বিশেষ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল কলা।

কলা একটি জনপ্রিয় ফল। দৈনিক একটি কলা খাওয়া শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ। এটির মধ্যে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। পুষ্টিগুনের তালিকায় অন্যতম একটি ফল কলা। এটি সারা বাংলাদেশে উৎপত্তি হয়ে থাকে। এটি বিশেষ ক্যালরি সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখতে কলা অন্যতম। কলা যেকেনো বয়সের মানুষের খাওয়া উচিত। 

নিচে কলা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:

ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি পূরণে একটি কলা খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা শরীলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ যাবতীয় সমস্যা সমাধান করে থাকে। কলা এক প্রকারের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফল। সাধারনত উষ্ণ জলবায়ুর দেশে কলা ভালো জন্মায়। তবে দক্ষিণ-পূর্বএশিয়াই কলা উৎপত্তিস্থল হিসাবে পরিগণিত। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহু দেশে কলা অন্যতম প্রধান ফল।

বাংলাদেশের নরসিংদী, মুন্সিগন্জ, ময়মনসিংহ,যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট.কুষ্টিয়া. ঝিনাইদহ. চুয়াডাঙ্গা. মেহেরপুর. প্রভৃতি এলাকায় শত শত বৎসর যাবত ব্যাপকভাবে কলা চাষ হয়ে আসছে। বাংলাদেশের কলা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সারা বছর এ অঞ্চলের উচু জমিতেই এর চাষ করা যায়। পার্বত্য এলাকায় বনকলা. বাংলাকলা.মামা কলা সহ বিভিন্ন ধরনের বুনোজাতের কলা চাষ হয়।

প্রাগাধুনিক ভারতীয় অর্থনীতিতেও একটি প্রধান অর্থকারী ফসল হিসাবে কলা চাষাবাদ হতো। খনার বচনে আছে, ”কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড়, তাতেই ভাত”। ক্যালরির চাহিদা মেটাতে সবচেয়ে সহজলভ্য ফল কলা। ফলটিতে থাকা ক্যলরির পরিমাণ ১০০। এছাড়াও এতে রয়েছে খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।

অনেকেই সকালের নাস্তায় কলা খান। কেউ কেউ আবার দিনের অন্য সময় কলা খান। তবে বিশেঙ্গরা সকলেই কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সকালে কলা খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি হয়। তবে খালি পেটে কলা খাওয়া ঠিক নয়। 

কলার গুণাগুণ 

কলা বিভিন্ন গুণাগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। এর পুষ্টিগুণ অধিক। এতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপাদান যথা আমিষ.ভিটামিন এবং খনিজ কলা ক্যলরির একটি ভালো উৎস। এতে কঠিন খাদ্য উপাদান এবং সেই সাথে পানি যাতীয় উপাদান সমন্বয় যে কোন তাজা ফলের তুলনায় বেশি। একটি বড় মাপের কলা খেলে ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কলাতে রয়েছে সহজে হজম যোগ্য শর্করা।

এই শর্করা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে থাকা আয়রণ রক্তে হিমোগ্লবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। গবেষকরা জানান. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে দেহে পটাসিয়ামের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও দেহে পটাসিয়ামেরর আদর্শ উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে কমে যায় স্ট্রোকের ঝুঁকিও। আর এই উপকারী পটাশিয়াম কলায় আছে প্রচুর পরিমাণে।

গবেষকরা দেখেছেন, একটি কলায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে। আর মানবদেহে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামের যোগান দেয়া গেলে স্ট্রোকের হাত থেকে বেঁচে যেতে পারে ১০ লক্ষ মানুষ। 

খাদ্যগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায় যে খাদ্যগুণ আছে তার বিশ্লেষণ নিম্নরুপে: 

* পানি (জল) ------------------৭০.১%

* অমিষ   ----------------------১.২%

* ফ্যাট(চর্বি) -------------------০.৩%

* খনিজ লবণ-------------------০.৮%

* আশঁ -------------------------০.৪%

* শর্করা ------------------------০.২%

                  মোট ১০০.০% । 

 

খনিজ লবণ এবং ভিটামিন

ক্যালসিয়াম -------------৮৫ মি.গ্রা

ফসফরাস ---------------৫০ মি.গ্রা

আয়রন ------------------০.৬ মি.গ্রা 

ভিটামিন-সি, অল্প ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ------- ৮ মি. গ্রা 

 মোট ক্যালরি ---------১১৬ । 

২০১৭ সালে সারা বিশ্বে পাঁকা কলা এবং কাঁচা কলার উৎপাদ্দন ১৫৩১ লক্ষ টন। মোট উৎপাদনের ২৭% এর বেশি ভারত ও চীন এই দুই দেশ মিলে করেছিল। 

কলা খাওয়ার কিছু উপকারিতা

হৃদযন্ত্র ভালো রাখে 

পাকাকলা পটাশিয়ামের আধার। প্রতিদিন একটি বা দুটি কলা খেলে আপনার হৃদযন্ত্র অনেক বেশি সচল থাকবে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে। 

কিডনি সু্স্থ রাখে 

কলার পটাশিয়াম এমনকি কিডনিও ভালো রাখে। ইউরিনি ক্যালসিয়াম জমা হতে বাধা দেয় বলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এর ফলে হাড় মজবুত হওয়ার জন্য আরও বেশি ক্যালসিয়াম বরাদ্দ থাকে। 

শরীরে শক্তি যোগায় 

কলাতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা ও স্যলুবল ফাইবার, যা ধীরে হলেও দৃঢ় শক্তির যোগান দেয় শরীরে। একারণে খেলোয়াড়দের প্রায়ই খেলার আগে বা খেলা চলাকালীন কলা খেতে দেখা যায়। 

খাদ্য হজমে সহায়তা করে 

কলার ফাইবার ও প্রোবায়োটিক অলিগোস্যকারইজড হজমে দারুন সহায়ক। এর ফলে আপনার শরীরে আরও বেশি পুষ্টি সন্চয় করতে পারে। কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়। কোষ্টকাঠিন্যর জন্য ল্যাক্সেটিভ না নিয়ে অতিরিক্ত পাকা কলা খেয়েই দেখুন না। 

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় 

কলায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬ যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাসিড সৃষ্টি করে, রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে এবং হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ শরীরে উতকৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টির জন্য কলার জুড়ি মেলা ভার। 

পাকস্থলী আলসার ও বুক জ্বালা রোধ করে

কলায় প্রোটেক্টিভ মিউকাস লেয়ার বৃদ্ধির মাধ্যমে পাকস্থলীতে পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে, যা আপনাকে বুক-জ্বালা ও পাকস্থলীর আলসার থেকে রক্ষা করবে। 

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় 

সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত পাকা কলা শরীরে জন্য গুরুত্বপূর্ণ TNF-A নামক  এক ধরণের যৌথ সরবাহ করে, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্বেত রক্ত-কণিকার পরিমাণ রাড়ায়। এতে করে ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। 

মানসিক চাপ কমায় ও সুনিদ্রায় সহায়তা করে

কলায় আছে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড যা সেরোটোনিনে পরিবর্তিত হয়। সেরোটোনিনের সঠিক মাত্রা আপনার মুড ঠিক রাখবে এবং মানসিক চাপ কমাবে। এতে করে আপনার ভালো ঘুম হবে। 

ত্বক সজীব করে 

কলার চামড়ার কিছু পরিমাণে ফ্যাটি উপাদান আছে, ‍যা ত্বকে ঘষলে ময়েশ্চরাইজারের মতন উপকার পেতে পারেন। আবার ব্রণ দূর করার জন্যে কলার চামড়া ব্যবহার করা হয়। তবে সবধরনের ত্বকের জন্য কাজ নাও করতে পারে।  তবু একবার চেষ্ঠা করে দেখতে তো দোষ নেই। 

শারীরিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করে 

কলা ডোপামিন, ক্যাটেচিন্স এর মতন কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের দারুন উৎস। এগুলো শরীরকে সার্বিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। 

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় 

আয়ুবের্দ শাস্ত্রমতে কলার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা পাচকরসে ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটে থাকে। শরীরে ক্ষতিকর টক্সিন উপাদানগুলোর রের করে দেওয়ার মধ্যে ‍দিয়ে দেহের প্রতিটে অঙ্গকে চাঙ্গা রাখতে কলার কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে।

এই ফল টিতে আছে প্রেকটিন নামক একটি উপাদান, শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ক্ষতিকর উপাদানদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করে। ফলে রোগমুক্ত শরীরের অধিকারী হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হতে সময় লাগে না। 

ওজন নিয়ন্ত্রনে আসে 

কলায় পটাসিয়াম ছাড়াও রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার যা অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমতে শুরু করে। আর কম খেলে যে ওজনও কমে, সে কথা কে না জানে বলূন। কনস্টিপেশনের মতন রোগ সারাতেও ফাইবার বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ

নাম: বাধন কুন্ডু । একজন আর্টিকেল রাইটার । ১০০% ইউনিক ও কপি মুক্ত আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।