কেন বেশিরভাগ Android ম্যানুফ্যাকচাররা তাদের নিজস্ব ইকোসিস্টেম বা একাধিক গ্যাজেট তৈরি করে?

আপনি যদি এই মুহূর্তে কোন একটি জনপ্রিয় মোবাইল ব্র্যান্ডের ফোন ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, তারা মোবাইল ফোন তৈরি করার পাশাপাশি আরও অনেক ধরনের ডিভাইস তৈরি করে থাকে।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

এক্ষেত্রে আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে, সেসব Android ম্যানুফ্যাকচাররা এখন তাদের হার্ডওয়ার ইকোসিস্টেমের অংশ হিসেবে Table, Earbuds, Watch এবং আরো অনেক কিছু তৈরি করছে।

বড় বড় অ্যান্ড্রয়েড ফোন মেনুফ্যাকচারদের দেখা যায় যে, তারা আপনার কাছে স্মার্টফোন বিক্রির পাশাপাশি আরও অনেক কিছু বিক্রি করার চেষ্টা করছে।

আর এক্ষেত্রে তারা আপনার কাছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, হেডফোন, ল্যাপটপ, স্মার্ট ওয়াচ এবং ট্যাবলেট বিক্রি করার জন্য অফার করে।

এখন আমরা স্যামসাং এবং ওয়ান প্লাস এর মত ব্র্যান্ডগুলোর ক্ষেত্রে এরকমই প্রবণতা লক্ষ্য করছি। মোবাইল ব্র্যান্ডগুলোর এরকম অন্যান্য ডিভাইস করার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে? কেন অ্যান্ড্রয়েড ম্যানুফ্যাকচাররা এরকম ইকোসিস্টেম তৈরি করছে?

১. তাদের পণ্য ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নিরবিচ্ছিন্ন ইউজার এক্সপেরিয়েন্স পাওয়ার জন্য

আপনাকে যদি এই বিষয়টি সহজ ভাবে বুঝতে হয়, তাহলে অ্যাপেলের ডিভাইস গুলোর প্রতি লক্ষ্য করতে হবে। অ্যাপেলের ইকো সিস্টেম আকর্ষণীয় হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, তাদের ডিভাইস এবং সার্ভিসগুলোর অসাধারণ ইন্টিগ্রেশন সিস্টেম।

প্রথমেই আমরা যদি ফাইল শেয়ারিং এর দিকে নজর দেই, তাহলে অ্যাপেল গেজেট গুলোর মধ্যে AirDrop ব্যবহার করে খুব সহজেই ফাইল শেয়ার করা যায়।

যেকোনো অ্যাপেল ডিভাইস ব্যবহারকারী চাইলে তার অ্যাপল ডিভাইস থেকে Mac এর স্ক্রিনে যে কোন কনটেন্ট শেয়ার করতে পারে। একটি অ্যাপেল ওয়াচ ব্যবহার করে Mac আনলক করতে পারেন,

Mac এর ওয়েবক্যাম হিসেবে আইফোন ব্যবহার করতে পারেন, একটি অ্যাপেল ডিভাইস থেকে যেকোনো কনটেন্ট কপি করে সেটি অন্যটিতে পেস্ট করতে পারেন এবং সেই সাথে আরো কিছু অসাধারণ কাজ করা যায়।

আপনি যদি অ্যাপেল ডিভাইস গুলোর এই ইকোসিস্টেম দেখেন, তাহলে অনুধাবন করতে পারবেন যে, কেন এই মুহূর্তে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ম্যানুফ্যাকচার নিজস্ব ইকোসিস্টেম তৈরি করছে। তারা যদি স্মার্টফোন তৈরি করার পাশাপাশি অন্যান্য ইলেকট্রিক ডিভাইস গুলো তৈরি না করে,

তাহলে প্রতিযোগিতায় অন্যান্য ব্রান্ডগুলোর চাইতে পিছিয়ে পড়ে যাবে। আর সে কারণে, তারা নিজেরাও স্মার্ট ফোন তৈরি করার পাশাপাশি এর সাথে আনুষঙ্গিক আরো বিভিন্ন সার্ভিস ও প্রোডাক্ট নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।

২. ব্রান্ডের প্রতি গ্রাহকের বিশ্বাস আরো বেশি বাড়াতে

একটি স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানি যখন স্মার্টফোন তৈরি করার পাশাপাশি আরো অনেক ডিভাইস তৈরি করে, তখন তাদের একটি নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, কাস্টমারদের পরিপূর্ণ আস্থা অর্জন করা এবং তাদেরকে নিজেদের ব্রান্ডের পণ্য ব্যবহারের মধ্যে রাখা। কোন মোবাইল মেনুফ্যাকচার কোম্পানি চায় যে, আপনি সব সময় তাদের ব্রান্ডের সাথে যুক্ত থাকুন।

আপনি যদি এই মুহূর্তে Samsung এর Galaxy S23 Ultra Galaxy স্মার্ট ফোন Buds2 Pro Earbuds, Galaxy Watch5 স্মার্ট ওয়াচ এবং Galaxy Tab S8 মতো বেশ কয়েকটি ডিভাইস ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনার ক্ষেত্রে ডিভাইস গুলোতে সুইচ করার খুব কম সম্ভাবনা থাকবে।

এখন আপনি যদি স্যামসাংয়ের এই ডিভাইস গুলো ব্যবহার করার সময় অন্য কোন ব্রান্ডে সুইচ করতে চান, তাহলে এটি আপনার জন্য অনেক ঝামেলার কারণ হতে পারে। কেননা, প্রত্যেকটি কোম্পানি তাদের নিজস্ব প্রোডাক্ট এর ডিভাইস গুলোর ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের ইউনিক এক্সপেরিয়েন্স দিতে নিজস্ব ইকোসিস্টেম তৈরি করে।‌

আর সেই মুহূর্তে আপনি যদি অন্য কোন ব্রান্ডের স্যুইচ করেন, তাহলে আপনার ক্ষেত্রে সেই এক্সপেরিয়েন্স পাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

তাই প্রত্যেকটি কোম্পানির তাদের নিজস্ব প্রোডাক্টের মাঝে একটি সুন্দর ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য কাজ করে এবং যা তাদের গ্রাহকদের ব্রান্ডের প্রতি আরো বেশি বিশ্বস্ত করে তোলে।

যেরকম যেরকমটি আমরা এই মুহূর্তে অ্যাপেলের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে দেখতে পাই। ‌যেখানে অ্যাপেলের গ্রাহকরা অ্যাপল ব্র্যান্ডের প্রতি সবচাইতে বেশি বিশ্বস্ত বলে পরিচিত। ‌ কারণ, অ্যাপেলের রয়েছে তাদের ডিভাইস গুলোর মধ্যে সুন্দর ইকো-সিস্টেম।

৩. আরো রেভিনিউ জেনারেট করা

অ্যান্ড্রয়েড ম্যানুফ্যাকচাররা ক্রস সেলিং এর মাধ্যমে আরো বেশি রেভিনিউ জেনারেট করতে চায়। এক্ষেত্রে তারা তাদের গ্রাহকদের কোন একটি আইটেমের সাথে সম্পর্কিত আরো একটি প্রোডাক্ট কেনার জন্য উৎসাহিত করে, যাতে করে তারা আরও বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারে।

মোবাইল ম্যানুফ্যাকচাররা বরং কোন একজন গ্রাহকের কাছে বারবার একই ডিভাইস বিক্রি না করে কিংবা নতুন গ্রাহক না এনে, পুরাতন গ্রাহকদের কাছেই কেবলমাত্র অন্যান্য পণ্য বা সার্ভিস বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় করার চেষ্টা করে। আর, ব্যবসায়িক মডেলে এই বিজনেস পলিসিটি অনেক বেশি প্রয়োগ করা হয়।

যেখানে, কোম্পানিগুলোর নতুন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য অতিরিক্ত খরচ না করেই, কেবলমাত্র বিদ্যমান থাকা গ্রাহকদের কাছেই তাদের পণ্য বা সার্ভিস বিক্রি করে।

আর তাই, একটি মোবাইল ম্যানুফ্যাকচার যদি তাদের ব্রান্ডের জন্য একটি সিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করে, তাহলে তারা খুব সহজেই অনেক বেশি রিভিউ জেনারেট করতে পারে। ‌এর কারণ হলো,

একটি স্মার্টফোনের মালিক বা গ্রাহক একই ব্র্যান্ড থেকে ইয়ারবাড এবং স্মার্টওয়াচ এর মত আরো আনুষঙ্গিক ডিভাইস গুলো কিনতে পারে।

৪. প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সুবিধার জন্য

মোবাইল মেনেফ্যাকচাররা তাদের প্রতিযোগীদের চাইতে ভালো কিছু আনার জন্য কিংবা প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য তাদের নিজস্ব সিস্টেম তৈরি করে। আর এজন্যই তারা স্মার্টফোন তৈরির পাশাপাশি আরো অনেক ধরনের স্মার্ট গেজেট তৈরি করে থাকে।

একটি স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানির সব সময় তাদের ব্যবহারকারীদের একটি ইউনিক ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দিতে চায়। ‌আর সে কারণেই, তারা অন্যান্য সকল ব্র্যান্ডের উপর প্রতিযোগিতা করতে থাকে।

কোন একজন ব্যবহারকারী অবশ্যই সেই ডিভাইস কিনবে না, যা কেনার পর পরবর্তীতে অতিরিক্ত সুবিধা পাবে না। কোন একটি মোবাইল ব্র্যান্ডের যদি একটি সুন্দর ইকোসিস্টেম থাকে, তাহলে গ্রাহকগণ অবশ্যই সেই ব্রান্ডের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়বে, যেমনটি আমরা অ্যাপেল ডিভাইসের প্রতি লক্ষ্য করি। ‌

তাই, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য মোবাইল ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ডিভাইস আনছে এবং তাদের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য একটি সুন্দর ইকোসিস্টেম তৈরি করছে।

শেষ কথা,

আপনি কোন ব্র্যান্ড থেকে স্মার্ট ফোন কিনেছেন, তার উপর আপনার ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বৈচিত্রময় হতে পারে।‌ তবে, অন্যান্যদের মতো আপনিও হয়তোবা সবসময় এমনটি চিন্তা করেন যে, যাতে করে আমি এই ডিভাইসটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সর্বক্ষেত্রে একটি ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্স পেতে পারি। ‌

আর সেই চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখেই দেখি মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব ইকো সিস্টেম তৈরি করছে যাতে করে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করার অভিজ্ঞতাকে আরো অনেক বেশি ভালো করা যায়।

আশা করছি যে, আপনি এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে, কেন স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানিগুলো মোবাইল তৈরির পাশাপাশি আর ও বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক গ্যাজেট তৈরি করছে।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ