করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)মহামারি বিশ্বজুড়ে পারিবারিক জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে। স্কুল বন্ধ হওয়া, দূরে থেকে কাজ করা,শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা-এগুলো যে কারো জন্য নতুন বিষয়, বিশেষ করে বাবা মায়েদের জন্য। করোনাভাইরাস(কোভিড ১৯)পাদুর্ভাব সারাবিশ্বের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। স্কুল বন্ধ, বাড়িতে বসে অফিসের কাজ শারীরিক দূরত্ব রক্ষা এমন অনেক নেতিবাচক বিষয় এখন অভিভাবকদের সামনে। করোনার সময় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিশুদেরকে নিয়ে।
করোনাময়সময় স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যবস্থাকে বদলিয়ে দিয়েছে। মানুষ মন খুলে বেড়াতে পাচ্ছে না, মন খুলে হাসতে পারছে না। সবমিলিয়ে এই সময়টি একটি কঠিন সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই সময় শিশুদেরকে নিয়ে আর একটু বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাদেরকে মানুষিকভাবে সুস্থ রাখতে পরিবাররে বাবা মা দের বেশ কিছু করণীয় থেকে থাকে।
অবশ্য এই করোনাভাইরাসময় সময় এসব খুব কঠিন হয়ে গিয়েছে। এই সময় মানুষিকভাবে বেশিভাগ সাধারন মানুষ ও অসুস্থতায় ভুগছে। তাই এই সময় নিজেকে সুস্থ রেখে সন্তানের যত্ন রাখা টা বিশেষ জরুরী। আর তাই এই পরিস্থিতিতে সন্তানের যত্ন সংক্রান্ত টিপ্স গুলো নিয়ে আমারা আসলাম আপনাদের কাছে। নিচে টিপ্সগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
সন্তানের যত্ন সংক্রান্ত টিপ্স:
১. কোভিড ১৯ সম্পর্কে আলোচনা করা: শিশুদের সাথে কথা বলুন। তারা ইতিমধ্যে এবিষয়ে কিছু না কিছু শুনে থাকবে। নীরবতা ও গোপনিয়তা কিছু সুরক্ষা দেয় না। বরং সুরক্ষা দিতে পারে সততা ও খোমেলা আলোচনা। তারা কতটা বুঝতে পারবে ভেবে দেখুন। আপিনই তাদের সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন।
মন খোলা রাখুন এবং শুনুন:
আপনার শিশুকে নির্দিধায় কথা বলার সুযোগ দিন তাদের খোলামেলা প্রশ্ন জিঙ্গাসা করুন এবং তারা ইতিমধ্যে কতটা জানে তা বোঝার চেষ্ঠা করুন।
সৎ হোন:
সর্বদা সততার সঙ্গে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনার সন্তানের বয়স কত এবং সে সম্পর্কে তারা কতোটা বুঝতে পারবে সে সম্পর্কে ভাবুন।
সহায়ক হোন:
আপনার শিশু আতঙ্কিত বা বিভ্রান্ত থাকতে পারে। তারা কেমন অনুভব করছে তা প্রকাশ করার সুযোগ করে দিন এবং আপনি যে তাদের পাশে আছেন সেটা তাদেরকে নিশ্চিত করুন।
উত্তর জানা না থাকলেও সমস্যা নেই:
আমরা জানি না তবে এটি জানার চেষ্ঠা করছি; অথবা আমরা জানি না, তবে আমরা মনে করি- এভাবে তাদেরকে বলা যায়। এ বিষয়টিকে আপনার সন্তানের সঙ্গে নতুন কিছু শেখার সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করুন।
বীরেরা কখনও ভিতিকর হয় না:
একজন মানুষ দেখতে কেমন, কোথায় থাকে বা কোন ভাষায় কথা বলে তার সঙ্গে কোভিড-১৯ এর যে কোন সম্পর্ক নেই তা তাদেরকে ব্যাখ্যা করুন। আপনার শিশুকে বলুন, অসুস্থ এবং যারা অসুস্থদের যত্ন নিচ্ছেন তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল হতে হবে। এমন লোকদের কথা জানার চেষ্ঠা করুন যারা কোভিড-১৯ পাদর্ভাব বন্ধ করতে কাজ করছেন এবং অসুস্থ মানুষের যত্ন নিচ্ছেন।
২. কোভিড -১৯ এর সময় একজন আরেক জনকে সময় দেওয়া:
কাজে যেতে পারছেন না? স্কুল বন্ধ? অর্থকড়ি নিয়ে চিন্তিত? মানসিক চাপ অনুভব করা ও হতবিহল হয়ে পড়া স্বাভাবিক। স্কুল বন্ধ হওয়া এটা আমাদের শিশু এবং কিশোর কিশোরীদের সাথে সম্পর্ক আরও ভালো করার একটি সুযোগও। এখন একজন আরেকজনকে সময় দেওয়ার কাজটি করা যায় এবং এটি আনন্দের। এটি শিশুর প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করবে ও তারা সুরক্ষিত বোধ করবে এবং এতে তারা বুঝতে পারবে যে তারাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিটি সন্তানের সঙ্গে কাটানোর জন্য আলাদা সময় ঠিক রাখুন:
এটি মাত্র ২০ মিনিট বা বেশি সময়ও হতে পারে- তা পুরোপুরি আমাদের উপর নির্ভর করে। এটি প্রতিদিন একই সময় হতে পারে,যাতে শিশু বা কিশোর কিশোরীরা এর জন্যে অপেক্ষায় থাকবে।
আপনার সন্তানকে জিঙ্গাসা করুন তারা কি করতে চায়:
কোন সিন্ধান্ত নেওয়া তাদের আত্নবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। তারা যদি এমন কিছু করতে চায় যা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, ্আপনি যদি পরিপূরর্ণ সুস্থ থাকেন তাহলে তাই করুন।
একটু বড় শিশুর জন্য যা করতে পারেন:
একটি বই পড়ে শোনান বা ছবি দেখান। হালকা রঙের চকখড়ি বা পেন্সিল দিয়ে ছবি একেঁ দিন। গানের সঙ্গে নাচুন বা গান গেয়ে শোনান। শিশুর স্কুলে কাজে সহায়তা করুন।
আপনার কিশোর-কিশোরী বয়সের সন্তানের সঙ্গে যা করতে পারেন:
তারা পছন্দ করে এমন কিছু কথা বলুন: খেলাধুলা, সঙ্গীত, খ্যাতিমান ব্যক্তি বা বন্ধু। পছন্দের কোন খাবারে একসঙ্গে রান্না করুন। তাদের পছন্দের গানের সঙ্গে একত্রে শরীর চর্চা করুন। তাদের সাথে কথা বলুন, তাদের দিকে তাকান,তাদের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিন।
৩. করোনাভাইরাসের পাদুর্ভাবের সময় ইতিবাচক থাকা:
আমাদের শিশু বা কিশোর বয়সী সন্তানেরা যখন তাদের কর্মকান্ড দিয়ে আমাদের পাগল করে তোলে, তখন ইতিবাচক থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রায়ই আমরা একটি কথা বলে শেষ করি - এটা করা বন্ধ করা দরকার। তবে আমরা যদি শিশুদের ইতিবাচক নির্দেশনা দেই এবং তারা কাজটি ঠিক ঠাক করতে পারলে যদি তাদের প্রশংসা করি, তাহলে আমরা যা বলবো শিশুরা সেটা করতে সেটা বেশি আগ্রহী থাকবে।
আপনার যে আচরনটি দেখতে চান তা বলুন:
আপনার শিশুকে কোন কাজ করতে বলার সময় ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করুন; যেমন: অনুগ্রহ করে তোমার কাপড়-চোপড়গুলো দূরে রাখ (বিশৃঙ্খলা করো না এর বদলে)।
বাস্তবতা মেনে নিন:
আপনি আপনার শিশুকে যা করতে বলছে তারা কি সেটা করতে পারছে। ঘরের ভেতরে পুরো দিন চুপচাপ থাকা একটি শিশুর জন্য খুব কষ্টসাধ্য, তবে আপনি যখন ফোনে কথা বলবেন তখন তারা ১৫ মিনিট সময়ের মতন চুপচাপ থাকতে পারে।
৪ গোছালো হাওয়া:
কোভিড-১৯ আমাদের প্রতিদিনের কাজ, বাড়ি ও স্কুলের রুটিন কেড়ে নিয়েছে। এটি শিশু কিশোর বয়সী আপনার জন্য কঠিন সময়। নতুন রুটিন তৈরী করা এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
নমনীয় ধারাবাহিকভাবে নতুন রুটিন তৈরী করুন:
আপনার এবং আপনার শিশুদের এমন একটি সময়সূচি তৈরী করুন যেখানে গোছালভাবে সব কাজ করার পর অবসর সময়ও থাকে। এটি শিশুদের প্রতি নিরাপদ বোধ করতে এবং ভালো আচারন করতে সহয়াতা করবে। শিশু বা কিশোর বয়সীরা স্কুলের সময়সূচি ৈতৈরীর মতন তাদের দিনের রুটিন তৈরীতে পরিকল্পনা দিয়ে সহয়তা করতে পারে। এটি তৈরিতে শিশুদের সহয়তা করলে তারা আরও ভালোভাবে এটি অনুসরণ করবে।
আপনার শিশুকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে শিক্ষা দিন:
আপনার দেশের জন্য প্রযোয্য হলেও শিশুদের বাড়ির বাহিরে নিয়ে যান। লোকজনের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য ্আপনি চিঠি লিখতে বা ছবি আকঁতে পারেন। এগুলো আপনার বাড়ির বাহিরে টাঙ্গিয়ে রাখুন যাতে অন্যরাও দেখতে পারে। আপনি কিভাবে আপনার সন্তানদের সুরক্ষিত রাখছেন সে বিষয়ে কথা বলে আপনি তাদের পুনরায় আশ্বস্ত করতে পারেন। তাদের পরামর্শ শুনন সেগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নিন।
হাত ধোয়া ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলোকে মজার করে তুলুন:
হাত ধোয়ার জন্য ২০ সেকেন্ড একটি গান বানান। এর সঙ্গে কাজ যুক্ত করুন। নিয়মিত হাত ধোয়ার জন্য শিশুদের পয়েন্ট দিন এবং প্রশংসা করুন। আমরা কত কম সংখ্যাকবার আমাদের মুখমন্ডল স্পর্শ করতে পারি সেটা দেখার জন্য একটি খেলা তৈরী করুন এবং সবচেয়ে কমবার যে স্পর্শ করবে তার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখুন।
খেলার মাধ্যমে শেখান:
লাখ লাখ শিশুর স্কুল বন্ধ হওয়া এবং তাদের নিজ বাড়িতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার বিষয়টির সম্মুখীন। এই পরামর্শটি খেলার মাধ্যমে শেখার বিষয়ে বলুন যে - এটি এমন কিছু যা সব বয়সী মানুষের আনন্দায়ক ব্যাপার হতে পারে।
You must be logged in to post a comment.