সারা বছর শুধু কিছু নিয়ম পালন করে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার ১০০% উপায়

“পড়তে ভাল লাগে না বা মনোযোগ নেই? এই টিপস ফলো করলে ১০০% পড়ায় গভীর মনোযোগ আসবে। পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করবে ইনশাল্লাহ।” পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের প্রতি এসব চটকদারী কথা বলে হয়তো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা পর্যন্ত ব্যস্ত রাখা যায়। কিন্তু পড়া পড়ে শেষ করানো কি সম্ভব হয়? হয়তো সম্ভব। কিন্তু শুধু পড়ার জন্য কিছু উপদেশ দিয়েই সবাই দায়িত্ব শেষ করেছেন তাইনা? খাওয়া-দাওয়া, টিভি, পত্রিকা, ফেসবুক, বিদ্যুৎ দিয়ে অভিভাবকত্ব সামলাচ্ছেন সিংহভাগ বাবা-মায়েরা।

কিন্তু পরীক্ষার পড়াটি কি শিক্ষার্থীর ভাল লাগছে না মন্দ লাগছে? পড়তে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কতখানি পড়া হবে সেটার কি কোন প্রমীত পরিসংখ্যান আছে? যদি বলি নেই, তবে কেমন শোনাবে? তাছাড়া সব শিক্ষার্থীর পড়ার মাথা একরকম নয়।

শ্রেণী শিক্ষকগণ সাজেশন্স দিয়ে কাজ শেষ করেন মাত্র। অবশ্য যারা সারা বছর নিয়মিত ক্লাস করেছে তারা অবশ্যই এতে উপকৃত হবে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রতিটি বিষয় পড়া, বুঝা, মুখস্থ করা ও পরীক্ষার হলে তা ব্যবহার করে পরীক্ষা দেওয়া তো নিজেই উপরই তাই না?

পড়া হল কিনা, সেটা যদি কিছু নিয়মের মাধ্যমে প্রতিটি বিষয় অন্তত একবার করে পড়া বা চেষ্ঠা করা যায় তবে আশাকরি পড়ার সময় মনোযোগ ছিল কি ছিলনা তার চাইতে নিয়মগুলি অনুসরণ করলে অন্তত চেষ্ঠাটি বিফলে যাবে না। এভাবে শিশু শ্রেণী হতে শুরু করে স্নাতকোত্তর শ্রেণী পর্যন্ত ইহা ব্যবহার করে ভাল রেজাল্ট করা কিন্তু কোন ব্যাপারই না।

১) একটি রুটিন প্রস্তুতকরঃ-

একটি সারাদিন মেয়াদি বা ৮ থেকে ১০ ঘন্টার একটি পড়ার রুটিন প্রস্তুত কর, যেটাতে প্রতিটি বিষয় অন্তত একঘন্টা করে বরাদ্দ পাবে। এটাতে খাওয়া, গোসল, ঘুমানোর জন্য সময় বরাদ্দ রাখ।

তবে এতে কি পুরো সময় দেওয়া সম্ভব হবে? তা হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে। তবে চেষ্ঠা কর যেন রুটিন মাফিক প্রতিটি বিষয় নির্ধারিত একঘন্টা করে পড়া যায়।

২) সময়মত পড় ও তাবুঝে নাওঃ-

সময়মত যদি পড়া ঠিকভাবে পড়তে পার, তবে তো ভালই হবে, সহজে পড়া আদায় হয়ে গেল। যদি সময়মত পড়া যায় ও পড়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকা ‍যায়, তবেই সময়মত পড়া সার্থক। সবসময় যে সময়মত পড়তে ও বুঝতে পারবে তা হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা অন্য কোন কারণে পড়া সময়মত ব্যর্থও হতে পারে।

সময়ানুবর্তিতা প্রয়োগ করে তাই অভ্যাস করতে হবে। যদি সময়মত পড়ে পড়া আয়ত্ব করা যায়, তবে সময়মত পড়তে দোষ কি?

৩) ক্ষুধার পেটে পড়ঃ-

এরপর ক্ষুধার পেটে পড়। এই ক্ষুধা নিয়ে পড়ার কারণ হল, ধর মা-বাবা অনেক কষ্ট করে রান্না বান্না করে আমাদের পড়ায় ও নিজেরা অনেক কষ্টে জীবন যাপন করে। এখন তাদের পক্ষে সবসময় যথাসময়ে খাবার প্রস্তুত করে পড়ায় বসাতে হিমসিম খেতে হয়। এটার কারণে খেয়াল রাখতে হবে যে, ক্ষুধার পেটে পড়তে গেলে কি কি সমস্যা হয়। এটা উপলব্ধি করলে বাবা-মায়ের কষ্ট কম হয় ও তাদের আশির্বাদে ভাল ফল করা যায়।

কিন্তু ক্ষুধার পেটে পড়া কোন উদ্দেশ্য হিসেবে নেয়া যাবে না। কারণ সব সময় তো আর ক্ষুধা থাকবে না। তাছাড়া যদি খাওয়া ঠিকমত না হয়, তবে যে পরিমাণ পড়ার ক্ষতি হল তা যেন বুঝে নেওয়া যায় সহজে। ১ম সাময়িক বা ২য় সাময়িক চলমান থাকা অবস্থায় পরিবারে ক্ষুধা বা খাদ্য সংকট থাকলে তা যেন পরীক্ষার সময় ঝামেলার কারণ না হয়, তার জন্য এই উদ্দেশ্য নেয়া যেতে পারে।

৪) খাওয়ার পর পড়ঃ-

খাওয়ার পর পড়তে কি সুবিধা, নাকি ক্ষুধার্ত থাকলে বেশী পড়া মুখস্থ হয় তা খেয়াল কর। যদি খাওয়ার ফলে পড়তে ভাল লাগে তবে তো ভালই। কিন্তু খাদ্য সংকট হলে ও তার কারণে পড়া জরুরী হয়ে গেলে তো ভারী বিপদ। তাই খাওয়া ও ক্ষুধার্ত উভয় কন্ডিশনই চর্চ্চা কর। উভয়ই প্রয়োজন আছে। অর্থাৎ পড়া যেন কোন অবস্থায়ই বাধাগ্রস্থ না হয়।

৫) বন্ধুদের সাথে আড্ডা দাওঃ-

পড়তে ভাল না লাগলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দাও। এতে যদি পড়ার উন্নতি হয় তবে কোন কথা নেই। যদি পড়ার ক্ষতি হয় তবে সময় থাকতে সাবধান হওয়ার চেষ্ঠা কর। তবে বন্ধুবান্ধব সারাজীবন কাজে লাগবে ও পরীক্ষা সীমিত সময়ের জন্য হয়ে থাকে। এটা আসলে আগে ভাগে সাবধান হওয়ার জন্য বলা। চেষ্ঠা করবে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে আড্ডা দেওয়ার।

৬) সোস্যাল নেটওয়ার্কিং কর কিছু সময়ঃ-

কিছু সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন-ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম বা অন্যান্য মাধ্যমে ব্যয় কর ও খেয়াল কর যে, এটা তোমার জন্য ক্ষতিকর নাকি সুবিধাজনক। সেইসাথে বেড়াতে যাওয়া, পিকনিকে যাওয়া, শপিংয়ে যাওয়ার অভ্যাসের উপরও খেয়াল কর।

৭) নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অধ্যয়ন করঃ-

নির্ধারিত সময় যেমন- সকাল ৬টা হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত অধ্যয়ন কর। এর ভেতর গোসল, নামায, খাওয়া, বেড়াতে যাওয়া, সোস্যাল নেটওয়ার্কিং করা ছাড়া বাদবাকী সময় কাজে লাগানোর চেষ্ঠা কর। এতে সব পড়া মুখস্থ হলে ভালই। তবে যদি মুখস্থ না হয় বা বুঝা না যায়, তবে পরবর্তী বিষয়ে চলে যাও। এতে যেকোন বিষয় যা সহজ মনে হয় তা সহজই লাগবে।

এরপর ভোর বেলা উঠে সেইসব কঠিন বিষয় অধ্যয়ন করলে তখন সহজ লাগবে। এরপরও অর্থাৎ সারাদিন বা সকালে উঠেও পড়া মাথায় না ঢুকলে চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই। গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, প্রকৃতি যখন শান্ত হয়ে যায়, তখন ঠিকই পড়া মাথায় ঢুকবে।

৮) দুই বাতিন টিকঠিন বিষয় ভালভাবে পড়ঃ-

আমাদের পঠিত মোট বিষয় সাধারণত ১২-টি বা ১৪-টি হয়। এখন সব সময় এতগুলো বিষয় সহজ নাও হতে পারে। সেকারণে যে বিষয়গুলো অপেক্ষাকৃত কঠিন, সেগুলো ফাইনাল পরীক্ষার অনেক আগেই অর্থাৎ ১ম ও ২য় সাময়িকের সময়ই আইডেন্টিফাই করে নাও, যেন পরীক্ষার সময় বুঝতে কোন কষ্ট না হয়। এভাবে ২ বা ৩-টি বিষয়ের উপর জোর দিয়ে সিমলেসলি সকল বিষয়ই আয়ত্ব করে নাও।

৯) সারাদিন পড়া না হলে রাত জেগে পড়ঃ-

মাঝে মাঝে সারাদিন বন্ধুবান্ধব, পার্টির কারণে দিনের বেলায় পড়া যায়না। তাছাড়া এসব সমস্যা না থাকলেও ঘুম না হওয়ার মত সারাদিন মাথায় কোন কিছুই ধরে না। এমন কি সকালেও না। আবার দেখা যায় সারাদিন সময় ঠিকই ব্যয় হয়েছে, কিন্তু পড়া হয় মাত্র এক রত্তি।

তখন রাতজেগে অনেক বেশী পড়া সম্ভব। যদি শরীর খারাপ মনে হয়, তবে হয়তো তা ভাল না। তবে নিশি রাতে প্রকৃতি শান্ত ও নীরব থাকে। ফলে তখন পড়া অটোমেটিক্যালি সহজে মাথায় ধরে যায়। যেমনটি ভোর বেলায় হয়।

১০) পড়ার মজা থাকতে থাকতে পড়া বন্ধ করঃ-

পড়া যখন মজা লাগবে তখন পড়তে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে যদি ফেল, তবে পড়া তোমার পড়তে ভাল নাও লাগতে পারে। তখন নতুন করে চিয়ার-আপ বা পড়া শুরু করা অনেকক্ষেত্রে কষ্টকর হতে পারে। তাই পড়া পুরোপুরি যখন ভাল লাগবে, তখন কিছু একটা খেয়ে সেই ভাল লাগাটা সংরক্ষণ করবে। পরে যখন পড়তে শুরু করবে তখন একটা ইন্টারেস্ট আসবে পড়া শুরু করা মাত্রই। প্রয়োজনে এই ভাল লাগাটা যেকোন সময় আবার পড়ার ক্ষেত্রে প্রয়োগ কর। প্রয়োজনে এই মধ্যবর্তী সময়ে ফেসবুক, আড্ডা দিয়ে নিজের জীবনকে উপভোগ করতে পার।

১১) ক্লাসের উপস্থিতি ও খাওয়া-দাওয়া যথাযথ রাখঃ-

তোমরা কোমলমতি শিক্ষার্থী। তোমাদের ভাল ভবিষ্যৎতের জন্য তোমাদের বাবা-মা কোন কষ্টকেই কষ্ট মনে করেন না। সুতরাং পড়া হোক বা না হোক, অন্তত খাওয়া দাওয়াটা ঠিক রাখ। ক্লাসের উপস্থিতিটি এই সুযোগে ৯৯% রাখ।

ক্লাসে উপস্থিত হলে বাবা-মা, শিক্ষকগণও খুশি থাকবে। যখন পরীক্ষার সময় আসবে ও ক্লাসের উপস্থিতিও যথাযথ থাকবে, তখন খাবারের পুষ্টিগুন এবং ক্লাসের প্রতিটি স্মৃতি তোমাকে পূর্ণ মনযোগ দিতে সক্ষম করবে বলেই আমার বিশ্বাস।

সুতরাং খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে শরীরের এন্টিবডি যথাযথ রাখ। যদি তা হয়, তবে পরীক্ষার কোন পড়াই তোমার নিকট কঠিন থাকবে না। খাদ্য ও পুষ্টি এবং ক্লাসের যথাযথ লেসন হবে তোমার নিকট বোধগম্য ও সহজ।

১২) প্রাইভেট পড়া বাদ দিয়ে গাইড বই ও মূল বই পড়ঃ-

এই পদ্ধতীতে যদি পড়, তবে নিয়মিত পড়তে পড়তেই তোমার সবকিছু বোঝা হয়ে যাবে। এই সুযোগে তাই প্রাইভেট টিউশনির বাড়তি অর্থ খরচ না করে সেই টাকায় নিজের আয় না করেও বাবা-মায়ের কিছু অর্থ সাশ্রয় করতে পার। বাবা-মা খুশি হবেন। এই স্থলে গাইড বই ফলো কর, যেখানে অন্তত উত্তরগুলো বানানো আছে।

তবে উত্তরটি সঠিক কিনা তা বই ঘেটে বা ক্লাসের মাধ্যমে বের করতে পার। যে গাইড বইতে ভাল করে উত্তর বানানো আছে, সেইরকম একসেট গাইড সংগ্রহ কর বা ক্রয় কর। পুরোনো গাইড বই হলেও চলবে, তবে সিলেবাস অনুযায়ী ঠিক হলে ভাল হয়। তবে আমার মতে কোন গাইড বইতে যথাযথ উত্তর থাকে না বা থাকতে পারে না। কারণ যদি উত্তর যথাযথ হয় তবে উত্তর কঠিনও হয় এবং ভাল ছাত্রদের জন্য তা সহজ হয়।

কিন্তু গাইড বইয়ের বানিজ্যিক সফলতার জন্য তাই উত্তর সোজা করে লিখা হয়। এই বিশেষ কারণে সব ছাত্র সেটা কিনতে আগ্রহী হয়। আর তুমি করবে কি সঠিক উত্তরটি কেমন হবে তা গাইড বই থেকে খেয়াল করে নিবে এবং মূল বই দেখে ভাল করে তা তৈরি করবে। প্রয়োজনে লিখার কষ্ট না করে পৃষ্ঠা নম্বর টুকে রাখতে পার।

 ১৩) পাঁচ বছরের প্রশ্ন সংকলন তৈরি করে পড়ঃ-

 মনে কর তুমি ২০২২ সালের পরীক্ষার্থী ও তোমার মোট বিষয় ১২-টি। সুতরাং পাঁচ বছরের প্রশ্ন নিতে গিয়ে তোমার করতে হবে কি ২০১২, ২০১৪, ২০১৬, ২০১৮, ২০২০ সালের প্রশ্ন নিতে হবে। তুমি সব বিষয়ের সবকয়টা প্রশ্নপত্রই খুঁজে পাবে এটা আশা করো না।

যে বিষয়ের যে প্রশ্নটিপত্রটি নেই, সেটির জন্য কাছাকাছি আরেকটি প্রশ্ন নিয়ে সবকয়টি বিষয়ের পাঁচ বছরের জন্য মোট (৫ ´ ১২) = ৬০-টি প্রশ্ন সংগ্রহ কর। এরজন্য মূলবই, গাইডবইয়ের পেছন অংশ থেকে এবং টেস্ট পেপার কিনে ফেললে সবকটি প্রশ্নই তুমি অনায়েশে পেয়ে যাবে।

১৪) পরীক্ষার শুরুর আগে পেট ভরে খাওয়া-দাওয়া করবেঃ-

পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে একটু সময় নিয়ে পেট ভরে খাবে ও মাথায় কোন টেনশন রাখবে না। সময় থাকলে এককাপ চা-ও পান করতে পার। ইচ্ছে করলে একটু আগে ভাগেই খাওয়া শেষ করে পুনরায় চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করতে পার।

১৫) পরীক্ষার হলে যাবার সময় কোন বই পড়তে পড়তে যাবে নাঃ-

পড়া শেষ হোক বা না হোক পরীক্ষার হলে ‍যখন রওনা দিবে বা যানবাহনে চড়বে, তখন বইপত্র সাথে রাখতে পার বটে, কিন্তু পড়ার অভ্যাস করবে না। শ্রেফ পরীক্ষার হলে চলে যাও। পরীক্ষার হলে যদি সময় হাতে থাকে, তবে বই/গাইড এক ঝলক দেখে নিতে পার। সম্ভব হলে শুধু প্রবেশপত্র, রেজিষ্টেশন কার্ড, সাইনপেন/মার্কার, বলপেন, পেন্সিল, স্কেল, সার্পেনার, ইরেজার নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ কর।

১৬) কোন পরীক্ষা খারাপ হলে তাতে বিচলিত হয়ো নাঃ-

যদি কোন পরীক্ষা খারাপ হয় বা প্রশ্ন কমন না পরে বা লেখার মান খারাপ হয় এবং যে কারণে সেই বিষয়ে নাম্বার কম পাওয়ার সম্ভাবনা হয়, তবে সেই বিষয়ের টেনশন বাদ দিয়ে পরবর্তী বিষয়ের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নাও। কপাল ভাল থাকলে পরবর্তী বিষয়ের যথাযথ প্রস্তুতি তোমার আগের বিষয়ের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে। সুতরাং হাল ছাড়া যাবে না। মোটামুটি সব বিষয়ের পরীক্ষা ভাল হলে একটি বিরাট অংকের নাম্বার আসবে।

১৭) পড়া বুঝতে ব্যর্থ হলে যেটুকু বুঝলে সেটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকঃ-

প্রতিবার যখন পড়া শুরু হয়, তখন পড়া মাথায় ঢুকতে চায় না। এভাবে অনেকক্ষণ পড়তে পড়তে যেই না পড়া বুঝা শুরু হয়, অমনি যা পড়া হবে সবই বুঝা যাবে। কিন্তু যদি ভাসাভাসা/আবছাআবছা পড়া হয় বা মুখস্থ করা হয়, তবে পরে জটিল পড়া/বুঝা নাও যেতে পারে। ইতোমধ্যে পড়া পড়ে অনেক সময় চলে গেছে। সুতরাং এক লাইন দু লাইন করে যখন পড়া বুঝে আসবে, তখন সব পড়াই মাথায় ঢুকে যাবে।

সেজন্য ঠান্ডা মাথায় পড়া বুঝার চেষ্ঠা করা উচিত। মনে রাখতে হবে আগের পড়াগুলোর সব বিষয়ই মেইন, পরে এই সাধারণ বিষয়গুলো একটা আরেকটির সাথে মিলে পরবর্তী কঠিন পড়া সৃষ্টি হবে। সুতরাং মাথায় রাখ যে, অন্তত ১-টি লাইন যেন বুঝে পড়া যায়। তারপর তো কোন কথাই নেই। এবার যেই না পড়া বুঝে আসল তখন এই বোধশক্তিটুকু হালকা কিছু খেয়ে ধরে রাখ।

খাওয়ার পর দেখবে যে তোমার মনবল সত্যিই বেড়ে গেছে। ভুলে যেও না যে, তুমি যখন পড়ছ তখন তুমি বুঝতে পারছ না যে তুমি কিঞ্চিৎ ক্ষুধার্ত থাকার দরূন পড়া বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছ। এক গ্লাস পানি পান করে হলেও পার্থক্যটি বুঝার চেষ্ঠা কর। তুমি অবশ্যই সফল হবে কিছু খাওয়ার পর এবং কোনটা তোমার সমস্যা সেটা তোমার ভিতর বদ্ধমূল হবে। তুমি সমস্যার কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।

১৮) ভাল রেজাল্টের বদলে পাস করার চিন্তা করঃ-

সবাই শুধু ভাল রেজাল্ট করতে চায়। কিন্তু ভাল রেজাল্ট করা কি এতই সোজা। এর জন্য প্রচুর সময় ও পরিশ্রম দিতে হয়। সব সময় পাস করতে পারবে এমন আশা করা সহজ না। সুতরাং ভাল ফলাফলের চাইতে পাস করার চিন্তাটি বেশী মাথায় রাখ।

কারণ যতই উপরের ক্লাসে যাবে ততই আগের ক্লাসের পড়া এমনিতেই পঠিত হয়ে যাবে, সেটা চেষ্ঠা করা হোক বা না হোক। তবে একথা নিশ্চিত যে, যদি এসব মেনে চলতে পার, তবে পাস করলে দেখবে ভাল রেজাল্টটিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে জুটে গেছে। নিজে গাফিলতি করে ভাগ্যের উপর নির্ভর করা আদৌ উচিত হবে না।

১৯) বছরের শুরু থেকে নিয়মগুলো মেনে চলতে হবেঃ-

পরীক্ষায় পাস করার হাজারো উপদেশ বাজারে পাওয়া যায়। যে যত বেশী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপদেশ মেনে চলতে পারবে সে তত বেশী ভাল নম্বর অর্জন করবে। একটি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপদেশে কাজ হয়ে যাবে এটা আশাকরা উচিত নয়। আবার হঠাৎ কোন নিয়ম পেয়ে মেনে চলতে শুরু করলে যদি বছর শেষে পন্ডশ্রম হয় ও অকৃতকার্য হতে হয় তবে তো ভারী বিপদ।

সেকারণে বছরের শুরু থেকেই ভালভাবে প্রতিটি নিয়ম পালন করে দেখতে হবে যে, কাজ হয় কিনা। যদি অব্যর্থ হয় তবে কোন দুশ্চিন্তা নেই। সফল হলে ১ম শ্রেণী থেকে স্নাতোকোত্তর শ্রেণী পর্যন্ত একইভাবে পরিশ্রম করা যেতে পারে।

২০) বেকায়দা সময়ে পড়ার চেষ্ঠা করতে হবেঃ-

সব সময় যে কেবল দিনের নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসতে হবে এবং দিনের বেলায় পড়া শেষ না হলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার আশংকা যদি থাকে, তখন মাঝরাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়বে ও প্রকৃতি শান্ত হয়ে আসবে তখন  পড়লে ভাল লাগতে পারে। দেখা যায় যে, যারা মোটামুটি বড় ক্লাসে পড়ে, সারাদিন হয়তো টিউশনি করে ও সারাদিন প্রায় সময় পায়না বললেই চলে।

তখন মাঝরাতে পড়ে মাঝরাতে পড়ার জটিলতা বা সুবিধা শনাক্ত করে দেখা যেতে পারে যে, কোন বিষয় কতখানি আয়ত্ব করা যায়। কোন পড়া সকালে না পড়ে যদি বেকায়দা সময়ে বা মাঝরাতে পড়া যায়, তবে হতে পারে সফলতার হার বেড়ে যাবে।

২১) বিকেল বেলা মোটেও পড়বে নাঃ-

বিকাল বেলায় বই নিয়ে বসে না থেকে এ সময়টা বাইরে প্রকৃতি দেখা ও বিকালের মিষ্টি রোদ উপভোগ করলে মন ও দেহ উভয়েরই উপকার হয়। এই সময়টা আলো ও আধারের সংযোগস্থল। এসময় মানুষ বিষন্নতায় নিপতিত হয়। যদিও সকালে বেলায়ও আলো ও অন্ধকার থাকার কারণে রাত সকাল হয়। কিন্তু তখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু বিকাল বেলা সবাই জেগে থাকে। সুতরাং একটু এ সময়ে পড়াশোনা এড়িয়ে চলা উচিত। হালকা নাস্তা করা যেতে পারে এসময়। এতে মনবল সৃষ্টি হবে।

 ২২) নিজে রোজগার করে লেখাপড়া করার চেষ্ঠা করাঃ-

নিজে থেকে একটি চাকরী, ব্যবসা, টিউশনি করে অর্থাৎ বাবা-মায়ের উপর কোন খরচের বোঝা না চাপিয়ে যদি লেখাপড়া করা যায়, তবে ফলাফল আরও ভাল হতে পারে। কারণ সংসারের উপর বাড়তি চাপের বদলে আয় হচ্ছে। বাবা-মা বোঝামুক্ত হলে যে তাদের দোয়া ও ভাল ফলাফল করা সম্ভব তা কার না জানা আছে। বিশ্বাস না হলে চেষ্ঠা কর।

২৩) সাজেশন্সের প্রশ্নগুলো তারকা চিহ্নিত কর ও উত্তর কত পৃষ্ঠায় আছে লিখে রাখঃ-

যেহেতু পাঁচ বছরের প্রশ্নপত্রের সাজেশন্স তৈরি করা হয়ে যাবে টেস্ট পেপার দেখে দেখে। সুতরাং সাজেশন্স-এর যে প্রশ্নটি পাঁচ বছরই কমন পড়েছে সেটিকে পাঁচ তারকা দাও, যেটি পাঁচ বছরের মধ্যে চার বছর কমন পড়েছে সেটিকে চার তারকা দাও। এভাবে তিন বছর কমন থাকলে তিন তারকা, দুই বছর কমন থাকলে দুই তারকা এবং একটি বছরে কেবল প্রশ্নটি কমন থাকলে শুধু এক তারকা দাও।

প্রতিট প্রশ্ন তারকা অনুসারে গুরুত্ব দিয়ে সময় নিয়ে পড়। সারা বছর ক্লাস করে ও পরিশ্রম করে যে বিষয়টি পাবে তা আসলে পাঁচ বছরের প্র্রশ্ন দিয়ে তুমি নিজেই বছরের শুরু থেকেই সাজেশন্সটি প্রস্তুত করতে পার। যথানিয়মে ক্লাস কর ও খাওয়া দাওয়া কর। ভাল ভাল স্কুল বা কলেজের প্রশ্ন সাজেশন্সে ব্যবহার কর।

প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর মূলবইয়ে কত পৃষ্ঠায় আছে এবং গাইড বইয়ের কত পৃষ্ঠায় আছে তা সাজেশন্সের প্রশ্নগুলো তারকা চিহ্নিত করার পর তার পাশে লিখে রাখ। ফাইনাল পরীক্ষার আগে শুধু পৃষ্ঠা নম্বর দেখে সরাসরি গাইড বইতে ভাল উত্তর থাকলে গাইড বই থেকে এবং যদি মূলবইতে ভাল/সঠিক উত্তর থাকে তবে মূলবই থেকে অধ্যয়ন করে ফেলবে। এতে শ্রম সার্থক হবে।

২৪) সাজেশন্সের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের প্রতিটি লাইন বুঝে পড়ার চেষ্ঠা করঃ-

পাঁচ বছরের প্রশ্ন ব্যবহার করে যখন সাজেশন্স প্রস্তুত করা হবে, তখন প্রশ্নের সংখ্যা অনেক কমে আসবে। তখন প্রতিটি বিষয় সহজে অধ্যয়ন করা যাবে। কিন্তু শর্ত হল প্রতিটি প্রশ্ন লাইন-বাই-লাইন বুঝে পড়তে হবে। পড়তে পড়তে দেখা যাবে একই বিষয় পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। আবার একটি প্রশ্ন দিয়ে প্রায় অধিকাংশ প্রশ্নেরই উত্তর লেখা যাচ্ছে। এবার যদি তাই হয় তবে প্রতিটি লাইন বুঝা ও পড়া ছাড়া কি কোন কাজ থাকতে পারে?

২৫) সাজেশন্সের প্রশ্নউত্তর যতখানি পড়বে ততখানি তৎক্ষণাৎ না দেখে লিখবেঃ-

প্রশ্ন সাজেশন্সের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নগুলোর পাশে যেহেতু পৃষ্ঠা নম্বর টুকে রাখা আছে, সুতরাং এগুলো সাথে সাথে খুঁজে বের কর ও পড় এবং সেই সাথে এমন কিছু বাজে কাগজ খুঁজে বের কর যার একপৃষ্ঠা বা বেশীর ভাগ অংশই লেখা। এগুলোতে প্রথমে পেন্সিল দিয়ে ও পরে কলম দিয়ে ঠিক দুবার করে লিখে তা শেষ কর। অল্প কয়েকটি কাগজ দিয়ে পুরো পরীক্ষা দেওয়া শেষ হয়ে যাবে।

২৬) প্রশ্নের উত্তরগুলি না দেখে লিখ, যাতে দেহের পরিশ্রম হয় ও দেহ তা জানতে পারেঃ-

পড়া মাত্রই উত্তরটি না দেখে লিখ। কারণ পড়া মাত্রই তা না দেখে লেখার মাধ্যমে হাত, চোখ, শরীর, মাথার পরিশ্রম হয়। পুরো শরীর অন্তত জানলো কি বিষয়টি অধ্যয়ন করা হচ্ছে। ফাইনালের আগে এভাবে লিখলে/পড়লে দেহ ও মন বিষয়গুলির আলোকে প্রস্তুতি লাভ করে। সর্বোপরি বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে ফাইনাল পরীক্ষার সময় হুবুহু উত্তরটি মনে পড়ে গেলে তো কোন কথাই নেই।

২৭) পড়তে গিয়ে মাথার উপর চাপ বেশী দিবে নাঃ-

পড়তে গিয়ে মাথার উপর বেশী চাপ দিবে না। যদি চাপ দেওয়া হয়, তবে স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তি এলোমেলো হতে বাধ্য। এতে পরের পড়াগুলি পড়তে গেলে মাথা ধরবে। বৃথা মাথায় চাপ দিয়ে স্মৃতির ধারাবাহিকতার ১২ টা বাজানো কোন কাজের কথা হতে পারে না। একটি উত্তর পড়তে গিয়ে যদি পরের পড়াগুলো বুঝা না যায়, তবে তো ভারী দুশ্চিন্তার কথা।

২৮) বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ক্যান্টিনে খাওয়া দাওয়া করঃ-

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ক্যান্টিনে সব ছাত্রদের পড়া ও ক্ষুধা লাগলে খাওয়া দাওয়া চলে। যে কারণে এখানে খাওয়া দাওয়াটি সময়মত হয় এবং এবং এগুলো ছাত্রদের উপযোগী করে রান্না করা হয়। তাছাড়া দামেও সাধারণ হোটেল, রেস্টুরেন্ট হতে কম। সুতরাং সস্তায় হল ক্যান্টিনে নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার খাওয়ার চেষ্ঠা করতে হবে। এখানে শুধু পড়াশোনা করা ছাত্ররা খাওয়া দাওয়া করে বিধায় মেধা বেড়ে যায় ও অনেক অজানা বিষয় সহজ হয়ে যায়।

শেষকথাঃ-

এটা কিন্তু পড়া না। শুধু নিয়মকানুন। তবে এর ভেতর দিয়ে সারাবছর পড়িয়ে নেওয়ার টেকনিকটুকু নিশ্চই খেয়াল করেছ। যদি বল আমি এসব নিয়ম যে পালন করব তার সফলতা কি? আমি বলব আদাজল খেয়ে লেগে দেখ ফলাফল কি হয়? ভাল না মন্দ, তা তুমি নিজেই বুঝতে পারবে। জেনে রাখ, তোমাকে কিন্তু পড়তেই হবে।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles