ইন্টারনেট জগতে সবকিছুই একে অপরের সাথে যেভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তার দরুন এক অদৃশ্য জালের রেখা আমরা সাবকন্সাশলি হলেও বুঝতে পারি। এই ইন্টারনেটের অদৃশ্য জালের জন্যই ওয়েব নামকরণ, যা মাকড়সার জালের ইংরেজি শাব্দিক অর্থ।
ওয়েবের জন্যই আমরা গঠনমূলকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করে ইন্টারনেটের আরও প্রসার ঘটাতে পারছি। কিন্তু এই ওয়েব কীভাবে কাজ করে? সে বিষয়ে আমরা আজ সবিস্তারে আলোচনা করব।
ইন্টারনেটে ওয়েব কাজ করে কীভাবে?
ইন্টারনেটের ওয়েব সার্ফার ব্যবহার করে আমরা খুব দ্রুতই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তথ্য বা ইনফরমেশন আদান-প্রদান করে কানেক্টিভিটি তৈরি করতে সক্ষম। পৃথিবীজুড়ে কানেক্টিভিটির এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদেরকে আরও উন্নত করে। সময় বাঁচিয়ে, যানবাহন খরচ বাঁচিয়ে এমনকি কায়িক শ্রম বাঁচিয়ে আমরা খুব সহজেই এই কানেক্টিভিটির মাধ্যমে সেবা নিয়ে চলেছি। কিন্তু এই কানেক্টিভিটির রহস্য কী? এটি কীভাবে কাজ করে?
কানেক্টিভিটি আসলে তৈরি হয়েছে API হতে। API ব্যবহার করে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত তথ্যগুলো এক ডিভাইস হতে মাল্টি ডিভাইসে পৌঁছে দিতে পারছি। আজ তাই আমরা API নিয়ে বিস্তর আলোচনা করব, যাতে করে বিষয়টি সহজে বোধগম্য হয়।
API কী?
API এর ফুল ফর্ম হচ্ছে Application Programming Interface. এটি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসের সেটে রুটিন, প্রটোকল ও বিভিন্ন টুলসের সমন্বয় নিয়ে কাজ করে। বইয়ের ভাষায় যদি একে সংজ্ঞায়িত করতে চাই তবে বলা যায় যে, API আসলে একটি ম্যাসেঞ্জার যা আপনার কাছে ফিরে আসে।
কম্পিউটার বা অ্যান্ড্রয়েড API এর ব্যবহার তাই অতি পুরাতন। API কে সংজ্ঞানুযায়ী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এটি এমন একটি ম্যাসেঞ্জার যে ম্যাসেঞ্জারকে আমরা ফ্যামিলিয়ার হিসেবে ব্যাখ্যা করতে চাইলে হোটেল বা রেস্টুরেন্টের একজন ওয়েটারের সাথে তুলনা করতে পারি।
ধরুন, আপনি যে টেবিলে বসে আছেন সেখানে দেয়া মেন্যু একটি ইন্টারফেস। এই মেন্যুর সবকিছু নিশ্চয়ই আপনি অর্ডার করবেন না। তাই সংজ্ঞানুযায়ী যে খাবারগুলো আপনি অর্ডার করবেন বেছে বেছে সেগুলোর অর্ডার নিয়ে ওয়েটার রান্নাঘরে পৌঁছে যাবে এবং অর্ডার অনুযায়ী আবার সেই খাবার নিয়ে ফিরে আসবে। আর এটাই হচ্ছে API এর কাজ।
API কোথায় ব্যবহৃত হয়?
API কোথায় ব্যবহৃত হয় এই প্রশ্ন অপেক্ষা API কোথায় ব্যবহৃত হয় না এই প্রশ্নটি জরুরি ও যৌক্তিক বলে আমি মনে করি। API এমন একটি ব্যবস্থা যা বিভিন্ন সিস্টেমস ও অ্যাপ্লিকেশনের সুবিধা দেয়। API তথা অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস ছাড়া ওয়েব সার্ফিং দুর্বল।
কিংবা প্রায় অসম্ভব বলা যেতে পারে। আর ওয়েব সার্ফিং ছাড়াও এটি গ্রাফিক্স সিস্টেম, ওয়েব সার্ভিস, ডেটাবেজ নেটওয়ার্ক ও কম্পিউটার গেইমসের ক্ষেত্রেও কার্যকরী। যেমন, কম্পিউটার গেইমের ভিজ্যুয়ালাইজেশন নিয়ন্ত্রণকারী ডিরেক্ট এক্স হল মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের তৈরি API. বিশ্বে জনপ্রিয় API এর মাঝে রয়েছে
-
গুগল ম্যাপ API
-
ফেসবুক API
-
ইউটিউব API
-
ও অ্যামাজন অ্যাড API
API না থাকলে কী হতো?
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা কিছুটা API এর ধারণা পেয়েছি। এই ধারণামতে আমরা বুঝতে পারি এটি টেকনোলজির মৌলিক অংশ, যা ছাড়া ভিজ্যুয়ালাইজেশন থেকে শুরু করে ওয়েব সার্ভার, নেটওয়ার্ক, ডেটাবেজ প্রভৃতি অচল। কারণ এগুলি নির্ধারিত কিছু ইনফরমেশনের অর্ডার ছাড়া কাজ করে না।
অপরদিকে আমরা যদি শুধু নেটওয়ার্কের দিক হতে সমস্যা খুঁজি তবে দেখতে পাই অ্যান্ড্রয়েড চালিত অ্যাপ্লিকেশন মাল্টি ডিভাইসে সাপোর্ট করছে না। আর তাই API না থাকলে আমরা ভার্চুয়াল কোনোকিছুতে পার্থক্য তৈরি করতে পারতাম না।
যার ফলে কম্পিউটার গ্রাফিক্সে, ওয়েব সার্ভারে, নেটওয়ার্ক ও ডেটাবেজে কোনো লজিক থাকতো না। আর তাই সেগুলি দিনকে দিন আপডেট বা উন্নত হয়ে আমাদের সেবা দিতে পারতো না।
বর্তমানে API এর সংস্করণ
API টেকনোলজির একটি মৌলিক অবস্থা, যা অন্যসব সিস্টেমের মতই নিয়মিত আপডেট হবার যোগ্যতা রাখে। বর্তমানে আরইএসটি বা REST API হচ্ছে বেস্ট API. REST API এর ফুল ফর্ম RESTful API. REST API দরুততর হলেও এর বিকল্প হচ্ছে গ্রাফকিউআই API.
প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে কি এটি REST API হতে দ্রুততর? না, এটি দ্রুততর নয়। তবে আপনি যে ক্ষেত্রগুলো জিজ্ঞাসা করতে চান এটি তা আলাদা করতে পারে। অর্থাৎ একাধিক সত্তাকে বা আইডেন্টিটিকে চিহ্নিত করতে পারে। তাই অনেকে REST API এর বিকল্প GraphQI API পছন্দ করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, API একটি কানেক্টিভিটি যা টেকনোলজির মৌলিক সিস্টেম। এটি এর মৌলিকতা বজায় রেখে কাঙ্ক্ষিত অনুরোধের ইনফরমেশন আদান-প্রদান করে থাকে। API এর কানেক্টিভিটি উন্নত করেছে গ্রাফিক্স সিস্টেম, ওয়েব সার্ভিস, কম্পিউটার গেইমস, ডেটাবেজ ও নেটওয়ার্ক। মাল্টি কানেক্টিভিটি API ছাড়া অসম্ভব। তাই এটি এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
You must be logged in to post a comment.