প্রযুক্তি নিয়ে যে ভুল ধারণাগুলো আমাদের মাঝে বিদ্যমান, জানলে আপনি অবাক হবেস

আমরা যে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করে নাস্তা করা থেকে রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে চলে যাচ্ছি কখনও কি চিন্তা করেছেন এতো আরাম আয়েশের জিবনযাপন করছেন কিভাবে? এসবকিছুই হচ্ছে প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আমরা আমাদের মাঝে প্রযুক্তি নিয়ে অনেক ভুল ধারণাও পোষণ করে থাকি।আজ এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো।

প্রযুক্তি কি?

সবার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন প্রযুক্তি সম্পর্কে। কারণ একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য সবার আগে সেই বিষয়টা আসলে কি সে সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরী।  

মানুষের মেধাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে জীবনযাপনকে সহজ করার জন্য বিভিন্নরকম কৌশল উদ্ভাবনই মূলত প্রযুক্তি।আজ থেকে কয়শো বছর আগে যা মানুষ কখনও কল্পনাও করতে পারতো না, প্রযুক্তির কল্যাণে আজ অনেক কিছুই সম্ভব। 

আধুনিক বিশ্ব দাঁড়িয়েই আছে প্রযুক্তির উপরে।সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি কাজে মানুষ টেকনোলজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টসের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। 

প্রযুক্তি কিন্তু থেমে নেই।সময়ের সাথে সাথে দিন যতো যাচ্ছে প্রযুক্তিরও ততো উন্নতি হচ্ছে। আবিষ্কার হচ্ছে নতুন নতুন জিনিস। যা মানুষের জীবনকে আয়েশে ভরিয়ে তুলছে। ক্রমান্বয়ে মানুষ প্রযুক্তির সাগরে নিজেদের সম্পূর্ণ নিমজ্জিত করে দিচ্ছে।

আমাদের জীবনে প্রযুক্তির অবদান কি?

প্রযুক্তির অবদান সম্পর্কে যদি বলতে হয় তাহলে বলতে হবে আমাদের জীবনে প্রযুক্তির অবদানের কোনো শেষ নেই। 

আদিমকালের গুহা মানবরা যেভাবে জীবন যাপন করতো আমরাও কি সেরকমভাবে জীবন-যাপন করছি? করছি না। কেন করছিনা তার একমাত্র কারণ প্রযুক্তি।মানুষ আল্লাহ্তায়া'লার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।  কঠিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক কৌশল আবিষ্কার করেছে। এতে যেমন কাজে কষ্ট কম হয় তেমন সময়েরও সাশ্রয় হয়। 

এভাবে কৌশল আবিষ্কার করতে করতে যুগের পর যুগ পার হয়ে প্রযুক্তি বর্তমান সময়ে এসে পৌঁছেছে।  

বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে অবদান রাখছে প্রযুক্তি।

আসলে এর অবদানের কথা লিখে শেষ করা যাবেনা। তবুও সংক্ষেপে লিখছি।

১. আমরা ঘরে বসে বসে সারা বিশ্বের খবর রাখতে পারছি।প্রযুক্তি আমাদের সেই সুবিধা করে দিয়েছে ইন্টারনেট,কম্পিউটার, টিভি ইত্যাদির মাধ্যমে। আমাদের আর কষ্ট করে কোথাও গিয়ে খবর জানতে হচ্ছে না।

২. ঘর থেকে বেরিয়েই রিকশা,বাস পাচ্ছি কোথাও যাওয়ার জন্য। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে প্লেন।কিন্তু পূর্বে এসকল সুযোগ সুবিধা ছিলো না।এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হতো পায়ে হেঁটে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে কয়ের মাস সময় লেগে যেতো।

৩. ঘরে বসেই ট্রেন, প্লেনের টিকিট কাঁটা  যাচ্ছে।অথচ কয়েকবছর আগেও এসব ছিলো অসম্ভবের তালিকায়।

৪. ঘরে বসেই অনলাইনে ইনকাম করা যাচ্ছে। ফলে চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছেনা।বেকারত্ব ঘুচছে এবং সময়ও সাশ্রয় হচ্ছে। 

৫. অফিস -আদালত,ব্যবসা-বানিজ্য,মিটিং,চাকরির আবেদন, শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যাবলী সবকিছুই অনলাইনে সম্পাদিত হচ্ছে প্রযুক্তির কল্যাণে।অনেক রকম সুবিধা সম্পর্কে জানলেও প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের অনেক ভুল ধারণা ও কিন্তু আছে। চলুন এবার সেগুলো নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক। 

প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের ভুল ধারণাগুলো কি কি? 

হ্যাঁ,এ বিষয়েই কথা বলবো এখন। এই ভুল ধারণার জন্য কিন্তু আমরা অনেক সময় প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে পারিনা।খুব কমন কিছু ভুল ধারণা হলো-

১.মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিয়ে।

২.কম্পিউটার ব্যবহার করা নিয়ে। 

আচ্ছা যদি বিষয়গুলো ভাগ ভাগ করে আলোচনা করি তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে।

 অনেক সময় ধরে মোবাইল ব্যবহার করলে কি সমস্যা হয়? 

আসলে ব্যাপারটা তা না। অনেক সময় ধরে মোবাইল ব্যবহার করলে আপনার চোখে সমস্যা হতে পারে। আর খুব বেশি হলে আপনি অনিদ্রায় ভুগতে পারেন।এর বেশি কিছু না। 

এ সমস্যা এড়ানোর জন্য মোবাইলের ডার্ক মুড এনাবেল করে ব্যবহার করুন। 

২. মোবাইলে কথা বললে সমস্যা হয়? 

একটা ধারণা আছে যে, অনেক্ক্ষণ ধরে মোবাইলে কথা বললে মোবাইল থেকে রেডিয়েশন বের হয়ে আপনার ক্ষতি করে। আসলে এর কোনো সায়েন্টিফিক ব্যাখা নেই যে এই রেডিয়েশন শরীরের ক্ষতি করে। অনেকক্ষণ ধরে কথা বললে আপনার মোবাইল ফোনটা খুব বেশি হলে গরম হয়ে যেতে পারে। 

৩. মোবাইল পাশে নিয়ে ঘুমালে কি হয়? 

কিছুই না। কারণ আগেই বলেছি মোবাইল থেকে বেরিয়ে আসা রেডিয়েশন মানুষের শরীরের ক্ষতি করে এর কোনো সায়েন্টিফিক ভিত্তি নেই।এগুলো নিছকই মানুষের বানানো কিছু ভুল ধারণা।  আপনি যেভাবে খুশি ঘুমাতে পারেন। 

৪. মোবাইল চার্জে দিয়ে কি ব্যবহার করা যাবে? 

অবশ্যই যাবে। তবে আপনি যদি দ্রুত চার্জ চান তাহলে চার্জে থাকা অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করবেন না। তাছাড়া মোবাইল চার্জে দিয়ে ব্যবহার করলে মোবাইল অনেক গরম হয়ে যায়। এতে কোনো সমস্যা হয়না। 

তো এবার মোবাইল চার্জ হওয়া অবস্থায় ব্যবহার করলে মোবাইল গরম হয়ে বিস্ফোরণ হবে এই ধাবণা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।

 এবার আসি কম্পিউটার নিয়ে কিছু কমন ভুল ধারণায়। 

১. কয়দিন পর পর উইন্ডোজ দেবেন? 

শুনন,আপনি যদি একজন জেনুইন উইন্ডোজ ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে আপনি অনেক দিন পর পর উইন্ডোজ দেবেন।  

তবে হ্যাঁ, যদি আপনি পাইরেটেড ইউজার হোন তাহলে বার বার উইন্ডোজ দেওয়ার প্রয়োজন আছে।

পাইরেটেড উইন্ডোজ স্ট্যাবেল হয়না। যখন ব্লু স্ক্রিন অফ ডেথ চলে আসে তখন আপনাকে নতুন করে উইন্ডোজ দিতে হবে। 

জেনুইন ইউজাররা ৬/৭ মাস পর পর উইন্ডোজ দেবেন  তাহলেই হবে।

২. কম্পিউটার বার বার রি-স্টার্ট দিলে কি হয়? 

না কোনো সমস্যাই হয় না। ধরুন, আপনি ২ ঘন্টা সময়ের মধ্যে ৫/৬ বার রিস্টার্ট করলেন। নষ্ট হয়ে যাবে কম্পিউটার?  না কিছুই হবেনা। খেয়াল করে দেখবেন যখন নতুন কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করা হয়  কম্পিউটার রিস্টার্ট করতে বলা হয়। এর কারণ কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের সাথে সফটওয়্যারটির স্ট্যাবিলিটি ঠিক করার জন্য। 

৩.কম্পিউটার রিফ্রেশ করলে ফাস্ট হয়?

এটাই প্রচলিত সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা।  না ভাই বার বার রিফ্রেশ করলে কম্পিউটার ফাস্ট হয়না।বরং আরো স্লো হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।

অনেকসময় কম্পিউটারের থাকা পিকচার, আইকন এগুলো শো করেনা। তখন রিফ্রেশ করলে এগুলো শো করে। ব্যস রিফ্রেশের কাজ এতটুকুই।

সবশেষে এটাই বলবো যে আমাদের প্রযুক্তি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।কারণ একমাত্র সঠিক জ্ঞান থাকলেই কেবল আমরা প্রযুক্তির পরিপূর্ণ ব্যবহার করে সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে পারবো। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles