চাকুরিজীবী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী সবাইকেই একটা রুটিন মেনে চলতে হয়। অনেকের ক্ষেত্রে সাজানো গোছানো রুটিন থাকলেও তা ঠিকভাবে মেনে চলা হয় না। আবার অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ কিংবা পড়াশুনা করে গেলেও যথেষ্ট ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। তাই নিজের প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধির জন্য বেশ ভালো কিছু সফটওয়্যার বা এপ্লিকেশন রয়েছে যা সময় ব্যবস্থাপনা করতে খুবই সহায়ক হবে।
আজ সেই অসাধারণ সব টাইম ম্যানেজমেন্ট এপ্লিকেশন সফটওয়্যার নিয়েই লিখবো।
১। Forest- Focus timer for your productivity
Forest এপ্লিকেশনটি এন্ড্রয়েডের জন্য ফ্রিতে গুগল প্লে স্টোরে রয়েছে। যারা কম্পিউটারে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করতে চান তারা Chrome Integration হিসেবে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এই সফটওয়্যারটি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে একটি। এই এপটি বিশেষভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এর কারন এপটি ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং অত্যন্ত সুন্দর ইন্টারফেস।
এছাড়া এই এপটির কনসেপ্ট ও সিস্টেম খুবই অসাধারণ। এই এপটিতে মূলত টাইমার সেট করার মাধ্যমে সময় ব্যবস্থাপনা করতে হয়। ইচ্ছামতো সময় সেট করে দিয়ে এপটি ব্যবহার করা যায়। মনে করুন আপনি ৬০ মিনিট পড়াশুনা করার জন্য সময় সেট করে দিলেন। এবার আপনি নির্দিষ্ট সাইট বা এপ্লিকেশন ব্লক করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ পড়াশুনা করা অবস্থায় বা কাজ করা অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় কোনো কাজ মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে করা যাবে না। কেউ যদি নিয়ম মেনে এই এক ঘন্টা পূরন করতে পারে তাহলে তার জন্য এপে একটা গাছ তৈরি হবে।
যদি নিয়ম ভঙ্গ হয় তাহলে গাছটি মারা যাবে। তাছাড়া এই সফটওয়্যারে সফল টাইম ম্যানেজমেন্ট এর জন্য কিছু ভার্চুয়াল কয়েন দেয়া হয় যা কেবল এপটির ভেতরেই ব্যবহার করা যায়। এই কয়েন ব্যবহার করে চাইলে এপের ভিতরের সিস্টেম ব্যবহার করে গাছ লাগানোর জন্য এপ্লাই করা যায়। তাহলে তাদের টিম ঐ ব্যবহারকারীর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে একটা গাছ লাগিয়ে দেয়। অর্থাৎ এই এপ ব্যবহার করে একই সাথে নিজের ও পৃথিবীর মানুষের উপকার করা সম্ভব।
২। Clockify
আপনি প্রতিদিন কখন কি কাজ করছেন তার একটা রেকর্ড রাখতে পারেন এই এপ্লিকেশনে। এই এপ্লিকেশনটি দ্বারা কাজের একটা পাই ডায়াগ্রামও দেখা যায় যা দেখে বোঝা যায় যে আপনি আপনার প্রতিদিনের সময়ের কতটা সদ্ব্যবহার করতে পারছেন। তাই এই এপটি খুবই ভালো একটি সফটওয়্যার।
৩। Loop-habit Tracker
এই এপটি মূলত অভ্যাসের পরিবর্তন কিংবা নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যেমন- কেউ যদি নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে চায় অথবা সময় মতো পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে চায় তাহলে এই এপটির মাধ্যমে ট্র্যাকার ব্যবহার করে অভ্যাস করে তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রতিবার মোবাইল স্ক্রিন আনলোক করলেই সামনে একটা স্ক্রিন চলে আসে যেখানে খুব সহজেই সব কিছু রেকর্ড রাখা যায় এবং এপটির সাহায্যে সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা করে এরকম নতুন কোনো কাজকে রুটিনভুক্ত করে অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।
৪। Asana
এটি একটি অসাধারন প্লাটফর্ম। স্কুল কলেজে ইউনিভার্সিটির ক্লাবে, অফিসে প্রায়ই অনেক কাজ দলীয়ভাবে সম্পন্ন করতে হয়। তখন কাজগুলোর বিভাজনে অনেকেই সমসস্যার সম্মুখীন হয়। তারপর কাজগুলো সাবমিট করতে গিয়েও অনেক রকম গড়মিল হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম এই অনলাইন প্লাটফর্মটি ব্যবহার করা। এখানে সবার কাজ ভাগ করে নিয়ে সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই।
৫। Remember the Milk
সফটওয়্যারের নামটা অদ্ভুত হলেও এই এপটা কিছুটা To Do list এর মতো। এখানে সামনে কবে কখন কি কাজ করবো, কবে মিটিং-এ যেতে হবে কিংবা কবে ক্লাস আছে এরকম দৈনন্দিন জীবনের সবকিছু একটা টাইম টেবিলের আওতায় নিয়ে আসা যায় এই প্লাটফর্মটির মাধ্যমে। এটি গুগল প্লে স্টোর থেকে এপ্লিকেশন সফটওয়্যার হিসেবে ডাউনলোড করা যাবে।
৬। Save my Time
এটি কিছুটা Loop habit tracker এর মতো। এখানেও স্ক্রিন লক খুললেই বিভিন্ন রকম সহজ এন্ট্রি দেয়ার মাধ্যমে সব কাজের হিসাব রাখা যায় এবং যে কাজে অতিরিক্ত সময় নষ্ট হচ্ছে, সেই অপচয় ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহন করা যায়। চাকুরিজীবীদের জন্য দারুন একটি এপ্লিকেশন এটি।
৭। Focus to do: Pomodoro Timer To Do List
এটা এমন একটা সফটওয়্যার যেটা Forest ও Remember the Milk এর একটা কম্বিনেশন। এখানে Pomodoro নিয়মে সময়ের ব্যবহার করা যায় এবং জীবনের প্রতিটা কাজকে রুটিনভুক্ত করে নিয়ে নিয়মমাফিক জীবনযাপন করার জন্য কিছু সুবিধা নেয়া যায়।
৮। Google Classroom
এটি গুগলের তৈরি একটি এপ। গুগল প্লে স্টোর ছাড়াও ক্রোম এপ্স এবং আরও অনেক অপারেটিং সিস্টেমেই আছে ক্লাসরুম সফটওয়্যার। এপটি এখন খুবই জনপ্রিয়। এটি শিক্ষকদের জন্য খুবই কাজের একটি এপ। তারা এখানে স্টুডেন্টদের জন্য এসাইনমেন্ট দিতে পারবে, সোর্স ম্যাটেরিয়াল আপলোড করতে পারবে, ক্লাসের রুটিনও এখানেই আপলোড করে দিতে পারবে। এছাড়াও বিভিন্ন ক্লাস টেস্ট নেয়া সম্ভব।
পাশাপাশি স্টুডেন্টদের পারফরম্যান্স এর উপর ভিত্তি করে তাদেরকে পয়েন্ট দেয়া সম্ভব যা দ্বারা একজন স্টুডেন্ট ঐ কোর্স থেকে কতটা উপকৃত হলো তা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
উপরের এপ্লিকেশনগুলো প্রতিনিয়তই আপডেট করা হচ্ছে। তাই প্রায়ই নতুন নতুন ফিচার সাংযোজন হচ্ছে এবং অপ্রয়োজনীয় অপশোনগুলো রিমুভ করে দেয়া হচ্ছে। তাই আশা করা যায় যে এই সফটওয়্যারগুলোর ব্যবহারকারীরা ভবিষ্যতে আরো ভালো অভিজ্ঞতা পাবে। এই এপ্লিকেশনগুলো ছাড়াও টাইম ম্যানেজমেন্টে কার্যকর আরো অনেক এপ্লিকেশন আছে যা গুগল প্লে স্টোর, আইফোনের এপ স্টোর, উইন্ডোজের মাইক্রোসফট স্টোর ইত্যাদি সফটওয়্যার ডাউনলোডিং এপ, ওয়েবসাইট ও প্লাটফর্মে পাওয়া যাবে।
একজন স্টুডেন্ট যদি নিজের পড়ালেখাকে একটা রুটিনের আওতায় রেখে গুছিয়ে এগোতে পারে তাহলে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। একজন চাকুরিজীবীও নিজের সময়ের সঠিক ব্যবহার করলে বসের প্রশংসা ও প্রমোশনের পাশাপাশি নিজের জীবনটাও আরো সুন্দর করতে পারবেন, কেননা সময়ের মূল্য অপরিসীম।
You must be logged in to post a comment.