ইউটিউবে চেহারা না দেখিয়ে মাসে ৩০,০০০৳ থেকে ৪০,০০০৳ উপার্জন করার উপায়

এমন অনেকেই আছেন যাদের কাছে স্মার্টফোন আছে কিন্তু বেকার ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে, হাতে কোন কাজ নেই, পড়াশোনার রেজাল্টও কোনরকম, চাকরি দেওয়ার জন্য মামা চাচা নেই, কারোর আবার ৯টা ৫টার চাকরি ভালোলাগে না, কেউ আবার সহজ কাজ খুঁজছেন। আপনি কি ওপরের ক্যাটাগরিতে পরেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য!

ইউটিউবে চেহারা না দেখিয়ে মাসে ৩০,০০০৳ থেকে ৪০,০০০৳ আয় করা সম্ভব। আমরা অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ফ্যাক্ট চ্যানেল ফলো করে থাকি। এসব চ্যানেলের একেকটি ভিডিওতে ভিউ ১০ থেকে ১৫ মিলিয়নের মতো। এরকম ফ্যাক্ট চ্যানেল তৈরি করে ঘরে বসে সহজেই একটি ভালো পরিমাণের টাকা আয় করা সম্ভব। 

৩০,০০০৳ থেকে শুরু করে লক্ষ লক্ষ টাকাও উপার্জন করা সম্ভব। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি সত্যি! ইউটিউবে এরকম অসংখ্য চ্যানেল রয়েছে, যেগুলোতে বিভিন্ন নতুন নতুন বিষয় তুলে ধরা হয়। আর এসব চ্যানেল জনসাধারণের কাছে দারুন জনপ্রিয়তা লাভ করে।

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে ফ্যাক্ট চ্যানেল কি? আর এটি কিভাবে কাজ করে?

ফ্যাক্ট চ্যানেলের ভিডিওগুলোতে স্থিরচিত্র বা ছবি ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করা হয়ে থাকে এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ক্রিয়েটরের ভয়েস ওভার দেওয়া থাকে। যেখানে তিনি ছবিগুলোর সম্পর্কে বর্ণনা করতে থাকেন। এখনও বুঝতে পারছেন না? আরেকটু খোলাসা করে বলি।

ধরুন একজন কালোজিরা বা অন্য কোনো মশলার ছবি দিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করলেন। আর সেই সাথে তিনি সেই মশলাগুলোর চমৎকার কিছু গুণাগুণ সম্পর্কে বললেন। এবার ধরুন যারা একটু স্বাস্থ্যসচেতন অথবা এসব ব্যাপারে জানতে আগ্রহী, তারা সেই ভিডিওটি দেখলাম এবং গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও হওয়াতে পরিচিত সকলের সাথে শেয়ার করলাম।

আবার মনে করুন ভ্রমণ প্রিয় মানুষের জন্য একজন পৃথিবীর অদ্ভুত সুন্দর কিছু জায়গার ছবি বা ভিডিও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সুদৃশ্যভাবে অথবা ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে এবং সেই সম্পর্কে একটু ঘাটাঘাটি করে সেগুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত বলে ভয়েস রেকর্ডিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে রেকর্ড করে ভিডিওতে বসিয়ে আপলোড করল। এমন অনেকেই আছেন যারা ঘুরতে ভালোবাসেন। তারা সকলে সেই ভিডিওটি দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হবেন এবং ভিডিওটি লাইক করবেন।

অথবা, ধরুন করোনা কালীন সময়ে কিভাবে, কি করলে শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে ছবির স্লাইডশো তৈরি করে একজন একটি ভিডিও তৈরি করলেন। এখনকার সময়ে যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

এরকমভাবে নিজের পছন্দসই বিষয়গুলো নিয়ে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে ভিডিও তৈরি করতে পারবেন এবং নিঃসন্দেহে কন্টেন্ট ভালো হলে ভিডিওতে ভিউও প্রচুর হবে। ছবিগুলোকে আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী সাজিয়ে নিলে ভিডিওটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

কিছু ফ্যাক্ট ভিডিওসমূহের টাইটেল আমি নিচে লিখে দিচ্ছি সকলের বোঝার সুবিধার্থে : 

• পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত মানুষেরা।

• জেনে নিন কিভাবে দৈনন্দিন জীবনের এই সাধারণ মশলাটি আপনাকে করোনার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।

• মৃত্যুর হাত থেকে একটুর জন্য বেঁচে ফিরলেন যারা!

এবার প্রশ্ন আসতে পারে 'কিভাবে করব?

ভয় পেয়ে যাবেন না, বেশ সহজ একটি পদ্ধতি। এরকম অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে কপিরাইট ফ্রি ছবি এবং ভিডিও পাওয়া যায়। সেখান থেকে নিজের বিষয় সম্পর্কিত কিছু ছবি আর ভিডিও ডাউনলোড করে নিন।       

ব্যস্! এরপর আপনার স্মার্টফোনে থাকা কিছু সহজ অ্যাপের মাধ্যমে, যেমন – কাইন মাস্টার, ভিভা ভিডিও, ইনশট ইত্যাদি দিয়ে ছবি বা ভিডিওগুলোকে আপনি একসাথে কমপাইল করতে পারবেন। 

এরপর ভয়েস দেওয়ার পালা। আপনার স্মার্টফোনে থাকা রেকর্ডিং সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে ভিডিওটি দেখে দেখে আপনার ভয়েস ওভারটি দিয়ে ফেলুন এবং ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে সেটি বসিয়ে দিন। এরপর শুধু ইউটিউবে আপলোডের অপেক্ষা। এর জন্য অবশ্যই আপনার একটি ইউটিউব একাউন্ট থাকতে হবে। 

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এরকম একটা কাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ঘরে বসে এর থেকে ভালো আয়ের উৎস আর কোথাও পাবেন না। নিজেকে আড়ালে রেখেও এতো টাকা এভাবে আয় করা সম্ভব শুধুমাত্র আপনার কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে।

কিছু কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে :

১. ইন্টারেস্টিং কন্টেট তৈরি করতে হবে। ভিডিওর টাইটেল এবং থাম্বনেইল হতে হবে আকর্ষক ( কিন্তু সেটি অবশ্যই বিষয় সম্পর্কিত হতে হবে)। 

২. মিথ্যা কিছু প্রচার করা যাবেনা। ভিউয়ারদের বিশ্বস্ত হয়ে উঠতে হবে। তাহলে নিয়মিতভাবে সকলে চ্যানেল ফলো করবে।

৩. কানেক্টিভিট বা এঙ্গেজমেন্ট বাড়াতে হবে চ্যানেলের সকলকে কমেন্ট করতে বলে।

৪. ভিডিওটি যেন বেশি একঘেয়ে না হয়ে যায়। এতে ওয়াচটাইম বাড়বে না। ইন্টারেস্টিং টপিক নিয়ে ইন্টারেস্টিংভাবে পুরোটাকে উপস্থাপন করতে হবে।

৫. ভিডিওটি যেন অনেক বেশি লম্বা না হয়ে যায়।

৬. নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় পর পর ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করতে হবে। সেটি হতে পারে দুইদিন পর পর অথবা সপ্তাহে একটি করে বা প্রতিদিন একটি করে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পর পর আপলোড না করলে এঙ্গেজমেন্ট কমে যায়।

অন্যান্য বিস্তারিত : 

কন্টেন্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখতে হবে। প্রথমত, সমসাময়িকী বিষয়গুলো অথবা ভাইরাল বিষয়গুলো নিয়ে ভিডিও বানানো যেতে পারে। তারপর, জরুরি বিভিন্ন জিনিসের বিস্তারিত জানিয়ে ভিডিও তৈরি করা যেতে পারে। ফানি স্টোরি অথবা মোটিভেশনাল স্টোরিকে কেন্দ্র করে আপনার ভিডিওটি তৈরি করতে পারেন।

এভাবে ভিডিও তৈরি করে আপনি মাসে ৩০,০০০৳ থেকে ৪০,০০০৳ এমনকি লক্ষ লক্ষ টাকাও উপার্জন করতে পারেন। ৩০,০০০৳ হলো মিনিমাম এবং নিশ্চিত।

তবে তার জন্য অবশ্যই আপনাকে লেগে থাকতে হবে শুরুর কয়েক মাস, যতদিন না পর্যন্ত আপনার একাউন্টটি মনিটাইজড হয়ে যায়। এরপর থেকে আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে, আর টাকা নিয়ে চিন্তা নেই। ঘরে বসে থেকে দুর্দান্ত উপায়ে ভালো একটি পরিমাণের টাকা আয় করুন। 

মনিটাইজেশনের পর :

মনিটাইজেশনের পর আপনার একটি গুগল অ্যাডসেন্ট একাউন্টের প্রয়োজন পরবে। যেখানে আপনার ইউটিউব থেকে আসা অর্থটি জমা হবে।

ইউটিউব ক্রিয়েটর স্টুডিও নামের একটি অ্যাপেরও প্রয়োজন পরবে। সেই অ্যাপের মাধ্যমে সমস্ত পরিসংখ্যান দেখা যাবে। এমনকি কত ডলার জমা হচ্ছে সেটাও ইউটিউব ক্রিয়েটর স্টুডিওর মাধ্যমে দেখা যাবে।

এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এতোই সহজ হলে সবাই এটি করছে না কেন! কারণ, কেউ কেউ শুরু করবে কিনা সেই চিন্তা করতে থাকেন। চিন্তা করতে থাকলে সারা জীবন শেষ হয়ে যাবে, চিন্তা শেষ হবে না! কেউ কেউ আবার এটাও মে সম্ভব তা এখন পর্যন্ত জানতেই পারেননি। আপনি জানতে পেরেছেন, অন্য দিকে না তাকিয়ে শুরু করে দিন। জিরো ইনভেস্টমেন্টে এর থেকে ভালো ইউটিউব চ্যানেল আর কি হতে পারে! 

ফ্যাক্ট চ্যানেল বাদেও এরকম আরও অনেক চ্যানেল রয়েছে যেগুলোতে নিজের চেহারা না দেখিয়েও একজন ইউটিউবার অর্থ উপার্জন করতে পারেন। যেমন – কুকিং চ্যানেল, লাইফ হ্যাকস্ এর চ্যানেল, আর্ট এন্ড ক্রাফ্টসে্র চ্যানেল, মেহেদীর চ্যানেল।

এরকম অসংখ্য অপশন রয়েছে আপনার কাছে। শুধু আপনার শুরু করার অপেক্ষায়! এরপরেও আবার চিন্তা ভাবনা করবেন!!! আজি লেগে পড়ুন দুর্দান্ত কন্টেন্ট রেডি করে ইউটিউবিং শুরু করতে।

আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা রইল।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles