ভিডিও গান ডাউনলোড বা অন্যান্য যেকোন ভিডিও ডাউনলোড করতে চাইলে অনেক সময় আমরা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। কারন জনপ্রিয় যেসব প্লাটফর্মে ( যেমন ইউটিউব, ফেসবুক ) আমরা ভিডিও দেখে থাকি, সেখান থেকে সরাসরি ফোনের মেমরিতে ডাউনলোড করার অপশন থাকেনা।
কিন্তু আমাদের নানান কারনে এসব ভিডিও ডিভাইস মেমরিতে ডাউনলোড করার প্রয়োজন হতে পারে। এ সমস্যার সমাধান করা যাবে কিছু অ্যাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে। এ অ্যাপগুলো এসব প্লাটফর্ম থেকে ভিডিও আপনার মেমরিতে ডাউনলোড করতে পারে। আজকের লেখাটিতে আমরা এরকম ভিডিও ডাউনলোড করার সেরা পাঁচটি অ্যাপ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
১) Vidmate App
ভিটমেট বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও ডাউনলোড করার অ্যাপ৷ এটি ব্যবহার করে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম সহ যেকোন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম থেকে ভিডিও ডাউনলোড করা যায়৷ ভিটমেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত এসব ভিডিও ডাউনলোড করা যায় এবং বিভিন্ন রেজুলেশনে গানের ভিডিও ডাউনলোড করা যায়।
অর্থাৎ আপনি যেমন কোয়ালিটির ভিডিও চান তার উপর ভিত্তি করে 144P, 360P, 720P, 1080P এমন বিভিন্ন রেজুলেশনে ভিডিও ডাউনলোড করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সুবিধাটি হচ্ছে কম রেজুলেশনের ক্ষেত্রে ডাউনলোড এর সময় ভিডিওর ফাইল সাইজ কম হয়, ফলে ডিভাইস মেমরিতে কম জায়গা দখল করে। আর ইউটিউব, ফেসবুক এসব প্লাটফর্ম এর ভিডিও ছাড়াও, ভিটমেট অ্যাপে আলাদাভাবেই বিভিন্ন গান, মুভি ও অন্যান্য ভিডিও কালেকশন নিয়মিত আপলোড হতে থাকে। তাই আপনি সেসব ভিডিও ও ডাউনলোড করতে পারবেন।
এছাড়াও ভিটমেটের রয়েছে ভিডিও প্রাইভেট করার বিশেষ ফিচার৷ আপনি যদি ফোনের কোন ভিডিও লুকিয়ে রাখতে চান সেক্ষেত্রে এই অ্যাপটি ব্যবহার করে তা করতে পারবেন। এর ফলে ভিটমেট অ্যাপ এর ফোল্ডার ছাড়া ও নির্দিস্ট পাসওয়ার্ড ছাড়া ভিডিওটি শো করবে না। ফলে অন্য কেউ আপনার মোবাইল ব্যবহার করলেও ভিডিওটি খুঁজে পাবে না।
ভিটমেট অ্যাপটি যেহেতু কপিরাইট পলিসি ফলো করে না তাই এটিকে গুগল প্লেস্টোর এ পাওয়া যায়না। তাই আসল বা অরিজিনাল ভিটমেট অ্যাপ ডাউনলোড করতে চাইলে ভিটমেট এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে ব্যাবহার করতে হবে।
২) Tubemate App
টিউবমেট ও বিশ্বজুড়ে ভিডিও ডাউনলোড এর জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই অ্যাপটি ব্যবহার করে ভিডিও ডাউনলোড বেশ সহজ এবং এতে অনাকাঙ্খিত কোন অ্যাড আসেনা।
টিউবমেট অ্যাপের ব্রাউজার রয়েছে যাতে আমরা যেই ভিডিওটি ডাউনলোড করতে চাই সেটির লিংক দিলেই সরাসরি সেই ওয়েবপেজে নিয়ে যায়৷
তবে পার্থক্য হচ্ছে সাধারণ ব্রাউজারে সে ওয়েবপেজটিতে থাকা ভিডিওটি ডাউনলোড এর অপশন নেই, কিন্তু টিউবমেট দিয়ে ঢুকলে সেখানে ডাউনলোডের অপশন পাওয়া যায়৷ এই অ্যাপ দিয়েও বিভিন্ন রেজুলেশনে ভিডিও ডাউনলোড করা যায়। এছাড়াও ডাউনলোড এর পর ভিডিওটি প্লে করার জন্য টিউবমেট অ্যাপেই ভিডিও প্লেয়ার রয়েছে।
এছাড়াও এই অ্যাপটির ব্যাকগ্রাউন্ড ডাউনলোড অপশন রয়েছে। এর মানে আপনি ডাউনলোড করে এরপর টিউবমেট অ্যাপ থেকে বের হয়ে অন্যান্য অ্যাপে ঢুকে নিজের কাজ করতে পারবেন এদিকে আপনার ভিডিওটি ডাউনলোড হতে থাকবে, ডাউনলোড এর জন্য সারাক্ষন টিউবমেট অ্যাপেই থাকতে হবেনা। তাই ভিডিও ডাউনলোড এর জন্য টিউবমেট হতে পারে আপনার জন্য পারফেক্ট একটি অ্যাপ।
৩) Snaptube App
স্ন্যাপটিউব ভিডিও ডাউনলোডার অ্যাপটিও বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর কারন হচ্ছে এর ডাউনলোড স্পিড অনেক বেশি আর এটি বেশ ইউজার ফ্রেন্ডলি। তবে এর একটি বিশেষ ফিচার যেটা তা হচ্ছে এটি ডাউনলোডের সময় ভিডিও কমপ্রেস করতে পারে।
কমপ্রেস করা বলতে ভিডিওর কোয়ালিটি একই রেখে এর সাইজ কমিয়ে ফেলাকে বুঝায়। মনে করুন কোন একটি ভিডিও 1080P রেজুলেশনে তে নামাতে হলে এর ফাইল সাইজ হয় ১ জিবি। কিন্তু আপনার এত ডাটা নেই কিংবা মোবাইলে এত মেমরি নেই, আপনি চান ভিডিওটির ফাইল সাইজ যাতে ৫০০ এমবি হয়।
তবে আপনি চান না যে ফাইল সাইজ কমাতে গিয়ে ভিডিওটির কোয়ালিটি কমে যাক। তখন কমপ্রেসর ব্যবহার করে কোয়ালিটি একই রেখে ফাইল সাইজ কমানো যায়৷ স্ন্যাপটিউব অ্যাপটির ক্ষেত্রে আলাদা করে কমপ্রেসর অ্যাপের দরকার হয়না, এটি নিজেই ভিডিও ডাউনলোড এর সময় আপনার প্রয়োজনমতো ভিডিওকে কমপ্রেস করতে পারে।
এই অ্যাপটির ও ইনবিল্ট ব্রাউজার রয়েছে যার ফলে ভিডিও ডাউনলোড এর জন্য ভিডিওটির URL লিংক থাকলেই তা খুব সহজে ডাউনলোড করা যায়।
৪) Videoder App
Videoder ভিডিও ডাউনলোড এর জন্য বেশ ভালো একটি অ্যাপ। এই অ্যাপটি দ্বারা শুধু ভিডিও নয় বরং বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে অডিও ও ডাউনলোড করা যায়। এই অ্যাপটি দিয়েও বিভিন্ন রেজুলেশনে ভিডিও ডাউনলোড করা সম্ভব। এছাড়া এই অ্যাপটি বেশ দ্রুতগতির।
এটি ভিডিও ডাউনলোড এর সময়ে একাধিক কানেকশন ব্যবহার করে ফলে দ্রুত ভিডিও ডাউনলোড হয়ে যায়। এছাড়াও অ্যাপটির ব্রাউজারটিতে অ্যাড ব্লকার রয়েছে। কিছু ওয়েবসাইট থাকে যেখান থেকে ভিডিও ডাউনলোড করতে গেলে অনেক বেশি অ্যাড দেখতে হয়। বিশেষত মুভি ডাউনলোড এর ওয়েবসাইটগুলোতে অ্যাড বেশি থাকে। এর ব্রাউজারটি সেসব অ্যাড ব্লক করে স্বাচ্ছন্দ্যে ভিডিও ডাউনলোড করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, এই ভিডিও ডাউনলোডার অ্যাপটির পিসি ভার্সন রয়েছে। অর্থাৎ এটি ডেস্কটপ কম্পিউটারেও ব্যবহার করা সম্ভব। এছাড়াও এর একটি সুবিধা হচ্ছে এটি দিয়ে অনেকগুলো ভিডিও একসাথে ডাউনলোড করা সম্ভব। যদি ইউটিউবে কোন প্লেলিস্ট বানানো থাকে, তবে আপনাকে কস্ট করে আলাদা আলাদা করে সবগুলো ভিডিও ডাউনলোড করতে হবে না, বরং এই অ্যাপটি ব্যবহার করে একসাথেই পুরো প্লেলিস্টের যতগুলো ভিডিও রয়েছে সবগুলো ডাউনলোড করে ফেলতে পারবেন ।
এসকল দারুন ফিচারের জন্য এই অ্যাপটি ভিডিও ডাউনলোডের জন্য বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয়।
৫) Instube App
Instube ভিডিও ডাউনলোড এর জন্য দারুন একটি অ্যাপ যা দিয়ে ১০০+ ওয়েবসাইট থেকে ভিডিও ডাউনলোড করা যায়। ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়া তো বটেই, অন্যান্য আরো অনেক ভিডিওর ওয়েবসাইট এর তালিকা অ্যাপটিতে প্রবেশ করলেই পাওয়া যায়। সেসব ওয়েবসাইট থেকে গান ছাড়াও বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ, মুভি ইত্যাদি ডাউনলোড করা যায়। এই অ্যাপটি এন্ড্রয়েডে ব্যবহারের জন্য বেশ নিরাপদ।
এই অ্যাপটিতে বিল্ট ইন MP3 কনভার্টার রয়েছে। এছাড়াও এটিতে আছে ভিডিও এবং অডিও লক করার একটি বিশেষ ফিচার। আপনি যদি আপনার ফোনে থাকা কোন ভিডিও বা অডিও লুকিয়ে রাখতে চান যাতে অন্য কেউ আপনার মোবাইল ব্যবহারের সময় খুঁজে না পান, সেক্ষেত্রে Instube. এর এই ফিচারটি ব্যবহার করে আপনি তা লুকিয়ে রাখতে পারবেন।
শুধুমাত্র এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রবেশ করে নির্দিস্ট পাসওয়ার্ড প্রদানের মাধ্যমেই সেই ভিডিও / অডিওগুলো পাওয়া যাবে, ফলে অন্য কেউ আপনার মোবাইল ব্যবহারকালে তা খুঁজে পাবে না। তাই গানের বা অন্য যেকোন ভিডিও ডাউনলোড করতে আপনার জন্য একটি ভালো অপশন হতে পারে এই Instube অ্যাপটি৷
শেষকথা
স্বাভাবিকভাবে ইউটিউব, ফেসবুক সহ অন্যান্য প্লাটফর্ম থেকে গানের ভিডিও ডাউনলোড করা না গেলেও কিছু অ্যাপ ব্যবহার করলে তা করা যায়। এছাড়াও অ্যাপগুলোর অন্যান্য ফিচার ও বিভিন্ন কাজে লাগে। এধরনের সেরা পাঁচটি অ্যাপ সম্পর্কে এ লেখাটিতে আলোচনা করা হয়েছে। এর ফলে আপনি অ্যাপগুলো সম্পর্কে ধারণা পাবেন এবং ভিডিও ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে উপকৃত হবেন, এমনটাই কামনা করছি।
You must be logged in to post a comment.