পৃথিবীতে কত নতুন নতুন প্রযুক্তির জন্য হচ্ছে , আমরা হয়তো তার সবগুলোর কথা জানতেও পারি না । তাই সেগুলো হয়তো আমাদের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না ।
কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এমন একটি প্রযুক্তি যেটি আমাদের সবার জীবনেই কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলেছে । পৃথিবীতে মনে হয় একজন মানুষকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না , যে কোনো না কোনোভাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেনি । কিংবা তার জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কোনো না কোনো পরিবর্তন আনে নি ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শুধু যে রাষ্ট্রীয় বড় বড় বিষয়ে কিংবা আন্তর্জাতিক জগতে ব্যবহৃত হয় তা নয় একেবারে সাধারণ মানুষের জীবনেও সেটি ব্যবহৃত হয় ।
তুমি যদি চোখ মেলে চারদিকে তাকাও তুমি দেখবে তোমার চারপাশে তোমার পরিচিত মানুষেরা , তোমার আত্মীয়স্বজন , তোমার স্কুলের শিক্ষকরা , তোমার ক্লাসের বন্ধুবান্ধবরা এবং তুমি কোনো না কোনোভাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছো ।
এই যে তুমি এই মুহূর্তে এই লেখাটি পড়ছ সেটি কেউ একজন লিখেছে- তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেগুলো ছাপা হয়েছে , তোমার সামনে আনা হয়েছে অন্য একজনের সাথে মোবাইল টেলিফোনে এবং তুমি এখন পড়তে পারছ । এরকম কত উদাহরণ দেয়া যাবে- তুমি কল্পনাও করতে পারবে না ।
একজন মানুষের জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কী কী ব্যবহার হতে পারে তার একটা তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করলে সেটা মনে হয় কোনোদিন শেষ করা যাবে না ।
ব্যক্তিগত যোগাযোগ :
তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রথম উদাহরণ হতে পারে ব্যক্তিগত যোগাযোগ । আমাদের চারপাশের প্রায় সবার কাছেই এখন মোবাইল টেলিফোন রয়েছে, যে কেউ এখন ইচ্ছে করলে অন্য একজনের সাথে মোবাইল টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারে ।
তোমরা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছ যে, কোনো মানুষের সাথে টেলিফোন যোগাযোগ করতে পারার কারণে আমাদের জীবনের মান এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে , অনেক কম পরিশ্রমে আমরা এখন অনেক কিছু করতে পারি যেটা আগে কল্পনাও করতে পারতাম না ।
বিনোদন: তথ্য ও যোগাযোগ যুক্তি দিয়ে আমরা যে শুধু কাজ করতে পারি তা নয়- এটা এখন বিনোদনেরও চমৎকার মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে । আগে গান শোনার জন্যে মানুষকে আলাদাভাবে কোনো একটা যন্ত্র কিনতে হতো- এখন মোবাইল টেলিফোনেই সে গান শুনতে পারে ।
একটা সময় ক্যামেরা ছিল শুধু ধনীদের ব্যবহারের বিষয়- এখন সাধারণ মোবাইল টেলিফোন দিয়েই যে কোনো মানুষ ছবি তুলতে পারে , ভিডিও করতে পারে ।
মোবাইল টেলিফোন ধীরে ধীরে বুদ্ধিমান একটা যন্ত্র হয়ে দাঁড়াচ্ছে । এটা দিয়ে অনেক ধরনের কাজ করা যায়- ঠিক সেরকম কম্পিউটারও ছোট হতে শুরু করেছে ।
ডেস্কটপ থেকে ল্যাপটপ , ল্যাপটপ থেকে নোটবুক , নোটবুক থেকে স্মার্ট ফোন অর্থাৎ আমাদের হাতে এমন একটা যন্ত্র চলে আসছে যেটা দিয়ে আমরা অসংখ্য কাজ করতে পারব ।
ব্যাবহারীক কাজে: এখন অনেক অফিস পুরোপুরি কাগজবিহীন অফিসে পাল্টে গেছে । অফিসে কাগজে কিছু লিখতে হয় না- কম্পিউটারে লিখে একজন আরেকজনের কাছে পাঠিয়ে দেয় । কম্পিউটারগুলো নেটওয়ার্ক দিয়ে একটির সাথে আরেকটি যুক্ত হয়ে আছে কাজেই চোখের পলকে সব কাজকর্ম হয়ে যায় । কাগজে কিছু লেখা হয় না । বলে কাগজের খরচ বেঁচে যায় ।
কাগজ তৈরি হয় গাছ থেকে তাই যখন কাগজ বেঁচে যায় তখন গাছও বেঁচে যায় , পরিবেশটা থাকে অনেক সুন্দর । কাগজে লেখায় কালি টোনার ব্যবহার হয় না বলে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পরিবেশও দূষণ হয় না ।
যত দিন যাচ্ছে কম্পিউটারের মনিটরগুলো হচ্ছে বড় , তাই সেখানে কিছু একটা পড়ার কাজটিও হয়েছে অনেক সহজ । দেখা গেছে নতুন প্রজন্মের মানুষেরা আজকাল কিছু একটা কাগজে না লিখে কম্পিউটারে লিখতে পছন্দ করে , কাগজে না পড়ে মনিটরে পড়াই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে ।
একসময় ক্যামেরায় ছবি তুলে সেগুলো প্রিন্ট করতে হতো । আজকাল ক্যামেরায় তোলা ছবি প্রিন্ট না করেই মানুষ সরাসরি কম্পিউটারে বা মোবাইলের স্ক্রিনে দেখে নেয় ।
আমাদের দেশে কাগজ ছাড়া সবচেয়ে চমকপ্রদ কাজটি হচ্ছে ভোটের মেশিন । দেশটি গণতান্ত্রিক , গণতান্ত্রিক দেশে সবকিছুই ঠিক করা হয় নির্বাচন করে । নির্বাচনে ভোট দিতে হয় । ভোট দেয়ার জন্যে দরকার ব্যালট পেপার- অর্থাৎ কাগজ , যেখানে প্রার্থীদের নাম এবং মার্কা ছাপা থাকে । ভোটারদের সেখানে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ফেলতে হয় ।
নির্বাচনের শেষে সেগুলো গুনতে হয় । ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে এরকম কোনো সমস্যা নেই- যারা ভোট দেবে তারা সরাসরি মেশিনের বোতাম চেপে ভোট দেয় এবং নির্বাচনের সময় শেষ হলে মুহূর্ত্তের মধ্যে ফলাফল বের হয়ে যায় । তোমরা শুনে খুব খুশি হবে আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন এই ইলেকট্রনিক মেশিন দিয়ে করা শুরু হয়ে গেছে ।
আবার:
কর্মক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তোমরা সবাই জান শিক্ষার্থীরা স্কুল শেষ করে কলেজে যায় , কলেজ শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যায় ।
আমাদের দেশে অনেকগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে । উচ্চমাধ্যমিক পড়া শেষ করে শিক্ষার্থীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যে আলাদা করে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় ।
এক সময় এই ভর্তি পরীক্ষার কাজটি ছিল খুব কঠিন , শিক্ষার্থীদের অনেক দূর থেকে দেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসে , ট্রেনে , জাহাজে যেতে হতো , লাইনে দাঁড়িয়ে ভর্তির ফর্ম আনতে হতো ।
সেই ফর্ম পূরণ করে আবার তাদের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হতো , ক্যাশ টাকা জমা দিতে হতো , ফর্ম জমা দিয়ে পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে হতো , সেই প্রবেশপত্র নিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো ।
জিপিএস :
গাড়ি চালিয়ে কোথাও যাওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে আমাদের পথঘাট চিনতে হবে । কেউ যদি পথঘাট চিনতে না পারে তাহলে সে কেমন করে গন্তব্যে পৌঁছবে । অথচ মজার ব্যাপার হল কোথাও যেতে হলে এখন কাউকে পথঘাট চিনতে হয় না ।
পৃথিবীটাকে ঘিরে অনেক উপগ্রহ ঘুরছে তারা পৃথিবীতে সংকেত পাঠায় , সেই সংকেতকে বিশ্লেষণ করে যে কোনো মানুষ বুঝে ফেলতে পারে সে কোথায় আছে !
তার সাথে একটা জায়গার ম্যাপকে জুড়ে দিতে পারলেই একজন মানুষ যে কোনো জায়গায় চলে যেতে পারবে। আজকাল নতুন সব গাড়িতেই জিপিএস লাগিয়ে দেয়া হয় ।
কোথায় যেতে হবে সেটি জিপিএস - এ ঢুকিয়ে দিলে জিপিএস গাড়ির ড্রাইভারকে সঠিক পথ বাতলে দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে ।
১২ মে ২০১৮ বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণ করা হয় । বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১ নামের এই মহাকাশ যানটি যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় । নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৫৭ তম দেশ ।
You must be logged in to post a comment.