আশা করি আপনারা ভালো আছেন। আপনাদের জন্য আজকে খুব সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।আমরা সকলেই প্রায় সমস্যার সম্মুখীন হই।যে পড়া মুখস্ত করলে পড়াটা বেশিদিন মনে থাকে না। আমাদের কিভাবে পড়লে সেই পড়াটা বেশিদিন আমাদের মনে থাকবে। এই বিষয় নিয়ে আজকে বিজ্ঞানীরা কি বলেছেন তা আলোচনা।
পৃথিবীর যত মানুষ আছে,ব্যাতিক্রম দুই~একটি ছাড়া সকলের ব্রেনের ধারণ ক্ষমতা ১০ লক্ষ গিগাবাইট। পৃথিবীর প্রায় কম মানুষের ১০ % কাজে লাগে।তার মানে আমরা আমাদের মেমোরি কে ১০ % কাজে লাগিয়ে থাকি।
আমরা কম্পিউটার দিকে লক্ষ করলে দেখবো,কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ৫০০,১০০০,২০০০ গিগাবাইট। তাহলে আপনে চিন্তা করুন আমাদের মেমোরি ১০ লক্ষ গিগাবাইট। মানে কত কি আমরা মেমোরিতে ধরে রাখতে পারবো।
আমাদের মাথার যেখানে মেমোরি টা আছে।পড়ার পর যেখানে গিয়ে পড়াগুলো জমা হয়,সেই জায়গাটিকে বলা হয় Hippocampus। পড়া ভুলে যাওয়া এই সমস্যা টি শুধু আপনার আমার সমস্যা না,শুধু বাংলাদেশের মানুষের সমস্যা না।পুরো বিশ্বের এই সমস্যা যে পড়া ভুলে যাওয়া।
"পড়া ভুলে যাওয়া" এই বিষয়টি নিয়ে প্রথম গবেষণা করেছেন,জার্মান একজন বিজ্ঞানী।তার নাম হারমেন এভিঙ্গগাস(Hermann Ebbigaus)।Hermann Ebbigaus যেটা বলেছেন যে মানুষ পড়ার পর
- ১ঘন্টা পর ৩৩% সে ভুলে যায়।
- ১দিন পর ৪০% সে ভুলে যায়।
- ১সপ্তাহ পর যতটুক পর তার ৮০% ভুলে যায়।
এই যে ভুলে যাওয়া এই সমস্যার কি সমাধান নেই,অবশ্যই আছে।হইতো ১০০ %মনে রাখতে পাড়বেন না,কিন্তু ৮০ %পর্যন্ত মনে রাখা সম্ভব হবে।পড়া মনে রাখতে হলে প্রথমে আমাদের তৈরি করে নিতে হয় যে,আমি পড়বো আমার পড়াটা মনে রাখতে হবে।
আমি প্যাকটিক্যালি একটা বিষয় নিয়ে ব্যাখা দিচ্ছি। ধরুন আপনে একজন ছেলে অথবা একজন মেয়ে হন।ছেলে হলে বলছি,কোনো একটা মেয়ের সাথে দেখা হয় যাকে আপনার ভালো লাগছে। সে যখন প্রথম আপনাকে তার ফোন নাম্বার বলে ১১ ডিজিটের ফোন নাম্বারটা বলে তাহলে আপনে কিন্তু সেই নাম্বারটি মনে রাখেন।ভুলে যান না।
কেনো মনে রাখেন? মনে রাখেন এইজন্য সে তার নাম্বার টা বলেছে দ্বিতীয় বার সেই নাম্বারটি রিপিট নাও করতে পারে। আপনে যে পরবর্তীতে তার সাথে যোগাযোগ করতে চান। আপনার যে তার প্রতি আগ্রহ, এই আগ্রহের ফলে আপনার মেমোরি Hippocampus এর নিউরন জাগ্রত হতে থাকে।যার মাধ্যমে জিনিসগুলো দ্রত ধরে নিতে পারি।
ঠিক একই ভাবে পড়ার প্রতি যখন আপনার আগ্রহ টা থাকবে, তখনি পড়া টা তারাতাড়ি মুখস্ত করে নিতে পারবেন। পড়াটা তারাতাড়ি ক্যাচ করতে পারবেন। আপনে কোনো নাটক বা সিনেবা এতটা মনেযোগ দিয়ে দেখেন যে ৩ ঘন্টার সিনেমা আপনে দেখার পর বাড়িতে এসে খুব ভাবে পুরো সিনেমার কাহিনী টা বলতে পারেন।
কেনো পারেন কারণ অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে আপনে সেই সিনেমা বা নাটক টি দেখেন।মনোযোগ দেওয়ার কারণে আমাদের মাথার নিউরন গুলো সেই বিষয় গুলোকে ধরে রাখতে সাহায্যে করে।ঠিক একই ভাবে পড়াটাও আপনাকে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
পড়াগুলো মনে রাখার বৈজ্ঞানিক কৌশলঃ~
➤ আপনার প্রথম কাজ পড়াটাকে আর্কষন করা।
আপনে পড়াটাকে তো আর্কষণ করতে পারেন না। কিভাবে পড়াটাকে আর্কষণ করবেন।এই পড়াটাকে আর্কষণ করার উপায় কি?পড়াটাকে আর্কষণ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে আপনে আপনার ভবিষ্যতে কিছু হওয়া বা কিছু করা সেই স্বপ্ন টাকে গুছিয়ে নিবেন। ধরেন আপনে ভার্সিটিতে পড়বেন তাহলে আপনাকে ভার্সিটির প্রস্তুতি নিতে হবে।
এখন আপনার স্বপ্ন হচ্ছে ভার্সিটিতে পড়া।তাহলে যখন পড়বেন তখন ভাববেন যে আমি ১ঘন্টা পড়লে বা ১সপ্তাহ পড়লে মানে,আমার স্বপ্ন পূরণের ১ ঘন্টা বা ১ সপ্তাহ এগিয়ে গেলাম। ঠিক একই ভাবে আপনে ১মাস পড়লেন মানে আপনে স্বপ্নের পূরণের দিকে ১মাস এগিয়ে গেলেন।এভাবে যদি ভাবেন তাহলে আপনা পড়াটাকে আর্কষণীয় করতে পারেন।
পড়াকে আর্কষণীয় করার আরেকটি কাজ হচ্ছে আপনে যেখানে পড়বেন সেই জায়গা পরিষ্কার ~পরিচ্ছন্ন রাখবেন।আপনার যেমনি বাড়ি হোক না কেন আপনি পড়ার জায়গাটা,অর্থাৎ টেবিল এবং আশেপাশে পরিষ্কার রাখবেন।তাহলে আপনার পড়ার পরিবেশ হবে।আর আপনার রুম থেকেজালানার মাধ্যমে যদি কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায় তো আরো ভালো।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন কোনো ব্যাক্তি যেখানে পড়বে তার আশেপাশে যদি কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্য বা সবুজ গাছপালা দেখতে পাই, সে যদি পড়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে তাহলে পড়ার যে ক্ষমতা সেটা ২.৫~৩% পর্যন্ত বেড়ে যায়।
➤ এর পরের কাজটি হলো আপনে পড়ার পড় ১০ মিনিট হাঁটবেন।কেনো ১০ মিনিট বলছি এর বেশি না বা কম ও না। ১০মিনিট হাটতে হবে এটা আমার কথা না,এটা হচ্ছে আমেরিকার ইনিনই স্টেট ইউনিভার্সিটি একটি গবেনায় বলেছেন মানুষ কোনো নতুন বিষয়ে পড়ার আগে ১০ মিনিট হাটে তাহলে তার মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা ১০% বেড়ে যাবে।
➤ এর পরের বিষয়টি হলোঃ~ জার্মান মনোবিজ্ঞানী Hermann Ebbigaus বলেছে পড়ার মাঝে ব্রেক দেওয়া।বিজ্ঞানীর যে ত্বত দিয়েছেন সেখানে বলেছেনঃ~
প্রথমে ১০ মিনিট হাটলেন তারপর পড়তে বসলেন। ২০ মিনিট ধরে পড়লেন। ২০ মিনিট পড়ার পর ৫মিনিট ব্রেক। ধরেন আপনে পড়াটা শুরু করলেন- এরপর আপনে যেই আগে বাংলা পড়লেন সেই ৫মিনিট রিভিশন দিবেন।এইভাবে পড়বেন।দেখবেন পড়াটা বেশ ভালোভাবে মনে রাখতে পারবেন।
এরপর রাত্রে ঘুমানোর আগে আপনে যে সারাদিন যেই যেই বিষয়গুলো পড়েছেন সেগুলো ১ বার করে রিভিশন দিয়ে নিবেন এবং পরের দিন আগের দিনের বিষয় গুলো ১বার রিভিশন দিবেন।তারপর অন্য পড়া শুরু করবেন।
উপরের পদ্ধতি টা দেখিয়েছেন, Hermann Ebbigaus।ওনি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমান দেখিয়েছেন এইভাবে যদি কেউ পড়ে তার পড়াটা অনেকদিন পর্যন্ত মনে থাকবে।
➤ আমরা কোনো বিষয়ে পড়লে সেটা আমাদের মেমোরি Hippocampus এ গিয়ে থাকে।Hippocampus এ কোনো বিষয় স্থায়ী করতে চাইলে আপনাকে বারবার পড়তে হবে।
➤ কোনো কঠিন পড়া থাকলে সেটা অল্প করে পড়তে হবে।কঠিন পড়া বেশি পড়া যাবে না।কঠিন পড়াটি ১০মিনিট পড়লেন।১০ মিনিট পড়ার পর ১০মিনিট বা ১৫ মিনিট ঘুমিয়ে নিলেন। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন মানুষ যখন কঠিন পড়া পড়ে।
তারপর সে যদি ঘুমায় তাহলে মেমোরি Hippocampus এর নিউরন গুলো তার স্মৃতি শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে এবং সেটা বাড়তে বাড়তে পূর্ণ একটা ঘুম দিতে পারে তাহলে ৫০০%পর্যন্ত বেড়ে যায়।আপনে যখনি কোনো কঠিন জিনিসগুলো পড়বেন তখনি একটু ঘুমিয়ে নিবেন।কঠিন জিনিসগুলো অল্প অল্প করে পড়বেন।
➤আপনে যখন কোনো সাল বা কোনো কিছুর নাম পড়বেন তখন লিখে লিখে হালকা শব্দ করে পড়বেন।অনেকেই বলেছে ১ লেখা ১০ বার পড়ার সমান।আপনে কোনো বিষয় পড়ার পর সেটা ১বার লেখলে আপনার ১০ বার প সেই বিষয় টি ১০বার পড়ার সমান হবে।অর্থাৎ লিখে লিখে পড়লে পড়াটা অনেকবেশি মনে থাকবে।
➤ আপনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোন জিনিস পড়বেন তখন কালার কলম ব্যবহার করবেন বা ইাইলেটর ব্যবহার করবেন।কোনো বিষয়গুলোর উপর কালার করলে বিষয় টা বেশি গুরুত্ব দিবেন এবং পরবর্তীতে রিভিশন দিবেন তখন আপনার চোখে পরবে বিষয়গুলো।
➤ তারপর আপনাকে কোনো বিষয় বুঝে বুঝে পড়তে হবে।বুঝে বুঝে না পড়লে বিষয়টি আপনার মনেথাকবে কম।জোর করে মুখস্থ করে কোনো লাভ নেই।সেটা অনেক তারাতাড়ি ভুলে যাবে।আর আপনে কোনো বিষয় বুঝে বুঝে পড়বেন তখন সেটা অনেক দিন পর্যন্ত মনে থাকবে।
ডাজ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে বুঝে বুঝে মুখস্থ করলে না বুঝে মুখস্ত থেকে ৯ গুণ বেশি মনে থাকে।
➤ আমাদের পড়ার ক্ষেত্রে সবসময় রুটিন অনুযায়ী এগোতে হবে।রুটিনের মাধ্যমে আমরা পরীক্ষার আগে সিলেবাস কমপ্লিট করতে পারবে। যে এই বিষয়গুলো এই সময় পড়তে হবে। একটা নিদিষ্ট টাইম পড়তে হবে।আপনে একটা অধ্যায় পড়বেন।সেই অধ্যায়ে ৩০ টা পাতা আছে।আপনাকে ভাগ ভাগ করে নিতে হবে, যে আজকে ৫টা পাতা পড়বো।কালকে ৭টা পাতা বা ৮ টা পাতা পড়বো।এইভাবে খন্ড খন্ড করে পড়বেন।
➤ আপনার যেসব জিনিসগুলো বিভ্রান্তি (confusing) করে,সেসব জিনিস গুলো পাশাপাশি লিখে লিখে পড়তে হবে।
আপনে প্রথমে কোনো নতুন বই কিনলেন।নতুন বইয়ের প্রথম থেকে পড়া শুরু করি আমরা।এমনটা করবেন না।বইয়ের যেই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো আগে পড়বেন।তার পর তার থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো পড়বেন।তারপর তার থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো পড়বেন।
➤ নতুন বইটি কেনার পর গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টার পড়া শেষ করে, ওই চ্যাপ্টারের থেকে আসা বোর্ডপ্রশ্ন গুলো দেখবেন।এতে আপনার ধারণা হয়ে যাবে ওই অধ্যায় থেকে কি কি বিষয়ে প্রশ্ন হতে পারে।বিগত সালের বোর্ডপ্রশ্ন দেখার ফলে আপনার বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভালো একটা ধারণা চলে আসবে।
পড়া ভুলে যাওয়ার আরেকটি বিশেষ কারণঃ~
হলো,দুশ্চিন্তা করা।চিন্তায় থাকলে মানুষ বারের নামো ভুলে যায় যে আজকে কি বার।আর তো পড়া।মানসিক চাপে থাকলে পড়া ভুলে যাবেন।চিন্তা এবং মানসিক চাপ থেকে দুরে থাকবেন।
আর ফ্রি টাইম বন্ধুদের সাথে একটু ঘুরাফিরা করবেন।এতে অনেকটা পড়াশোনার মানসিকতা তৈরি করে দেয়।
পড়া মনে রাখার বিশেষ ৩ তিনটি উপায় ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা বলেছেনঃ~
➤ঘুম
➤খাবার
➤রক্ত
ঘুমানোঃ~
আমাদের কমপক্ষে ৬-৮ঘন্টা ঘুমাতে হবে।ফ্রেস ঘুম আপনার পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।সন্ধ্যার পরে যদি পড়েন এবং সকালে পড়লে সেই পড়াগুলো বেশি মনে থাকে।
খাবারঃ~
আপনাকে বেশি বেশি ফলমূল খেতে হবে।বিশেষ করে শাক-সবজি। বেশি বেশি করে খেতে হবে।মৌসুমি যে ফলগুলো পাওয়া যায় সেগুলো খেতে হবে।যেমনঃআম,পেয়ারা।আপনে মধু খেতে পারেন।সামুদ্রিক মাছ,লাউ,বাদাম এগুলো আপনার স্তৃতি শক্তিকে বাড়িয়ে তুলে,বিজ্ঞানীরা বলেছেন।
রক্তঃ~
রক্তের স্বাভাবিক চলাচল থাকলে স্মৃতি শক্তি বাড়িয়ে তুলে।আপনে কিভাবে রক্ত চলাচল বাড়াবেন?ব্যায়ামের মাধ্যমে বাড়াতে পারেন।কায়িকশ্রমের মাধ্যমে বাড়াতে পারেন।খেলাধুলা করলে বাড়াতে পারেন।
বিজ্ঞানীরা বলেছেনঃ~
পড়ার ৪ঘন্টা পর কেউ যদি খেলাধুলা করে তাহলে তার স্মৃতি শক্তি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
সর্বশেষঃ~
আপনারা আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে কমেন্টে জানিয়ে দেবেন।
ভালো থাকেন,সুস্থ থাকেন।
নিচের ওয়েবসাইট থেকে আপনি বিজ্ঞান সম্পর্কে কিছু জানতে পারবেন
https://scienceandmathstory.blogspot.com/?m=1
নটর ডেম কলেজের ভর্তি বিস্তারিত
https://scienceandmathstory.blogspot.com/?m=1
You must be logged in to post a comment.