নবজাতকের জন্মের পরপরই তার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য তার যত্ন নিতে হবে উত্তমরূপে। কিভাবে একটা শিশুর যত্ন নিতে হবে এই নিয়ে বর্তমান যুগের বাবা মায়েদের কৌতুহলের শেষ নেই। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ধরনেরই পরামর্শ দিয়ে থাকেন কিভাবে যত্ন নিতে হবে। প্রথম প্রথম সন্তান জন্ম নিলে মা বাবা পড়ে যান আরো বিভ্রান্তিকর অবস্থায়।
প্রত্যেক বাবা মা ই চান তার ছেলে মেয়ে যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে। সুন্দরভাবে বড় হয়ে উঠে। কিন্তু এই সুস্থ থাকা, ভালো থাকার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস জানা দরকার। বিশেষ করে একজন মায়ের এই বিষয়ে জ্ঞ্যান থাকা জরুরি। শিশুদের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস ঃ
১. জন্মের পরপরই নবজাতকের যত্নঃ
জন্মের পরপরই নবজাতকের নরম কাপড় দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। নবজাতকের ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প নেই। কারন তার কোমল নাজুক শরীর সহজেই রোগজীবানুর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে । তাকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হাতে কোলে নিতে হবে। নবজাতকের জম্নের পরপরই মায়ের বুকের শালদুধ খাওয়াতে হবে। শালদুধের কোন বিকল্প নেই৷ এটা নবজাতকের টিকার কাজ দেয়। শালদুধের পরিমাণ অল্প হলেও অনেক পুষ্টিকর। শালদুধ খাওয়ালে শিশুর বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে বেচে থাকে। বাইরে থেকে কেউ এসে কোলে নিতে চাইলে অবশ্যই তাকে হাত মুখ ধুয়ে পরিচ্ছন্ন হাতে কোলে নিতে হবে।
২. শিশুকে খাওয়ানো ঃ
শিশুদের জন্য ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ ই যতেষ্ট খাবার। এর মধ্যে আর বাড়তি খাবারের প্রয়োজন নেই। এই ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ই ঘনঘন খাওয়াতে হবে। প্রথম দুই মাস ২০ মিনিট পরপরই বুকের দুধ দেওয়া উচিত। ঘনঘন দুধ খাওয়ালে মায়ের বুকে দুধের উৎপাদন ও বেশি হবে। পরে আস্তে আস্তে ১ ঘন্টা, ২ ঘন্টা অন্তর অন্তর দুধ পান করাতে হবে।
৩. শিশুকে টিকা প্রদানঃ
শিশুর জন্মের পরপরই যেসকল টিকা দরকার সময় অনুযায়ী তাকে সবধরনের টিকা প্রদান করতে হবে৷ এসব টিকা তার জন্য খুবই দরকারী। তার বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তাকে সময়মতো সব ধরনের টিকা প্রদান করতে হবে।
৪.শিশুর গোসল ঃ
ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে গোসল একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিদিন ই শিশুদের গোসল করানো উচিত। হালকা কুসুম গরম পানিতে শিশুদের গোসল করাতে হবে যেন ঠান্ডা না লাগে। গোসলের আগে হালকা তেল মালিশ করে নিলে ভালো হয়। অনেকে মনে করেন প্রতিদিন সাবান লাগালে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। এটা ভুল ধারনা। প্রতিদিন ই সবানা লাগাতে পারেন।গোসলের সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিশুর কানে পানি না যায়। কানে পানি গেলে কান পচা রোগ হতে পারে৷ গোসলের পর অলিভ অয়েল বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন।
৫.শিশুর নখের যত্ন ঃ
প্রায় প্রত্যেক শিশু ই নখ দিয়ে নাকে মুখে আচর মারে৷ এতে তার নাকে মুখে দাগ হয়ে যায়। অনেকে দেখা যায় নিজের নখ দিয়ে নিজেই রক্ত বের করে ফেলে। তারপর মুখে আংগুল দেওয়া শিশুদের একটা অভ্যাস। তাই শিশুর নখ সবসময় কেটে রাখতে হবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রতি সপ্তাহে একবার নখ কাটতে হবে। আপনি সপ্তাহে একটা দিন বাছাই করে নিতে পারেন যেদিন আপনার সন্তানের নখ কেটে দিবেন।
৬. শিশুদের নাকের যত্ন ঃ
লক্ষ্য রাখতে হবে শিশুর নাকে ময়লা জমে আছে কি না। কটন বাড বা নরম সুতি কাপড় দিয়ে নাক পরিষ্কার রাখতে হবে।
৭. শিশুদের কানের যত্নঃ
লক্ষ্য রাখতে হবে কোন উপায়ে যেন শিশুর কানে পানি না ঢুকে। কানের চারপাশ ভালোভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে কটন বাড বা নরম সুতি কাপড় দিয়ে। কানের উপরিভাগ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৮. শিশুর চোখের যত্ন ঃ
শিশুর চোখ সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যেন বিভিন্ন রোগ না হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা পানি দিয়ে ছোট্ট শিশুর চোখ ধুয়ে মুছে দিতে হবে।
৯. মেরিল বা পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যবহার ঃ
শিশুর শরীরের ভাজগুলোতে পাউডারের পরিবর্তে পেট্রোলিয়াম জেলিএ ব্যবহার করলে ভালো। এতে ঘা বা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
১০. শিশুর জন্য রুটিন তৈরি করাঃ
শিশুর বয়স কম থাকতেই তার জন্য একটা রুটিন তৈরি করতে পারেন। এতে সে সময় মতো খেতে পারবে, সময়মত ঘুমাতে পারবে এবং সময় মতো খেলতে পারবে। এটাতে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে এবং আপনি ও সস্তিতে থাকবেন।
ছোট্ট শিশুর যত্নে উপরের প্রয়োজনীয় টিপস গুলো মেনে চললে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
ভালো লিখছেন।
Thanks
You must be logged in to post a comment.