ক্যামেরা কীভাবে আবিষ্কার হলো। ক্যামেরা আবিষ্কারের কথা‌।

ক্যামেরা আবিষ্কারের কথা: পুরানো দিনের কোন ঘটনার ছবি বা পূর্বপুরুষদের ছবি যখন তোমাদের হাতে পড়ে, নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জাগে—কি করে এ কাজ সম্ভব হলো? একথা তোমাদের জানা যে, ক্যামেরার সাহায্যে এরূপ ছবি তোলা সম্ভব হয়।

কিন্তু অনেকেই হয়ত জানো না যে এ ক্যামেরা কি করে তৈরি হলো আর ছবি তৈরিরইবা ইতিহাস কি? আজ অতি সংক্ষেপে তোমাদের ক্যামেরা ও ফিল্ম আবিষ্কারের কাহিনী শোনাবো ।

প্রায় হাজার বছর আগের কথা, একজন মিশরীয় সওদাগর পায়ে হেঁটে সাহারা মরুভূমি পার হচ্ছিলেন। দিনের বেলা সূর্যের প্রখর তাপে তিনি তার দলবল নিয়ে বিশ্রাম নিতেন সুবিধামত কোন মরূদ্যানে, আর রাতে শুরু করতেন সম্মুখ যাত্রা।

একদিন বিকেলে ঘুম থেকে উঠে তিনি লক্ষ্য করলেন যে, তাঁবুর একটি ছিদ্রপথে একটি আলোকরশ্মি এসে পড়েছে তাঁবুর উল্টোদিকের দেয়ালে আর তাতে ফুটে উঠেছে একদল যাত্রী সারি বেঁধে উটের পিঠে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের উল্টো ছবি।

চলন্ত উটের সারির ছায়াও চলন্ত ছিলো। এ অপূর্ব দৃশ্যটি তিনি মনে রাখলেন অনেকদিন এবং দেশের কিছু লেখাপড়া জানা লোকদের কাছে বর্ণনা করলেন। আসলে এ ঘটনাই ক্যামেরা আবিষ্কারের মূল পটভূমি।

এ সময়ে ক্যামেরা বলতে একটি কাঠের বাক্স বুঝাত, যার একদিকে ছিলো ছোট একটি ছিদ্র আর তার বিপরীত দেয়ালে একখানা ঘষা কাচের পর্দা এঁটে দেয়া ছিলো।

ছিদ্রপথে আলো এসে দৃষ্ট বস্তুর ছায়া ফেলতো কাচের উপরে। কে এই বাক্সটি তৈরি করেন—তাঁর নাম, ঠিকানা আজো কারো জানা নেই। এর অনেকদিন পর দেনিয়েলো বারবারো নামের এক শিল্পী কাঠের বাক্সের ছিদ্রপথে একটি স্বচ্ছ কাচ লাগিয়ে যন্ত্রটির একটু উন্নতি করেন যাতে ছবিটি আগের চেয়ে স্পষ্ট 

ফুটে উঠতো এবং তিনি অসীম ধৈর্য্যসহকারে এর ছবি আঁকতেন। এ ক্ষেত্রে চলন্ত ছবি তাঁকে খুব বেশি সাহায্য করেনি। এ সময় সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য এর বিশেষ ব্যবহার ছিলো।

এটি আকারে বড় হলেও স্থানান্তরযোগ্য ছিলো বলে সূর্যগ্রহণ ছাড়াও আরো অনেক ছবি তোলার কাজে ব্যবহার হতো। এভাবে কেটে গেলো আরো অনেক বছর।

কিন্তু এর সাথে জড়িত সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল একই চিন্তা-কি করে এ যন্ত্রটিকে আরো উন্নত করা যায় এবং ছবি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা যায়। যন্ত্রটি ছোট আকারে তৈরি করাও তাঁদের চিন্তার বিষয় ছিলো; কেননা সচরাচর বহনযোগ্য না হলে এর কার্যকারিতা কেমন হবে, এটা তো সহজেই অনুমান করা যায়।

এসব চিন্তার ফসল হিসেবে ১৬০০ খৃস্টাব্দে ক্যামেরার আকার ও কার্যপ্রণালীর যথেষ্ট উন্নতি করা হয়। একজন জার্মান ডাক্তার জোহান সুল্যাজে লক্ষ্য করলেন যে, সূর্যকিরণ বহু বস্তুর বর্ণ পরিবর্তন করে এবং ১৭২৭ খৃস্টাব্দে তিনি আবিষ্কার করলেন যে, সিলভার নাইট্রেট দ্রবণ সূর্যের আলোতে কালো হয়ে যায়। এ ঘটনাই বর্তমান উন্নত ফটোগ্রাফীর উপজীব্য হয়ে রইলো।

১৮২৬ এ ফ্রান্সের এক বৈজ্ঞানিক জোসেফ নিয়েপসে প্রথম সাফল্যজনকভাবে ছবি তোলেন; তবে এ অবস্থায় ছবিটি উল্টো দেখা যেতো। তিনি একটি তামার প্লেটে বিটুমিন মাখিয়ে দেয়ালে এঁটে দিলেন।

ছিদ্রপথে যেখানে রোদ পড়ল সেখানে বিটুমিন শক্ত হয়ে তামার প্লেটে লেগে রইলো আর বাকি অংশটুকু ল্যাভেন্ডার তেল দিয়ে তুলে দিলেন। এবারে এসিড ঢেলে দিলে শক্ত বিটুমিন অংশের তামার পাত ক্ষয় হলো না আর বাকি অংশ ক্ষয়ে গেলো ।

এবারে শক্ত বিটুমিনের অংশ তুলে যে তামার পাত পাওয়া গেলো তাতে কালি মাখিয়ে সুন্দর ছবি পাওয়া গেলো। এ সময়ে নিয়েপসের সাথে যোগ দিলেন ফ্রান্সের একজন চিত্রকর দ্যাগোরে।

তাঁরা উভয়ে মিলে তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৮২৯এ ছবির নকল না করে ক্যামেরায় স্থায়ী চিত্র ধরে রাখার ব্যবস্থা আবিষ্কার করলেন।

নিয়েপসের মৃত্যুর পর দ্যাগোর একটানা চেষ্টা চালিয়ে বর্তমানের পজেটিভ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তবু বেশ কিছু অসুবিধে থেকে গেলো, যেমন—একটি প্রিন্ট থেকে একাধিক ছবি পাওয়া যেতো না এবং ছবি তোলার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে হতো ।

এতো কিছুর পর ও তাই সবাই খুশি হলো না। কেননা চটপট হুবহু ছবি না হলে এটা আবার যন্ত্র হলো নাকি!

ট্যালবট নামের একজন ইংরেজ বিজ্ঞানী আধুনিক ক্যামেরার আবিষ্কর্তা। তিনি ক্যামেরার জন্য যে কাগজ ব্যবহার করতেন তাকে প্রথমে লবণজলে ভিজিয়ে শুকিয়ে নিতেন, এরপর সিলভার নাইট্রেট দ্রবণ মাখিয়ে ক্যামেরার মধ্যে রেখে ছবি তুলতেন।

ছবি তোলা শেষে কাগজটি আবার লবণজলে ধুয়ে নিয়ে স্থায়ী নেগেটিভ পাওয়া যেতো। এ অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বা বসে অপেক্ষা করতে হতো না। কিন্তু এরূপ নেগেটিভ বেশিদিন স্থায়ী হতো না বলে ট্যালবট একটানা নিরীক্ষা চালালেন যাতে এ অসুবিধে দূর করা যায়।

এ ব্যাপারে সামান্য সাফল্য লাভ করলেন আর্চার নামের একজন ইংরেজ শিল্পী। তিনি কাগজের পরিবর্তে কাচের প্লেট ব্যবহার করলেন, কিন্তু সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধন করলেন ম্যাডক্স নামের একজন ফটোগ্রাফার তিনিই প্রথম দ্রবীভূত জিলাটিনের সঙ্গে ব্রোমাইড লবণ এবং সিলভার নাইট্রেট মিশিয়ে পুরো মিশ্রণকে কাচের প্লেটের উপর আস্তরণ দিয়ে নিলেন।

ক্যামেরাতে এরূপ প্লেট ব্যবহার করায় আর আগের কোনরূপ অসুবিধে থাকলো না। আধুনিককালে কাচের প্লেটের পরিবর্তে ফিল্ম ব্যবহার করা হয় যা সাধারণত প্লাস্টিক বেসের উপর সিলভার ক্রোমাইডের সূক্ষ্ম দানার আবরণ থাকে, যার সাথে স্বচ্ছ জিলোটিনের সূক্ষ্ম দানা মিশ্রিত থাকে।

সাদা কালো ছবির জন্য এরূপ একটি মাত্র আবরণ থাকে আর রঙিন ছবির জন্য তিনটি আবরণ থাকে যা প্রধানত নীল, সবুজ ও লাল— এ তিন রঙের জন্য বেশি স্পর্শকাতর থাকে।

ক্যামেরার অপর দুই উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে লেন্স ও সাটার। লেন্স দিয়ে আলোকরশ্মি কেন্দ্রীভূত হয়ে ক্যামেরার ভিতরে প্রবেশ করে এবং বাইরের যে বস্তুর বা প্রাণীর ছবি তোলা প্রয়োজন তার সূক্ষ্মছবি ফিল্মের উপর নিক্ষেপ করে ।

বস্তুর দূরত্বের উপর ছবি অনেকাংশে নির্ভর করে; তাই কোন কোন ক্যামেরায় ফোকাস লেন্স এডজাস্ট করে পরিষ্কার ছবি তোলা যায়; আবার কোন কোন ক্যামেরায় ৫/৬ ফুটের মধ্যে ছবি তোলার জন্য নির্দিষ্ট ফোকাস লেন্স দিয়ে তৈরি করা হয়।

বাইরের প্রয়োজনীয় আলো আসার বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা হল সাটার যা আলো প্রবেশের সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়। কম-বেশি আলোর জন্য সাটারের গতি পরিবর্তন করার ব্যবস্থাও কোন কোন ক্যামেরায় থাকে।

উজ্জ্বল আলোতে ও চলন্ত বস্তুর ছবি তুলতে খুব কম আলোর দরকার হয়। দামি ক্যামেরায় ৩০ সেকেন্ড থেকে শুরু করে এক সেকেন্ডের এক হাজার ভাগের এক ভাগ সময়ে সাটার বন্ধ হওয়ার ব্যবস্থা থাকে ।

তোমাদের মধ্যে যারা ছবি তুলতে পছন্দ করো, তারা বড় হলে এ বিষয়ে লেখাপড়া করে আরো অনেককিছু জানতে পারবে। আজকাল বহু দূরের ছবি, যেদিন ছবি তোলা হল সে তারিখসহ ছবি এবং ছবি তোলার সাথে সাথে পজেটিভ পাওয়ার মত নানা আধুনিক পদ্ধতি আছে যা তোমাদের অনেককেই আকৃষ্ট করবে।

ক্যামেরার সর্বশেষ আধুনিকরূপ হচ্ছে মুভি ক্যামেরা, যার সাহায্যে স্থির ও চলন্ত সবরকমের ছবি তুলে রীলে আবদ্ধ করা যায় এবং প্রজেক্টার বা ভিসিআর বা ডিভিডি-এর মাধ্যমে দেখে অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায় ।

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেল টা যদি আপনি ভালভাবে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মূল বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন।

আর্টিকেল টা যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন প্লিজ। এরকম হেল্পফুল আর্টিকেল পড়ার জন্য আমার আইডিটা ফলো করুন।

প্রিয় পাঠক আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles