২১ শতাব্দির আতংক সাইবার ক্রাইম ! আপনাকে কেউ টার্গেট করছে নাতো ?

সহজ ভাষায়, সাইবার ক্রাইম হলো সেই সকল অপরাধ যেগুলো সংঘটিত হয় ইলেক্ট্রিক ডিভাইস এর মাধ্যমে টেকনোলজির সহযোগিতায় । সাইবার ক্রাইম কে কম্পিউটার ক্রাইম বা ইন্টারনেট ক্রাইম ও বলা যায়। ইন্টারনেট সংযোগযুক্ত যেকোনো কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অপরাধীরা এই ধরনের সাইবার ক্রাইম করে মানুষের ক্ষতি করে চলেছে।

সাইবার ক্রাইম এর অপরাধীরা সাধারণত 'হ্যাকার" নামেই বেশি পরিচিত। ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকিং, সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট হ্যাকিং, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য ফাস এবং চাইল্ড পর্ণোগ্রাফির মতো প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ঘৃণিত অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সাইবার ক্রাইম বা সাইবার অপরাধের মাধ্যমে। 

সাইবার ক্রাইমের সূচনা 

বৈদ্যুতিক ডিভাইস কম্পিউটার এর মতো উন্নত যন্ত্রগুলো যেহেতু উন্নত দেশগুলোতেই আবিষ্কার হয়েছে এবং এসব দেশেই বেশি ব্যবহৃত হতো শুরুতে, তাই সাইবার ক্রাইম এর সূচনাও পশ্চিমা বিশ্বেই শুরু হয়, তখন সাইবার অপরাধের টার্গেট ছিলো শুধুই কম্পিউটার এবং স্মার্টফোন। ৮০ দশকের শেষের দিকে প্রথম সাইবার ক্রাইম সংঘটিত হয় বলে জানা যায়। 

এরপর ৯০ শতক থেকে নিয়মিত হতে থাকে সাইবার ক্রাইম এবং এই অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায় বিংশ শতাব্দীতে এসে সোশ্যাল মিডিয়া আবিস্কার এর পর। পুরোপুরি নির্দিষ্ট করে প্রথম সাইবার ক্রাইম কে যদিও চিহ্নিত করা যায় না, তবে, ১৯৭৩ সালে নিউইয়র্ক এর একটি ব্যাংক এ প্রায় ২মিলিয়ন টাকা আত্মসাত এর জন্য প্রথম বড় ধরনের সাইবার ক্রাইম সংঘটিত হয়েছিলো বলে জানা যায়। 

যদিও বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ, তবুও কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার সুযোগে বর্তমানে বাংলাদেশেও সাইবার ক্রাইম এর অনেক অপরাধী চক্র সচেষ্ট হয়েছে এবং নিয়মিত তাদের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সাইবার ক্রাইম আইন এর নথিভুক্ত প্রথম কেস, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এর ২০১২ সালের ১৩ই ডিসেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা কেসটি।

বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইমের বেশিরভাগ ভূক্তভোগী কিশোরী এবং তরুণীরা, হ্যাকাররা তাদের ব্যক্তিগত  তথ্য চুরি করে ফাস করে দেবার ভয় দেখায় নয়তো সেগুলো নিজেদের কাজে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই সাইবার ক্রাইম আইন এ প্রচুর মামলা করছেন ভুক্তভোগীরা। 

সাইবার ক্রাইমের পদ্ধতি 

সাইবার বুলিং, অপপ্রচার, গুজব, গ্যাং কালচার, হুমকি, ব্লাকমেইল, চাদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, লাঞ্চনা, সম্মানহানি, পর্ণোগ্রাফি সহ আরো বিভিন্ন ধরনের সাইবার ক্রাইম বা সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সামগ্র বিশ্ব জুড়ে এমনকি বাংলাদেশও তার বাইরে নয়।

সময়ের বিখ্যাত সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটার এর পাসওয়ার্ড হ্যাক করে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য এবং ছবি চুরি করছে হ্যাকাররা এবং এইসব তথ্য  ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবার হুমকি দিয়ে এর বিনিময়ে টাকা চেয়ে ব্লাকমেইল করা হচ্ছে কিংবা ভিক্টিমকে জোর করে অন্য কোন অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে এইসব ব্যক্তিগত তথ্য ফাসের ভয় দেখিয়ে।

তাছাড়া, আইডি হ্যাক করে ভিক্টিম এর নাম করে অন্যের কাছে টাকা চাওয়া বা ভিক্টিমের আইডি থেকে মিথ্যা স্ট্যাটাস দেওয়ার কাজও করছে হ্যাকার রা। এইসব সাইবার ক্রাইমের সীকার হচ্ছে মূলত নারীরা, অনেক নারীই নিজের সম্মান হারিয়ে পরিবার এবং সমাজের সামনে লাঞ্চনার সীকার হচ্ছেন। তবে, বর্তমানে অনেক পুরুষকেও সাইবার ক্রাইম এর ভুক্তভোগী হতে দেখা যাচ্ছে।

আইডি হ্যাক করার জন্য হ্যাকাররা সাধারণত কোন বিশাল ডিজিটের ওয়েবসাইট তৈরি করে এবং এগুলো মানুষকে ইমেইল, ম্যাসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠায়। মানুষ নিজের সোশ্যাল মিডিয়া বা ইমেইল এর পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রবেশ করলেই তার আইডি হ্যাক করে ফেলে এবং গোপনীয় তথ্য পেয়ে যায়।

এছাড়া, কোন ফেক সফটওয়্যার তৈরি করে, যেটা ডাউনলোড করলেই ভিক্টিমের সকল তথ্য পেয়ে যায় হ্যাকার। এভাবে, ছল চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে অর্থ লেনদেন মাধ্যম বিকাশ, নগদ রকেটের পিন নাম্বার হাতিয়ে অপরাধীরা মানুষের টাকাও হাতিয়ে নেয়।

এমনকি সাইবার ক্রাইম এর মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতিও করছে অপরাধীরা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের বোকা বানিয়ে ব্যাংকের কম্পিউটার হ্যাক করে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনাও ঘটাচ্ছে অপরাধীরা। আর, সাধারণ মানুষের ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করছে তো অহরহ। ফেক ব্যাংকিং এপ তৈরি করে ভিক্টিমকে ইমেইল করে হ্যাকার রা, যেটা ডাউনলোড করলেই ব্যাংক একাউন্ট এর সব তথ্য পেয়ে যায় হ্যাকার।

তাছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য প্রচার করে মানুষের মাঝে বিরোধিতা সৃষ্টি করে, যা মাঝেমধ্যে জাতীয় পর্যায়ের সমস্যার সৃষ্টি করে। মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি ব্যবহার করে মিথ্যা প্রোফাইল খুলে বা মানুষকে ভাইরাল করে সাধারণ মানুষের ক্ষতি সাধন করে। এখানে ভিক্টিম বিপদে পরার পূর্বে বুঝতেই পারে না যে তার ব্যক্তিগত তথ্য কিভাবে মানুষ জেনে গিয়েছে।

এছাড়াও ক্রমাগত অনলাইনে প্রায় সব সাইটেই বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখায় যা মানুষকে মস্তিষ্ককে পর্ণ সাইটে প্রবেশে উৎসাহিত করে। কখনো কখনো অন্যকিছুর বিজ্ঞাপন দেখিয়ে চাতুরীর মাধ্যমে মানুষকে পর্ণ সাইটে প্রবেশ করায় এবং একসময় মানুষ পর্ণ এডিক্টেড হয়ে যায়।

সাইবার ক্রাইম এর শাস্তির বিধান

বাংলাদেশের সাইবার ক্রাইম আইন সেকশন ২৮ অনুসারে যেকোন কম্পিউটার, সার্ভার বা যেকোন ডিভাইস হ্যাকিং এর অপরাধ প্রথমবার প্রমাণিত হলে এর সাজা ১৪ বছর জেল বা  ১ কোটি টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে হবে। যদি দিতীয়বার প্রমাণিত হয় তবে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা অনধিক পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে।

সাইবার ক্রাইম এর  বিচারের জন্য বাংলাদেশে সাইবারট্রাইবুনাল গঠন করা হয়েছে ২০০৬ সালে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সরাসরি ট্রাইবুনালে এসে মামলা করতে পারছে। দক্ষ পুলিশ অফিসাররা মামলার তদন্ত করছে এবং উপযুক্ত প্রমাণ পেলে শাস্তি দিচ্ছে। তবুও সাইবার ক্রাইম কমছে না বা বন্ধ হচ্ছে না।

সাইবার অপরাধীরা অনেক বেশি ধুর্ত, যেহেতু তারা প্রযুক্তির সাহায্যে অপরাধ করে তাই তাদেরকে ধরা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পরছে। এজন্য ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে সচেতন  থাকতে হবে ডিভাইস ব্যবহার এর ক্ষেত্রে, যেন ব্যক্তিগত কোন ভুলের জন্য কাউকে সাইবার ক্রাইম এর ভিক্টিম হতে না হয়।

 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments
RIFAT MAHMUD - Aug 25, 2021, 2:00 PM - Add Reply

Great

You must be logged in to post a comment.
RIFAT MAHMUD - Aug 25, 2021, 2:18 PM - Add Reply

Thanks

You must be logged in to post a comment.
RIFAT MAHMUD - Aug 25, 2021, 2:17 PM - Add Reply

Keep writing

You must be logged in to post a comment.

You must be logged in to post a comment.

Related Articles