প্রযুক্তির কল্যাণে আধুনিক বিশ্ব এখন উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে। পূর্বে মানুষ একজন আরেক জনের সাথে যোগাযোগ করতে হলে একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে খোঁজ খবর নিতে হতো।কিন্তু এখন আর খোঁজখবর নেওয়ার জন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হয়না। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে বসে বসেই অপর প্রান্তের মানুষের সাথে কথা বলা যায় সেই সঙ্গে ছবি সহ ভিডিও দেখা যায়।
আজকে আলোচনা করবো ভিডিও কল নিয়ে। আজকাল অবশ্য আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত ভিডিও কলের সাথে।
ভিডিও কল/চ্যাট কি?
ইন্টারনেটের সাহায্যে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের মাধ্যমে পরস্পরকে সরাসরি ফোনের স্ক্রিনে দেখে কথা বলার সিষ্টেমকে ভিডিও কল বলা হয়।
আধুনিক যুগে যে কেউ যখন যেখানে খুশি সেখানে থেকেই অন্যজনকে কল দিয়ে ভিডিও কলে দেখে কথা বলতে পারে। প্রযুক্তির উন্নয়নের দরুন পৃথিবী আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। এজন্য দুরত্ব আর আমাদেরকে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে দূরে রাখতে পারেনা।মন চাইলেই প্রিয়জনকে দেখা যায়।
ভিডিও কল করতে কি কি প্রয়োজন?
আপনি যদি চান কাউকে ভিডিও কল করবেন সেক্ষেত্রে আপনার দরকার হবে-
১. একটি স্মার্টফোন /ল্যাপটপ
২. ইন্টারনেট কানেকশন
৩. একটি সোশ্যাল একাউন্ট।
ব্যস এটুকুই। এছাড়া অপর প্রান্তের মানুষেরও একই জিনিসপত্র থাকলেই হয়ে গেল।
কিভাবে ভিডিও কল করবো?
আপনার যদি একটি ডিভাইস থাকে তাহলে ভিডিও কল করা খুবই সহজ।
ভিডিও কল করার জন্য বিভিন্ন অ্যাপ রয়েছে। চাইলেই যেকোনো একটি অ্যাপ ইনস্টল করে ভিডিও কল করতে পারবেন।
ভিডিও কলের অ্যাপঃ
ভিডিও কলের জন্য অসংখ্য অ্যাপস রয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় কিছু অ্যাপ নিয়ে আলোচনা করা হলো-
১. Imo
সবচেয়ে জনপ্রিয় এটি।আর Imo এর ব্যবহারও খুব সহজ।গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি স্মার্টফোনে ইন্সটল করতে হবে।এরপর ফোন নম্বর আর কান্ট্রি সিলেক্ট করে একাউন্ট খুলতে হবে।যে নম্বরে কল দিবেন সেই নম্বর দিয়েও ইমু একাউন্ট চালু থাকতে হবে।তাহলেই ভিডিও কল দিয়ে কথাও বলতে পারবেন দেখতেও পারবেন।
২. Google Duo
Google Duo বর্তমানে আরেকটি জনপ্রিয় ভিডিও কলে ব্যবহৃত অ্যাপ।
প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করে খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়। এর জন্য প্রথমেই নিজের ফোন নম্বর দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে নিতে হবে।
তুলনামূলক ভাবে অন্যান্য অ্যাপের থেকে৷ Duo তে ভিডিও কোয়ালিটি ও সাউন্ড ভালো আসে। আর স্পীড বেশি থাকে।
৩. Facebook Messenger
বিপুল জনপ্রিয় একটি অ্যাপ Messenger. প্রায় প্রত্যেকেই ব্যবহার করে। অডিও কলের পাশাপাশি ভিডিও কল করার জন্যও এটি ব্যবহার কার হয়।
প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করতে হবে এরপর সাইন আপ করে নিতে হবে।যাকে কল দিবেন তারও সেইম ভাবে একটি একাউন্ট থাকতে হবে।তাহলেই হবে।
ভিডিও কলের প্রয়োজনীয়তা কী?
প্রযুক্তির উন্নয়ন আমাদের জীবন যাত্রাকে সহজ করে দিয়েছে।একের পর এক নতুন নতুন আবিষ্কার আমাদের জন্য অনেক সুফল বয়ে আনছে।ভিডিও কল আবিষ্কার আমূল পরিবর্তন এনেছে ধরণীতে। এর গুরুত্ব অনেক।নিচে ভিডিও কলের গুরুত্ব লেখা হলো-
১. আগে আমাদের কারও দেখা পেতে হলে সেখানে গিয়ে তারপর দেখতে হতো। কিন্তু বর্তমানে ভিডিও কলের মাধ্যমে নিমেষেই বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে একজন আরেকজনের দেখা পাওয়া যায়। কথা বলা যায়।
উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি প্রবাসীদের কথা। প্রবাসীরা দীর্ঘ সময়ের জন্য আত্মীয় স্বজনদের দেশে রেখে অন্য দেশে যায় কাজের সন্ধানে।তাদেরকে সেখানে বছরের পর বছর কাটাতে হয় একা একা। তখন তাদের প্রিয়জনদের জন্য হৃদয় আকুল হয়ে থাকে।আগেকার দিনে এই দীর্ঘ সময় তাদেরকে কাটাতে হতো প্রিয়জনদের মুখ না দেখেই।
কিন্তু এখন আর সে দিন নেই। ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রবাসীরা যখন ইচ্ছা প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে,ভিডিওতে দেখতে পারছে। ফলে তাদের মধ্যেকার দূরত্ব কমে যাচ্ছে। মনও শান্ত থাকছে।
বাস্তব উদাহরণ আমার মামা।আজ ৬ বছর ধরে দেশের বাইরে আছে। পরিবারের সদস্যদের রেখে এতোদিন আলাদা থাকা সহজ কথা না। তারপরেও থাকতে হয়। কিছুই করার নেই৷ এতোগুলা বছর সে কিভাবে আছে নিশ্চয়ই মন খারাপ করে। কিন্তু সে সেটা সামলে নিতে পারে এই ভিডিও কলের দৌলতে।যখনি মনে পড়ে ভিডিও কলে সবাইকে দেখে নেয়। প্রিয় মুখ গুলো তাকে প্রেরণা দেয়। শক্তি জোগায়।
২. অনলাইনে কেনাকাটা করার জন্য ভিডিও কলের প্রয়োজন হয়। অনলাইনে প্রোডাক্ট বিক্রি করার জন্য সেলার তার প্রোডাক্টটি ভিডিওর মাধ্যমে ক্রেতাকে দেখিয়ে বিক্রি করতে পারে। এর ফলে এটাকে ক্রেতাকে কোন কিছু কেনার জন্য মার্কেটে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না ঘরে বসেই নির্দিষ্ট পণ্যটি পছন্দ করে কিনতে পারে।
আজকাল বেশিরভাগ সেলার ভিডিও কলের মাধ্যমে ক্রেতাকে পণ্য দেখিয়ে বিক্রি করছে এতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুজনেই সমান লাভবান হচ্ছে।
৩. বর্তমান মহামারী পরিস্থিতি কারনে অনেককেই ঘরে বসে কাজ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা ভিডিও কল ব্যবহার করছে। অনেক অফিস আদালত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাজ চালাচ্ছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে বাইরে যাওয়ার কোন প্রয়োজন হচ্ছে না।
কোভিড 19 এর কারণে অনেকেই এই পন্থা অবলম্বন করছে। অনেক ক্ষেত্রে চাকরির ইন্টারভিউ অনলাইনে ভিডিও কলের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে এতে মানুষের অনেক সুবিধা হয়েছে। কারণ আগে ইন্টারভিউ দিতে গেলে অনেক দূর দূরান্ত থেকে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে তারপর ইন্টারভিউ দিতে হতো কিন্তু ভিডিও কলের কারণে এসব ঝামেলার হচ্ছে না।
৪. দেশ-বিদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে তাদের মিটিং করে থাকে। ফলে কাউকে আর কষ্ট করে নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে হয় না যে যার অবস্থান থেকে একসাথে মিটিং করতে পারে এবং নিজের মত নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারে।
৫. করোনার কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন ভিডিও কলের মাধ্যমে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে না যাওয়ার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে না। তারা তাদের পড়াশোনা ধরে রাখতে পারছে। শিক্ষকেরা ভিডিও কলে ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাও নিতে পারে।
৬. এছাড়াও অবসর সময়ে বন্ধুবান্ধবরা একসাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে আড্ডা দিতে পারে। আজকাল পড়াশোনার পর চাকরির সুবাদে একেক জন একেক জায়গায় থাকে। তাই বন্ধু বান্ধবদের সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ খুবই কম থাকে। কিন্তু ভিডিও কল এই সমস্যার সমাধান করেছে। যে যার অবস্থান থেকেই এক সবার সাথে যোগাযোগ করতে পারছে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারছে।
৭. আজকাল আরেকটি জিনিস দেখা যায় যে,ভিডিও কলের মাধ্যমে বিবাহ হচ্ছে। বিশেষ করে যারা প্রবাসে থাকে তারা এই পন্থা অবলম্বন করছে। ভিডিও কলে দুই পরিবারের উপস্থিতির মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হচ্ছে। বর্তমানে করোনার জন্য ভিডিও কলে বিয়ে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।ভিডিও কল এর গুরুত্ব বলে শেষ করার মত নয়।
সবশেষে, ভিডিও কল আমাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। আমাদের মধ্যেকার দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও অসুবিধা নিশ্চয়ই আছে। আমাদেরকে সে সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে সচেতন থাকতে হবে। ভিডিও কল এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে এবং তা হলেই আমরা এর সুবিধা নিয়ে লাভবান হব।
ধন্যবাদ।
You must be logged in to post a comment.