প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে যেসব ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা আবিস্কৃত হয়েছে বিটকয়েন তার মধ্যে অন্যতম।আজকে বিটকয়েন নিয়ে আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
বর্তমান ডিজিটাল বিশ্বে দাঁড়িয়ে আমরা কি এখন প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের একটা দিন কল্পনা করতে পারি। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সব কাজে আমরা প্রযুক্তির সেবা নিয়ে থাকি।
প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে করেছে আরাম-আয়েশে পরিপূর্ণ এক জীবনে। এককথায় বলা যায় প্রযুক্তি ছাড়া আমরা তো একটা সেকেন্ডও কাটাতে পারিনা।সাধারণত কাজ করার কৌশল কে বুঝায়। যে কৌশল ব্যবহার করে যেকোনো কঠিন তাকে সহজ ভাবে সমাধান করা যায়।
প্রযুক্তির বিবর্তনের ধারাঃ
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। বুদ্ধি বিবেচনা দিক থেকে বুদ্ধিমত্তা সবচেয়ে উন্নত। মানুষ তার বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীতে রাজ করতে পারছে। বুদ্ধি বিবেচনা কে কাজে লাগিয়েই তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কঠিন কাজকে সহজ করে সমাধান করার জন্য অসংখ্য কৌশল আবিষ্কার করছে প্রত্যেকটা দিন। আমাদের যদি গরম লাগে তাহলে ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার থেকে আমরা বাতাস পাচ্ছি।
আবার শীতকালে অতিরিক্ত শীতের কারণে ঘর গরম রাখার জন্য ব্যবহার করছি এ রুম হিটার। অন্ধকার দূর করার জন্য ব্যবহার করছে বিভিন্ন রকম আলো। খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহার করছি রেফ্রিজারেটর। বিনোদনের জন্য ব্যবহার করছি টেলিভিশন।
প্রযুক্তির অবদান তো আসলে বলে শেষ করা যাবে না আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি কাজের প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকি আমরা।যুক্তির উন্নয়ন কিন্তু থেমে নেই। মানুষ প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং প্রতিদিনই এর কিছু না কিছু উন্নতি হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ধারা বহাল থাকার কারণে আমরা নতুন নতুন জিনিসের সুবিধা ভোগ করতে পারি। যা আমাদের জীবনকে করে তুলেছে আরামদায়ক।
আজকে আমরা আলোচনা করব প্রযুক্তির এক অনবদ্য আবিষ্কার বিটকয়েন সম্পর্কে। মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে কিছু কথা বলি।
কিছু কথাঃ
আদিম যুগের গুহা মানবের জীবন থেকে আমাদের বর্তমান সভ্য সমাজের মানুষের জীবন যাপনের আকাশ-পাতাল তফাৎ। এখন থেকে কয়েক শতক আগে মানুষ নিজেদের মধ্যে ক্রয়বিক্রয় লেনদেনের সুবিধার্থে মুদ্রার প্রচলন করে। এই মুদ্রার বিনিময় এই একজন আরেকজনের কাছ থেকে জিনিসপত্র ক্রয় বিক্রয় করে থাকে। মুদ্রা আবিষ্কারের কিছুকাল পরে আরেকটু উন্নয়ন ঘটে এবং তখন শুরু হয় কাগজের টাকার নোটের প্রচলন।
সেই থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সারা পৃথিবী জুড়ে কাগজের নোটের টাকায় প্রচলিত হয়ে আসছে। আমরা জানি প্রযুক্তির উন্নয়ন থেমে নেই সুতরাং তিনজন নতুন কিছু ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। ধারাবাহিকতায় উপহার দিয়েছেন নতুন এক মুদ্রা।
যে মুদ্রা ভার্চুয়াল মুদ্রা। যাকে চোখে দেখা যায় না বা স্পর্শ করা যায় না। এই মুদ্রা ব্যবহৃত হয় ডিজিটাল লেনদেনে। এগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সি কয়েন হিসেবে পরিচিত। মুদ্রার মধ্যে লাইট কয়েনপিয়ারকয়েন ,ডগিকয়েন, মনিরো এবং বিটকয়েন উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আরও অনেক কয়েন রয়েছে।
তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিপুল ব্যবহৃত কয়েন হচ্ছে বিটকয়েন। চলুন তাহলে এবার এই বিটকয়েন সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
বিটকয়েন কি?
2021 সালে এসে দাঁড়িয়ে কেউ যদি আমাদেরকে বিটকয়েন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তাহলে আমরা অবশ্যই বিটকয়েন সম্পর্কে কিছু না কিছু একটা উত্তর দিতে পারব। কারন আজকাল আমরা বিটকয়েন শব্দটি কমবেশি সবাই শুনেছি। যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন তারা সম্পর্কে অনেক ভালো ভাবেই জানেন তাদের বাদ দিয়ে আজকে আমি তাদের জন্য আলোচনা করছি যাদের বিটকয়েন সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই। বিটকয়েন হলো একটি ডিজিটাল মুদ্রা বা কারেন্সি । যা যে কেউ অন্যান্য কমন মুদ্রাগুলোর মতন বাস্তবে ব্যবহার করতে পারে না।
বিটকয়েন একটি ইলেকট্রনিক ভার্চুয়াল মুদ্রা। অর্থাৎ বিটকয়েন এর অস্তিত্ব শুধুমাত্র ভার্চুয়াল বা অনলাইন জগতের মধ্যে বিদ্যমান। টাকা, ডলার, রুপী ইত্যাদির মুদ্রা গুলোর মত আমরা বিটকয়েন হাতে নিয়ে লেনদেন করতে পারবোনা কারণ সেটা সম্ভব না। এজন্য যে ভার্চুয়াল মুদ্রা একে স্পর্শ করা যায় না এমন কি চোখে দেখা যায় না। এটি শুধুমাত্র ডিজিটাল মাধ্যমে অনলাইনে ক্রয় বিক্রয় হয়। একজন অনলাইন ইউজার বিটকয়েন শুধুমাত্র তার নিজের ওয়ালেটে জমা রাখতে পারবে এবং সেখান থেকেই ক্রয় বিক্রয় করতে পারবে।
এজন্য এই মুদ্রাকে ডিজিটাল কারেন্সি ও বলা হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখযোগ্য একটা বিষয় হল প্রত্যেক দেশের বাস্তব মুদ্রার মত বিটকয়েনের মান কিন্তু এক এক দেশে এক এক রকম। বিটকয়েনের মান প্রতিদিন কমা বাড়ার উপরে থাকে। এক দেশে এক এক রকম থাকে।
বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে?
বিশ্ববাসীর সর্বপ্রথম 2008 সালে বিটকয়েন শব্দটির সাথে পরিচিত হয় এবং এর সম্পর্কে অবগত হয়। বিটকয়েন এর মান হিসাব করা হয় সাতোশি এর মাধ্যমে। সাধারণত 10 কোটি সাতোশিতে 1 বিটকয়েন ধরা হয়। বিটকয়েন একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা হাওয়ার মুদ্রা সংরক্ষণ করার জন্য কোন ব্যাংকের প্রয়োজন হয় না। বিটকয়েনের সংরক্ষণ বিটকয়েন নিজেই করতে পারে কারণ এটি একটি ডিজিটাল মুদ্রা।
অন্যান্য সাধারণ মুদ্রার মত ইচ্ছা করলেই বিটকয়েন উৎপাদন করা সম্ভব না কারণ বিটকয়েন উৎপাদনের একটা সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। 21 মিলিয়ন বিটকয়েন পৌঁছে যাওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি এর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। সে হিসেবে প্রতি ঘন্টায় 25 টি বিটকয়েন উৎপাদন হয়। হয় এক ধরনের ব্লকচেইন এর মাধ্যমে। বিটকয়েন বিভিন্ন সফটওয়্যারের সাহায্যে মাইনিং করা হয়।ব্লকচেইন সিস্টেমে প্রতিটি বিটকয়েন ব্যবহারকারী এবং তার ব্যবহৃত বিটকয়েন ওয়ালেট আলাদা আলাদা হয়।
সফটওয়্যার এর মাধ্যমে বিটকয়েন ট্রানজেকশন করা হয় এবং এই ট্রানজেকশন খতিয়ানে লিখে রাখা হয় ডিজিটাল ওয়ালেট এর নাম অনুসারে। এবং এই সিস্টেমটি পুরো গোপনীয় থাকে। তবে ব্যক্তি পরিচয় গোপন থাকলেও ট্রানজেকশন হিস্টরি থেকে দেখা যায়। আপনি যদি কোন ওয়ালেটে কয়েন পাঠাতে চান তাহলে আপনাকে রিকোয়েস্ট করতে হবে এবং সেটি মডারেটর এপ্রুভ করা না পর্যন্ত আপনি পাঠাতে পারবেন না।
আপনি যদি বিটকয়েন ওয়ালেট তৈরী করতে চান তাহলে আপনাকে যেকোন ব্রাউজারে গিয়ে বিটকয়েন অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট এ ক্লিক করে ইউজারনেম পাসওয়ার্ড এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে নিতে হবে। এবার আপনি অনলাইনে কাজ করে সেই কয়েন আপনার বিটকয়েন ওয়ালেট এ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি ডলার বা টাকা কনভার্ট করে বিটকয়েনে নিতে পারবেন। সাতোশি গুলো আপনার ওয়ালেটে জমা থাকবে । তারপর 1 বিটকয়েন হলেই আপনি বিট কয়েন বিক্রি করতে পারবেন।
বিট কয়েনের মূল্য সবসময় একরকম থাকে না। কখনো হ্রাস পায় আবার কখনো বা বৃদ্ধি পায়। ধরুন আজকে যা আছে আগামীকাল এরচেয়ে বাড়তেও পারে আবার এর চেয়ে কমতেও পারে।আপনার যদি মনে হয় যে অনেকগুলো বিটকয়েন জমিয়ে যখন এর মূল্য বৃদ্ধি পাবে তখন একসাথে বিক্রি করে দিবেন সেটাও পারবেন। এই সিষ্টেমটা অনেকটা শেয়ার মার্কেটিং এর মতো ভাবতে পারেন। বর্তমানে
বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা বাড়ছে।বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া সহ পৃথিবীর কোনো দেশই এখনো বিটকয়েনকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা দেয়নি।তাই বলা যায় এটা বৈধ মুদ্রা।
ইউটিউব, ফেসবুকসহ বড় বড় সফটওয়্যার কোম্পানি গুলো ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে এবং এতে ইনভেস্ট করার কথা ভাবছে।
আজকাল বিটকয়েনের গ্রহনযোগ্যতা যতোটা বেড়ে চলেছে এতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন হয়তো ভবিষ্যতে বিটকয়েনই হবে পৃথিবীব্যাপি লেন দেনের প্রধান মুদ্রা।
সবশেষে, আজকে আমরা এই আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে কতোটা উন্নত করে যাচ্ছে।
You must be logged in to post a comment.