আপনার কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ কাওকে দিচ্চেন নাতো? ভাইরাস এর মাধ্যমে যে কোন সময় হারাতে পারে মূলবান ফাইল

ভাইরাস এমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা নিজেই নিজেকে কম্পিউটারের ভেতরে বৃদ্ধি করতে পারে এবং বিভিন্ন ফাইল কে টার্গেট করে সেই ফাইলের ডাটা সংযোজন অথবা কর্তন অথবা সম্পূর্ণ ডিলিট করে দিতে পারে। 

সর্বপ্রথম কম্পিউটারের ভেতর নিজেই নিজেকে রেপ্লিকেট করতে পারে এমন প্রোগ্রাম এর কথা পাওয়া যায় 1970 সালের একটি সাইন্স ফিকশন গল্পে। গল্পটি ছিল গ্রেগোরি বেনফর্ড লেখা "দি স্কেয়ার্ড ম্যান"। গল্পটি ছিল এমন যে.....

একজন লোক তার কম্পিউটারে একটি প্রোগ্রাম ইনস্টল করে কম্পিউটার অন অবস্থায় রেখে বাইরে যায়। আর এদিকে সেই প্রোগ্রামটি কম্পিউটার লাইনের সাথে লাগানো টেলিফোন মডেম ব্যবহার করতে শুরু করে। এটি ইচ্ছেমতো একটি নাম্বার প্রস্তুত করে এবং কল দিতে থাকে যতক্ষণ না কেউ সে কল টি তুলছে। কল তোলার সাথে সাথেই সেটি ওই কম্পিউটারে ইন্সটল হয়ে যেত এবং আবার সেই একইভাবে ইচ্ছে মত নম্বর তৈরি করে আলাদা আলাদা কম্পিউটারে কল দিতে থাকতো। এভাবে এটি হাজার হাজার কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে।

ভাইরাস সম্বন্ধে জ্ঞান না থাকায় মানুষ এটিকে ভৌতিক বিষয় হিসেবে বেছে নেয়। পরবর্তীতে মানুষ বুঝতে পারে এটি কোন ভৌতিক বিষয় নয় এবং তারা এটিকে থামানোর উপায় খুঁজতে থাকে। এক সময় অন্য একজন লোক নতুনভাবে একটি প্রোগ্রাম লিখেন। ভাইরাসটি নতুন প্রোগ্রাম লেখা কম্পিউটারের ঢোকার সাথে সাথে  প্রোগ্রাম সক্রিয় হয়ে যেত এবং ভাইরাসটিকে কাউন্টার করে ফেলত। এই নতুন প্রোগ্রামের নাম ছিল ভ্যাকসিন।

কম্পিউটারে ভাইরাস মূলত তৈরি হয় বিভিন্ন হ্যাকার গ্রুপ দ্বারা যাতে তারা মানুষের বিভিন্ন তথ্য চুরি করে তাদেরকে বিপদে ফেলতে পারে। এ পর্যন্ত হাজার হাজার ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে। তারা আপনার কম্পিউটারে ঢুকতে বিভিন্ন রকম চমকদার পদ্ধতি ব্যবহার করে।

স্থায়ী ভাইরাস বনাম অস্থায়ী ভাইরাস

অনেক রকম ভাইরাস আছে যারা রেম এ আশ্রয় নেয়। এটি নিজেকে অপারেটিং সিস্টেম এর অংশ হিসেবে প্রদর্শন করে। এরপর এটি কম্পিউটার চালু করা থেকে বন্ধ করা অবধি রেম এই থেকে যায়। এই স্থায়ী ভাইরাসগুলো হ্যান্ডেলিং কোড ও অন্যান্য ফাংশন গুলো ওভাররাইট করে ফলে যখন অপারেটিং সিস্টেম কোন ফাইল খুঁজতে যায় তখন ভাইরাস কোড মাঝখানে বাধা দেয় এবং নিজের ওভাররাইট করা ঠিকানায় খোঁজ কৃত ফাইলটি কে দেখিয়ে দেয়।

এর ফলে প্রকৃত ফাইলটি আর পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় একটি বিকৃত ফাইল। আর অন্যদিকে অস্থায়ী ভাইরাস গুলো যখন চালু হয় সাথে সাথে ডিস্ক এ থাকা সব রকম ফাইল স্ক্যান করা শুরু করে তারপর তা ইনফেক্ট করে এবং রেম মেমোরি থেকে চলে যায়। অর্থাৎ এটি স্থায়ীভাবে রেম এ থাকে না, কাজ শেষ হলে রেম থেকে চলে যায়।

ম্যাক্র ভাইরাস

অনেক সাধারন সফটওয়ার যেমন মাইক্রসফট আউটলুক মাইক্রসফট ওয়ার্ড ইত্যাদি সফটওয়্যার গুলো অনেক ম্যাক্রো প্রোগ্রাম কে ডকুমেন্ট বা ইমেইল এর সাথে লেগে থাকতে দেয় যাতে ডকুমেন্ট বা ইমেইল খোলার সাথে সাথে ওই ম্যাক্রো প্রোগ্রাম নিজে থেকে চালু হতে পারে। এভাবে নিজে থেকে চালু হয় এবং কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ ইনফেক্ট করে।

তাই ইমেইল এর সাথে আসা সন্দেহজনক বা অপরিচিত কোনো অ্যাটাচমেন্ট খোলা বিপদজনক হতে পারে। মানুষ দিন দিন চালাক হচ্ছে এবং অপরিচিত ইমেইল আর তেমন খোলা হয় না তাই এখন এই ইমেইল গুলো এমন সংস্থার নাম করে পাঠানো হয় যে সংস্থাটি সবার কাছে অনেক পরিচিত যেমন UN, Amazon, YouTube ইত্যাদি অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি ।

 

বুট সেক্টর ভাইরাস

এই ভাইরাস গুলো সাধারণত বুট সেক্টর অথবা মাস্টারবুট রেকর্ড টার্গেট করে যেটা থাকে ডিস্ক ড্রাইভে ।  এছাড়া রিমুভ এবল ডিস্ক যেমন ফ্লাশ ড্রাইভ , ফ্লপি ডিস্ক ইত্যাদি কে আক্রমণ করে

সবচেয়ে কমন যেভাবে ভাইরাস ছড়ায় সেটা হচ্ছে ফিজিক্যাল মিডিয়া। যখন আপনি একটি ইউএসবি ফ্লাশ ড্রাইভ , পেনড্রাইভ কোন কম্পিউটার এ ইনসার্ট করবেন এবং তা থেকে তথ্য আদান প্রদান করবেন তখন সহজেই আদান-প্রদান কৃত তথ্যের  সাথে ভাইরাস চলে আসতে পারে এবং পরে সেই পেনড্রাইভ অন্য কোন কম্পিউটারে প্রবেশ করালে সেই কম্পিউটার ও আক্রান্ত হয়।

এছাড়া আপনি আপনার ইমেইল খুললেই অনেক সময় দেখতে পারবেন কেউ আপনাকে মেসেজ করেছে যে আপনি এক কোটি টাকা জিতেছেন অথবা দশ লক্ষ ডলার জিতেছেন অথবা বিটকয়েন জিতেছেন যেটা আপনাকে কালেক্ট করতে হবে। এর জন্য আপনাকে কোন একটা ওয়েবসাইটে যেতে হবে অথবা কোন লিংক এ ক্লিক করতে হবে অথবা কোনো অ্যাটাচমেন্ট ওপেন করতে হবে।

এই সবকিছুই আপনাকে ফাঁদে ফেলার জন্য একটি পদ্ধতি। যখনই আপনি লিংক বা অ্যাটাচমেন্ট ওপেন করবেন তখনই আপনার তথ্য চুরি হওয়া শুরু হয়ে যাবে। তাই এসব থেকে সাবধান থাকা অতি জরুরী বিষয়। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles