ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করার নিয়মাবলী

ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করার নিয়মাবলী 

আসসালামু আলাইকুম, পাঠক। ঘরে বসে আয় করতে কে না চায়! আপনি কি জানেন কিভাবে ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করা যায়?

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

চলুন জেনে নেয়া যাক খুব সহজে কিভাবে ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। 

বর্তমান যুগের একটি জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়া বা গণমাধ্যম হলো ফেসবুক।

অযথা ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে আমরা চাইলেই একটি ফেসবুক পেজ খুলে ঘরে বসে অনেক টাকা আয় করতে পারি। আজকে আপনাদের ফেসবুকে ব্যবসা করার কিছু সহজ পদ্ধতি সম্পর্কে জানাব।

অনলাইন ব্যবসা শুরু করার পূর্বশর্ত 

ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমেই কিছু বিষয় সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। সেগুলো হলো -

  • অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
  • অবশ্যই একটি ফেসবুক পেজ থাকতে হবে।
  • অনলাইনে গ্রাহক সেবা দেয়া সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। 
  • নিজের প্রোডাক্টকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরার দক্ষতা রাখতে হবে।
  • আকর্ষণীয় পোস্ট করা এবং প্রোডাক্ট এর মার্কেটিং করার ব্যাপারে দক্ষ হতে হবে।

ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে কি কি লাগবে -

আপনি যদি নিজে একটা ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনার যেসকল উপকরণ এর প্রয়োজন পড়বে তা হলো -

  • একটি আকর্ষণীয় ফেসবুক পেজ 
  • ইন্টারনেট কানেকশন 
  • ২০-৩০ হাজার টাকার মূলধন 
  • একটি স্মার্টফোন / ল্যাপটপ 
  • ট্রাস্টেড ডেলিভারি সার্ভিস
  • কোয়ালিটিফুল প্রোডাক্ট

ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করার নিয়মাবলী

আপনারা জানলেন ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করার জন্য কি কি জিনিসের প্রয়োজন পড়বে। এখন আমরা ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করার নিয়মাবলী নিচে ধাপে ধাপে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ধাপ ১ - ফেসবুক পেজ তৈরি 

ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমেই আমাদের একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করতে হবে। খুব সহজে বিনামূল্যেই এই পেজ ঘরে বসে আপনি তৈরি করতে পারবেন। 

  • ফেসবুক পেজ তৈরি করার জন্য প্রথমেই http://www.facebook.com ওয়েবসাইট বা ফেসবুক এপ ওপেন করে মেনুবারে গিয়ে 'Pages' এ ক্লিক করতে হবে।
  • এরপর সেখানে 'Create' লেখাতে ক্লিক করলেই পেজ তৈরি করার অপশন চলে আসবে। এরপর 'Get Started' অপশন এ ক্লিক করে পরবর্তীধাপে যেতে হবে।
  • এরপর যথারীতি পেজ এর নাম দিতে হবে। 
  • পেজ এর ক্যাটাগরি সিলেক্ট করতে হবে। 
  • পেজের কোন ওয়েবসাইট থাকলে তার URL দিতে হবে।
  • এরপর আপনার পছন্দ অনুযায়ী  পেজ এর প্রোফাইল পিকচার এবং কভার পিকচার সিলেক্ট করে দিতে হবে।
  • পেজ এর জন্য একটি ইউজার নেম সিলেক্ট করতে হবে যাতে সহজেই আপনার পেজটিকে খুজে পাওয়া যায়।

এভাবেই একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করা যাবে। এখন আপনি আপনার অনলাইন ব্যবসা এই পেজের মাধ্যমে শুরু করবেন।

ধাপ ২ - ফেসবুক পেজ এর আকর্ষণীয়তা বৃদ্ধি

ফেসবুক পেজ তৈরি হয়ে গেলে সেখানে আপনার ব্যবসা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে এবং রুচিসম্মত ছবি দিয়ে আপনার পেজটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।

আপনার অনলাইন ব্যবসার সকল তথ্য এবং যোগাযোগের সকল তথ্য দিলে আপনার ফেসবুক পেজটি আরও প্রফেশনাল হবে।

আপনার ফেসবুক পেজ এ সকল তথ্য দেয়া হয়ে গেলে পেজ এর লিংক আপনার ফেসবুকের সকল বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এতে আপনার পেজের ফলোয়ার বাড়বে এবং কাস্টমার আকর্ষিত হবে।

ধাপ ৩ - ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসার প্রোডাক্ট এর ফটোগ্রাফি 

আপনার ফেসবুক পেজটির সকল কাজ সম্পন্ন হলে এবার আপনাকে আপনার মানসম্মত প্রোডাক্ট সুন্দর ফটোগ্রাফির মাধ্যমে গ্রাহকদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।

আপনার প্রোডাক্টের উপস্থাপন যত সুন্দর হবে গ্রাহক আপনার পেজ এর দিকে ততই আকর্ষিত হবে এবং আপনার সেল বাড়বে। 

এক্ষেত্রে নিজে অথবা অন্য কাউকে দিয়ে সুন্দর ছবি তুলতে হবে এবং আকর্ষণীয় ক্যাপশনের সাথেই পেজ এ পোস্ট করতে হবে। আপনার পণ্যের উপস্থাপন যত সুন্দর হবে আপনার সেল ততগুন বেড়ে যাবে।

ধাপ ৪ - গ্রাহক সেবা প্রদান

আপনার ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমে যখন আপনার অনলাইন ব্যবসায় প্রোডাক্টের অর্ডার আসবে তখন গ্রাহকদের সাথে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে হবে।তাদের সাথে আন্তরিক ব্যবহার করতে হবে।

 গ্রাহকদের আপনার পণ্যের গুনগত মান, সঠিক তথ্য, সুন্দর ছবি দিয়ে আপনার পণ্য কেনার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

পণ্য ক্রয় করার পর কোন সমস্যা হলে অবশ্যই গ্রাহকদের সাথে আন্তরিক ব্যবহার করতে হবে এবং তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে।

সঠিকভাবে গ্রাহক সেবা দিতে পারলে তারা পুনরায় আপনার পেজ থেকে পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী হবে।

ধাপ ৫ - বেশি বেশি পোস্ট এবং শেয়ার

আপনার ফেসবুক পেজ এ বেশি বেশি আকর্ষণীয় পোস্ট করতে হবে। যত বেশি পোস্ট করবেন আপনার পেজ এর অডিয়েন্স এর কাছে তা ততবার সো করবে।

এতে করে তারা আপনার বিভিন্ন ধরনের পণ্য সম্পর্কে জানতে পারবে এবং ক্রয় করতে আগ্রহী হবে। আপনি আপনার ফেসবুক পেজ এ দিনে অন্তত ৪-৫ টা পোস্ট করবেন।

অবশ্যই পোস্টগুলোর ভিন্ন ভিন্ন পণ্য এবং ক্যাপশন হতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পোস্ট করবেন। 

আপনার ফেসবুক পেজ এ করা আকর্ষণীয় পোস্টগুলো অবশ্যই বেশি বেশি শেয়ার করতে হবে। এতে আপনার পেজ এর এনগেজমেন্ট বাড়বে এবং বেশি বেশি অডিয়েন্স আসা শুরু করবে।

আপনি পোস্ট যত বেশি শেয়ার করবেন তত বেশি মানুষের সামনে আপনার পণ্যটি চলে আসবে এবং তারা আপনার পণ্য সম্পর্কে জানবে। অনলাইন ব্যবসায় সফলতার ক্ষেত্রে অধিক পোস্ট করা এবং শেয়ার করা অনেক জরুরি একটি বিষয়। 

ধাপ ৬ - অর্ডার নেয়া এবং পণ্য প্যাকেজিং করা 

আপনার অনলাইন ব্যবসা শুরু করার পর যখন পণ্যের অর্ডার আসতে শুরু করবে তখন খুব আন্তরিকতার সাথে গ্রাহক সেবা দিয়ে অর্ডার নিতে হবে।

গ্রাহকদের আপনার পণ্যের সকল তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে এবং তাদের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার নিয়ে অর্ডার কনফার্ম করতে হবে। 

পণ্যের অর্ডার নেয়া হলে তা সুন্দরভাবে প্যাকেজিং করতে হবে। ছেড়া বা অপরিষ্কার ব্যাগ বা পলিতে পণ্য দেয়া যাবে না। পণ্যের ব্যাগের উপর গ্রাহকের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার লিখে দিতে হবে।

অবশ্যই পণ্য চেক করে দিতে হবে। আপনি যদি আপনার গ্রাহকদের জন্য অর্ডার মেমোর ব্যবস্থা করেন তবে আপনার হিসাব রাখতেও সুবিধা হবে এবং গ্রাহকের কাছে আপনার অনলাইন ব্যবসাটি আরো প্রফেশনাল মনে হবে। 

ধাপ ৭ - ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসার প্রোডাক্ট ডেলিভারি করা

অর্ডার নিয়ে প্রোডাক্ট প্যাকেজিং করার পর আসে তা গ্রাহকের কাছে ডেলিভারি করা। আপনি যেকোনো ডেলিভারি সার্ভিসের মাধ্যমে আপনার পণ্য গ্রাহকের কাছে ডেলিভারি করতে পারেন।

অবশ্যই আপনাকে একটি ট্রাস্টেড ডেলিভারি সার্ভিস এর সাথে কাজ করতে হবে।

আজকাল অনেক ডেলিভারি সার্ভিস চালু হয়েছে যারা আপনার কাছ থেকে এসে পণ্য নিয়ে যাবে এবং সময়মত গ্রাহকের কাছে ডেলিভারি করে দিবে।

যেমন- Redex, Paperfly, Pathao, Steadfast ইত্যাদি। এর বিনিময়ে তারা ডেলিভারি চার্জ আপনার থেকে নিবে।

অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে ডেলিভারির চার্জটা আপনি গ্রাহকের থেকেই নিবেন। এভাবে আপনি কোথাও নিজে না যেয়ে ডেলিভারি বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আপনার পণ্য গ্রাহকের বাসায় পৌঁছে দিতে পারবেন।

গ্রাহক পণ্যের দাম পরিশোধ করে পণ্য নেয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনি আপনার নির্ধারিত টাকা পেয়ে যাবেন।

এভাবে আপনি আপনার অনলাইন ব্যবসা শুরু করে ঘরে বসেই সফল ব্যবসায়ী হতে পারবেন।

ফেসবুক পেজ মার্কেটিং 

ফেসবুক পেজ এ অনলাইন ব্যবসা করতে হলে ফেসবুক মার্কেটিং এর বিকল্প নেই। প্রোডাক্ট এর মার্কেটিং না করলে তা মানুষের কাছে পৌঁছাবে না এবং আপনার সেল আসবে না। এই ফেসবুক পেজ মার্কেটিং ২ ধরনের হয়ে থাকে। 

  • ফ্রি মার্কেটিং
  • পেইড মার্কেটিং

১. ফ্রি মার্কেটিং

আপনি যদি ফ্রি তে ফেসবুক পেজ এর মার্কেটিং করতে চান তাহলে আপনি তা করতে পারবেন খুব সহজে। আপনার ফেসবুক পেজ এর লিংক বেশি বেশি শেয়ার করতে হবে।

বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে, টাইমলাইনে, বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে আপনার পেজটিকে লাইক ফলো করতে উৎসাহিত করবেন। আপনার পেজ যত শেয়ার করবেন ততই পেজ এর রিচ বাড়বে।

বেশি রিচ মানেই বেশি সেল। আপনার ফেসবুক পেজ অধিক পরিচিতি লাভ করবে এবং আপনার পণ্যের গ্রাহক বাড়বে।

এক্ষেত্রে প্রতিদিন আপনার ফেসবুক পেজ এ ৪-৫ টি কোয়ালিটিফুল কন্টেন্ট বা পোস্ট আপলোড করতে হবে। আকর্ষণীয় পোস্ট এবং ছবি থাকলে ক্রেতার সংখ্যা বহুগুন বাড়বে।

দৈনিক ৪-৫ টি পোস্ট করার পাশাপাশি এগুলো শেয়ার করতে হবে বেশি বেশি। যত বেশি শেয়ার করবেন তত বেশি আপনার পোস্ট মানুষের সামনে আসবে এবং সেল হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশিই বাড়বে।

এছাড়াও আপনি ফেসবুক লাইভ করে আপনার পেজ এর অডিয়েন্স বাড়াতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের অফার / ডিস্কাউন্ট পেজে রাখলেও পেজ এর রিচ বাড়ে।

অফার এর কারনে অনেক গ্রাহক আকর্ষণ বোধ করে এবং সেল বাড়ে। কোয়ালিটিফুল আকর্ষণীয় পোস্ট করা এবং শেয়ার করার মাধ্যমে আপনি ফ্রি ফেসবুক পেজ মার্কেটিং করতে পারবেন। 

২. পেইড মার্কেটিং

আপনি যদি আপনার ফেসবুক পেজটিকে প্রফেশনালভাবে তৈরি করতে চান তাহলে আপনি পেইড মার্কেটিং করতে পারেন।

এক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন বুস্টিং এজেন্সির মাধ্যমে আপনার ফেসবুক পেজ এবং পেজ এর পোস্ট বুস্ট করে লাইক, ফলো, রিচ, সেল বাড়াতে পারবেন। 

বুস্টিং করে অর্থাৎ ফেসবুক পেজ এ এড রান করার ক্ষেত্রে আপনি আপনার প্রোডাক্টের উপযুক্ত অডিয়েন্স এবং লোকেশন সেট করতে পারলে আপনার পোস্ট এর রিচ বহুগুন বাড়বে।

ধরুন আপনি শাড়ি বিক্রি করেন। সেটি আপনি বুস্ট করতে হলে আপনাকে টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করতে হবে ২০-৪৫ বছরের মহিলা।

আপনি যদি তা না করে ছেলে মেয়ে উভয়ই দিয়ে দেন বা কোন বয়সসীমা না দেন তাহলে আপনি আপনার কাংখিত সেল পাবেন না।

টার্গেটেড অডিয়েন্স সিলেক্ট করার পাশাপাশি এরিয়া সিলেক্ট করাও জরুরি।  আপনি এভাবে পেইড মার্কেটিং করে আপনার পেজকে আরও প্রফেশনাল করে তুলতে পারবেন এবং আপনার সেলও বেশি হবে।

শেষকথা

আজকাল ব্যবসা করার জন্য মানুষ সহজ পন্থা খুজে। একটি দোকান নিয়ে ব্যবসা করতে গেলে আপনার অনেক টাকার মূলধন, কর্মচারী, অনেক আসবাবপত্র দরকার হয়।

কিন্তু আপনি যদি ফেসবুক পেজ তৈরি করে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন তাহলে আপনি একাই কম খরচে ব্যবসা চালাতে পারবেন।

তাই ঘরে বসে ভালো আয় করার জন্য ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করা খুবই উপযোগী। আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি, আসসালামু আলাইকুম। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ