ওয়েব ডিজাইন কি? ওয়েব ডিজাইন কি ও কিভাবে শিখবেন? বিস্তারিত এখানে

বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অশেষ অবদানে আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন এই সময়কে বলা অনলাইন যুগ। অনলাইন আমাদের দৈন্দিন জীবন ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে ‍দিয়েছে। আমরা এখন বেশিভাগ কাজেই অনলাইনের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি। আর অনলাইন ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম কম্পিউটার ও একটি ভালো মোবাইল। যার মাধ্যমে আমরা অনলাইনে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান সহ যাবতীয় কাজ করে থাকি।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

আর এই বর্তমান সময় অনলাইন কাজের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। তাই এখন অনলাইন যুগে এসে বেশি ভাগ মানুষই চিন্তা করে থাকে যে কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে আয় করা যায়। শুধু চিন্তা নয় মানুষ এখন বিভিন্ন ভাবে অনলাইন থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করে যাচ্ছে।

বিভিন্ন মানুষই এখন বাসায় বসে থেকে ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে বেছে নিয়েছে। এই পেশা এখন অধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। আর ফ্রিল্যান্সিং পেশার বিভিন্ন কাজ হয়ে থাকে। এই পেশার বিভিন্ন কাজের মধ্যে অন্যতম একটি কাজ হচ্ছে ওয়েব ডিজাইন। ওয়েব ডিজাইন একটি উন্নত ভালো মানের কাজ হয়ে থাকে। এটির বর্তমান ফ্রিল্যান্সিং বাজারে অনেক চাহিদা রয়েছে। এই কাজ জেনে থাকা ব্যক্তিরা খুব সহজেই অনলাইনে কাজ পেয়ে থাকে।

এই কাজের আয় ও অনেক বেশি হয়ে থাকে। অনেক ধরনের মার্কেটপ্লেসগুলো এই কাজ গ্রহন করে থাকে।  ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে যাদের ধারনা নেই বা অনেক সীমিত ধারনা হয়ে থাকে। তাদের আজকে  এই কাজের ব্যপারে পুরোপুরি জানানো চেষ্ঠা করবো। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে। 

ওয়েব ডিজাইন কি:

শুরুতেই আলোচনা করবো ওয়েব ডিজাইন কি? এর কাজ কি কি হতে পারে। ওয়েব ডিজাইন হলো ওয়েব সাইট দেখতে কেমন হবে তার একটি টেমপ্লেট তৈরী করা। এবং ওয়েব সাইটটি দেখতে কেমন হবে বা সাধারন রুপ কেমন হবে তা নির্ধারন করা। ওয়েব ডিজাইনার ক্যারিয়ার হিসাবে আপনার কাজ হবে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েব সাইটের টেম্পলেট বানানো। যেমন ধরুন এটার লে আউট কেমন হবে। হেডারে কোথায় মেনু থাকবে, সাইডবার হবে কিনা, ইমেজগুলো কিভাবে প্রদর্শন করবে ইত্যাদি।

ভিন্ন ভাবে বলতে গেলে ওয়েব সাইাটের তথ্য কি হবে এবং কোথায় জমা থাকবে এগুলো চিন্তা না করে, তথ্য গুলো কিভাবে দেখানো হবে সেটা নির্ধারণ করাটাই হচ্ছে ওয়েব ডিজাইনারের কাজ। আর এই ডিজাইন নির্ধারণ করতে ব্যবহার করতে হবে কিছু প্রোগামিং, স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ, এবং মার্কয়াপ ল্যাঙ্গুয়েজ।

একজন ওয়েব ডিজাইনার ওয়েব সাইট ও আপ্লিকেশন তৈরীর জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা, ডিজাইন ও ইউজার এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে কাজ করে থাকেন। এ পেশায় কাজ করতে সাধারনত আমাদের টেকনিক্যাল ও ননটেকনিক্যাল দক্ষতার প্রয়োজন হবে। বর্তমানে দেশ ও বিদেশে এ পেশার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

একজন ওয়েব ডিজাইনার বিভিন্ন শিল্পে চাকরি করা ছাড়াও স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রচুর সুযোগ পেয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠান ভেদে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আলদা হতে পারে। কিন্তু ওয়েব ডিজাইনারের উপর প্রতিষ্ঠানিক ডিগ্রি থাকলে তা কাজ পাবান জন্য সুবিধাজনক। 

একজন ওয়েব ডিজাইনার কোথায় কাজ করেন: 

মূলত আইটি কোম্পানি ও ফার্মগুলোতে ওয়েব ডিজাইনার কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তুলনামূলকভাবে বলতে গেলে সরকারি বেসরকারি চাকরির সুযোগ সাধারনত কম হয়ে থাকে। অ্বশ্য এসব প্রতিষ্ঠান সাধারনত আইটি সংক্রান্ত কাজ প্রজেক্ট আকারে সফটওয়্যার ও ডেভেলপার কোম্পানিগুুলোকে দিয়ে থাকে।

তাই নির্ভরযোগ্য ক্যারিয়ার গড়তে ওয়েব ডিজাইনার দের সমস্যা হয় না। তাছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং এ আপনি বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসগুলোতে এই কাজ খুব সহজেই পেয়ে যাবেন এবং সেখানে ভালো মানের কাজ করে দিতে পাররেন। 

তাছাড়া অনলাইন মার্কেটপ্লেস তো আছে। যেমন: ফাইভার, ফ্রীল্যন্সার আপযোক ই্যতাদ্যি। 

সাধারনত যে সমস্ত কাজ ওয়েব ডিজাইনাররা করে থাকে:

ফ্রিল্যান্সিং ও বিভিন্ন ওয়েব সাইটে তাছাড়া বিভিন্ন চাকরি ক্ষেত্রে ওয়েব ডিজাইনাররা যে সমস্ত কাজ করে তা হল: 

১. ক্লায়েন্টের চাহিদা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা নেওয়া ও পুরো কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে যোগাযোগ রাখা। 

২. ওয়েবসাইট/ ওয়েবপেইজ/ অ্যাপ্লিকেশন প্রাথমিক লে আউট তৈরী করা। 

৩. প্রজেক্টের জন্য গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন কিংবা ডিজিটাল ফটোগ্রাফি ডিজাইন করা। 

৪. ক্লায়েন্ট দের সাথে প্রাথমিক ডিজাইন উপস্থাপন করা। 

৫. প্রয়োজনীয় কোড লিখা। 

৬. কাজ শেষ হবার পর ক্লায়েন্টের কাছে প্রজেক্ট হস্তান্তর করা। 

৭. প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে ক্লায়েন্টকে টেকনিক্যাল সহয়তা করা।

কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয় একজন ওয়েব ডিজাইনারের: 

ওয়েব ডিজাইনে সাধারনত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে কাজের দক্ষতা ও ঙ্গান থাকা জরুরী হয়ে থাকে। এরপর আপনার নিচের বিষয় গুলোতে ডিগ্রি থাকলে প্রাথমিক পর্যায়ে একজন চাকরিদাতা ভালো ধরণা পেতে পারে। 

* কম্পিউটার সায়েন্স। 

* ওয়েব ডিজাইন। 

* গ্রাফিক্স ডিজাইন।

* মাল্টিমিডিয়া ডিজাইন।

* ডিজিটাল মিডিয়া প্রোডাকশন। 

* সফটওয়্যার ইন্জিয়ারিং। 

একজন ওয়েব ডিজাইনারের কোন কোন দক্ষতা ও ঙ্গান থাকতে হয়: 

সাধারনত প্রজেক্টের উপর টেকনিক্যাল ঙ্গানের ধরন নির্ভর করে।এরপরও সাধারন উদারণ হিসাবে নিচের স্কিলগুলোর কথা বলা যায়। 

* কোডিং: HTML, CSS, JAVA SCRIPT, JQUERY, DREAMWEAVER

* ডিজাইন ও গ্রাফিক্স: PHOTOSHOP, ILLUSTRATOR, INDESIGN

* কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম: WORDPRESS, DRUPAL, JOOMLA

বহু কোম্পানি গুলোতে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কিছু কাজ ওয়েব ডিজাইনারদের দিয়ে করানো হয় বলে অ্যাপ্লিকেশন তৈরির কোডিং (যেমন: PHP, PYTHON) নিয়ে ধারণা থাকা দরকার। 

নন - টেকনিক্যাল ঙ্গানের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো: 

* সৃজীনশীলভাবে বা যৌক্তিক উপায়ে সমস্যা সমধানের দক্ষতা। 

* বিশ্লেষণী ক্ষমতা, যা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণে সাহায্য করে থাক।

* নিজে নিজে কাজ করার পাশাপাশি অন্যদের নিয়ে কাজ করার মানসিকাতা থাকা দরকার। 

* বিভিন্ন ধরনের কাজ একসাথে সামলনোর দক্ষতা। 

ওয়েব ডিজাইন কিভাবে শিখবো:

বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, কম্পিউটার বিঙ্গান ও প্রকৌশল, কম্পিউটার সিস্টেম ডিজাইন, কিংবা ইনফারমেশন সিস্টেমের উপর অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে পারেন। বিকল্প ্উপায় হিসাবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নিচের বিষয় গুলোর কোর্স করতে পারেন:

* ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট। 

* মাল্টিমিডিয়া ডিজাইন। 

* ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ও ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন। 

* ডিজিটাল ইমেজিং। 

* প্রোগ্রামিং। 

তাছাাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের সাইঠে খুভ ভালোভাবে ওয়েব ডিজাইন শেখা যায়। ওয়েব ডিজাইন শেখার ওয়েব সাইট গুলো হল: 

W3Shool.com, Codecademy.com, Youtube.com, Khanacademy.org, Coursera.org, Edx.org etc.

এই সাইটগুলোর মাধ্যমে আপনি খুব ভালো ভাবে ওয়েব ডিজাইন শিখতে পারবেন। 

একজন ওয়েব ডিজাইনারের মাসিক আয় কেমন: 

আমাদের দেশে অভিঙ্গতা ছাড়া বা স্বল্প পরিসরে অভিঙ্গ ওয়েবডিজাইনারের আনুমানিক গড় আয় মাসিক ২৫,০০০ টাকা। দেশের বাইরে গেলে তা মাসিক ৪,০০০০০০ টাকা থেকে ৭,০০০০০০ টাকা বা তার বেশি ও হতে পারে। এবং ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ঘন্টা প্রতি গড়ে ১০-১৫ অর্জন করা সম্ভব। তবে এজন্য চমৎকার পোর্টফোলিও থাকতে হবে। 

শুরুতেই শুধু প্রজেক্ট নির্ভর ছোট বা মাঝারি আকারে কাজ করলে ও চার পাঁচ বছরে সিনিয়র ওয়েব ডিজাইনার পদে উন্নীত হবেন। এক্ষেত্রে বড় আকারের প্রজেক্ট বা বড় মাপের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার সুযোগ পাবেন। 

আর যারা ব্যর্থ হয় তার কারন:  

* কোডের জটিলতাকে ভয় করা: ক্যারিয়ার শুরেুর দিকে সবসময় মনপ্রান দিয়ে জটিল কোডের সম্মুখীন হওয়ার আশা করবেন। ওয়েব ডেভলোপিং করতে গিয়ে যত বেশি কোডের সম্মুখীন হবেন, তত বেশি নিজের উপর কনফিডেন্ট তৈরী হবে। ওয়েব ডেভলপারদের মনে রাখা দরকার ওয়েব ডেভলপারদের অসম্ভব বলে কিছু নেই। 

* খুব বেশি অন্যের উপর নির্ভরশীল: একজন ওয়েব ডেভলপারকে সারাজীবন ধরে শিখতে হয়। আপনি কারও কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে  একটা পর্যায় পযন্ত যেতে পারেন। কিন্তু বাকি পথটা একা একা হাটঁতে হবে। আর সেজন্য শুরু থেকে গুগল থেকে সার্চ করে নিজে নিজে শেখার অভ্যাসটা শুরু থেকে করে নিতে পারেন। 

* নিজের কাজের পোর্টফলিও না থাকা: কমপক্ষে হলেও ৫ টি কাজের অভিঙ্গতা থাকা ছাড়া আসলে চাকরি খুঁজলে কিংবা ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে কাজ না পাওয়ার সম্ভাবনটাই সবথেকে বেশি। প্রতিটা সেক্টরে  একই কথা হয়ে থাকে। এ কাজটি আমরা করি না দেখেই দক্ষ হওয়ার পরও বেশিভাগ সময় বেকার বসে থাকি।

কাজ শেখার পর থেকে এর গুরুত্ব বেশি করে দেওয়া উচিত। ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রে একই ধরনের না করে আলাদা আলাদা ধরনের এবং  জটিল কোডিং ওয়েব ডেভলপ করে সেগুলোকে কাজের পোর্টফলিও হিসাবে প্রস্তুত করুন। 

বন্ধুরা যদি লেখাটি ভালো লাগে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ

নাম: বাধন কুন্ডু । একজন আর্টিকেল রাইটার । ১০০% ইউনিক ও কপি মুক্ত আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।