আসসালামুয়ালাইকুম।জে আই টি তে আমাদের আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
যাদের ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে কোন ধারণা নেই তাদের জন্য অবশ্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট হিসেবে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে। তো আর কথা না বাড়িয়ে আমাদের মূল আলোচনা যাওয়া যাক।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি ?
ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন প্রচার। অর্থাৎ অনলাইনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক পণ্য কিংবা সেবার বিজ্ঞাপন প্রচার করাকেই ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়।
বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বহু শাখা মানুষের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে যার ফলে পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বর্তমানে অনেক সহজেই যে কেউ ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে নিজের পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারে। বর্তমান সময়ে বিজনেস জগতে নিজের আধিপত্য শক্তিশালী করতে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যম
আগেই বলেছি ডিজিটাল মার্কেটিং এর বর্তমানে অনেক শাখা বা মাধ্যম তৈরি হয়েছে। যার ফলে ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে সহজতর একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।নিচে ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম মাধ্যম। বর্তমানে বহু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তাদের পণ্য এবং সেবাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। ব্যবহারের সহজতর এবং তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কে বেছে নিয়েছেন।
এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, বর্তমানে অন্যান্য সকল মাধ্যমের তুলনায় সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে এবং কি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের দিক থেকেও অন্যান্য মাধ্যমে তুলনায় বেশি রাঙ্ক এ রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ফেসবুক মার্কেটিং, ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং, ইউটিউব মার্কেটিং ইত্যাদি।
২. এসইও মার্কেটিং
এসইও মার্কেটিংকে সংক্ষেপে বলতে গেলে যেকোন ওয়েবসাইট কিংবা ওয়েবপেজের অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞাপনসমূহ কে গুগোল কিংবা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ প্যানেলে রেঙ্ক করানো কে বুঝায়। অর্থাৎ আমরা যখন গুগোল কিংবা বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে কোন বিষয়ে সার্চ করি তখন কিন্তু আমাদের জন্য বিভিন্ন ফলাফল আসে।
আর সেখানে যে সমস্ত ফলাফলগুলো আসে সেগুলো কিন্তু এসইও কিংবা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর জন্যই আসে। অর্থাৎ যেসব ওয়েবসাইট কিংবা ওয়েবপেজের এসইও আছে তাদের ফলাফলগুলো সার্চ ইঞ্জিনে সবার আগে শো করবে। ধরুন কোনো ব্যক্তি গুগোল এ স্মার্ট ওয়াচ লিখে সার্চ দিলে। এখন গুগোল তার সার্চ প্যানেলে উক্ত শব্দ অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক ফলাফল গুলো দেখানোর চেষ্টা করবে। অর্থাৎ আপনি আপনার ওয়েবসাইট কিংবা পেজের এসইও পেতে হলে আপনার প্রোডাক্ট বা বিজ্ঞাপনের শিরোনামে এমন সব কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে যা মানুষেরা সাধারণত সার্চ করে থাকে।
এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কেননা আজকালকার দিনে মানুষেরা যে কোন কিছু কিনতে গেলে আগে গুগোল সে সম্পর্কে সার্চ দিয়ে বিস্তারিত দেখে নেয়। তাই এসইও ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম মাধ্যম।
৩.এসইএম মার্কেটিং
এসিএম হচ্ছে এসইও এর পেইড ভার্সন। বুঝতেই পারছেন এখানে পেমেন্টের একটা বিষয় আছে। এসইও পেতে হলে আপনাকে গুগলের নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মানতে হবে। আর এ সকল নিয়ম কানুন সঠিকভাবে মানতে পারলে আপনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন অথবা এসইও পেতে পারেন। আর এটি হচ্ছে একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এসিএম এর ক্ষেত্রে হচ্ছে তার উল্টো।এখানে পেমেন্ট এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটের প্রোডাক্ট কিংবা বিজ্ঞাপন নির্দিষ্ট সময় কাল পেন্ডিং না রেখে সরাসরি মানুষদের সার্চ প্যানেলে পৌঁছে দেওয়া হয়।
অর্থাৎ একটা প্রোডাক্ট এসইও এর মাধ্যমে সার্চ প্যানেলে আসতে একটা অনির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন হবে। কিন্তু এসইএম এর মাধ্যমে আপনি একটা নির্দিষ্ট পেমেন্ট ব্যয় করে খুব তাড়াতাড়ি আপনার প্রোডাক্ট কে সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ প্যানেলে আনতে পারবেন। যার ফলে আপনার প্রোডাক্ট এবং সেবাগুলো তুলনামূলক কম সময়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যায় এবং তা তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। এতে প্রডাক্ট ভিত্তিক আয় কম হলেও সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে এসইও এর তুলনায় এসইএম প্রোডাক্ট সেলের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কার্যকরী। এসইএম কিংবা সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
৪.আফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অন্যের বিজ্ঞাপন নিজের সাইটে কিংবা নিজে যে কোন ভাবে প্রকাশ করে তাদের প্রোডাক্ট এবং সেবাগুলো নির্দিষ্ট কমিশনের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া। অর্থাৎ সহজ কথায় বলতে গেলে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক মার্কেটিং ব্যবস্থা।
এখানে আপনি অনলাইন ভিত্তিক কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিংবা সেবা ক্রয় করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করবেন এবং আপনার মাধ্যমে যারা উক্ত সাইটে গিয়ে তাদের পণ্য বা সেবা গ্রহণ করবে তখন প্রতিষ্ঠানটি আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণে পেমেন্ট করবে। আর এটাই হচ্ছে আফিলিয়েট মার্কেটিং। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলের জন্য অপেক্ষা করুন।
৫.সিপিএ মার্কেটিং
সিপিএ মার্কেটিং এর ধারণাটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে এসেছে। অনেকে আবার সিপিএ মার্কেটিং কে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর একটি অংশ মনে করে থাকেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সঙ্গে সিপিএ মার্কেটিং এর পার্থক্য হলো, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ প্রডাক্ট কিংবা সেবা বিক্রি করতে পারলেই কেবল প্রতিষ্ঠানটি আপনাকে পেমেন্ট করবে।
কিন্তু সিপিএ মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনাকে কোন কিছু বিক্রি করতে হবে এমন কোন কথা নেই। এখানে প্রতিটি একশন কমপ্লিট হলেই তার জন্য আপনি পেমেন্ট পাবেন। সি পি এ এর পূর্ণরূপ হল "cost per action". অর্থাৎ এখানে প্রত্যেকটা অ্যাকশন এর জন্য প্রতিষ্ঠান আপনার জন্য কমিশন দিবে। সিপিএ মার্কেটিং এ কোন প্রতিষ্ঠান এর পণ্য কিংবা সেবা আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের মাধ্যমে অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় এবং তারা যখন সে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে তখন প্রতি ক্লিকের বিনিময়ে আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণে পেমেন্ট পেয়ে থাকবেন। সিপিএ মার্কেটিং বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব
বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে বিজনেস জগতের সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাদের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যকীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা বর্তমানে যেকোনো ধরনের ব্যবসাকে প্রসারিত করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। কারণ একমাত্র ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের পণ্য এবং সেবাগুলো সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সেবা গ্রহীতার মাঝে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
ভবিষ্যতে এমন একটা সময়ে আমরা অবস্থান করবো, যেখানে সম্পূর্ণ কমার্শিয়াল জগৎটাই হয়ে যাবে একটি ই-কমার্স জগত যা সম্ভব হবে কেবল ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে। তাই গুরুত্ব বিচারে,ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব অপরিসীম।
এই ছিল আমাদের আজকের আর্টিকেলে। কেমন লাগলো আমাদের আজকের আর্টিকেল তা অবশ্যই জানিয়ে দিবেন কমেন্ট এর মাধ্যমে। এবং কোন প্রকার ভুল ত্রুটি লক্ষ করলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানাবেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে। (সমাপ্ত)
You must be logged in to post a comment.