ইন্টারনেটের রিসোর্সগুলো সঠিকভাবে খুজে পাওয়ার অসাধারন কৌশল

বর্তমান এই আধুনিক যুগে ইন্টারনেট আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী। ইন্টারনেটের কারনে আজ পুরো দুনিয়াটা মানুষের হাতের মুঠোয়। যেকোনো কিছু খুজে বের করা যায় কেবল আংগুলের স্পর্শেই। কিন্তু তবুও আজও অনেকেই ইন্টারনেটের রিসোর্সগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। ইন্টারনেট রিসোর্সগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হলে কিছুটা ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

কিংবা একটু বুদ্ধি করে সার্চ ইঞ্জিনকে ব্যবহার করলেও খুব সহজেই সব কিছু খুজে বের করা যায়। আজকে কিভাবে ইন্টারনেটকে আরো বেশি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে কিছু লিখবো। তো চলুন শুরু করা যাক-

১। গুগল, বিং ইয়াহু, পিপীলিকা ও আরো কত ধরনের সার্চ ইঞ্জিন আছে কিন্তু আজও আমরা অনেকে ভুলভাবে সার্চ করি। যেমন যদি আমার আশেপাশে থাকা স্টেশনারী শপগুলো খুজে বের করার দরকার হয় তাহলে সাধারনত আমরা সার্চ করি “Stationary shops near me.” তবে এভাবে লিখলে কয়েকটি সমস্যা আছে।

প্রথম সমস্যাটি হলো ঐ মুহুর্তে যদি লোকেশন সার্ভিস চালু না থাকে তাহলে প্রায়ই গুগল ম্যাপ ভুল রেজাল্ট শো করবে। যেমন কেউ মতিঝিলে বসে সার্চ করলো কিন্তু তাকে ফার্মগেট অঞ্চলের স্টেশনারী শপগুলো দেখাচ্ছে কারন তার ম্যাপে বাসা সিলেক্ট করা আছে ফার্মগেটে। লোকেশন চালু না থাকায় গুগল ম্যাপ সেটা ট্র্যাক করতে পারেনি। আবার ম্যাপ আপডেট করা না থাকলে ভুল লোকেশন দেখানো খুবই কমন একটা ব্যাপার। আবার সবার ক্ষেত্রে যখন তখন এপ্লিকেশন আপডেট দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না বিধায় বিব্রতকর অবস্থার মুখে পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে যদি আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে সার্চ দেয়া হয় তাহলে আরো সঠিকভাবে ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন-“Stationary shops near Motijheel”।

২। আমরা ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবহার করার সময় প্রায়ই বিভিন্ন রকম সমস্যার মুখে পড়ি। তার মধ্যে অন্যতম হলো হঠাৎ কম্পিউটার/ল্যাপটপ/মোবাইল/টেলিভিশন কাজ করা বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা কম্পিউটার মোবাইলে সফটওয়্যার ইনস্টল করতে ঝামেলার মুখে পড়া। মনে করেন আপনার কম্পিউটার হঠাৎ বন্ধ হয়ে কালো হয়ে গিয়ে লেখা উঠলো যে “Hard Disk Drive not found” তখন আপনি যদি তার ছবি তুলে ফেসবুক কিংবা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে দেন তাহলে কেউ না কেউ অবশ্যই এগিয়ে আসবে কারন কেউ না কেউ আগেও একই সমস্যার মুখে পড়েছে। এই সমস্যার প্রথম সমাধান হলো আপনার হার্ড ডিস্কটা একবার খুলে আবার লাগানো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এতে ঠিক হয়ে যায়। ২য় সমাধান হলো নতুন হার্ড ডিস্ক লাগানো অথবা হার্ড ডিস্কটা সার্ভিসিং এর জন্য কোম্পানীর কাছে প্রেরন যদি তারা সার্ভিস অফার করে কারন ঐ হার্ড ডিস্কে পার্মানেন্ট সমস্যা হয়েছে যা কেবল খুলে লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে না।

৩। মনে করেন আপনি আপনার কম্পিউটার/ল্যাপটপে Far Cry 3 ইনস্টল করেছেন। এখন খেলছেনও আরামেই। কিন্তু সেভ ফাইল বার বার ডিলেট হয়ে যাচ্ছে এবং আপনি চিন্তিত যে আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাসের কবলে পড়লো কিনা, এক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম “Far cry 3 saving issue” লিখে ইউটিউবে সার্চ করা কিংবা ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা কেননা এই সমস্যাটা কেবল আপনার না, আরও অনেকেই গেম bug এর কারনে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।

৪। ধরুন আপনি একটি নতুন মোবাইল কিনতে যাচ্ছেন। ধরুন সেটা Xiaomi poco f1 মডেলের। অনেকেই একটা ভুল করে থাকে যে তারা ফোন ক্রয়ের আগে বন্ধু বান্ধব বা দোকানে থাকা লোকদের জিজ্ঞাসা করে ফোনটা কতটা ভালো হবে যা একটা ভুল সিদ্ধান্ত কারন আপনার বন্ধু যে সবসময়ই যে আপনার ভালো চাইবে ব্যাপারটা এমন নয়, আবার দোকানের লোকদের কাজই হলো ব্যবসা করা, তারা ভালো দিকগুলো বললেও নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে কথা নাও বলতে পারে। এক্ষেত্রে সেরা পথটি হলো ইন্টারনেটে আপনি যে ফোনটা কিনতে চান তার মডেলের নাম লিখে শেষে Review শব্দটি জুড়ে দিয়ে সার্চ দেয়া। তাহলেই এই মোবাইলের ব্যবহারকারিদের রিভিউ, মতামত, রেটিং সবকিছু চোখের সামনে পাওয়া যাবে।

৫। ধরুন আপনি কোনো নতুন স্কিল শিখতে চান, যেমন- গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, কন্টেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি। এখন আপনি আগে দেখবেন যে ইন্টারনেটে সুলভ মূল্যে কোথাও কোর্স করাচ্ছে কিনা। এজন্য 10 minute school, ghoorilearning এর মতো প্লাটফর্মগুলো একবার ঘুরে দেখা মন্দ নয়। যদি কোর্স ফি হাতের নাগালে না হয় কিংবা বাবা-মা কে টাকা দেয়ার জন্য কনভিন্স করাটা কঠিন হয় তাহলে সোজা গুগলেই সার্চ করুন “learn Graphics Design(কিংবা আপনি যে স্কিল অর্জন করতে চান) for free” লিখে সার্চ করুন কিংবা এটাও লিখতে পারেন “Free digital marketing course”। এক্ষেত্রে একাধিক সাইট বা চ্যানেলের কোর্স করে দেখতে পারেন।

৬। পরীক্ষা সামনেই, কিন্তু অনেক কিছুই এখনো পড়া হয়নি। এবার ইউটিউবে গিয়ে সার্চ করুন আপনার প্রয়োজনীয় টপিক। যেমন-“Human Digestive System Lecture for A level(অথবা আপনার ক্লাস লিখতে পারেন)”। এভাবে খুব সহজেই যেকোনো কিছু আপনি খুজে বের করতে পারবেন।

৭। মনে করেন আপনি বাংলায় লেখালেখি করে অর্থ উপার্জন করতে চান। আপনি ইউটিউবে সার্চ করলেই Jit, Techtunes, Grathor এর মতো ভালো ভালো ওয়েবসাইটের সাজেশন পেয়ে যাবেন আপনার চোখের সামনেই।

 

৮. মনে করেন আপনি একটা জরুরী আর্টিকেল ইংরেজিতে লিখছেন যা একেবারে নির্ভুল হওয়া প্রয়োজন। আপনার মাতৃভাষা যেহেতু ইংরেজি না তাই ইংরেজি ব্যাকরণে ভালো দক্ষতা না থাকাটা সাভাবিক। এছাড়া বানান নিয়েই দুর্বলতা থাকা খুবই সাধারন একটা ব্যাপার। এক্ষেত্রে একটু গুগল ঘাটাঘাটি করলেই Grammarly-এর মতো অনেক ভালো ভালো সফটওয়্যার প্লাটফর্ম, Chrome Integration, ওয়েবসাইট ইত্যাদি খুজে পাওয়া যাবে। তখন চাইলে সহজেই তার মাধ্যমে ব্যাকরণ সংক্রান্ত ভুলগুলো খুজে বের করে ফেলা যাবে।

৯. আপনার মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য কিছু ডাটা ক্রয় করা দরকার। অনেকে অফার জানার জন্য কেবল মেসেজগুলো চেক করে থাকে কিংবা ফ্লেক্সিলোডের দোকানের এজেন্টকে জিজ্ঞাসা করে। তার চেয়ে সকল অফার ইন্টারনেট থেকেই খুজে বের করে ফেলা যায়। অথবা প্রতিটা সিমের কিছু নির্দিষ্ট কোড থাকে যা ডায়াল করে ইন্টারনেট ছাড়াও অফার খুজে বের করা যায়। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে নিজের সুবিধামতো প্যাকেজ বা বান্ডল কিনে ফেলা যায়। যদিও আজকাল প্রায় প্রতিটা অপারেটরের নিজস্ব এপ্লিকেশন চলে আসায় অফার ক্রয় করা আরো সহজ হয়ে গিয়েছে।

এরকম আরো অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অনেক রকম রিসোর্স ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। যেহেতু ইন্টারনেটের তথ্যভান্ডারটা বিশাল, তাই খুব সহজে ইন্টারনেটের সব রিসোর্স ব্যবহার নিয়ে আমার পক্ষে বিশ্লেষন করা সম্ভব না। আপনাকে এই ছোট্ট জ্ঞানগুলোকে সমন্বয় করে কাজে লাগিয়ে সামনে আসা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ