছিল। এবার তার কি লাভ হবে , মানুষ খারাপ কাজ করে কারণ সে কাজটি করলে প্রচুর পরিমাণে টাকা পাবে ও তার কোনো তথ্য কেউই জানতেও পারবে না দু দিকেই লাভ। মাঝখানে আপনার শুধু ক্ষতি। হতেও পারে আপনি গ্রেফতার হয়ে যাবেন। এইবার বুঝে গিয়েছেন।
কিভাবে লক করবেন আপনার সিম কার্ড?
যেহেতু বর্তমানে দিন দিন ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর ব্যবহার বাড়ছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ এখন টাচ স্ক্রিন ফোন ব্যবহার করছে তাই স্মার্ট ফোন নিয়ে আগে লিখলাম ও পরে বোতাম ফোন এর সিম লক পদ্ধতি উল্লেখ করলাম।
স্মার্ট ফোন:
প্রথমে আপনার ফোন অন করুন । তারপর ফোনের সেটিং অপশনে ক্লিক করুন আপনাকে ফোনের সমস্ত সেটিং অপশন গুলো দেখাবে।
এভাবে না যেতে পারলে হোম পেজ থেকে আপনার অ্যাপ স্টোরে গিয়ে ( settings) নামের অ্যাপ টি ওপেন করুন। তারপর নিচের দিকে স্ক্রল ডাউন করে ( security & lock ) অপশন খুঁজে নিতে হবে। লক অপশনে প্রবেশ করে আবার কোথায় লিখা আছে ( sim lock) সেটি বের করুন। ওখানে গিয়ে ক্লিক করুন ( বিভিন্ন ফোনে আলাদা থাকতে পারে) তাই খুঁজে নিতে হবে।
এবার আপনার সিমের একটি ডিফল্ট পাসকোড চাইবে সেটি আপনার সিম কার্ডের কাগজ পত্রের মাঝে লিখা আছে সেটি দিবেন।ব্যাস,কাজ শেষ হয়ে গেল আপনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এখন পাসওয়ার্ড চেঞ্জ অপশনে ক্লিক করে নিজের মনের মত পাসওয়ার্ড দিয়ে সেভ করুন।
মুঠোফোন:
ফোন অন থাকা অবস্থায় বামদিকে মেনু বাটন ক্লিক করুন যেখানে অনেক অ্যাপ আইকন থাকে ( নিশ্চিত করে) সেখানে যান। সেখানেও সেটিং ( settings) অপশনে ক্লিক করুন( একটু আলাদা থাকতে পারে তবে অপশন টি খুজে বের করতে হবে)। তারপর ( সিকিউরিটি) অপশনে ক্লিক করে সিম লক কোথায় লিখা আছে সেটি খুঁজে নিতে হবে। এবার ঐ অপশনে ক্লিক করুন।
এখন আগের মত সিমের একটি ডিফল্ট পাসকোড চাইবে সেটি আপনার সিম কার্ডের কাগজ পত্রের মাঝে লিখা আছে সেটি দিবেন। তারপর পাসওয়ার্ড চেঞ্জ অপশনে ক্লিক করে নিজের মনের মত পাসওয়ার্ড দিয়ে সেভ করে নিন তাহলেই কাজ শেষ।
উপকারিতা:
১. আপনার ফোন হারিয়ে গেলে কেউ আপনার তথ্য হ্যাক করতে পারবে না।
২. আপনার ফোনে লগইনকৃত বিকাশ, রকেট,পেটিএম, নগদ ইত্যাদি সুরক্ষিত থাকবে।
৩. আপনার পার্সোনাল ব্যাংক ব্যালেন্স ইনফরমেশন নিরাপদে থাকবে।
৪. আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য যেমন - মেসেজ ডাটা,কল ইতিহাস ও অন্যান্য লেনদেন সুরক্ষিত থাকবে।
৫. আপনার রিচার্জ ব্যালেন্স ইনফরমেশন নিরাপদে থাকবে।
৬. সিম কার্ড দিয়ে আপনাকে ব্লাকমেইল করতে পারবে না।
৭. আপনার সিমের মাঝে কার কার নাম্বার সেভ করা আছে সেগুলো নিরাপদে থাকবে।
৮. সিম দিয়ে ব্যবহারের টাইমলাইন ও তারিখ নিরাপদে থাকবে।
অপকারিতা:
১. অন্য ফোনে সিমকার্ড ইন করলে আপনাকে শুধুমাত্র ৩ বার পাসওয়ার্ড যাচাই করার সুযোগ দেওয়া হবে।
২. ভুল পাসওয়ার্ড প্রবেশ করা হলে ১০ বার রিকভারি কোড ব্যবহার করার সুবিধা দেওয়া হবে।
৩. রিকভারি কোড দিয়ে চেষ্টা করার পরও ব্যর্থ হলে সিম পুরোপুরি ব্লক করা হবে।
৪.সবশেষে সেই নাম্বার দিয়ে আবার নতুন সিম রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে।
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?
কোনো সমস্যা নেই আপনি চাইলেই ঠিক করতে পারবেন ঘরে বসে। এর জন্য আপনাকে সিম কার্ডের কাগজ পত্র থাকতে হবে।
আপনি পাসওয়ার্ড ভুল দিয়ে দিয়ে রিকভারি কোড চাওয়ার জন্য বক্স আসলে সেখানে আপনার সিমের কাগজ পত্রের মাঝে লিখা আছে সেই রিকভারি কোড সেটা বসিয়ে দিলেই। আপনার সিম আনলক হয়ে যাবে।
অথবা আপনার কাগজ পত্রের মাঝে কোড না থাকলে। আপনাকে সেই অপারেটর এর কাছে ফোন দিয়ে বলতে হবে।তারা সলভ করে দিবে আপনার সমস্যা।
কিছু মন্তব্য:
সর্বস্ব চেষ্টার পরেও ব্যর্থ হলে আপনার সিম টি রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে কিছু টাকা খরচ করে। আর হ্যা আমরা নিজেদের জিমেইল আইডি, ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে ২ ফ্যাক্টর অথিনটিকেশন অন রাখি । কিন্তু আমাদের সিম কার্ডটি যেখানে রয়েছে পার্সোনাল তথ্য সেটি অবহেলায় পড়ে থাকে।
আমি কোনো সাজেশন দিবো না যে এটা করুন ওটা করুন। আপনার ইচ্ছা , কারণ আপনার সিম। আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। কখনো অন্যর কাছে ছিল না থাকবেও না। আপনার ছোট্ট একটু সচেতনতা , হ্যাকারদের জন্য ভয়াবহতা।
You must be logged in to post a comment.