ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম : আজকাল অনলাইনে টাকা ইনকামের কথা উঠলেই ইউটিউবের কথা উঠে আসে। কেননা বর্তমানে ইউটিউবই হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুলব্যবহৃত ভিডিও শেয়ারিং সাইট। আজকাল ইউটিউব শব্দটির সাঙে পরিচিত নন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। কেননা এই ইউটিউব আমাদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রায় সকল প্রকার কাজে এর ব্যবহারের তুলনা নেই।
এখন পড়তে ইচ্ছে না করলে, শুধু ইউটিউবে ভিডিও অন করে আমরা যেকোনো বিষয়ের লেকচার দেখে নিতে পারি। এতে পড়াটা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। আবার বিদ্যালয়ের কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা কোনো অনুষ্ঠানের নানা বিষয় সম্পর্কে প্রস্তুতি নিতেও এর বিকল্প নেই।
দৈনন্দিন নানা রকম ছোটোবড় প্রয়োজনে দৈত্যের মতো আমাদের পাশে থেকে সাহায্য করে আসছে এই ইউটিউব।
ইউটিউব করে সফলতার কথা:
এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইউটিউবারের উদাহরণ দিতে হয় না। কেননা আমাদের দেশের অনেক ইউটিউবার আজ এই ইউটিবিং করে অনেক সফল হয়েছেন। তাদের উদাহরণ দিতে গেলে আজকের মূল বিষয়টিই আলোচনা করা হবে না। তাই কিছু নাম ও তাদের কার্যকলাপ বলেই ক্ষ্যান্ত হবো।
যেমন: 'রবি টেন মিনিট স্কুলের' প্রতিষ্টাতা আইমান সাদিক। তার চ্যানেলে পড়ালেখা বিষয়ক নানা আর্টিকেল এর ভিডিও পাউয়া যায়। আরো আছেন 'সালমান দা ব্রাউন ফিশ' নামক চ্যানেলের মালিক সালমান মুকতাদির। তার এই চ্যানেলটি অবশ্য বিনোদন মূলক চ্যানেল।
তাছাড়াও সোলায়মান সুখনের চ্যানেলে রয়েছে যুবকদের জন্য নানা মোটিভেশনাল ভিডিও।
আরো রয়েছেন শামীম হাসান সরকার, তৌহিদ আফ্রিদিসহ আরো অনেক নামকরা ইউটিউবার যাদের যোগ্যতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অনেক নামকরা ইউটিউবার হয়েছেন।
আমরা কী কখনো ভেবে দেখেছি? ইউটিউবে এই ভিডিও আপলোড দেউয়ার মধ্যে আমাদের লাভটা কী? বা তারা কিভাবেই বা এই ইউটিউব থেকে সফল হয়েছেন?
উত্তরে আমি বলবো, হ্যা। অবশ্যই লাভ আছে। কেননা শুধু শুধুই কেউ এখানে ভিডিও আপলোড দেয় না।
কেননা আমরক যদি একটি জরিপ দেখে আসি, তাহলেই বুঝতে পারবো।
২০১৮ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে যে, শুধু ইউটিউবে খেলনার রিভিউ দেখিয়েই প্রায় ২২ মিলিয়ন ইউএস ডলারের অধিকারী হয়েছে রায়ান নামক একজন শিশু। তার বয়স ছিলো মাত্র ৭ বছর!! এছাড়াও দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন জেক পল নামক একজন তরুণ, তার আয় ছিলো ২১.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারের মতো!!
ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম:
তোমাদের অনেকেরই হয়তো মনে হচ্ছে যে, আমিও যদি হতে পারতাম ইউটিউবার, এবং টাকা উপার্জন করতে পারতাম! তবে আজকের এই আর্টিকেলটি তোমার জন্যই। হ্যা, চাইলে তুমিও পারো ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করতে।
তবে অনেকেই জানে না ইউটিউব থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করতে হয়। এখন আমি ইউটিউবে টাকা ইনকামের উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
১। ইউটিউবের কিছু নিয়ম-নীতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা:
সবকিছুই একটি নীতিমালার মধ্য দিয়ে চলে। তাই ইউটিউবেও টাকা ইনকামের জন্য কিছু নীতি নির্ধারনী মেনে চলতে হয়। এসব নীতিমালার মধ্যে রয়েছে -
ধর্মীয় বা রাজনৈতিক ব্যাপারে আঘান হানে এমন আপত্তিকর কিছু ভিডিও এমনকি অশালীন কিছু বিষয়, মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায় এমন কিছু জিনিস ইত্যাদি ধরনের ভিডিও ইউটিউবে গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য ইউটিউবে চ্যানেল খোলা বা ভিডিও আপলোডের পূর্বে এর নীতিমালা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হউয়াটা খুব জরুরি।
২। একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলা:
ইউটিউব চ্যানেল খোলাটা বেশ কঠিন কিছুই না। শুধুমাত্র একটা জিমেইল একাউন্ট থাকলে খুব সহজেই ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন। আর জিমেইল একাউন্ট না থাকলে শুধু নিজের নাম, বয়স এবং ফোন নম্বর দিয়ে খুব সহজেই খুলতে পারবেন।
তারপর এই জিমেইল একাউন্ট অ্যাকাউন্টটি ইউটিউবে লগইন করে সেখান থেকে ‘Create Channel’ থেকে পাবে তৈরি করতে পারবেন আপনার চ্যানেল।
এরপর নির্বাচন করুন একটি প্রোফাইল পিকচার এবং কভার ফটো। এখন নিজের ক্যামেরায় ভিডিও তৈরি করুন। মূল কাজ প্রায় শেষ।
৩। ইউটিউব ভিডিও এর জন্য বিষয় নির্ধারণ:
ইউটিউবে টাকা ইনকামের জন্য প্রথমেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে আপনি কোন বিষয় নিয়ে কাজ করবেন।
কেননা অনেকের অনেক ধরনের শখ থাকে। যেমন:
কেউ কেউ গেমিং ভালো পারে, কেই গান বা নাচ ভালো পারে, কেউ প্রোগ্রামিং, কেউ ডিজাইনিং, কেই ব্লগিং। আবার কেউবা পড়ালেখার নানা টপিক।
তাই প্রথমেই নিজের পছন্দের এবং নিজের পারা ভালো টপিক সিলেক্ট করতে হবে।
যা টাকা উপার্জনের জন্য মূলশর্ত।
৪। ইউটিউব চ্যানেলটি মনিটাইজেশন করা:
টাকা ইনকামের জন্য আপনার ইউটিউব চ্যানেটি অবশ্যই মনিটাইজেশন করতে হবে।
ইউটিউবে মনিটাইজেশন বলতে বোঝানো হয়েছে যে, নিজের শ্রম খাটিয়ে ভিডিও তৈরি করে তা আপ্লোড করে অর্থ উপার্জন করছি, এই বিষয়টি। সুতরাং, ইউটিউবে এড প্রকাশের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করাকে বোঝানো হয়েছে।
২০১৮ সালের আগে এই কাজটি করা খুব সহজ হয়ে থাকলেও, কিছু কারণের জন্য ইউটিউব কিছু নীতিমালা দেয়।
এখন আয় করার মূল উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
আয় করার মূল উপায় বা পদ্ধতি:
➤ গুগল এডসেন্সে থেকে এড প্রকাশের মাধ্যমে:
এডসেন্সের এপ্রুভাল পাউয়ার জন্য প্রথমেই যে জিমেইল একাউন্ট দিয়েছেন, সেখানে নিজের বয়স ১৮ বা তার বেশি হতে হবে।
প্রথমেই গুগল এডসেন্সে আবেন করতে হবে। এবং এখানে সব তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। আর ইউটিউবের নীতিমালা অনুযায়ী শেষ ১ বছরের মধ্যে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচ ভিও থাকতে হবে।
এটি মূলত এপ্রুভাল পাউয়ার একধরনের যোগ্যতা।
➤ এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে:
অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে এমন কিছু সাইট যেমন: দারাজ, পিকাবোর মতো সাইটে গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। তখন তাদের পাঠানো লিংক আপনার ভিডিওর ডেস্ক্রিপশন বক্সে দিয়ে দিলেই কাজ শেষ। এভাবে ঐ লিংকে গিয়ে কেউ কিছু কিনলে রেফারেল হিসেবে কিছু কমিশন পাবেন আপনি।
➤ পণ্যের রিভিউ দেউয়ার মাধ্যমে:
কিছু কোম্পানি তাদের পণ্যের রিভিউ দেউয়ার মাধ্যমে কিছু টাকা আপনাকে প্রদান করবে। আপনি যদি অনেক ভিউ পাওয়া ও অনেক সাবস্ক্রাইব প্রাপ্ত কোনো চ্যানেলের মালিক হন তবেই এই অফার পাবেন।
➤ স্পন্সরড ভিডিওর মাধ্যমে:
এফিলিয়েন্ট লিংকের থেকেও এর মাধ্যমে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রেও আপনার ফ্যান ফলোয়ারের সংখ্যা বেশি হতে হবে।
এতে কোনো কোম্পানি তাদের পণ্যের গুণগত মান ও উপকারিতা সম্পর্কে আপনি ভিডিও আপলোড দেউয়ার মাধ্যমে আপনাকে তারা অর্থ প্রদান করবে।
এর জন্য আপনার চ্যানেলটি জনপ্রিয় হউয়া আবশ্যক।
শেষকথা:
মূলত ভিজিটর্স বা ভিউয়াররাই আপনার চ্যানের প্রাণ। তাই আপনাকে দর্শকদের চাহিদামতো ভিডিও আপলোড দিতে হবে। আজ আর নয়। কথা হবে পরবর্তী পোস্টে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
আল্লাহ হাফেজ।
You must be logged in to post a comment.