চিন্তাশক্তি, বুদ্ধি কিংবা বিশ্লেষণ ক্ষমতা মানুষের সহজাত। কিন্তু একটি যন্ত্রকে মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, সেটিকে চিন্তা করানো কিংবা বিশ্লেষণ করানোর ক্ষমতা দেওয়ার ধারণাটিকে সাধারণভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়।
মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিহাস বলতে গেলে অনে বহু পুরনো। প্রত্যেকটি নতুন নতুন জিনিসের যখন বীজ বপন হয় মানবসমাজে তখন অনেকেই এটিকে ধরতে পারেন না।
যেমন আজকের রোবট এটি কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের সামনে আসে নি। অনেক বছরের পরিশ্রমের ফলেই আজকে আমাদের সামনে রোবট। অথচ রোবটের প্রাথমিক ধারণা শুরু হয় অনেক আগে থেকেই।
কিন্তু তখনকার মানুষজন বর্তমানে রোবটের যে অবস্থা সেটি কল্পনাও করতে পারতো না। তেমনি আজকের দিনেও এমন এমন প্রযুক্তির বীজ বপন হয়ে গেছে যা দেখা যাবে আগামী ১০ বছর পরে বিশ্বকে অন্যমাত্রা নিয়ে গেছে। যাই হোক আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সেই বীজ বপনকালে যাই।
চিন্তা করতে সক্ষম কৃত্রিম মানুষ মূলত গল্প বলার যন্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে কার্যকর যুক্তি প্রদর্শনের জন্য একটি যন্ত্র তৈরির চেষ্টা করার ধারণাটি সম্ভবত রামন লোল (১৩০০ খ্রিস্টাব্দে) এর সাথে শুরু হয়।
তার ক্যালকুলাস রেটিওসিনেটরের সাথে, গটফ্রিড লিবিনিজ গণিত মেশিনের ধারণাকে সম্প্রসারিত করেছিলেন (উইলহেলম স্কিকার্ড ১৬২৩ এর কাছাকাছি সময় প্রথম একটি প্রকৌশলগত কাজ করেছিলেন),
সংখ্যার পরিবর্তে ধারণার উপর অপারেশন পরিচালনার উদ্দেশ্যে। স্বীকার করতেই হয় এই বিশ্বব্যবস্থায় বা জ্ঞানজগতে ক্যালকুলাসের আবিষ্কার এক সমুদ্র পরিমাণ বিপ্লব। নিউটন ও ল্যাবনিজের এই ক্যালকুলাস অধিকাংশ প্রযুক্তিতেই ব্যবহৃত হয়।
এমনকি আপনি যদি একটি গেইম ডিজাইন করতে চান সেখানেও প্রয়োজন হবে এই ক্যালকুলাস। অথচ আবিষ্কারক জানেই না এই জ্ঞানের প্রভাব এত এত হতে পারে।
আগামীতে হয়তো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে যে হয়তো প্রাথমিক বিদ্যালয়েই ক্যালকুলাস শিখতে হতে পারে। যদিও বাংলাদেশে এটি করবে কিনা সন্দেহ। অথচ এটি করা দরকার।
পশ্চিমা দেশগুলোতে যখন ১৯ বছরের একজন প্রোগ্রামার একটি আর্টিফিসিয়াল বট নির্মাণ করছে তখন আমাদের দেশের ছাত্ররা কোডিং কি সেটাও জানে না।
এটি আমাদের ব্যর্থতা৷ ইউরোপ তাদের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে৷ বিশেষ করে ১৮০০ সালের পর থেকে তাদের প্রযুক্তি বিপ্লব গোটা দুনিয়াকেই জাগিয়ে তুলেছে বলা যায়। শুধুমাত্র প্রযুক্তি নয় বরং সাহিত্যেও প্রযুক্তি যোগ করেছে। যেমন-
উনিশ শতক থেকে কৃত্রিম মানুষ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে সাধারণ বিষয় হয়ে গিয়েছিল, যেমন মেরি শ্যালীর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বা কারেল কেপেক এর আর.ইউ.আর. (রাসোসের ইউনিভার্সাল রোবটস) এর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
লেখকরা তাদের বইতে নতুন নতুন প্রযুক্তির কল্পনা প্রয়োগ করছেন। এবং এই প্রযুক্তির আইডিয়াগুলো কিন্তু সাহিত্যের উপাদানে পরিণত হচ্ছে।
সাহিত্যের উপাদানে পরিণত হওয়া মানেই মানসিক গঠনে যুক্ত হওয়া। যখন মানসিকতায় নতুন নতুন প্রযুক্তির আইডিয়া চর্চা হবে তখন তো স্বাভাবিকভাবেই এসব কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হবে। আর তার প্রভাবেই আজ অভাবনীয় নতুন নতুন প্রযুক্তি।
আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরবর্তী ভিত্তি নিয়ে দুই একটি তথ্য দেখি-
যান্ত্রিক বা "আনুষ্ঠানিক" যুক্তি অধ্যয়ন প্রাচীনকালে দার্শনিক ও গণিতবিদদের সাথে শুরু হয়েছিল। এরপর যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ তা হলো বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের ব্যবহৃত এনিগমা মেশিন।
এবং এই মেশিনের বিরুদ্ধে আবিষ্কৃত এলান টুরিং এর নতুন মেশিন ও গবেষণাপত্র। সে বিষয়ে আরেকটি নতুন আলোচনা হতে পারে। এবং আপনারা চাইলে এলান টুরিং এর উপর নির্মিত সিনেমাও দেখতে পারেন। এখন আসি তার অবদানে-
গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান অধ্যয়ন অ্যালান টুরিং এর গণিতের তত্ত্বের সূত্রপাত করেছিল, যা একটি মেশিন, "0" এবং "১" প্রতীক চিহ্ন দ্বারা গাণিতিক সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে পারে।
এই অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে যে ডিজিটাল কম্পিউটার আনুষ্ঠানিক যুক্তির কোন প্রক্রিয়া অনুকরণ করতে পারে তা চার্চ-টুরিং থিসিস হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল।
স্নায়ুবিদ্যা, তথ্য তত্ত্ব এবং সাইবারনেটিক্সের আবিষ্কার গবেষকদের মধ্যে বৈদ্যুতিক মস্তিষ্ক নির্মাণের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল । প্রথম কাজ যা বর্তমানে এআই হিসাবে স্বীকৃত হয় যা ম্যাককুল্লাচ এবং পিটসের ১৯৪৩ টুরিংয়ের জন্য সম্পূর্ণ "কৃত্রিম নিউরন" ছিল প্রথাগত নকশা।
এলান টুরিংয়ের ১৯৫০ সালের একটি গবেষণাপত্রের আলোকে করে কোন যন্ত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করার জন্য তিনি 'টুরিং পরীক্ষা' নামের একটি প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন।
টুরিং পরীক্ষা হলো এক ধরনের ইমিটেশন গেম। এই পরীক্ষাটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি তৈরি করে।
এরপর থেকেই নিয়মিত গতিতে এআই উন্নতি সাধন করছে। এআই - আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এমনকি এই গত ২০২২ সালের নভেম্বরে এআই এর একটি নতুন বিপ্লবের ভিত্তি হতে যাচ্ছে- chat GPT.
নতুন বিপ্লব Chat GPT
মাত্র ৫ দিনেই এক মিলিয়ন ইউজার অর্জন করা এই এআই। বর্তমান বিশ্বে আলোচিত এক নাম। যা একটি নতুন বিপ্লবও বটে। এটি একটি মেসেজিং সিস্টেম এআই ৷
যেখানে আপনি বটের সাথে আলোচনা করতে পারেন৷ আপনার যা যা তথ্য দরকার তা আপনি তার কাছ থেকো পেতে পারেন। যেমন একটি কবিতা আপনি তার কাছ থেকে লিখে নিতে পারেন এমনকি একটি সফটওয়্যার ও বানিয়ে নিতে পারেন তার সাহায্যে।
সেজন্য আপনাকে open AI এই ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে। বাকিটা আপনি পারবেন। তবে মাঝেমাঝে চ্যাটজিপিটি আপনাকে ভুল তথ্যও দিতে পারে সুতরাং রিসার্চপেপার তৈরীর ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
ক্যারিয়ার শেষ
এই এআই এর কারণে সাময়িক ভাবে অনেকের ক্যারিয়ার শেষ হতে যাচ্ছে। কারণ এখন অনেক কাজ এর মাধ্যমেই করা সম্ভব। সুতরাং একজন মানুষই একাধিক পেশার কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম।
এভাবে সেক্টরগুলো থেকে মানুষের নিয়োগ পরিমাণ কমে আসবে। মানুষের পরিবর্তে এখন সেই কাজ রোবট করবে৷ তাহলে এই জনগণগুলো যাবে কোথায়। তারা কি করে খাবে যদি তাদের পেশার মার্কেট যন্ত্র দখল করে।
সম্ভাবনা
অনেক মানুষই যেহেতু বেকার হতে পারে৷ বা একটি পেশায় ধরা যাক ৫০ জন আছে কিন্তু এআই এর কারণে এখন ৬ জনে যথেষ্ট। এখন এই মানুষগুলো তো আর বসে থাকবে না৷ তারা কিছু করার চেষ্টা করবে।
এমনকি তারা যে কিছু করবে সেটাও আবার এই এআই কে ব্যবহার করেই। সুতরাং এখানে একটা এআই ভিত্তিক নতুন পেশা সৃষ্টি হতে পারে৷ অর্থাৎ প্রচলিত পেশাগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হলেও নতুন নতুন পেশা সৃষ্টি হবে ৷
আর এই নতুন নতুন পেশাগুলোতে কিন্তু সহজে এআই প্রবেশ করতে পারবে না।
কারণ একটি দীর্ঘ সময় এআই কে এই পেশাগুলো সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।তাই প্রথমদিকে নতুন পেশাগুলো তে একচেটিয়া মানুষের আধিপত্য চলবে ৷
এরপর আবার সেই নতুন পেশাগুলোতে এআই প্রবেশ করবে। আবার সেগুলো মানবহীন হবে এবং নতুন আরেক দফা পেশা সৃষ্টি হবে। এভাবে বিশ্বঅর্থনীতির গতিশীলতা বজায় থাকবে?
Valo🥰🥰
You must be logged in to post a comment.