গ্রাফিক ডিজাইন খুব গভীর একটি বিষয়। এখানে শুধু ক্রিয়েটিভিটি থাকলে আপনি টিকতে পারবেন না, যদি আপনার বিচক্ষণতাকে ও আবিষ্কারযোগ্যতাকে স্বীকৃতি না দেন। বর্তমানে এই ফিল্ডটি যত জনপ্রিয় হচ্ছে এর পরিধিও তত বিস্তার লাভ করছে।
নতুন যে বিষয়গুলো গ্রাফিক ডিজাইনে যুক্ত হয়েছে তার মধ্যে মনোগ্রাম লোগো অনেক পুরাতন হলেও এটির চাহিদা নতুন বা পুরাতন সব জায়গাতেই রয়েছে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন বড় বড় কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যেগুলোর জনপ্রিয়তা দেখে আমরা বড় হয়েছি সেগুলির লোগো বেশিরভাগ মনোগ্রাম, ওয়ার্ডমার্ক, গোল্ডেন রেশিও ভিত্তিক হয়ে থাকে।
এছাড়া ফ্রিজ কোম্পানি এলজি, গেইমিং কোম্পানি ইএ স্পোর্টস ও কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার কোম্পানি এইচপি প্রত্যেকের লোগোগুলি মনোগ্রাম লোগো। এগুলো ব্যতীতও আরও নজির রয়েছে।
সুতরাং মনোগ্রাম লোগো বানানো মামুলি কোনো কাজ নয়। তাই এ কথা অনস্বীকার্য যে মনোগ্রাম লোগোর প্রতিযোগিতা কখনো থেমে থাকবে না।
মনোগ্রাম লোগো কি?
মনোগ্রাম লোগোকে সংজ্ঞায়িত করলে আমরা দেখতে পাই যে, এটি এমন এক ধরনের লেটার বা অক্ষর কেন্দ্রিক গ্রাফিক ডিজাইনকে সমর্থন করে যা শুধুমাত্র টাইপোগ্রাফি ভিত্তিক। তাই এর আরেক নাম 'লেটারমার্কস'। দুই বা তিন শব্দের সমন্বয়ে একটি মনোগ্রাম লোগো তৈরি হয়ে থাকে।
গ্রাফিক ডিজাইন এর ক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনি মনোগ্রাম লোগোর চাহিদার সাথে যে লোগোগুলোর প্রতিযোগিতা দেখতে পাবেন তা হচ্ছে
-
মিনিমাল/ফ্ল্যাট লোগো
-
ভিনটেজ/হ্যান্ডড্রন লোগো
-
কার্টুন লোগো
-
সিগনেচার লোগো
-
ওয়াটার কালার লোগো
-
থ্রীডি লোগো
এতদসত্ত্বেও ফাইভারের মত অনলাইন মার্কেটপ্লেস প্ল্যাটফর্মে এই মনোগ্রাম লোগোর ওপর ২৯০০ গিগ আছে, যার মধ্যে ২৬০০+ গিগই রানিং। এখান থেকেই মনোগ্রাম লোগোর কাটতি বোঝা সহজ।
কিভাবে একটি মনোগ্রাম লোগো তৈরি করবেন?
তো আজ আমি আপনাদের মনোগ্রাম লোগো তৈরির প্রসেস সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি। আজ দেখাবো কি করে চিত্রের ইমেজের মত 'এইচএস' মনোগ্রাম লোগো তৈরি করবেন। তার জন্য আমরা যেমন জানি শুরুতেই অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর সফটওয়্যার লাগবে।
তাই শুরুতেই আপনাকে কম্পিউটার অন করে ইলাস্ট্রেটর অন করতে হবে। এরপর একটি আর্টবোর্ড নিন, আর্টবোর্ড নিতে নিচের চিত্রের মত ফাইল অপশনে ক্লিক করে একটা নতুন আর্টবোর্ড নিন। এবার সেটা ১২০০ পিক্সেল বাই ১২০০ পিক্সেল করে স্কয়ার করে নিন। কিংবা আপনি চাইলে পছন্দমত ম্যানুয়ালি পিক্সেল নিতে পারেন।
চিত্রের মত আর্টবোর্ড তৈরি করুন
স্টেপ ১ঃ
আর্টবোর্ডের ওপর কিবোর্ডের এক্স চেপে ওপরের ফিল স্ট্রোক ব্যবহার করে কালো আর্টপেপার সিলেক্ট করুন যেটা আর্টবোর্ডের সাইজের অনুরূপ হবে। খেয়াল রাখুন, যেন আপনার আর্টপেপার কালার অতি কালো বা হালকা কালো না হয়, এমনভাবে কালার সিলেক্ট করুন যা দর্শকের চোখে আরাম দেবে।
সহজ ভাষায় যেটাকে আই ক্যাচিং বলে। মনে রাখবেন, গ্রাফিক ডিজাইন এ কালার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এখন আবারও স্ট্রোক নিন। মাউস ব্যবহার করে কিংবা পুনরায় এক্স চেপে নিচের স্ট্রোক সিলেক্ট করুন। তারপর পেনটুল নিতে কিবোর্ড হতে পি অক্ষর চাপুন। পেনটুল দিয়ে লম্বালম্বি একটা সরলরেখা টানুন। এই রেখার একটু স্পেসে আরেকটি সরলরেখা সমান্তরালভাবে টানুন।
এবার দুটির এ্যালাইনমেন্ট ঠিক রেখে গ্রুপ হিসেবে মার্জ করুন। রেখাদ্বয় এবার অল্টারনেট কি এবং মাউসের লেফট ক্লিক চেপে পুনরায় সমান্তরালে ড্রাগ করুন। এমনভাবে ড্রাগ করুন যেন প্রথম রেখাদ্বয়ের শেষ যেখানে দ্বিতীয় রেখাদ্বয়ের শুরু সেখান দিয়ে হয়। এবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে কিবোর্ড এর কন্ট্রোল এবং ডি চাপুন। সর্বমোট ছয়জোড়া রেখা উৎপন্ন হলে ছাড়ুন।
হুবহু এরকম একটি চিত্র আঁকুন
স্টেপ ২ঃ
এবার ওগুলো হতে একটা জোড়া কপি করে ছিনিয়ে আনুন। কপি করতে পুনরায় অল্টারনেট কি এবং মাউস লেফট ক্লিক চাপুন। তারপর শিফট ও লেফট মাউস ক্লিক ব্যবহার করে উপরোক্ত ছবির মত একটি রেখা অ্যাঙ্গেলে আনুন। এবার এ্যালাইনমেন্ট ঠিক রেখে ডানদিকে সেটা কপি ও রোটেট করুন।
রোটেট করতে মাউসের রাইট বাটনে ক্লিক করে ট্রান্সফরমে ক্লিক করে অপশনে যান। এবার নিচে একইভাবে হোরিজোন্টাল আকারে রোটেট করে এ্যালাইনমেন্ট ঠিক করুন। তারপর চিত্রের মত মাঝামাঝিতে একটি রেখা আনুন, যার ওপর নিচ একই রেখা কপি করে ড্রাগ করুন। কেননা পরবর্তীতে এটা নেগেটিভ স্পেস তৈরি করতে সাহায্য করবে।
রেখাগুলির ওপর সাদা আর্টপেপার সিলেক্ট করুন
স্টেপ ৩ঃ
এখন চিত্রের মত সাদা আর্টপেপার রেখাগুলির ওপরে দিন। শিফট এবং এম একবারে চাপুন। তারপর নিচের চিত্র দেখে দেখে এইচের সাথে প্যাচানো এস অক্ষর আঁকতে চেষ্টা করুন।
পূর্ণাঙ্গ এইচএস মনোগ্রাম লোগো
এখন আউটলাইন স্ট্রোকগুলো সরিয়ে ফিল স্ট্রোকের লোগোটা আলাদা করুন। তারপর প্রেজেন্টেশন আরও ভালো করবার জন্য লোগোর ফিল স্ট্রোকের গায়ে থাকা থিন আউটলাইন স্ট্রোককে মোটা করুন।
তারপর উইন্ডোজ অপশনে গিয়ে উইন্ডোজ > স্ট্রোক > ক্যাপ কর্ণারে রাউন্ড শেইপে ক্লিক করে লোগোর কর্ণারকে রাউন্ড ও স্মুথ করুন, যাতে প্রেজেন্টেশন আরও ভালো হয়।
তো এই ছিল মোটামুটি আজকের টিউটোরিয়াল। জানি না কতটুকু বোঝাতে পেরেছি। তবে আপনি চেষ্টা করতে থাকুন নিজের মত করে, আশা করি পারবেন।
You must be logged in to post a comment.