তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে সরকারি উদ্যোগ । তথ্য ও প্রযুক্তির বর্তমান অবস্থা।

জীবন সংগ্রামের তাগিদে মানুষ অজানাকে জানতে চেয়েছে। অজানাকে জানার ইচ্ছা থেকেই বিজ্ঞানের জন্ম আধুনিক একটি শাখা। প্রযুক্তি আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে আজ কেবল শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়। মানুষের নিত্য দিনের জীবন নিয়ে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সামগ্রিক চাবিকাঠি। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এখন জাতিগত উন্নয়নের মানদণ্ড হিসেবে পরিচিত। ত গ্রহ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাপনা এবং বিতরনের প্রয়োজনে ব্যবহৃত প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতির সমন্বয় কে বলা হয় তথ্য প্রযুক্তি বা প্রযুক্তি।

কম্পিউটার মাইক্রোইলেকট্রনিক্স টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। একুশ শতকের নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থান মজবুত করতে তথ্য প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। আধুনিক যুগ তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর জোগ।

মানুষের কষ্ট কমিয়ে আনার জন্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে সময় বেঁচে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজের ব্যয় হ্রাস পেতে থাকে। লেনদেন ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নত প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন সাধন করে চিকিৎসা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের গতিকে ত্বরান্বিত এবং সহজ করে প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার তথ্যপ্রযুক্তির সফল ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। উৎপাদনের সর্বক্ষেত্রে অপচয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যকে লাভজনক করা যায়। তথ্যপ্রযুক্তি আজ পৃথিবী ও মহাশূন্যে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।

১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগ স্থাপিত হয়। এর লক্ষ কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল শিক্ষার বিস্তার ঘটানো। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করা হয় এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী প্রোগ্রাম, মাধ্যমিক বিদ্যালয় কম্পিউটার কোর্স। সিলেটে প্রতিষ্ঠা করা হয় শাহজালাল তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতে থাকে তথ্য প্রযুক্তির প্রসার ও বিকাশ ধারা। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে যে জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন করে ফেলা যায় তা বিশ্বাস করা এখন আর কঠিন কিছু নয়।

তাই বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বিস্তার লাভ করেছে। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চালু করা হয়েছে কম্পিউটার শিক্ষা কার্যক্রম। ব্যক্তিগত পর্যায়েও কম্পিউটার ও ল্যাপটপ এর ব্যবহার এখন অনেক বেড়েছে। দেশে এখন কম্পিউটার হার্ডওয়ার সফটওয়্যার ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ১০ হাজারের কাছাকাছি।  প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, ওয়েব ডিজাইন প্রতিযোগিতা, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সেমিনার সিম্পোজিয়াম ও প্রদর্শনী হচ্ছে।

ঢাকা সহ সমগ্র দেশের শহর গুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য স্থাপিত হচ্ছে সাইবার ক্যাফে। তথ্য প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারের লক্ষ্যে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের অবস্থান মজবুত করতে সরকার এক্ষেত্রে সক্রিয় এবং জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে সরকারি উদ্যোগঃ

১। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্ভব নয়  আর তাই দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন করা হচ্ছে।

২। সরকারের উদ্যোগে সমগ্র বাংলাদেশ ডিজিটাল টেলিফোন এর আওতায় চলে আসছে। ইতোমধ্যেই দেশের প্রত্যেকটি জেলায় ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। উপজেলা পর্যায়ে পৌছতে শুরু করছে।

৩। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০২১ সাল কে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তিগত পদ্ধতি চালু করে যাচ্ছে।

৪। জেলা,উপজেলা ও থানা পর্যায়ে সরকার ইন্টারনেটকে সম্প্রসারণ করেছে

৫। দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান ওয়াইম্যাক্স ও ওয়াইফাই কে সরকার অনুমোদন দিয়েছে।

৬। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের লক্ষ্যে ঢাকার অদূরে কালিয়াকৈরে ২৬৫ একর জমির ওপর হাইটেক পার্ক  স্থাপন করা হচ্ছে। সম্প্রতি রেলওয়ের ফাইবার অপটিক লাইন সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়।  এ ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য।  তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উন্নয়ন সাধন জাতীয় উন্নতির সঙ্গে সমানুপাতিক।

 

কোন দেশের জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় বাড়াতে হলে সে দেশের উন্নয়ন অতীব জরুরি। মূলধন হিসেবে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এবং মেধা ও শ্রম কে কাজে লাগিয়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ভারত, জাপান প্রভৃতি দেশ দ্রুত উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু আমরা নির্বুদ্ধিতার কারণে তথ্যের সুপার হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছি না। 

আবার সরকারের অনীহার কারণে ফাইবার অপটিক ব্যবহারের সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত। প্রচুর অর্থ ব্যয় করেও আামাদের ভি-স্যাটের লাইন ব্যবহার করতে হচ্ছে। এসব প্রতিকূলতা থাকার পরও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি খাত নানাভাবে অবদান রাখছে। প্রতিবছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার সফটওয়্যার বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

 

তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার প্রসার : বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে প্রতিযোগিতায টিকে থাকতে হলে আমাদের তরুন সমাজকে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে রূপান্তরিত করতে হবে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায়। প্রত্যেকটি স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করতে হবে।

 

তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার কারিকুলামে যুগোপযোগী এবং সর্বাধুনিক রুপ দেওয়ার জন্য একটি স্থায়ী তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের মাধ্যমে সভ্যতার যেমন অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তেমনি কিছু বিরুপ প্রভাবও সৃষ্টি হয়েছে। প্রযুক্তি বিজ্ঞানের মূল্য ও মহিমা অনেক বেশি। সামান্য কিছু ত্রুটি এর গুরুত্বকে খর্ব করতে পারে না। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র্য -বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও যুবসমাজের বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ চারদিক ছড়িয়ে পড়েছে।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles